হাসি-কান্নার এশিয়া কাপ-এশিয়া কাপের আনন্দাশ্রু by জালাল আহমেদ চৌধুরী
বড় বেশি আশা ছিল। সে আশা আস্থা ও বিশ্বাসের পরিপূর্ণ মিশেলে ছিল বলবান। কোনো পদ্মভুক স্বপ্নের বিবরে সে আশার শিকড় প্রোথিত ছিল না মোটেই। এশিয়া কাপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত খেলার আগে এ প্রতিযোগিতায় আমাদের পদচারণ, আমাদের মনোভঙ্গি, দেহভাষ্য আর ব্যাটে-বলের প্রত্যয়ী প্রয়োগ নির্মাণ করে দিয়েছিল সে আশার ভিত।
বৃহস্পতিবার বেলা দুই ঘটিকা থেকে মিরপুরের সময় আমাদের সে আশাকে গাছপাকা আমের মতো সতেজ রেখে চলমান রেখেছিল শেষ বল অবধি। মাঝখানে ক্রিকেট নামক খেলাটি তার চরিত্রানুগ নাটকীয়তার দোলাচলে নাচাতে নাচাতে আমাদের নিয়ে চলেছে ক্রীড়ারোমাঞ্চের চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয়-র স্বাদ দিতে দিতে। শেষ বলেও সুযোগ ছিল চরম তৃপ্তি আস্বাদনের; কিন্তু হলো না। অতৃপ্তি তার শতভাগ পূর্ণতা নিয়ে গ্রাস করল আমাদের উদ্যাপন পর্ব। ২ রানের ব্যবধান এশিয়া কাপের ত্বকে আমাদের চুমু খেতে দিল না।
তাৎক্ষণিকভাবে সে ছিল এক অসহনীয় কষ্টের অনুভব। সে অনুভবের দৃশ্যমান রূপ আমরা ক্যামেরায় দেখেছি, আমাদের দলের তরুণতম সদস্য আনামুল হকের চোখের তারায় টলটল করতে করতে গণ্ড দিয়ে ঝরে যেতে। দেখেছি নাসিরের জার্সি দিয়ে বাষ্পাকুল চোখ আড়াল করার ভঙ্গিমায়। দেখেছি সাকিব আল হাসানের বুক ভাসিয়ে দেওয়া অধিনায়কের কান্নায়। এ রকম দৃশ্যের কিছুটা আমরা দেখেছি সে রাতের গ্যালারির ধাপে ধাপে, আর এমন লাখ লাখ দৃশ্য অদেখা রয়ে গেছে ঘরে-ঘরে, হাটে-মাঠে-বাটে, সারা বাংলাদেশে, বাঙালি-অধ্যুষিত প্রবাসে সে রাতে লোনা জল ঝরেছে অনেক। এখনো ঝরছে দলমত-নির্বিশেষে, এ দেশবাসীর হূদয়ে হূদয়ে চলছে রক্তক্ষরণ। ইশ্, অতি অল্পের জন্য।
এই ‘ইশ্’টা অনেক দিন চলবে; চলবে আমাদের ক্রিকেট আলোচনায়, চলবে আমাদের ক্রিকেটচর্চায়। চর্চা মানে আমাদের ক্রিকেটের সামগ্রিক পরিকল্পনা এবং অনুশীলনে। এখানেই আমাদের এশিয়া কাপের বৃহত্তর অর্জন। চূড়ান্ত খেলায় অল্পের জন্য পরাজিত হয়ে আমরা তাৎক্ষণিক সুযোগ হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়েছি বটে। আমাদের আবেগতাড়িত হূদয় বোবাকান্না ধরে রাখতে পারেনি কিন্তু সে মুহূর্তের জন্য। চোখ মুছে আমরা আস্তে আস্তে অনুভব করতে শুরু করেছি, কত বড় প্রাপ্তি আমাদের এনে দিয়েছে সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপ। আমাদের ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাচিন্তার স্তর একটি টুর্নামেন্ট অনেক উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে।
প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগের সময়টায় যদি আমরা ফিরে যাই তবে দেখতে পাব, আমরা নিজেদের বর্তমান আসরের চতুর্থ দল হিসেবেই দেখছিলাম। তিন বিশ্বকাপ জেতা প্রতিপক্ষের নিদেনপক্ষে একটিকে হারাতে পারলেই আমাদের সন্তুষ্টির সীমা প্রবোধ মানত। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পর আমরা দেখতে পেলাম, আমাদের দল আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে এগিয়ে আছে। অলক্ষ্যে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি ভিন্নতর আদর্শ পেয়ে গেছি। আমাদের বিগত দিনের ক্রিকেট আমাদের দলীয় চেতনায় অধিকতর ইতিবাচক মাত্রা যোগ করেছে। আমরা এখন বিশ্ব ক্রিকেটে এগিয়ে থাকা যেকোনো দলের যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের ভাবতে পারছি।
