মধ্যপ্রাচ্য-ওবামা, আপনাকে কি বিশ্বাস করা যায়? by ফারুক ওয়াসিফ
গত ১৯ মে হোয়াইট হাউসে ওবামা আবারও বক্তৃতা করেছেন। ছোট বুশ বক্তৃতা কম করতেন, (অ)কাজ করতেন বেশি। আর ওবামা (সু)কাজ কম করেন কিন্তু কথা বলেন বেশি। ২০০৯ সালের শেষে কায়রোয় মুসলমানদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়ে অনেককেই মুগ্ধ করেছিলেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর সেটাই ছিল তাঁর প্রথম বিশ্বমাপের বক্তৃতা।
তাঁর পাশে ছিলেন স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক। সেই বক্তৃতা শুনে এক মহানুভব সম্রাটের প্রতি সম্মানে কেবল উপস্থিত শ্রোতারাই নন, অনেকেই মনের মধ্যে খাড়া হয়ে তাঁকে অভিবাদন জানিয়েছিলেন। তারপর তিনি পেলেন নোবেল পুরস্কার। বিশ্বের দেওয়া সম্মান গায়ে মেখে এবং শান্তির মেডেল গলায় ঝুলিয়ে তিনি বিশ্বত্রাতার ভাব নিলেন। এদিকে ইরাক যুদ্ধ প্রসারিত হতে থাকল ইরান ও সিরিয়ার দিকেও, আর আফগান যুদ্ধ সীমান্ত ডিঙিয়ে ঢুকে পড়ল পাকিস্তানেও।
এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন বন্ধু শাসকেরা গণধাওয়া খেতে লাগলেন। বন্ধুদের এহেন বিদায় দেখে এবার তিনি আরব বিপ্লবের বন্ধু সাজতে নেমেছেন। সেবারের মতো এবারও তিনি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কথা তুলেছেন, তুলেছেন ইসরায়েলি দখলদারির কথা। আরবে গণতন্ত্র ও শান্তি কায়েমের অঙ্গীকারও করেছেন। ওদিকে ইসরায়েল ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আগ্রাসনের বার্ষিকী নাকবা দিবসে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ১৬ জনকে গুলি করে মেরে, ঐতিহাসিক জেরুজালেম নগর ও পশ্চিম তীরে ক্রমাগত ইহুদি বসতি বসিয়ে ওবামার বক্তৃতাকে ঠুনকো করে দিতে থাকল। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের হম্বিতম্বির পরোয়া তারা করে না। তারা জানে, সামনের বছর পুনর্নির্বাচিত হতে গেলে ওবামাকে আমেরিকার ইহুদি লবিকে খুশি রাখতে হবে। মিসরের সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সৌদি আরব, বাহরাইন, জর্ডান ও আরব আমিরাতের রাজা-বাদশাহরাও জানেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার স্বার্থ দেখার খুঁটি হিসেবে আমেরিকার তাঁদের প্রয়োজন। তাঁরা থাকলে রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসন থাকবে, আর স্বৈরশাসন থাকলে আমেরিকার স্বার্থও থাকবে, ঘাঁটি থাকবে, তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে; গণতন্ত্র ও অধিকার থাকবে না। এই বাস্তবতা কথার ফুলঝুরি দিয়ে ঢাকতে নেমেছেন ওবামা। এ কাজে বুদ্ধিজীবী প্রেসিডেন্ট দারুণ ‘যোগ্য’। তাঁর প্রতি নৈতিক অভিযোগ এটাই যে, আশার সওদাগর ওবামা হত্যা করেছেন আশাকেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের গুণগান গাওয়ার লোকের অভাব কখনো হয়নি। আবার তাঁদের সমালোচনার বাজারেও কখনো মন্দা আসেনি। কিন্তু নিন্দুক ও খয়ের খাঁরা একটা বিষয়ে একমত, তাঁদের কথা ফেলনা নয়। নইলে দুনিয়াজোড়া ছড়ানো আমেরিকার ৭৩৭টি সামরিক ঘাঁটির একটিও বন্ধ হয়নি, সেসব ঘাঁটির ২৫ লাখেরও বেশি সেনার কেউই বিদেশি মাটি ছাড়েনি, ইরাক-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-সোমালিয়া-লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ হয়নি। ডলারের দাপট কমেনি, আন্তর্জাতিক-অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘসহ কোনো কিছু থেকেই মার্কিন করপোরেট পুঁজির আধিপত্য কমেনি। তবু বিশ্বব্যাপী ‘শান্তি’ ‘শান্তি’ ধ্বনিত হয় কী করে? মোগল সংগীতজ্ঞ তানসেন নাকি গানে গানে বৃষ্টি ঝরাতে পারতেন, জ্বালাতেন আগুন। এখন দেখছি ওবামার কথায়ও ফুল ফোটে, শান্তির বৃষ্টি ঝরে। হোক, অসুবিধা নেই। আমাদের কথা আপাতত একটাই: আমরা আপনাকে আর বিশ্বাস করি না। কেবল আমরাই নই, ইউরোপের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও আমেরিকার প্রতি আস্থায় চিড় ধরেছে। আমেরিকার প্রতি অনাস্থা আপনি কমাতে পারেননি।
নিউজউইক ম্যাগাজিনের সেই বিখ্যাত মার্কিনপন্থী সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া লিখেছিলেন, ‘হোয়াই দে হেট আস’—‘কেন তারা আমাদের ঘৃণা করে?’। এখানে ‘তারা’ হলো আরব ও মুসলিমরা, ‘আস’ মানে ইউএস তথা যুক্তরাষ্ট্র। প্রশ্নটাকে বরং যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, ‘হোয়াই ডু উই লাভ ইউ(এস)?’ কেন আমরা তোমাদের ভালোবাসব? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি অধিকৃত প্যারিসে বসে ছবি আঁকছিলেন প্রতিভাধর স্প্যানিশ শিল্পী পাবলো পিকাসো। একদিন তাঁর স্টুডিওতে একজন নাজি সামরিক কর্মকর্তা এলেন। পিকাসোর যুদ্ধ, গণহত্যার বীভৎসতা নিয়ে আঁকা ছবিগুলো দেখতে দেখতে দখলদার কর্নেল জিজ্ঞাসা করেন, ‘হু ক্রিয়েটেড দিস?’ কে এগুলো সৃষ্টি করেছে। পিকাসো পরিহাস করে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইউ’। তোমরাই এগুলো সৃষ্টি করেছ। আমি কেবল তোমাদের কর্মকে এঁকে দেখিয়েছি। পিকাসোর সেই ছবিগুলো ছিল মানবতার ধ্বংসের বেদনায় ভরা। আজ যখন ওবামা সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র্য, স্বৈরতন্ত্র ও যুদ্ধবাজি নিয়ে সবক দেন, তখন বলা দরকার, এসব তোমাদেরই সৃষ্টি, তোমরাই আমাদের এসবের মধ্যে নিপতিত করেছ, তার পরও তোমরা ভালোবাসা চাও? কবি বিনয় মজুমদারের ভাষায় বলতে চাই, ‘ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?’
তার পরও ঠিকই আরব-মার্কিন ভালোবাসা বাড়ছে। আরবের উদ্দীপনায় খোদ মার্কিন মুলুকেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি শহরে শ্রমিকেরা তাঁদের অধিকার কর্তনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। উইসকনসিন এ রকম একটি শহর। মিসরের তাহরির স্কয়ারের একটি প্ল্যাকার্ডেও উঠে এসেছে এখানকার শ্রমিকদের কথা। প্ল্যাকার্ডটির ছবি এখন ইন্টারনেটে ঘুরছে। সেখানে এক মিসরীয় তরুণ লিখেছেন, ‘এক বিশ্ব এক ব্যথা: মিসর যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের শ্রমিকদের পক্ষে। কোনোভাবে আমেরিকার সেই শ্রমিকেরা ছবিটি দেখে জবাব দেন, ‘আমরা তোমাদের ভালোবাসি, তোমাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ, অভিবাদন তোমাদের বিজয়ে।’ ওবামা আমরা এই আমেরিকার সমর্থন ভালোবাসি, মোড়লগিরি ভালোবাসি না।
লাদেন হত্যা নিয়ে মার্কিন গালগল্পও কম লোকই বিশ্বাস করেছে। ঘটনা সত্য বা মিথ্যা যা-ই হোক, দেখার বিষয় হলো, আমেরিকা তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। টুইন টাওয়ার ধ্বংস থেকে শুরু করে ইরাকের হাতে পারমাণবিক বোমা থাকার অভিযোগ, ইরাক-আফগানিস্তানের মানুষকে স্বৈরতন্ত্র মুক্ত করার মিশন, লিবিয়ায় গণতন্ত্র আনয়নকারী হামলার কাহিনি বিশ্বাস্য নয়। এ নিয়ে এখন ফরিদ জাকারিয়া নতুন এক প্রবন্ধ লিখতে পারেন, ‘কেন তারা আমাদের বিশ্বাস করে না?’
