বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণ করুন-সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু

বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে শিশুদের একটি স্কুলের সামনের সড়কে বাসচাপা পড়ে ছয় বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থী হামিম শেখের মৃত্যু ও তার মায়ের আহত হওয়ার ঘটনা এক কথায় হূদয়বিদারক। হামিম ছিল মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তার মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের শোকের তীব্রতা-গভীরতা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।


হামিমের খেলার ও পড়ার সাথিদের, তার শিক্ষকদের বেদনাও গভীর। তাঁদের সমবেদনা জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
রাজধানীর ভেতরে বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনা প্রায়শই ঘটে, কিন্তু এসবের তেমন কোনো প্রতিকার হয় না। ফলে দুর্ঘটনার মাত্রা কমার লক্ষণ নেই, বরং মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও আনুপাতিক হারে বেড়ে চলেছে। কিন্তু এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। অন্তত শিশুদের বিদ্যালয়গুলোর কাছাকাছি সড়কগুলো তাদের জন্য নিরাপদ করা একান্ত জরুরি। কিন্তু সেই কাজ করা খুব সহজ নয়। বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রথমত, মহানগরের ভেতরে যানবাহন চালকদের, বিশেষত ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের বাসগুলোর চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। বুধবারের দুর্ঘটনার হোতা বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; কিন্তু তাঁর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। ওই চালক বলেছেন, রাস্তাঘাটে এমন দুর্ঘটনা হতেই পারে। পুলিশের হেফাজতে চালকটি এই ভেবে নিশ্চিন্ত যে বাসটির মালিক যখন তাঁর আটক হওয়ার খবর জানতে পারবেন, তখনই ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন। এই যদি হয় একজন বাসচালকের মানসিকতা, তাহলে তাঁর হাতে আরও কত মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। পুলিশ সন্দেহ প্রকাশ করেছে, তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সটি ভুয়া হতে পারে। এটিও আরেক দিক: পুলিশ তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে নিশ্চিত বলতে পারছে না, সেটি আসল না ভুয়া। আর ভুয়াই যদি হয়, তাহলে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স কোথায় পাওয়া যায়? কারা তা সরবরাহ করে? এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কী? ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া ও তার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান করা উচিত। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে গাড়িচালকের সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় বছর কারাদণ্ড। এই দণ্ড যথেষ্ট কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে মনে হয়।
দ্বিতীয়ত, বুধবারের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে যখন হামিম তার মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিল। কিন্তু কাকরাইলের ওই জায়গায় একটু দূরেই একটি উড়ালসেতু আছে। হামিমের মা যদি একটু কষ্ট করে সন্তানকে নিয়ে উড়ালসেতু দিয়ে রাস্তাটি পার হতেন, তাহলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু ওই উড়ালসেতু কেউ ব্যবহার করে না। সবাই হেঁটে, দৌড়ে রাস্তা পার হয়। এটা বিপদের কথা বটে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অনেক উড়ালসেতু আর কিছু আন্ডারপাস আছে, কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার কম। আশপাশে উড়ালসেতু থাকা সত্ত্বেও মানুষ অতি ব্যস্ত রাস্তাও হেঁটে পার হতে চায়। এ অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। অবশ্য সে জন্য উড়ালসেতুগুলোকে সহজে ব্যবহারযোগ্য করা দরকার। অনেকে আন্ডারপাস ও উড়ালসেতু এড়িয়ে চলে ছিনতাইকারীর ভয়ে। অনেক সময় সেগুলো থাকে অন্ধকার বা নোংরা, ছিন্নমূল মানুষ, নেশাখোরদের দখলে। এসব পরিষ্কার করে উড়ালসেতু ও আন্ডারপাসগুলোকে সুগম করতে হবে। সবাইকে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.