শিল্পী সংগ্রামী by ফকির আলমগীর
অবশেষে মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হলেন মুক্তিযোদ্ধা, গণসঙ্গীতশিল্পী মাহবুবুল হায়দার মোহন। তিনি চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ২৩ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকার জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
এই দেশপ্রেমিক গণসঙ্গীতশিল্পী মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হননি। পরাজিত হননি স্বৈরাচার, মৌলবাদ আর রাজাকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে। জীবনসংগ্রামের বাঁকে বাঁকে তিনি লড়াই করেছেন, চাকরি করেছেন, গণমানুষের জন্য গান করেছেন, জাতীয় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে থেকেছেন। অপরিসীম ধৈর্য আর মনোবলের অধিকারী মোহন যেমন সুর-সঙ্গীতে মেধাবী ছিলেন, তেমনি সাংগঠনিক দক্ষতায় ছিলেন অতুলনীয়। তিনিই ঐতিহ্যবাহী ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করেছিলেন। অন্যদিকে গণসঙ্গীত দলগুলোকে একত্রিত করে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ গঠনকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে বিষয় নিয়ে আমি পরে আলোচনা করব।
আমি শুধু বলতে চাই, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি লড়াই করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, সংগঠন করেছেন, গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। কখনও পেছন ফিরে তাকাননি। অসুস্থতাও তাকে থামাতে পারেনি। নিজের লাভ-লোকসানের কথা না ভেবে সব সময় সংগঠনের কথা ভেবেছেন। নির্লোভ-নির্মোহ মানুষটি সব সময় মানুষের কথা ভাবতেন: দেশ ও দশের কথা ভাবতেন। আমার স্মরণে আছে, আমরা যখন গণসঙ্গীত দলগুলো একত্রিত হয়ে টিএসসিতে বারবার সভা করছি গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের ব্যাপারে, পরিকল্পনা করা হচ্ছে কেমন করে গণসঙ্গীত উৎসব করা হবে দেশব্যাপী এবং ঢাকায়, এরই মধ্যে আজীবন লড়াই করা গণমানুষের এই শিল্পীর জীবনটা হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। মোহন অসুস্থ হয়ে ২৭ মার্চ ২০১০ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৩ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মোহনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় শমরিতা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। সেখানে তার মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।
উন্নততর চিকিৎসার জন্য তাকে ব্যাংককের প্যারামনাইন হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রায় দেড় মাস চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন ১৫ জুন ২০১০ সালে। এরপর ভর্তি হন খাজা ইউনুস আলী হাসপাতালে। ওই মাসেরই মাঝামাঝি সময়ে আবারও তাকে পাঠানো হয় ব্যাংককে পরবর্তী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে কথা বলা প্রয়োজন তা হচ্ছে, অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন শিল্পী সংগ্রামী মোহনের পরিবারের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসার সাহায্যে এগিয়ে আসে। গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ শিল্পীর সাহায্যার্থে কনসার্টের আয়োজন করে। বিশেষ করে তার আমেরিকা প্রবাসী ভাই চিকিৎসার সাহায্যার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর পর থেকে চলতে থাকে মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মোহনের নিরন্তর সংগ্রাম। অন্যদিকে চলতে থাকে গণসঙ্গীত আর প্রিয় সংগঠন ক্রান্তির বিরামহীন কর্মকাণ্ড। কখনও গুণীজন সংবর্ধনা, শ্রোতার আসর: আবার কখনও হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্মবার্ষিকীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা অব্যাহত রাখেন এই অসুস্থ শরীরে। অপরিসীম মনোবল আর প্রাণশক্তির জোরে তিনি সংগঠনের কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে গেল বছর সারাদেশে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত গণসঙ্গীত উৎসবে যোগ দিয়েছেন, গান করেছেন। অসুস্থতা বা দুর্বলতাকে আমলে আনেননি।
