ছিটমহলে অনশন-অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় আশার আলো ছিটমহলগুলোকে আলোকিত করে তুলেছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার ছিটমহলবাসীর সমস্যা দূর হবে। নামহীন-গোত্রহীন মানুষের জন্য মিলবে দেশের ঠাঁই। ছিটমহলগুলো চিহ্নিত হয়েছে।
যথাসময়ে সেখানকার অধিবাসীদের মতামত নিয়ে বিনিময় শুরু হবে_ এমন আশাও মূর্ত হয়ে উঠেছিল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে সমঝোতার পর রীতিমতো উৎসব হয়েছিল ছিটমহলগুলোতে। অবশ্য এ আনন্দ ফিকে হতে সময় লাগেনি। ব্যতিক্রম দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা, তিনবিঘা করিডোর হয়ে এই ছিটমহলের অধিবাসীদের ২৪ ঘণ্টা চলাচলের ব্যবস্থা হলেও বাকি ছিটমহলগুলোর জন্য আপাতত সুখবর নেই। অবস্থাদৃষ্টে বরং মনে হচ্ছে, রাজনীতির জটিল পাশা খেলায় আবারও পরাস্ত হতে বসেছে ছিটমহলের চিরবঞ্চিত অধিবাসীরা। স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে যে সুবিধা অন্যরা না চাইতেই পায়, সে সুবিধার জন্য রীতিমতো কঠোর সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে তাদের। আর এ সংগ্রামের ইতিহাস সুদীর্ঘ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যকার ছিটমহল চিহ্নিত করে তা বিনিময়ের প্রসঙ্গ ছিল। কিন্তু চুক্তির পর চারটি দশক অতিক্রান্ত হতে চললেও এখনও বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। শুধু তা-ই নয়, ৫১ হাজার মানুষের প্রতিদিনের সমস্যা দুই দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সম্যক মনোযোগও সবসময় আকৃষ্ট করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের সময়ে বিষয়টি মনোযোগ পেয়েছে। ইতিমধ্যে শেষ হওয়া জরিপ অনুসারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু প্রক্রিয়া থমকে আছে সমঝোতা পর্যন্তই। কার্যক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছে পঞ্চগড়ের পুটিমারি ছিটমহলের অধিবাসীরা। অনশনকারীরা এখন গুরুতর অসুস্থ, তবু দাবিতে অনড়। তাদের এ মরিয়া অবস্থান কি পারবে দুই দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের স্পর্শ করতে? আধুনিক পৃথিবীতে যখন ইউরোপ, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পরস্পর কাছাকাছি এসে দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে; তখনও আমরা মধ্যযুগীয় ছিটমহল সমস্যা জিইয়ে রেখেছি। ছিটমহলের নামে রীতিমতো অন্তরীণ করে রেখেছি নিরপরাধ মানুষকে। রাষ্ট্রীয় সীমান্তের বলি হচ্ছে এসব মানুষ_ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। শিক্ষা-চিকিৎসাসহ সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, এ অবস্থাটি চলতে দেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ বিনিময় ব্যবস্থায় বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত। এ কথা সত্য, ছিটমহলগুলোর সুদীর্ঘকালের সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই এর সমাধান আসতে পারে। সে প্রক্রিয়া শুরু হোক। আর অনশনরত আন্দোলনকারীদের কাছে আশ্বাসের বাণীটুকু পেঁৗছানো দরকার এখনই। দুই দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের আহ্বান_ ছিটমহলবাসীকে আশ্বাস দেওয়ার জন্য আশু করণীয় নির্ধারণ করতে আলোচনায় বসুন।
No comments