প্রতিবেশী-'পশ্চিমবঙ্গ'-এর তাৎপর্য by জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী
পশ্চিমবঙ্গ' নাম বাংলা পশ্চিম বাংলা এবং ইংরেজি 'ডবংঃ ইধহমধষ'-এর বিভ্রান্তি দূর করবে। তবে যা বেশ লক্ষণীয়, সেটা হলো তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের সরকার এবং বিরোধী বামফ্রন্ট ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটা করেছে। অথচ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ ও মতানৈক্য বিদ্যমান।
কয়েক মাস আগে বিধানসভার নির্বাচনের সময়ে তাদের বৈরিতা চরম আকার ধারণ করে। উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল-কংগ্রেস আঁতাত ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে বিশাল জয় অর্জন করে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে সরকার ও বিরোধী দল একত্রে কাজ করতে পারে, 'পশ্চিমবঙ্গ' নামে তাদের ঐকমত্য সেটাই প্রমাণ করেছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বৃহত্তর স্বার্থে এমনি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, সেটা দেশে কিংবা বিদেশেই হোক না কেন
ভারতের পশ্চিম বাংলা রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে 'পশ্চিমবঙ্গ' রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বদলীয়ভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই রাজ্যের নতুন নামের বিষয়টি অনেকটা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই বিবেচনা করা হয়। বিরোধী বামফ্রন্ট এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে এবং সব দল মিলেই 'পশ্চিমবঙ্গ' নামের ক্ষেত্রে ঐকমত্য পোষণ করে। এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে, ইংরেজিতেও এই 'পশ্চিমবঙ্গ' নাম ব্যবহৃত হবে। আগে বাংলায় 'পশ্চিম বাংলা' এবং ইংরেজিতে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল' অর্থাৎ ডবংঃ ইধহমধষ ব্যবহৃত হয়েছে। অবশ্য বিধানসভায় এই ব্যাপারে আইন প্রণয়ন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হওয়ার পরই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যেহেতু সর্বদলীয়ভাবে এই নতুন নামের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাই এই বিষয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি কিংবা মতবিরোধ থাকার কথা নয়। এটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার এবং সেটাও বেশি দেরি হওয়ার কথা নয়। সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা প্রশংসনীয় যে, সব দল একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে একমত হতে পেরেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং রাজ্যের নামকরণের ক্ষেত্রে ঐকমত্য গঠনে তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাজ্যের বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, জনসাধারণের কল্যাণ এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়, এমনি বিষয়ে বিরোধী দল সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, রাজ্যের একটি নতুন নাম প্রয়োজন ছিল এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটার সমাধান হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট।
উল্লেখ্য, পশ্চিম বাংলার নাম পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বেশ অনেক দিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল বিভিন্ন কারণে, যদিও এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রাজ্যের নাম বাংলায় 'পশ্চিম বাংলা' এবং ইংরেজিতে 'ডবংঃ ইধহমধষ' হওয়ায় বিভিন্ন জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তা ছাড়া যেহেতু রাজ্যের বাইরে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই 'ডবংঃ ইধহমধষ' ব্যবহৃত হয়, সে কারণে রাজ্যের বেশকিছু অসুবিধাও প্রত্যক্ষ করা যায়। যেমন ভারতের অনেক রাজ্যের কোনো কার্যক্রম থাকলে, 'ডবংঃ ইধহমধষ' হওয়ার কারণে এই রাজ্যের অবস্থান বেশ পরে আসে। কেননা 'ড' অক্ষরটির অবস্থান প্রায় শেষ প্রান্তে। এখন যখন ইংরেজিতেও 'চধংপযরস ইধহমধ' হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই 'চ'-এর কারণে রাজ্যের অবস্থান বেশ ওপরে উঠে আসবে এবং কিছুটা হলেও সুবিধা দেবে।
এই নাম নিয়ে বেশকিছু সুপারিশ ছিল। শুধু 'বঙ্গ' কিংবা 'বঙ্গদেশ' এবং আরও কিছু নামও বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বও আলোচনায় আসে এবং কোনো রকম বিভ্রান্তির সম্ভাবনাও মাথায় রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত 'পশ্চিমবঙ্গ' নামের ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হয় সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে। অবশ্য এই সিদ্ধান্ত জনগণ এবং বুদ্ধিজীবীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যদিও অধিকাংশ মানুষের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