মাহবুবুল হায়দার মোহন কিশোর বয়সেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৫৪ সালে বৃহত্তর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। ঢাকার নাগরিক সংস্কৃতি অঙ্গনে সংগঠক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত হলেও একবার যারা তার দরাজ ও দরদী কণ্ঠের গান শুনেছেন তারা মোহনকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও বিবেচনা করবেন। অর্থাৎ মোহন একদিকে দক্ষ সংগঠক, অন্যদিকে একজন গুণী গণশিল্পী। মুক্তিযোদ্ধা মোহন তরুণ বয়সে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার শোষণহীন সোনার বাংলা কায়েমের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই চেতনাকে, সেই স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে, অর্থবহ করে তুলতে তিনি অবিরাম সংগ্রাম করে গেছেন। এ জন্য তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির কর্মী হিসেবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ম,্ব সাংবাদিক কামাল লোহানীর সহযোগিতায় সংগঠিত করেন ঐতিহ্যবাহী ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীকে। পরবর্তী সময়ে ক্রান্তির সঙ্গে আরও যুক্ত হন ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক ও কবি আহমদ রফিক, একুশের প্রথম কবিতার জনক মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আসানুল হকসহ আরও অনেকে। এর পর দীর্ঘ সময়ব্যাপী মোহন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে গণসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে ক্রান্তির সাধারণ সম্পাদক হলেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন। গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। মোহন গণসঙ্গীত অ্যালবাম করেছেন। প্রবাসীদের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে গান করে প্রশংসিত হয়েছেন। মঞ্চে, টেলিভিশনে গান করলেও প্রচলিত প্রথাসিদ্ধ জনপ্রিয় শিল্পী তিনি ছিলেন না। বর্তমানে অনেকেই যখন শিল্পী হওয়ার আগে তারকাখ্যাতি চান, সেখানে মোহন ছিলেন ব্যতিক্রমী এক শিল্পী। কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তিন পাননি। এদিকে তার কোনো চাওয়া-পাওয়াও ছিল না। চিরত্যাগী এক শিল্পী সংগ্রামী মোহন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কেবল গণসঙ্গীতের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। জীবনে সঞ্চয় কিছু রেখে যেতে পারেননি; তার ওপর মরণব্যাধি ক্যান্সারের ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভার বহন। রেখে গেছেন স্ত্রী এবং দুই কন্যাকে, রেখে গেছেন দুই বছরের ফুটফুটে এক নাতিকে। শখ করে নাম রেখেছিলেন আয়াত। হাসপাতালে, শহীদ মিনারে অবুঝ শিশু আয়াত নানুর দিকে অপলক চেয়ে থাকে। সে কি বুঝতে পারে তার নানু না-ফেরার দেশে চলে গেছেন? তার নানু আর তাকে আদর করতে ফিরবেন না।
মোহনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
আমি শুধু বলতে চাই, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি লড়াই করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, সংগঠন করেছেন, গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। কখনও পেছন ফিরে তাকাননি। অসুস্থতাও তাকে থামাতে পারেনি। নিজের লাভ-লোকসানের কথা না ভেবে সব সময় সংগঠনের কথা ভেবেছেন। নির্লোভ-নির্মোহ মানুষটি সব সময় মানুষের কথা ভাবতেন: দেশ ও দশের কথা ভাবতেন। আমার স্মরণে আছে, আমরা যখন গণসঙ্গীত দলগুলো একত্রিত হয়ে টিএসসিতে বারবার সভা করছি গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের ব্যাপারে, পরিকল্পনা করা হচ্ছে কেমন করে গণসঙ্গীত উৎসব করা হবে দেশব্যাপী এবং ঢাকায়, এরই মধ্যে আজীবন লড়াই করা গণমানুষের এই শিল্পীর জীবনটা হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। মোহন অসুস্থ হয়ে ২৭ মার্চ ২০১০ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৩ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মোহনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় শমরিতা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। সেখানে তার মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।
