পাঠকের প্রশ্ন, আইনি পরামর্শ-ভূমি অফিসে হয়রানি থেকে মুক্তি কীভাবে?

মনমোহন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আদালতের মাধ্যমে তাঁর সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আমার বাবাকে ভোগদখলের জন্য বুঝিয়ে দেন। আমার বাবা আদালতের রায়ে ডিক্রিপ্রাপ্ত হয়ে ভোগদখল করতেন। তাঁর নামে এসএ রেকর্ডভুক্ত ছিল এবং জমির খাজনা নিজ নামে দিতেন।


আমার বিদেশে অবস্থানের সময় আমার বাবা তাঁর গ্রামের জমিজমা নিকটাত্মীয়কে মৌখিক দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে তিনি ঢাকা শহরে বসবাস করতেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত।
আমি দীর্ঘ সময় বিদেশে থেকে দেশে ফেরার পর গ্রামের সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে ইউনিয়ন তহশিলদার আমাকে জমাভাগের রেজিস্ট্রার দেখান, যাতে আমার বাবার নাম লাল কালি দিয়ে কাটা রয়েছে এবং তদস্থলে অন্যের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বিধায় আমার কাছ থেকে খাজনা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান করার পর ওই জমির বিষয়ে দখলদারের নামে দুটি দলিল নম্বর যথাক্রমে ৩৩৮৬ ও ৩৩৮৮-এর ফটোকপি আমার হস্তগত হয়।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, দলিলদাতাদের গ্রামের ঠিকানায় তাঁদের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার তালিকায়, তফসিল অফিসে এবং গ্রামের লোকের কাছে জীবিত বা মৃত তাঁদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমি স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপজেলা অফিসে নামজারি ও জমাভাগ বাতিলের আবেদন করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাঁর অধীনে ইউনিয়ন ভূমি তহশিল অফিসে আমাকে আমার কাগজপত্র নায়েবের কাছে প্রদর্শনের মৌখিক নির্দেশ দেন এবং বিবাদীপক্ষের কাগজপত্র পরীক্ষা করে স্থানীয় লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে তাঁর কাছে তদন্ত রিপোর্ট করার ব্যবস্থা করেন। আমি আমার কাগজপত্র ও সাক্ষী নায়েবের সামনে পেশ করেছি। কিন্তু বিবাদীপক্ষ নায়েবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তাদের দলিলপত্র প্রদর্শন করেনি। নায়েব সহকারী কমিশনারকে তাঁর তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। আমি সহকারী কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুটি জালিয়াতি দলিল সম্পর্কে লিখিত তথ্য দিই এবং বিবাদীপক্ষকে নোটিশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। উল্লেখ্য, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসের কর্মচারীরা বিবাদীপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণে তাঁরা তদন্ত রিপোর্টের ফাইল সহকারী কমিশনারের কাছে পেশ করছেন না। আইনি সুপরামর্শের জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করছি।
মো. আবদুর রউফ খান।

পরামর্শ: আপনার বিষয়টি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিতভাবে পেশ করুন। তাঁর আদেশে সন্তুষ্ট না হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনেও অবগত করতে পারেন। এ ছাড়া জালিয়াতির অভিযোগ এনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।
কাজী জাহেদ ইকবাল
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

No comments

Powered by Blogger.