প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললাম এবং এই প্রথমবারেই জিততে না পারার বেদনা অসহ্য বোধ হচ্ছে। এ ব্যাপারটা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের মানসিক চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হিসেবেই দেখতে পাচ্ছি। এশিয়া কাপের আগে এমনটা ছিল না আমাদের ক্রিকেট-ভাবনার শুভস্তর। সেখান থেকে পিছিয়ে থাকা মনোভাবের অনেকটা আজ ওই ২ রানের পরাজয়ের পরও অপসারিত। এশিয়া কাপের চারটি ম্যাচে যা খেলেছি, বিশ্ব দেখেছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায়, বিশেষজ্ঞ মন্তব্যে, প্রতিপক্ষের ভাবনা প্রকাশে যেসব কথা বেরিয়ে আসছে, তাতে দেখতে পাচ্ছি, আমাদের প্রতি ক্রিকেট বিশ্বের মনোভঙ্গি প্রবলভাবে পাল্টাচ্ছে। আমাদের ক্রিকেটাররা ওদের সমীহ যথেষ্টই আদায় করে নিয়েছেন। আগে ওরা আমাদের উৎসাহ দেওয়ার ভঙ্গিতে কথা বলত, এখন শক্তি পরীক্ষা করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। এক, দুই, তিন করে আমাদের ব্যক্তি খেলোয়াড় নিয়ে ওদের মাথাব্যথা বাড়ছে। এসবকে বড় অর্জনই বলব। আর করবেই না বা কেন? ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে যে ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা হেসেখেলে ৩০০ রান করার কথা চিন্তা করত, তারা ওই ধরনের উইকেটে আমাদের বোলারদের দেখল অনেক বেশি কৌশলী। আর অন্যদিকে, আমাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চিন্তায়ও ওদের পুরোনো ধ্যান-ধারণার বাইরে যেতে বাধ্য করবে এবারের এশিয়া কাপ।
আমাদের ফিল্ডিং এবারের এশিয়া কাপে অন্য রকম মাত্রায় হাজির ছিল। অন্যতম সেরা ফিল্ডিং সাইড অনায়াসে বলা যায়। শিরোপা না জিতলেও সবকিছু মিলিয়ে শিরোপা জয়ের কল্যাণী সূত্রটা পেয়ে গেছি। শিরোপাটা ভবিষ্যতে সময়ের ব্যাপার। জানি, কথাটা এ মুহূর্তে বলা যত সহজ, বলে সান্ত্বনা পাওয়াটা যতটা যুক্তিসংগত, সর্বান্তকরণে মেনে নেওয়া তত সহজ নয়। সুযোগ হারানোর দুঃখটা থেকেই যায়। তবে মানতে পারলে, মেনে জয়ের পথে হাঁটলে সামগ্রিকভাবে ক্রিকেটেরই কল্যাণ।
আমরা জানতাম, আমাদের সাকিব-তামিম বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তাঁদের মানের উচ্চতা সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা ছিল, এবারের এশিয়া কাপ সে ধারণাকে আরও উচ্চতর মাত্রায় নিয়ে গেল। বীর-বন্দনায় আর বাক্যব্যয় করব না। আমাদের ভবিষ্যৎকে ওরা আরও উজ্জ্বলতা দেবে। ওদের সম্মানে আমাদের আজকের কান্নাকে আসুন অর্জনের আনন্দাশ্রু হিসেবে অনুভব করি।
তাৎক্ষণিকভাবে সে ছিল এক অসহনীয় কষ্টের অনুভব। সে অনুভবের দৃশ্যমান রূপ আমরা ক্যামেরায় দেখেছি, আমাদের দলের তরুণতম সদস্য আনামুল হকের চোখের তারায় টলটল করতে করতে গণ্ড দিয়ে ঝরে যেতে। দেখেছি নাসিরের জার্সি দিয়ে বাষ্পাকুল চোখ আড়াল করার ভঙ্গিমায়। দেখেছি সাকিব আল হাসানের বুক ভাসিয়ে দেওয়া অধিনায়কের কান্নায়। এ রকম দৃশ্যের কিছুটা আমরা দেখেছি সে রাতের গ্যালারির ধাপে ধাপে, আর এমন লাখ লাখ দৃশ্য অদেখা রয়ে গেছে ঘরে-ঘরে, হাটে-মাঠে-বাটে, সারা বাংলাদেশে, বাঙালি-অধ্যুষিত প্রবাসে সে রাতে লোনা জল ঝরেছে অনেক। এখনো ঝরছে দলমত-নির্বিশেষে, এ দেশবাসীর হূদয়ে হূদয়ে চলছে রক্তক্ষরণ। ইশ্, অতি অল্পের জন্য।
এই ‘ইশ্’টা অনেক দিন চলবে; চলবে আমাদের ক্রিকেট আলোচনায়, চলবে আমাদের ক্রিকেটচর্চায়। চর্চা মানে আমাদের ক্রিকেটের সামগ্রিক পরিকল্পনা এবং অনুশীলনে। এখানেই আমাদের এশিয়া কাপের বৃহত্তর অর্জন। চূড়ান্ত খেলায় অল্পের জন্য পরাজিত হয়ে আমরা তাৎক্ষণিক সুযোগ হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়েছি বটে। আমাদের আবেগতাড়িত হূদয় বোবাকান্না ধরে রাখতে পারেনি কিন্তু সে মুহূর্তের জন্য। চোখ মুছে আমরা আস্তে আস্তে অনুভব করতে শুরু করেছি, কত বড় প্রাপ্তি আমাদের এনে দিয়েছে সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপ। আমাদের ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাচিন্তার স্তর একটি টুর্নামেন্ট অনেক উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে।
