বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৫০ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। শহীদ কে এম রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন তিনি পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেছেন কে এম রফিকুল ইসলামসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত।
তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকল। সাহসিকতার সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করছেন কে এম রফিকুল ইসলাম। এমন সময় হঠাৎ কয়েকটি গুলি এসে লাগল তাঁর শরীরে। লুটিয়ে পড়লেন তিনি। রক্তে রঞ্জিত হতে থাকল মাটি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা হরিশংকর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে।
হরিশংকর গ্রাম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত এলাকা থেকে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সামনের দিকে। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপনা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু তখনো কুষ্টিয়া জেলার ব্যাপক অংশ ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখলে। বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনা।
সীমান্ত থেকে দৌলতপুর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল এগিয়ে যাচ্ছিল কুষ্টিয়া জেলা সদর অভিমুখে। কিন্তু পথিমধ্যে হরিশংকর গ্রামে তাঁরা বাধাপ্রাপ্ত হন। সেখানে ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। তখন সেখানে দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কে এম রফিকুল ইসলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। পরে পাকিস্তানি সেনারা হরিশংকর গ্রাম থেকে চলে যায়। তখন সহযোদ্ধারা গ্রামবাসীর সহায়তায় কে এম রফিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে সমাহিত করেন।
কে এম রফিকুল ইসলাম চাকরি করতেন ওয়াপদায় (পানি উন্নয়ন বোর্ডে)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পে মেকানিক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এপ্রিল মাসের শেষে ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। তিনি একটি গেরিলা দলের সদস্য ছিলেন। তাঁর কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবুল কালাম। কুষ্টিয়া জেলার খোকসা, কুমারখালী, মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা নিয়ে ছিল ওই সাবসেক্টর। এই এলাকায় শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ বালুচ রেজিমেন্ট সামরিক প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন ও সম্মুখযুদ্ধে কে এম রফিকুল ইসলাম যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য কে এম রফিকুল ইসলামকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৮০। তাঁর প্রকৃত নাম খান মো. রফিকুল আলম।
শহীদ কে এম রফিকুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার গোপালনগর গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবার নাম আজাদ আলী খান (ওরফে আসাদ আলী খান)। মা মোছা. রাবেয়া খানম। শহীদ কে এম রফিকুল ইসলামের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
হরিশংকর গ্রাম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত এলাকা থেকে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সামনের দিকে। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপনা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু তখনো কুষ্টিয়া জেলার ব্যাপক অংশ ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখলে। বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনা।
সীমান্ত থেকে দৌলতপুর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল এগিয়ে যাচ্ছিল কুষ্টিয়া জেলা সদর অভিমুখে। কিন্তু পথিমধ্যে হরিশংকর গ্রামে তাঁরা বাধাপ্রাপ্ত হন। সেখানে ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। তখন সেখানে দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কে এম রফিকুল ইসলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। পরে পাকিস্তানি সেনারা হরিশংকর গ্রাম থেকে চলে যায়। তখন সহযোদ্ধারা গ্রামবাসীর সহায়তায় কে এম রফিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে সমাহিত করেন।
কে এম রফিকুল ইসলাম চাকরি করতেন ওয়াপদায় (পানি উন্নয়ন বোর্ডে)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পে মেকানিক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এপ্রিল মাসের শেষে ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। তিনি একটি গেরিলা দলের সদস্য ছিলেন। তাঁর কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবুল কালাম। কুষ্টিয়া জেলার খোকসা, কুমারখালী, মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা নিয়ে ছিল ওই সাবসেক্টর। এই এলাকায় শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ বালুচ রেজিমেন্ট সামরিক প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন ও সম্মুখযুদ্ধে কে এম রফিকুল ইসলাম যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য কে এম রফিকুল ইসলামকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৮০। তাঁর প্রকৃত নাম খান মো. রফিকুল আলম।
শহীদ কে এম রফিকুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার গোপালনগর গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবার নাম আজাদ আলী খান (ওরফে আসাদ আলী খান)। মা মোছা. রাবেয়া খানম। শহীদ কে এম রফিকুল ইসলামের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments