আলোচিত ৫ by উৎপল শুভ্র
মাশরাফির ফেরা কততম বারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা? তিনি নিজেও কি বলতে পারবেন! আশ্চর্য এক ক্রিকেটার, ভাগ্য তাঁকে নিয়ে প্রতিনিয়ত খেলা করে, আর প্রতিবারই তিনি সব প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিপুল বিক্রমে ফিরে আসেন।
কখনো ছয় মাস, কখনো এক বছর, কখনো বা তার চেয়েও বেশি দিন পর যখন ফেরেন, যেন সেই পুরোনো মাশরাফি! এবার সংশয়টা সবচেয়ে বেশি ছিল। মেঘে মেঘে বেলা তো কম হয়নি, হাঁটুতে সপ্তম অস্ত্রোপচারের ধাক্কা সামলে ফেরা কি সম্ভব! তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেই হয়তো পারলেন। টুর্নামেন্টে উইকেট নিয়েছেন ছয়টি, কিন্তু উইকেটের সংখ্যা দিয়ে কখনোই মাশরাফির বোলিংয়ের মহিমা বোঝা যায় না। ওভারপ্রতি মাত্র ৪ দশমিক ৪৪ রান বরং কিছুটা ধারণা দেয়। বলের ওপর সহজাত নিয়ন্ত্রণ আর ক্ষুরধার ক্রিকেট-মস্তিষ্ক মিলিয়ে মাশরাফিই বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের চিরকালীন নেতা! অন্য অনেক প্রাপ্তির মধ্যে মাশরাফির আবার মাশরাফি হয়ে ফেরাটাও এই এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের বড় পাওয়া।
তামিমের উদ্যাপন
তামিমের ব্যাটিং যেমন দর্শনীয়, তাঁর উদ্যাপনও তা-ই। ২০১০ সালে লর্ডসে সেঞ্চুরির পর তাঁর উদ্যাপন ইংলিশ মিডিয়ায় যতটা আলোচিত হয়েছে, আর কারও উদ্যাপন নিয়ে তা হয়েছে কি না সন্দেহ! অনেকটা দৌড়ে এসে লাফিয়ে ওঠা, তারপর জার্সির পিঠে অদৃশ্য নামটির দিকে ইঙ্গিত করে অনার্স বোর্ডে তা লিখতে বলা...কারও কাছে তা ঔদ্ধত্য বলে মনে হতেই পারে। তবে তামিম তো এ কারণেই তামিম। এই এশিয়া কাপেও ব্যতিক্রমী তাঁর উদ্যাপন। প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির পর ব্যাট তোলার ধরন দেখে মনে হয়েছিল, এতে বাড়তি কিছু আছে। তাঁকে এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ দেওয়া বোর্ড সভাপতিকেই কি দেখালেন ব্যাটটা? পরে জানিয়েছেন, ব্যাট তুলেছিলেন প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের দিকে। তামিমের অন্যায়ভাবে বাদ পড়ার প্রতিবাদে আকরাম যা করেছিলেন, তাতে কৃতজ্ঞতা তো জানানোই উচিত। নাকি তামিম বলতে চেয়েছেন, ‘আমি আপনার মান রাখলাম।’ ফাইনালের উদ্যাপনটা হলো আরও ব্যতিক্রমী। হাফ সেঞ্চুরির পর এক-দুই-তিন-চার করে হাতের চারটি আঙুল দেখিয়ে মনে করিয়ে দিলেন, এই হাফ সেঞ্চুরি তাঁর চারে চার। তাঁকে ঘিরে গত কিছুদিনের সব বিতর্ক মুছে দেওয়ার কাজটিও করল এই টানা চার হাফ সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি
সেই কবে থেকে প্রতীক্ষা! ভারতীয়দের তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেরও কি নয়! প্রতীক্ষায় থাকার মতোই তো এক অর্জন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অনেকেরই সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি সম্ভব বলে কেউ কি ভেবেছিলেন কোনো দিন! শচীন টেন্ডুলকার এই অসম্ভবকে সম্ভব বলে মনে করিয়েছেন অনেক দিন আগেই। কিন্তু অভূতপূর্ব এই কীর্তির মহিমাটা বাড়াতেই কি না ক্রিকেট-দেবতা তাঁর বরপুত্রকে এত দিন অপেক্ষায় রাখলেন। আমাদের লাভই হলো তাতে। টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির সঙ্গে জড়িয়ে গেল বাংলাদেশের নাম। যতবার এ নিয়ে কথা হবে, অনেক বছর পরও যখন লেখা হবে কিছু, উচ্চারিত হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নামও। এ দেশের মানুষের কাছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকার প্রাপ্তিটা দ্বিগুণ হয়ে গেল সেই রাতে বাংলাদেশের জয়ে। টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি দেখলাম, সঙ্গে পেলাম বাংলাদেশের জয়ও। ‘সোনায় সোহাগা’ বোধ হয় একেই বলে!
