প্রতিরোধের মার্চ-শহীদ পরিবার-পরিজনের জিজ্ঞাসা by সৈয়দ জিয়াউর রহমান
আমরা তখন থাকতাম ‘রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কাছাকাছি একটি এলাকায়। ২৫ মার্চ রাত ১১টা কি ১২টার দিকেই শুরু হলো নারকীয় তাণ্ডব। চারদিক থেকে কেবল গোলাগুলির শব্দ। বাকি রাতটা কাটল আমাদের এক ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে।
পরদিন সকালে পাড়ার এক বিশ্বস্ত রিকশাচালককে রাজি করালাম আজিমপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য।
পরদিন সকালে পাড়ার এক বিশ্বস্ত রিকশাচালককে রাজি করালাম আজিমপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সেখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। আমার স্ত্রী এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদগ্রীব তাঁর মা-ভাই-বোনদের কাছে যাওয়ার জন্য।
আজিমপুর যাওয়ার পথে প্রথমেই চোখে পড়ল রাজারবাগ পুলিশ লাইনের একপ্রান্তে রাস্তার কোলঘেঁষে একটি পুকুরের পাশে ১৫-২০ জন পুলিশের মৃতদেহ। তারপর সারা রাস্তায়ই প্রায় একই দৃশ্য। কার্জন হলের উল্টো দিকে হাইকোর্ট মাজারের সামনে চার-পাঁচটি পরিত্যক্ত ভাঙা রিকশায় পড়ে রয়েছে আট-দশজন রিকশাচালকের মরদেহ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেষ প্রান্তে রাস্তার ধারে এবং ডিনামাইট দিয়ে ভেঙে ফেলা শহীদ মিনারের চত্বরে আরও অনেক মৃতদেহ। এই ছিল ঢাকা শহরের সর্বত্র ২৫ মার্চের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের বীভৎস দৃশ্য। আর তখন থেকেই শুরু পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি পশু-বাহিনীর ‘বীরত্বপূর্ণ’ হত্যা-অভিযান।
এই অভিযানের একপর্যায়ে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায় আজিমপুর থেকে আমার স্ত্রীর বড় বোনের ছেলে রেজাউল করিম বাবুলকে। সে ছিল কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র। কয়েক মাস পর্যন্ত তাকে আমরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছি, কিন্তু তার কোনো হদিস পাইনি। পরে হানাদারদের কবল থেকে পালিয়ে আসা এক তরুণের কাছে জানা গেছে, পশুরা বাবুলকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মেরে তার মৃতদেহ মিরপুর ব্রিজ থেকে নিচে নদীর পানিতে ফেলে দিয়েছে।
এর মধ্যে আমার মেজ মামা কর্নেল সৈয়দ নাজিম হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর গ্যারিসন-অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদুর রহমান মজুমদারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা। ডিসেম্বরে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুই দিন পর জীবন্মৃত অবস্থায় তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। তাঁর কাছ থেকে বিস্তারিত যা জানা গেছে তা হলো, পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে ধরেছিল এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মজুমদার এক বৈঠকে শেখ মুজিবের সঙ্গে ষড়যন্ত্র-তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন এবং সে সময় সে বৈঠকে উপস্থিত থেকে তিনি তা প্রত্যক্ষ করেছেন। কর্নেল হোসেন পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, এত বড় মিথ্যা কথা তিনি তাঁর প্রাণ গেলেও বলতে পারবেন না। তার ফলে দীর্ঘ নয় মাস তাঁর ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন, দেহের বিভিন্ন স্থানে বেয়োনেট দিয়ে কেটে তাতে লবণ দেওয়া হয়, জ্বলন্ত সিগারেটের সেঁকা দেওয়া হয় পিঠের সর্বত্র—আর সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রহার করা হয় অমানুষিকভাবে। ওদিকে মার্চ মাসের শেষে খবর এল আমার আরেক মামা—আমার মায়ের খালাতো ভাই, কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই নিহত হয়েছেন যশোর সেনানিবাসে। ড. কর্নেল হাই ছিলেন যশোর সেনানিবাসে সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের কমান্ডিং অফিসার। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যশোর সেনানিবাসের অফিসার্স কোয়ার্টারসে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরদিন তাঁর মরদেহ ঢাকায় তাঁর শ্বশুরালয়ে পাঠিয়ে দেয়।
এসব দুঃসহ খবরের মধ্যেই জানা গেল, টাঙ্গাইল শহরের অদূরে একটি গ্রামে আমার ছোট বোনের শ্বশুরবাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা ওই বাড়িতে এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ২২ জনকে, যার মধ্যে ছিলেন আমার বোনের শাশুড়ি, আমার বোনের দেবর জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের বন্ধু ভিকু চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী মিলি চৌধুরী ও আরও অনেকে। আমার বোন ও তার পরিবার ভাগ্যের জোরে সেদিন ছিল টাঙ্গাইল শহরে। ভিকু ভাই ও মিলি ভাবির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল। ভিকু ভাই বামপন্থী রাজনীতি করতেন। পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে তিনি টাঙ্গাইলে গিয়েছিলেন বন্ধু জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। আর সেখানেই তাঁকে প্রাণ দিতে হলো সস্ত্রীক হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে।
