দশের লাঠি by আতিক

কখনো বালিশে কোট-প্যান্ট চড়িয়ে, কখনো টিভি নাটকের কোনো চরিত্র নিজেই অনুকরণ করে দেখাতাম। এমনিভাবে দিন দিন নাটকপাগল হয়েই একদিন কয়েক বন্ধু মিলে ঠিক করলাম, নাটক করব। পাঠ্যবইয়ে একটা গল্প ছিল ‘একতাই বল’। সেখানে মূল বিষয়, পাঁচ ভাই একত্রে থাকলে তাদের কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।


কিন্তু পৃথক থাকলে তাদের ক্ষতি হবে। গল্পে বৃদ্ধ পিতা মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তাঁর পাঁচ পুত্রকে পাঁচটি লাঠি একত্র করে আঁটি বেঁধে ভাঙতে দিলে কেউই তা ভাঙতে পারে না। কিন্তু যখন আঁটি থেকে একটি করে লাঠি খুলে খুলে দেওয়া হয়, তখন খুব সহজেই তারা ভাঙতে পারে। এ থেকে পিতা তাদের বোঝাতে চান যে তারা পাঁচজন যেন সারা জীবন মিলেমিশে থাকে। তাহলে কেউ তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
আমরা ছাদের ওপর ছোট একটি মঞ্চের মতো তৈরি করলাম। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন মিলে মোটামুটি ১৫-২০ জন দর্শক। আমি নাটক পরিচালনার পাশাপাশি বৃদ্ধ পিতার চরিত্র করছি। খালাতো-মামাতো ভাইসহ বন্ধুরা আরও চারজন। আগে থেকে পাটকাঠি দিয়ে পাঁচটি লাঠির আঁটি তৈরি করা ছিল এবং আলগা পাঁচটি লাঠি রাখা হয়েছিল। শুরু হলো অনুষ্ঠন। আমি শয্যাশায়ী বৃদ্ধ পিতা হয়ে পুত্রদের ডাকলাম এবং বললাম পাঁচটি লাঠি নিয়ে আসতে। পুত্ররা একে একে পাঁচজন পাঁচটি লাঠি নিয়ে এল। তাদের একটি করে লাঠি ভাঙতে দেয়া হলো, সবাই খুব সহজেই তা ভেঙে ফেলল। এবার পাঁচটি লাঠি একত্রে করে একে একে সব পুত্রকে দেওয়া হলো, কিন্তু কেউ তা ভাঙতে না পারারই কথা ছিল। যেহেতু লাঠিগুলো পাটকাঠির, ইচ্ছে করলে পাঁচটি কেন ১০টিও একত্রে ভাঙা যায়, কিন্তু আমাদের নাটকের খাতিরে লাঠির আঁটিটি কিছুতেই ভাঙা যাবে না। তাই একে একে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পুত্র সবাই দেখাল—অনেক চেষ্টা করেও আঁটিটি ভাঙতে পারল না এবং বলল, ‘পারছি, না বাবা’। কিন্তু যেই পঞ্চম পুত্রের হাতে গেল, ও খুব সহজেই কোনো রকম চেষ্টা না করে পাঁচটি লাঠির আঁটিটি ভেঙে ফেলল এবং ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে বোকার মতো খুব শুদ্ধ ভাষায় বলতে গিয়ে বলে ফেলল, ‘ভেঙতে পেরেছি, বাবা’। চারদিকে হাসির রোল পড়ে গেল। আমি তো হতবাক। শয্যাশায়ী অসুস্থ বৃদ্ধ হয়েও উঠে বসে পড়েছি। সবাই একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছি। এরপর আর কী করা, দর্শকের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও হাসি।
মনিপুর, মিরপুর, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.