শ্রীলঙ্কাবিহীন ফাইনাল
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার দুটি রেকর্ড ছিল। একটি এখনো আছে, অন্যটিতে ছেদ টেনে দিল ঢাকার এই একাদশ আসর। এর আগের ১০টি এশিয়া কাপেই ছিল শুধু শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপের সব আসরের অংশ হয়ে থাকার সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ন। তবে ভেঙে গেল সব ফাইনালে খেলার রেকর্ড। ১৯৮৪ সালে শারজায় প্রথম এবং বাংলাদেশবিহীন একমাত্র এশিয়া কাপে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—তিন দলই ছিল। ১৯৮৬ শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপে অংশ নেয়নি ভারত, ১৯৯০ এশিয়া কাপে পাকিস্তান। ওই দুই এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার ফাইনালে ওঠাটা তাই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই নিশ্চিত হয়ে ছিল। বাকি আটটি এশিয়া কাপে ভারত বা পাকিস্তানকে ছিটকে দিয়েই ফাইনাল খেলেছে দ্বীপদেশটি। ১০টি ফাইনালের পাঁচটিতেই অবশ্য পরাজয়ের দুঃখ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। তবে এবারের দুঃখের কোনো তুলনা নেই। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে না পারার দুঃখ তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে তিন ম্যাচেই পরাজয়ের লজ্জা। এখন এটা প্রায় অবিশ্বাস্যই লাগছে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফেবারিট হিসেবে শ্রীলঙ্কার বাক্সেই পড়েছিল সবচেয়ে বেশি ভোট!
মুশফিকুরের কান্না
কে কাঁদেনি সেই রাতে! ছুঁতে ছুঁতে হারিয়ে ফেলা স্বপ্ন বাংলাদেশ দলকে কাঁদিয়েছে, কাঁদিয়েছে দর্শকদের—পুরো দেশকেই! একটি ম্যাচকে ঘিরে একটি জাতির এমন সম্মিলিত কান্নার ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে কি আর আছে! মাঠের খেলায় যেমন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, ম্যাচ-পরবর্তী কান্নাপর্বেরও। অধিনায়কের বাঁধভাঙা কান্নাই ছড়িয়ে পড়েছে সতীর্থদের মধ্যে, দেখতে না দেখতে পুরো দেশেই। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম এর আগেও অনেকবারই কান্নায় ভেসেছে। সবচেয়ে বেশি, আরেকটি ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গের পর। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে ৬ রানে শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও মুরালিধরনের যেমন খুশি ব্যাট চালানোর কাছে হেরে যাওয়া প্রসঙ্গে ‘হূদয়বিদারক’ কথাটা খুব যায়। ম্যাচ শেষে বিদীর্ণ হূদয় নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে আবেগের প্রকাশটা সেবার ড্রেসিংরুমের চার দেয়ালেই বন্দী ছিল। এবার উপলক্ষটা অনেক বড়, আবেগের তীব্রতাও ছিল বেশি, মুশফিকুর রহিমের তাই নিজেকে আড়াল করার কথা মনে থাকল না। মাঠেই সাকিবকে জড়িয়ে ভেঙে পড়লেন কান্নায়। টুকরো টুকরো অনেক ছবির ভিড়ে শেষ পর্যন্ত এ ছবিটিই বোধ হয় হয়ে থাকবে এই এশিয়া কাপের চিরজীবী স্মৃতি।
তামিমের উদ্যাপন
তামিমের ব্যাটিং যেমন দর্শনীয়, তাঁর উদ্যাপনও তা-ই। ২০১০ সালে লর্ডসে সেঞ্চুরির পর তাঁর উদ্যাপন ইংলিশ মিডিয়ায় যতটা আলোচিত হয়েছে, আর কারও উদ্যাপন নিয়ে তা হয়েছে কি না সন্দেহ! অনেকটা দৌড়ে এসে লাফিয়ে ওঠা, তারপর জার্সির পিঠে অদৃশ্য নামটির দিকে ইঙ্গিত করে অনার্স বোর্ডে তা লিখতে বলা...কারও কাছে তা ঔদ্ধত্য বলে মনে হতেই পারে। তবে তামিম তো এ কারণেই তামিম। এই এশিয়া কাপেও ব্যতিক্রমী তাঁর উদ্যাপন। প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির পর ব্যাট তোলার ধরন দেখে মনে হয়েছিল, এতে বাড়তি কিছু আছে। তাঁকে এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ দেওয়া বোর্ড সভাপতিকেই কি দেখালেন ব্যাটটা? পরে জানিয়েছেন, ব্যাট তুলেছিলেন প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের দিকে। তামিমের অন্যায়ভাবে বাদ পড়ার প্রতিবাদে আকরাম যা করেছিলেন, তাতে কৃতজ্ঞতা তো জানানোই উচিত। নাকি তামিম বলতে চেয়েছেন, ‘আমি আপনার মান রাখলাম।’ ফাইনালের উদ্যাপনটা হলো আরও ব্যতিক্রমী। হাফ সেঞ্চুরির পর এক-দুই-তিন-চার করে হাতের চারটি আঙুল দেখিয়ে মনে করিয়ে দিলেন, এই হাফ সেঞ্চুরি তাঁর চারে চার। তাঁকে ঘিরে গত কিছুদিনের সব বিতর্ক মুছে দেওয়ার কাজটিও করল এই টানা চার হাফ সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি
সেই কবে থেকে প্রতীক্ষা! ভারতীয়দের তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেরও কি নয়! প্রতীক্ষায় থাকার মতোই তো এক অর্জন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অনেকেরই সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি সম্ভব বলে কেউ কি ভেবেছিলেন কোনো দিন! শচীন টেন্ডুলকার এই অসম্ভবকে সম্ভব বলে মনে করিয়েছেন অনেক দিন আগেই। কিন্তু অভূতপূর্ব এই কীর্তির মহিমাটা বাড়াতেই কি না ক্রিকেট-দেবতা তাঁর বরপুত্রকে এত দিন অপেক্ষায় রাখলেন। আমাদের লাভই হলো তাতে। টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির সঙ্গে জড়িয়ে গেল বাংলাদেশের নাম। যতবার এ নিয়ে কথা হবে, অনেক বছর পরও যখন লেখা হবে কিছু, উচ্চারিত হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নামও। এ দেশের মানুষের কাছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকার প্রাপ্তিটা দ্বিগুণ হয়ে গেল সেই রাতে বাংলাদেশের জয়ে। টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি দেখলাম, সঙ্গে পেলাম বাংলাদেশের জয়ও। ‘সোনায় সোহাগা’ বোধ হয় একেই বলে!
শ্রীলঙ্কাবিহীন ফাইনাল
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার দুটি রেকর্ড ছিল। একটি এখনো আছে, অন্যটিতে ছেদ টেনে দিল ঢাকার এই একাদশ আসর। এর আগের ১০টি এশিয়া কাপেই ছিল শুধু শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপের সব আসরের অংশ হয়ে থাকার সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ন। তবে ভেঙে গেল সব ফাইনালে খেলার রেকর্ড। ১৯৮৪ সালে শারজায় প্রথম এবং বাংলাদেশবিহীন একমাত্র এশিয়া কাপে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—তিন দলই ছিল। ১৯৮৬ শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপে অংশ নেয়নি ভারত, ১৯৯০ এশিয়া কাপে পাকিস্তান। ওই দুই এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার ফাইনালে ওঠাটা তাই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই নিশ্চিত হয়ে ছিল। বাকি আটটি এশিয়া কাপে ভারত বা পাকিস্তানকে ছিটকে দিয়েই ফাইনাল খেলেছে দ্বীপদেশটি। ১০টি ফাইনালের পাঁচটিতেই অবশ্য পরাজয়ের দুঃখ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। তবে এবারের দুঃখের কোনো তুলনা নেই। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে না পারার দুঃখ তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে তিন ম্যাচেই পরাজয়ের লজ্জা। এখন এটা প্রায় অবিশ্বাস্যই লাগছে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফেবারিট হিসেবে শ্রীলঙ্কার বাক্সেই পড়েছিল সবচেয়ে বেশি ভোট!
মুশফিকুরের কান্না
কে কাঁদেনি সেই রাতে! ছুঁতে ছুঁতে হারিয়ে ফেলা স্বপ্ন বাংলাদেশ দলকে কাঁদিয়েছে, কাঁদিয়েছে দর্শকদের—পুরো দেশকেই! একটি ম্যাচকে ঘিরে একটি জাতির এমন সম্মিলিত কান্নার ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে কি আর আছে! মাঠের খেলায় যেমন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, ম্যাচ-পরবর্তী কান্নাপর্বেরও। অধিনায়কের বাঁধভাঙা কান্নাই ছড়িয়ে পড়েছে সতীর্থদের মধ্যে, দেখতে না দেখতে পুরো দেশেই। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম এর আগেও অনেকবারই কান্নায় ভেসেছে। সবচেয়ে বেশি, আরেকটি ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গের পর। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে ৬ রানে শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও মুরালিধরনের যেমন খুশি ব্যাট চালানোর কাছে হেরে যাওয়া প্রসঙ্গে ‘হূদয়বিদারক’ কথাটা খুব যায়। ম্যাচ শেষে বিদীর্ণ হূদয় নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে আবেগের প্রকাশটা সেবার ড্রেসিংরুমের চার দেয়ালেই বন্দী ছিল। এবার উপলক্ষটা অনেক বড়, আবেগের তীব্রতাও ছিল বেশি, মুশফিকুর রহিমের তাই নিজেকে আড়াল করার কথা মনে থাকল না। মাঠেই সাকিবকে জড়িয়ে ভেঙে পড়লেন কান্নায়। টুকরো টুকরো অনেক ছবির ভিড়ে শেষ পর্যন্ত এ ছবিটিই বোধ হয় হয়ে থাকবে এই এশিয়া কাপের চিরজীবী স্মৃতি।
No comments