সরকারি চিনিশিল্প-প্রতিযোগিতায় সামর্থ্যহীন প্রতিষ্ঠান
দেশের উত্তরাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ চিনিকলে ১২০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাজারে আমদানিকৃত ও রিফাইনারিতে পরিশোধনকৃত চিনির দাম দেশীয় মিলে উৎপাদিত চিনির চেয়ে কম হওয়ায় এ ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে শনিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাজারের স্বাভাবিক নিয়মে পরিশোধনকৃত ও অপেক্ষাকৃত সাদা চিনির দাম কম থাকায় এর প্রতিই সাধারণ ক্রেতাদের ঝোঁক। দেশীয় চিনি এমনিতেই মোটা, তাও আবার দাম বেশি। এতেই বোঝা যায়, কেন আমাদের চিনিকলগুলোর চিনি আমদানকিৃত চিনির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। সরকারি চিনিকলগুলো মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদনের কাজ করে আসছে। অথচ টিকে থাকার জন্য আধুনিকায়নের ওপর জোর দেওয়ার বিকল্প নেই। উৎপাদিত পণ্যের গুণ-মান উন্নয়ন এবং দাম কমিয়ে রাখার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের এখনও এ ব্যাপারে ঘুম ভাঙেনি। আর মিলগুলোর ব্যবস্থাপনাকেও গতিশীল করা দরকার। অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় সেই সুদীর্ঘকাল থেকেই এগুলো দুর্নীতির আখড়া হয়ে রয়েছে। তাই দুর্নীতিমুক্ত করা এগুলোর প্রতিযোগিতার সামর্থ্য অর্জনের শর্তের মধ্যে পড়ে। উত্তরাঞ্চলের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত মিলে ২২ হাজার টন চিনি অবিক্রীত পড়ে থাকায় এগুলো আখচাষিদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। একই সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও কয়েক মাস পরিশোধ করা যায়নি। এতে আখচাষি ও শিল্প এবং এতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক-কর্মচারী প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মিলগুলোর আধুনিকায়নসহ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না হলে এই ভাগ্য বিড়ম্বনার অবসান ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। সরকারি মিলগুলো আমাদের মোট বার্ষিক ১৫ লাখ টন চিনি চাহিদার মধ্যে মাত্র ৭০ হাজার টন উৎপাদন করে। প্রতি বছরই হঠাৎ চিনি সংকট দেখা দেয়। তখন বাজারে চিনির দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। বেসরকারি আমদানিকারক ও রিফাইনারিগুলো এর সুযোগ নেয়। অথচ দেশীয় মিলগুলোর আধুনিকায়ন, এর ব্যবস্থাপনার উন্নতি, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিকল্পিত উৎপাদন ও দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এগুলো লাভজনক হয়ে উঠতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
No comments