বাংলা ভাষাভাষীদের নিয়ে 'বাংলা' অঞ্চলের আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এই নামকরণের মাঝ দিয়ে। সাবেক পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলা নিয়েই বৃহত্তরভাবে 'বাংলা'র অবস্থান ছিল। ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ে এই বাংলারই ছবি পাওয়া যায়। নবাব সিরাজউদদৌলার 'বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার' উল্লেখ এই বাংলাকেই নিয়ে। পরে রাজনৈতিক এবং অন্যান্য কারণে 'বাংলার' পরিবর্তন ঘটে বিভিন্ন অবয়বে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীন দেশ হিসেবে উদ্ভব ঘটার পর বৃহত্তরভাবে সাবেক পূর্ব বাংলা হলো 'পূর্ব পাকিস্তান' এবং পশ্চিম বাংলা অন্তর্ভুক্ত হলো ভারতের সঙ্গে। আবার ১৯৭১ সালে এক রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে 'পূর্ব পাকিস্তানের' আবির্ভাব হলো স্বাধীন ও সার্বভৌম 'বাংলাদেশ' হিসেবে। বলাবাহুল্য, এই নতুন দেশ বাংলা এবং বাঙালির স্বকীয় সত্তা নিয়েই বিচরণ করছে। তবু পশ্চিম বাংলার সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক নৈকট্য। বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ 'পশ্চিম' শব্দটির প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং সেই কারণে এই নতুন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তবে অধিকাংশ জনগণই এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
রাজ্যের রাজধানী কলকাতার নামও বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। বাংলায় 'কলিকাতা' কিংবা ইংরেজিতে ঈধষপধঃঃধ-এর বদলে এখন উভয় ভাষায়ই 'কোলকাতা' ব্যবহৃত হচ্ছে।
'পশ্চিমবঙ্গ' নাম বাংলা পশ্চিম বাংলা এবং ইংরেজি 'ডবংঃ ইধহমধষ'-এর বিভ্রান্তি দূর করবে। তবে যা বেশ লক্ষণীয়, সেটা হলো তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের সরকার এবং বিরোধী বামফ্রন্ট ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটা করেছে। অথচ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ ও মতানৈক্য বিদ্যমান। কয়েক মাস আগে বিধানসভার নির্বাচনের সময়ে তাদের বৈরিতা চরম আকার ধারণ করে। উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল-কংগ্রেস আঁতাত ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে বিশাল জয় অর্জন করে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে সরকার ও বিরোধী দল একত্রে কাজ করতে পারে, 'পশ্চিমবঙ্গ' নামে তাদের ঐকমত্য সেটাই প্রমাণ করেছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বৃহত্তর স্বার্থে এমনি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, সেটা দেশে কিংবা বিদেশেই হোক না কেন। 'পশ্চিমবঙ্গ' রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আরও অগ্রসরমান হোক, এটাই বাংলাদেশের বাসনা।
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী : সিনিয়র সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক
ভারতের পশ্চিম বাংলা রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে 'পশ্চিমবঙ্গ' রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বদলীয়ভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই রাজ্যের নতুন নামের বিষয়টি অনেকটা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই বিবেচনা করা হয়। বিরোধী বামফ্রন্ট এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে এবং সব দল মিলেই 'পশ্চিমবঙ্গ' নামের ক্ষেত্রে ঐকমত্য পোষণ করে। এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে, ইংরেজিতেও এই 'পশ্চিমবঙ্গ' নাম ব্যবহৃত হবে। আগে বাংলায় 'পশ্চিম বাংলা' এবং ইংরেজিতে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল' অর্থাৎ ডবংঃ ইধহমধষ ব্যবহৃত হয়েছে। অবশ্য বিধানসভায় এই ব্যাপারে আইন প্রণয়ন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হওয়ার পরই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যেহেতু সর্বদলীয়ভাবে এই নতুন নামের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাই এই বিষয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি কিংবা মতবিরোধ থাকার কথা নয়। এটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার এবং সেটাও বেশি দেরি হওয়ার কথা নয়। সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা প্রশংসনীয় যে, সব দল একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে একমত হতে পেরেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং রাজ্যের নামকরণের ক্ষেত্রে ঐকমত্য গঠনে তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাজ্যের বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, জনসাধারণের কল্যাণ এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়, এমনি বিষয়ে বিরোধী দল সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, রাজ্যের একটি নতুন নাম প্রয়োজন ছিল এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটার সমাধান হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট।
