দেশের সুউচ্চ ভবনের দ্বিগুণ লম্বা ট্যাংকার by মাসুদ মিলাদ

ট্যাংকারটি লম্বায় প্রায় ৩২৮ মিটার। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটে যেতে সময় লাগে সাত থেকে আট মিনিট। ‘এমটি সানলাইট জুয়েল’ নামে অতিদীর্ঘ এই ট্যাংকার সীতাকুণ্ড জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে ভাঙার জন্য আমদানি করেছে জনতা স্টিল করপোরেশন।


উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘সিটি সেন্টার বাংলাদেশ’-এর উচ্চতা ১৭১ মিটার। ট্যাংকারটির দৈর্ঘ্য এই ভবনের উচ্চতার প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি ভারতের উঁচু ভবন ইম্পেরিয়াল ভবনের উচ্চতার (২৫৪ মিটার) চেয়েও ৭৪ মিটার বেশি লম্বা এই ট্যাংকার।
বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, সচরাচর বন্দর দিয়ে এ ধরনের বিশালাকার বাতিল ট্যাংকার আমদানি হয় কম। পণ্য নিয়ে যেসব জাহাজ জেটিতে ভিড়ে সেগুলোর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৮৬ মিটার। অবশ্য প্রায় ২৫০ মিটার পর্যন্ত লম্বা ট্যাংকার জ্বালানি নিয়ে আসার নজির আছে। তবে এসব ট্যাংকার বন্দরে ভিড়তে পারে না। কুতুবদিয়ায় নোঙর করে ছোট ট্যাংকারের সাহায্যে জ্বালানি খালাস করে।
বন্দর ও কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, এই ট্যাংকারের প্রস্থ ৫৭ মিটার। এতে লোহা আছে ৪১ হাজার ৫৯১ দশমিক ৪ টন। তেল ধারণক্ষমতা ২০ লাখ ৮০ হাজার ১৪০ ব্যারেল, অর্থাৎ প্রায় ৩৩ কোটি সাত লাখ লিটার। ধারণক্ষমতা অনুযায়ী জ্বালানি ভর্তি করা হলে ট্যাংকারটির সর্বোচ্চ ওজন হবে তিন লাখ ৩৬৪ টন। গত সপ্তাহে বন্দরের বহির্নোঙরে ভিড়ে এটি। এরপর বন্দরের মাশুল ও কাস্টম হাউসে শুল্ক জমা দিয়ে এটি সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। বন্দর ও কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, এই ট্যাংকারের মাশুল বাবদ আদায় হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। শুল্ক বিভাগ এই ট্যাংকার থেকে আদায় করেছে প্রায় ছয় কোটি টাকা।
গ্রিসভিত্তিক ইন্টারমোডাল শিপ ব্রোকার্সের সাপ্তাহিক বাজার প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্যাংকারটি প্রথম কিনেন একজন পাকিস্তানি ক্রেতা। এরপর তাঁর থেকে বাংলাদেশি ক্রেতা কিনে নেন ট্যাংকারটি। জাপানের নাগাসু হিটাচি শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এই ট্যাংকার নির্মাণ করে ১৯৯৩ সালে। বিশালাকার এই ট্যাংকার টনপ্রতি গড়ে ৫০৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এই হিসাবে ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় দুই কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।
ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সাল পর্যন্ত ট্যাংকারটির নাম ছিল টারিম। এরপর সানলাইট জুয়েল নামকরণ করা হয়। পণ্য ভর্তি করা হলে এই ট্যাংকাটির পানির নিচের অংশ ২১ মিটার ডুবে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.