এভাবে হানাদারদের নয় মাসের ধ্বংসযজ্ঞে প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে, অমানুষিক নির্যাতনে জীবন্মৃত হতে হয়েছে লাখ লাখ জনকে এবং মান-সম্ভ্রম হারিয়ে বিধ্বস্ত হতে হয়েছে অগণিত নারীকে।
বাংলাদেশে এখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারের। এই বিচার চলছে ওই নয় মাসে হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা জোগানোর কিংবা ধ্বংসযজ্ঞে প্রত্যক্ষ অংশ নেওয়ার অভিযোগে। বলা হয়েছে, এই বিচার না হলে জাতির কলঙ্ক মোচন হবে না। এ সম্পর্কে কারোরই কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয় এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশকারীদের সুষ্ঠু বিচার যথার্থ ও সর্বজন কাম্য।
একই সঙ্গে নয় মাসের ধ্বংসযজ্ঞে, গণহত্যায় নিহত ও নির্যাতিতদের পরিবার-পরিজনের দাবি ছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খেয়াল-খুশিমতো তারা যদৃচ্ছভাবে হত্যা করেছে বাংলার লাখ লাখ নিরীহ নিরস্ত্র অসামরিক শিশু-নারী-পুরুষকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে নুরেমবার্গ আদালতে বিচার হয়েছে নাৎসি সামরিক কর্মকর্তাদের। সাম্প্রতিককালে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়েছে রুয়ান্ডার সামরিক কর্তাব্যক্তিদের। বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় হত্যাযজ্ঞের দায়ে বিচার চলছে বসনিয়া-সার্বিয়ার সামরিক নেতাদের। বিচার হলো না বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণহানির, অসংখ্য মানুষের নির্যাতনের এবং অগণিত নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের দায়ে অপরাধী পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল নিয়াজি, রাও ফরমান আলী, জিলানী, কোরায়েশীদের। ১৯৭৪ সালে দিল্লিতে সম্পাদিত পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কল্যাণে এসব যুদ্ধাপরাধী বহাল তবিয়তে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায় নিজের দেশে। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার। শহীদদের পরিবার ও নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষের জিজ্ঞাসা: যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী, পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের বিচার না হলে জাতির সার্বিক কলঙ্ক মোচন হবে কি? লাখ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে কি?
সৈয়দ জিয়াউর রহমান: লেখক, সাংবাদিক ও ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সিনিয়র এডিটর।
আজিমপুর যাওয়ার পথে প্রথমেই চোখে পড়ল রাজারবাগ পুলিশ লাইনের একপ্রান্তে রাস্তার কোলঘেঁষে একটি পুকুরের পাশে ১৫-২০ জন পুলিশের মৃতদেহ। তারপর সারা রাস্তায়ই প্রায় একই দৃশ্য। কার্জন হলের উল্টো দিকে হাইকোর্ট মাজারের সামনে চার-পাঁচটি পরিত্যক্ত ভাঙা রিকশায় পড়ে রয়েছে আট-দশজন রিকশাচালকের মরদেহ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেষ প্রান্তে রাস্তার ধারে এবং ডিনামাইট দিয়ে ভেঙে ফেলা শহীদ মিনারের চত্বরে আরও অনেক মৃতদেহ। এই ছিল ঢাকা শহরের সর্বত্র ২৫ মার্চের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের বীভৎস দৃশ্য। আর তখন থেকেই শুরু পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি পশু-বাহিনীর ‘বীরত্বপূর্ণ’ হত্যা-অভিযান।
এই অভিযানের একপর্যায়ে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায় আজিমপুর থেকে আমার স্ত্রীর বড় বোনের ছেলে রেজাউল করিম বাবুলকে। সে ছিল কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র। কয়েক মাস পর্যন্ত তাকে আমরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছি, কিন্তু তার কোনো হদিস পাইনি। পরে হানাদারদের কবল থেকে পালিয়ে আসা এক তরুণের কাছে জানা গেছে, পশুরা বাবুলকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মেরে তার মৃতদেহ মিরপুর ব্রিজ থেকে নিচে নদীর পানিতে ফেলে দিয়েছে।