উল্লেখ্য, পশ্চিম বাংলার নাম পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বেশ অনেক দিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল বিভিন্ন কারণে, যদিও এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রাজ্যের নাম বাংলায় 'পশ্চিম বাংলা' এবং ইংরেজিতে 'ডবংঃ ইধহমধষ' হওয়ায় বিভিন্ন জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তা ছাড়া যেহেতু রাজ্যের বাইরে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই 'ডবংঃ ইধহমধষ' ব্যবহৃত হয়, সে কারণে রাজ্যের বেশকিছু অসুবিধাও প্রত্যক্ষ করা যায়। যেমন ভারতের অনেক রাজ্যের কোনো কার্যক্রম থাকলে, 'ডবংঃ ইধহমধষ' হওয়ার কারণে এই রাজ্যের অবস্থান বেশ পরে আসে। কেননা 'ড' অক্ষরটির অবস্থান প্রায় শেষ প্রান্তে। এখন যখন ইংরেজিতেও 'চধংপযরস ইধহমধ' হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই 'চ'-এর কারণে রাজ্যের অবস্থান বেশ ওপরে উঠে আসবে এবং কিছুটা হলেও সুবিধা দেবে।
এই নাম নিয়ে বেশকিছু সুপারিশ ছিল। শুধু 'বঙ্গ' কিংবা 'বঙ্গদেশ' এবং আরও কিছু নামও বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বও আলোচনায় আসে এবং কোনো রকম বিভ্রান্তির সম্ভাবনাও মাথায় রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত 'পশ্চিমবঙ্গ' নামের ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হয় সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে। অবশ্য এই সিদ্ধান্ত জনগণ এবং বুদ্ধিজীবীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যদিও অধিকাংশ মানুষের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
বাংলা ভাষাভাষীদের নিয়ে 'বাংলা' অঞ্চলের আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এই নামকরণের মাঝ দিয়ে। সাবেক পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলা নিয়েই বৃহত্তরভাবে 'বাংলা'র অবস্থান ছিল। ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ে এই বাংলারই ছবি পাওয়া যায়। নবাব সিরাজউদদৌলার 'বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার' উল্লেখ এই বাংলাকেই নিয়ে। পরে রাজনৈতিক এবং অন্যান্য কারণে 'বাংলার' পরিবর্তন ঘটে বিভিন্ন অবয়বে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীন দেশ হিসেবে উদ্ভব ঘটার পর বৃহত্তরভাবে সাবেক পূর্ব বাংলা হলো 'পূর্ব পাকিস্তান' এবং পশ্চিম বাংলা অন্তর্ভুক্ত হলো ভারতের সঙ্গে। আবার ১৯৭১ সালে এক রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে 'পূর্ব পাকিস্তানের' আবির্ভাব হলো স্বাধীন ও সার্বভৌম 'বাংলাদেশ' হিসেবে। বলাবাহুল্য, এই নতুন দেশ বাংলা এবং বাঙালির স্বকীয় সত্তা নিয়েই বিচরণ করছে। তবু পশ্চিম বাংলার সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক নৈকট্য। বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ 'পশ্চিম' শব্দটির প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং সেই কারণে এই নতুন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তবে অধিকাংশ জনগণই এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
রাজ্যের রাজধানী কলকাতার নামও বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। বাংলায় 'কলিকাতা' কিংবা ইংরেজিতে ঈধষপধঃঃধ-এর বদলে এখন উভয় ভাষায়ই 'কোলকাতা' ব্যবহৃত হচ্ছে।
'পশ্চিমবঙ্গ' নাম বাংলা পশ্চিম বাংলা এবং ইংরেজি 'ডবংঃ ইধহমধষ'-এর বিভ্রান্তি দূর করবে। তবে যা বেশ লক্ষণীয়, সেটা হলো তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের সরকার এবং বিরোধী বামফ্রন্ট ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটা করেছে। অথচ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ ও মতানৈক্য বিদ্যমান। কয়েক মাস আগে বিধানসভার নির্বাচনের সময়ে তাদের বৈরিতা চরম আকার ধারণ করে। উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল-কংগ্রেস আঁতাত ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে বিশাল জয় অর্জন করে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে সরকার ও বিরোধী দল একত্রে কাজ করতে পারে, 'পশ্চিমবঙ্গ' নামে তাদের ঐকমত্য সেটাই প্রমাণ করেছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বৃহত্তর স্বার্থে এমনি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, সেটা দেশে কিংবা বিদেশেই হোক না কেন। 'পশ্চিমবঙ্গ' রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আরও অগ্রসরমান হোক, এটাই বাংলাদেশের বাসনা।
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী : সিনিয়র সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক
No comments