প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগের সময়টায় যদি আমরা ফিরে যাই তবে দেখতে পাব, আমরা নিজেদের বর্তমান আসরের চতুর্থ দল হিসেবেই দেখছিলাম। তিন বিশ্বকাপ জেতা প্রতিপক্ষের নিদেনপক্ষে একটিকে হারাতে পারলেই আমাদের সন্তুষ্টির সীমা প্রবোধ মানত। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পর আমরা দেখতে পেলাম, আমাদের দল আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে এগিয়ে আছে। অলক্ষ্যে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি ভিন্নতর আদর্শ পেয়ে গেছি। আমাদের বিগত দিনের ক্রিকেট আমাদের দলীয় চেতনায় অধিকতর ইতিবাচক মাত্রা যোগ করেছে। আমরা এখন বিশ্ব ক্রিকেটে এগিয়ে থাকা যেকোনো দলের যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের ভাবতে পারছি।
প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললাম এবং এই প্রথমবারেই জিততে না পারার বেদনা অসহ্য বোধ হচ্ছে। এ ব্যাপারটা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের মানসিক চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হিসেবেই দেখতে পাচ্ছি। এশিয়া কাপের আগে এমনটা ছিল না আমাদের ক্রিকেট-ভাবনার শুভস্তর। সেখান থেকে পিছিয়ে থাকা মনোভাবের অনেকটা আজ ওই ২ রানের পরাজয়ের পরও অপসারিত। এশিয়া কাপের চারটি ম্যাচে যা খেলেছি, বিশ্ব দেখেছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায়, বিশেষজ্ঞ মন্তব্যে, প্রতিপক্ষের ভাবনা প্রকাশে যেসব কথা বেরিয়ে আসছে, তাতে দেখতে পাচ্ছি, আমাদের প্রতি ক্রিকেট বিশ্বের মনোভঙ্গি প্রবলভাবে পাল্টাচ্ছে। আমাদের ক্রিকেটাররা ওদের সমীহ যথেষ্টই আদায় করে নিয়েছেন। আগে ওরা আমাদের উৎসাহ দেওয়ার ভঙ্গিতে কথা বলত, এখন শক্তি পরীক্ষা করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। এক, দুই, তিন করে আমাদের ব্যক্তি খেলোয়াড় নিয়ে ওদের মাথাব্যথা বাড়ছে। এসবকে বড় অর্জনই বলব। আর করবেই না বা কেন? ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে যে ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা হেসেখেলে ৩০০ রান করার কথা চিন্তা করত, তারা ওই ধরনের উইকেটে আমাদের বোলারদের দেখল অনেক বেশি কৌশলী। আর অন্যদিকে, আমাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চিন্তায়ও ওদের পুরোনো ধ্যান-ধারণার বাইরে যেতে বাধ্য করবে এবারের এশিয়া কাপ।
আমাদের ফিল্ডিং এবারের এশিয়া কাপে অন্য রকম মাত্রায় হাজির ছিল। অন্যতম সেরা ফিল্ডিং সাইড অনায়াসে বলা যায়। শিরোপা না জিতলেও সবকিছু মিলিয়ে শিরোপা জয়ের কল্যাণী সূত্রটা পেয়ে গেছি। শিরোপাটা ভবিষ্যতে সময়ের ব্যাপার। জানি, কথাটা এ মুহূর্তে বলা যত সহজ, বলে সান্ত্বনা পাওয়াটা যতটা যুক্তিসংগত, সর্বান্তকরণে মেনে নেওয়া তত সহজ নয়। সুযোগ হারানোর দুঃখটা থেকেই যায়। তবে মানতে পারলে, মেনে জয়ের পথে হাঁটলে সামগ্রিকভাবে ক্রিকেটেরই কল্যাণ।
আমরা জানতাম, আমাদের সাকিব-তামিম বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তাঁদের মানের উচ্চতা সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা ছিল, এবারের এশিয়া কাপ সে ধারণাকে আরও উচ্চতর মাত্রায় নিয়ে গেল। বীর-বন্দনায় আর বাক্যব্যয় করব না। আমাদের ভবিষ্যৎকে ওরা আরও উজ্জ্বলতা দেবে। ওদের সম্মানে আমাদের আজকের কান্নাকে আসুন অর্জনের আনন্দাশ্রু হিসেবে অনুভব করি।
No comments