পাটের মূল্য-এখনও কৃষকের বঞ্চনা!

বুধবার সমকালের শিল্প ও বাণিজ্য পাতায় 'পাটের হাটে লম্বা লাইন' শিরোনামে একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিটি আপাতভাবে চোখ জুড়ানো_ দু'পাশে সবুজ প্রকৃতি এবং এর মাঝের পিচঢালা সড়কে সোনালি আঁশ বা পাটবোঝাই বিপুলসংখ্যক গাড়ি দাঁড়িয়ে। পাটচাষিরা হাটে এসেছেন তাদের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত ফসল নিয়ে। সামনে ঈদ উৎসব।

চোখে তাদের কত স্বপ্ন। পরিবারের সদস্যরা হয়তো অপেক্ষা করে আছে পোশাক এবং উৎসবের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী কিনতে বাজারে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ছবিটি বলছে, কুষ্টিয়ার খোকশা হাটে পাট বিক্রি করতে আসা কৃষকরা পাট বিক্রি করতে পারেননি। কেন পারেননি, সেটা বলা হয়েছে ছবির ক্যাপশনে_ হাটে উন্নত মানের পাট এসেছে এবং তা এনেছেন অনেক কৃষক। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম দাম দিতে চাইছেন। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি শুধু একটি বা দুটি হাটে নয়, দেশের অনেক স্থানেই ঘটছে। মৌসুমে পাটের দাম ওঠানামা করতেই পারে। কিন্তু একদল ব্যবসায়ী যখন কৃষকদের জিম্মি করতে চান, তখন উদ্বেগের কারণ ঘটে। এতে কৃষকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কৃষকরা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং পরের বছর চাষ কমিয়ে দেন। কিন্তু আমরা জানি, চাহিদার নিরিখেই বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ার কথা। সরকার পাট চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করছে। পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে পাটের চাহিদাও ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারেও কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ভালো দাম মিলছে। এ অবস্থায় কৃষকরা কেন বঞ্চিত হবেন? তারা ন্যায্যমূল্য না পেলে কিন্তু শিল্প ও রফতানি উভয় খাতের ক্ষতি। পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ কমে গেলে বাজারে সরবরাহ কমবে। এর ফলে শিল্পে প্রয়োজনীয় জোগান মিলবে না এবং রফতানিকারকরাও সমস্যায় পড়বেন। অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে আদমজী জুটমিল বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকদের বঞ্চিত করতে গিয়ে আমরা যেন পাট চাষ বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিতে তাদের বাধ্য না করি। পাট ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যরা নিশ্চয়ই এ সমস্যা নিয়ে ভাববেন।
 

No comments

Powered by Blogger.