উন্নততর চিকিৎসার জন্য তাকে ব্যাংককের প্যারামনাইন হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রায় দেড় মাস চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন ১৫ জুন ২০১০ সালে। এরপর ভর্তি হন খাজা ইউনুস আলী হাসপাতালে। ওই মাসেরই মাঝামাঝি সময়ে আবারও তাকে পাঠানো হয় ব্যাংককে পরবর্তী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে কথা বলা প্রয়োজন তা হচ্ছে, অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন শিল্পী সংগ্রামী মোহনের পরিবারের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসার সাহায্যে এগিয়ে আসে। গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ শিল্পীর সাহায্যার্থে কনসার্টের আয়োজন করে। বিশেষ করে তার আমেরিকা প্রবাসী ভাই চিকিৎসার সাহায্যার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর পর থেকে চলতে থাকে মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মোহনের নিরন্তর সংগ্রাম। অন্যদিকে চলতে থাকে গণসঙ্গীত আর প্রিয় সংগঠন ক্রান্তির বিরামহীন কর্মকাণ্ড। কখনও গুণীজন সংবর্ধনা, শ্রোতার আসর: আবার কখনও হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্মবার্ষিকীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা অব্যাহত রাখেন এই অসুস্থ শরীরে। অপরিসীম মনোবল আর প্রাণশক্তির জোরে তিনি সংগঠনের কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে গেল বছর সারাদেশে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত গণসঙ্গীত উৎসবে যোগ দিয়েছেন, গান করেছেন। অসুস্থতা বা দুর্বলতাকে আমলে আনেননি।
মাহবুবুল হায়দার মোহন কিশোর বয়সেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৫৪ সালে বৃহত্তর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। ঢাকার নাগরিক সংস্কৃতি অঙ্গনে সংগঠক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত হলেও একবার যারা তার দরাজ ও দরদী কণ্ঠের গান শুনেছেন তারা মোহনকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও বিবেচনা করবেন। অর্থাৎ মোহন একদিকে দক্ষ সংগঠক, অন্যদিকে একজন গুণী গণশিল্পী। মুক্তিযোদ্ধা মোহন তরুণ বয়সে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার শোষণহীন সোনার বাংলা কায়েমের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই চেতনাকে, সেই স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে, অর্থবহ করে তুলতে তিনি অবিরাম সংগ্রাম করে গেছেন। এ জন্য তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির কর্মী হিসেবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ম,্ব সাংবাদিক কামাল লোহানীর সহযোগিতায় সংগঠিত করেন ঐতিহ্যবাহী ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীকে। পরবর্তী সময়ে ক্রান্তির সঙ্গে আরও যুক্ত হন ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক ও কবি আহমদ রফিক, একুশের প্রথম কবিতার জনক মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আসানুল হকসহ আরও অনেকে। এর পর দীর্ঘ সময়ব্যাপী মোহন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে গণসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে ক্রান্তির সাধারণ সম্পাদক হলেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন। গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। মোহন গণসঙ্গীত অ্যালবাম করেছেন। প্রবাসীদের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে গান করে প্রশংসিত হয়েছেন। মঞ্চে, টেলিভিশনে গান করলেও প্রচলিত প্রথাসিদ্ধ জনপ্রিয় শিল্পী তিনি ছিলেন না। বর্তমানে অনেকেই যখন শিল্পী হওয়ার আগে তারকাখ্যাতি চান, সেখানে মোহন ছিলেন ব্যতিক্রমী এক শিল্পী। কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তিন পাননি। এদিকে তার কোনো চাওয়া-পাওয়াও ছিল না। চিরত্যাগী এক শিল্পী সংগ্রামী মোহন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কেবল গণসঙ্গীতের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। জীবনে সঞ্চয় কিছু রেখে যেতে পারেননি; তার ওপর মরণব্যাধি ক্যান্সারের ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভার বহন। রেখে গেছেন স্ত্রী এবং দুই কন্যাকে, রেখে গেছেন দুই বছরের ফুটফুটে এক নাতিকে। শখ করে নাম রেখেছিলেন আয়াত। হাসপাতালে, শহীদ মিনারে অবুঝ শিশু আয়াত নানুর দিকে অপলক চেয়ে থাকে। সে কি বুঝতে পারে তার নানু না-ফেরার দেশে চলে গেছেন? তার নানু আর তাকে আদর করতে ফিরবেন না।
মোহনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
ফকির আলমগীর :গণসঙ্গীতশিল্পী
No comments