এর মধ্যে আমার মেজ মামা কর্নেল সৈয়দ নাজিম হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর গ্যারিসন-অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদুর রহমান মজুমদারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা। ডিসেম্বরে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুই দিন পর জীবন্মৃত অবস্থায় তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। তাঁর কাছ থেকে বিস্তারিত যা জানা গেছে তা হলো, পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে ধরেছিল এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মজুমদার এক বৈঠকে শেখ মুজিবের সঙ্গে ষড়যন্ত্র-তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন এবং সে সময় সে বৈঠকে উপস্থিত থেকে তিনি তা প্রত্যক্ষ করেছেন। কর্নেল হোসেন পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, এত বড় মিথ্যা কথা তিনি তাঁর প্রাণ গেলেও বলতে পারবেন না। তার ফলে দীর্ঘ নয় মাস তাঁর ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন, দেহের বিভিন্ন স্থানে বেয়োনেট দিয়ে কেটে তাতে লবণ দেওয়া হয়, জ্বলন্ত সিগারেটের সেঁকা দেওয়া হয় পিঠের সর্বত্র—আর সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রহার করা হয় অমানুষিকভাবে। ওদিকে মার্চ মাসের শেষে খবর এল আমার আরেক মামা—আমার মায়ের খালাতো ভাই, কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই নিহত হয়েছেন যশোর সেনানিবাসে। ড. কর্নেল হাই ছিলেন যশোর সেনানিবাসে সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের কমান্ডিং অফিসার। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যশোর সেনানিবাসের অফিসার্স কোয়ার্টারসে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরদিন তাঁর মরদেহ ঢাকায় তাঁর শ্বশুরালয়ে পাঠিয়ে দেয়।
এসব দুঃসহ খবরের মধ্যেই জানা গেল, টাঙ্গাইল শহরের অদূরে একটি গ্রামে আমার ছোট বোনের শ্বশুরবাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা ওই বাড়িতে এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ২২ জনকে, যার মধ্যে ছিলেন আমার বোনের শাশুড়ি, আমার বোনের দেবর জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের বন্ধু ভিকু চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী মিলি চৌধুরী ও আরও অনেকে। আমার বোন ও তার পরিবার ভাগ্যের জোরে সেদিন ছিল টাঙ্গাইল শহরে। ভিকু ভাই ও মিলি ভাবির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল। ভিকু ভাই বামপন্থী রাজনীতি করতেন। পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে তিনি টাঙ্গাইলে গিয়েছিলেন বন্ধু জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। আর সেখানেই তাঁকে প্রাণ দিতে হলো সস্ত্রীক হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে।
এভাবে হানাদারদের নয় মাসের ধ্বংসযজ্ঞে প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে, অমানুষিক নির্যাতনে জীবন্মৃত হতে হয়েছে লাখ লাখ জনকে এবং মান-সম্ভ্রম হারিয়ে বিধ্বস্ত হতে হয়েছে অগণিত নারীকে।
বাংলাদেশে এখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারের। এই বিচার চলছে ওই নয় মাসে হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা জোগানোর কিংবা ধ্বংসযজ্ঞে প্রত্যক্ষ অংশ নেওয়ার অভিযোগে। বলা হয়েছে, এই বিচার না হলে জাতির কলঙ্ক মোচন হবে না। এ সম্পর্কে কারোরই কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয় এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশকারীদের সুষ্ঠু বিচার যথার্থ ও সর্বজন কাম্য।
একই সঙ্গে নয় মাসের ধ্বংসযজ্ঞে, গণহত্যায় নিহত ও নির্যাতিতদের পরিবার-পরিজনের দাবি ছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খেয়াল-খুশিমতো তারা যদৃচ্ছভাবে হত্যা করেছে বাংলার লাখ লাখ নিরীহ নিরস্ত্র অসামরিক শিশু-নারী-পুরুষকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে নুরেমবার্গ আদালতে বিচার হয়েছে নাৎসি সামরিক কর্মকর্তাদের। সাম্প্রতিককালে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়েছে রুয়ান্ডার সামরিক কর্তাব্যক্তিদের। বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় হত্যাযজ্ঞের দায়ে বিচার চলছে বসনিয়া-সার্বিয়ার সামরিক নেতাদের। বিচার হলো না বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণহানির, অসংখ্য মানুষের নির্যাতনের এবং অগণিত নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের দায়ে অপরাধী পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল নিয়াজি, রাও ফরমান আলী, জিলানী, কোরায়েশীদের। ১৯৭৪ সালে দিল্লিতে সম্পাদিত পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কল্যাণে এসব যুদ্ধাপরাধী বহাল তবিয়তে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায় নিজের দেশে। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার। শহীদদের পরিবার ও নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষের জিজ্ঞাসা: যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী, পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের বিচার না হলে জাতির সার্বিক কলঙ্ক মোচন হবে কি? লাখ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে কি?
সৈয়দ জিয়াউর রহমান: লেখক, সাংবাদিক ও ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সিনিয়র এডিটর।
No comments