তিনি এখনো তা লেখেননি। কিন্তু আগাম একটা কৌতুক তাঁর উদ্দেশে আমরা নিবেদন করতে পারি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন ইউরোপীয় শক্তিগুলো তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, গল্পটা তখনকার। এক ইহুদি যুবকের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ডাক পড়েছে। সে যুদ্ধে যাচ্ছে, তার মা তাকে শেষবারের মতো আদর করে বিদায় দিতে গিয়ে বলছে, ‘বাবা, একটা করে তুর্কি মারবি আর জিরিয়ে নিবি, বেশি পরিশ্রম করবি না।’ ছেলেটা তখন বলছে, ‘কিন্তু মা, তুর্কিরা যদি আমাকে মারে?’ মা তো অবাক, ‘ওমা! ওরা তোকে মারবে কেন, তুই ওদের কী ক্ষতি করেছিস?’
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com
এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন বন্ধু শাসকেরা গণধাওয়া খেতে লাগলেন। বন্ধুদের এহেন বিদায় দেখে এবার তিনি আরব বিপ্লবের বন্ধু সাজতে নেমেছেন। সেবারের মতো এবারও তিনি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কথা তুলেছেন, তুলেছেন ইসরায়েলি দখলদারির কথা। আরবে গণতন্ত্র ও শান্তি কায়েমের অঙ্গীকারও করেছেন। ওদিকে ইসরায়েল ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আগ্রাসনের বার্ষিকী নাকবা দিবসে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ১৬ জনকে গুলি করে মেরে, ঐতিহাসিক জেরুজালেম নগর ও পশ্চিম তীরে ক্রমাগত ইহুদি বসতি বসিয়ে ওবামার বক্তৃতাকে ঠুনকো করে দিতে থাকল। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের হম্বিতম্বির পরোয়া তারা করে না। তারা জানে, সামনের বছর পুনর্নির্বাচিত হতে গেলে ওবামাকে আমেরিকার ইহুদি লবিকে খুশি রাখতে হবে। মিসরের সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সৌদি আরব, বাহরাইন, জর্ডান ও আরব আমিরাতের রাজা-বাদশাহরাও জানেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার স্বার্থ দেখার খুঁটি হিসেবে আমেরিকার তাঁদের প্রয়োজন। তাঁরা থাকলে রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসন থাকবে, আর স্বৈরশাসন থাকলে আমেরিকার স্বার্থও থাকবে, ঘাঁটি থাকবে, তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে; গণতন্ত্র ও অধিকার থাকবে না। এই বাস্তবতা কথার ফুলঝুরি দিয়ে ঢাকতে নেমেছেন ওবামা। এ কাজে বুদ্ধিজীবী প্রেসিডেন্ট দারুণ ‘যোগ্য’। তাঁর প্রতি নৈতিক অভিযোগ এটাই যে, আশার সওদাগর ওবামা হত্যা করেছেন আশাকেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের গুণগান গাওয়ার লোকের অভাব কখনো হয়নি। আবার তাঁদের সমালোচনার বাজারেও কখনো মন্দা আসেনি। কিন্তু নিন্দুক ও খয়ের খাঁরা একটা বিষয়ে একমত, তাঁদের কথা ফেলনা নয়। নইলে দুনিয়াজোড়া ছড়ানো আমেরিকার ৭৩৭টি সামরিক ঘাঁটির একটিও বন্ধ হয়নি, সেসব ঘাঁটির ২৫ লাখেরও বেশি সেনার কেউই বিদেশি মাটি ছাড়েনি, ইরাক-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-সোমালিয়া-লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ হয়নি। ডলারের দাপট কমেনি, আন্তর্জাতিক-অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘসহ কোনো কিছু থেকেই মার্কিন করপোরেট পুঁজির আধিপত্য কমেনি। তবু বিশ্বব্যাপী ‘শান্তি’ ‘শান্তি’ ধ্বনিত হয় কী করে? মোগল সংগীতজ্ঞ তানসেন নাকি গানে গানে বৃষ্টি ঝরাতে পারতেন, জ্বালাতেন আগুন। এখন দেখছি ওবামার কথায়ও ফুল ফোটে, শান্তির বৃষ্টি ঝরে। হোক, অসুবিধা নেই। আমাদের কথা আপাতত একটাই: আমরা আপনাকে আর বিশ্বাস করি না। কেবল আমরাই নই, ইউরোপের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও আমেরিকার প্রতি আস্থায় চিড় ধরেছে। আমেরিকার প্রতি অনাস্থা আপনি কমাতে পারেননি।
নিউজউইক ম্যাগাজিনের সেই বিখ্যাত মার্কিনপন্থী সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া লিখেছিলেন, ‘হোয়াই দে হেট আস’—‘কেন তারা আমাদের ঘৃণা করে?’। এখানে ‘তারা’ হলো আরব ও মুসলিমরা, ‘আস’ মানে ইউএস তথা যুক্তরাষ্ট্র। প্রশ্নটাকে বরং যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, ‘হোয়াই ডু উই লাভ ইউ(এস)?’ কেন আমরা তোমাদের ভালোবাসব? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি অধিকৃত প্যারিসে বসে ছবি আঁকছিলেন প্রতিভাধর স্প্যানিশ শিল্পী পাবলো পিকাসো। একদিন তাঁর স্টুডিওতে একজন নাজি সামরিক কর্মকর্তা এলেন। পিকাসোর যুদ্ধ, গণহত্যার বীভৎসতা নিয়ে আঁকা ছবিগুলো দেখতে দেখতে দখলদার কর্নেল জিজ্ঞাসা করেন, ‘হু ক্রিয়েটেড দিস?’ কে এগুলো সৃষ্টি করেছে। পিকাসো পরিহাস করে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইউ’। তোমরাই এগুলো সৃষ্টি করেছ। আমি কেবল তোমাদের কর্মকে এঁকে দেখিয়েছি। পিকাসোর সেই ছবিগুলো ছিল মানবতার ধ্বংসের বেদনায় ভরা। আজ যখন ওবামা সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র্য, স্বৈরতন্ত্র ও যুদ্ধবাজি নিয়ে সবক দেন, তখন বলা দরকার, এসব তোমাদেরই সৃষ্টি, তোমরাই আমাদের এসবের মধ্যে নিপতিত করেছ, তার পরও তোমরা ভালোবাসা চাও? কবি বিনয় মজুমদারের ভাষায় বলতে চাই, ‘ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?’
তার পরও ঠিকই আরব-মার্কিন ভালোবাসা বাড়ছে। আরবের উদ্দীপনায় খোদ মার্কিন মুলুকেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি শহরে শ্রমিকেরা তাঁদের অধিকার কর্তনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। উইসকনসিন এ রকম একটি শহর। মিসরের তাহরির স্কয়ারের একটি প্ল্যাকার্ডেও উঠে এসেছে এখানকার শ্রমিকদের কথা। প্ল্যাকার্ডটির ছবি এখন ইন্টারনেটে ঘুরছে। সেখানে এক মিসরীয় তরুণ লিখেছেন, ‘এক বিশ্ব এক ব্যথা: মিসর যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের শ্রমিকদের পক্ষে। কোনোভাবে আমেরিকার সেই শ্রমিকেরা ছবিটি দেখে জবাব দেন, ‘আমরা তোমাদের ভালোবাসি, তোমাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ, অভিবাদন তোমাদের বিজয়ে।’ ওবামা আমরা এই আমেরিকার সমর্থন ভালোবাসি, মোড়লগিরি ভালোবাসি না।
লাদেন হত্যা নিয়ে মার্কিন গালগল্পও কম লোকই বিশ্বাস করেছে। ঘটনা সত্য বা মিথ্যা যা-ই হোক, দেখার বিষয় হলো, আমেরিকা তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। টুইন টাওয়ার ধ্বংস থেকে শুরু করে ইরাকের হাতে পারমাণবিক বোমা থাকার অভিযোগ, ইরাক-আফগানিস্তানের মানুষকে স্বৈরতন্ত্র মুক্ত করার মিশন, লিবিয়ায় গণতন্ত্র আনয়নকারী হামলার কাহিনি বিশ্বাস্য নয়। এ নিয়ে এখন ফরিদ জাকারিয়া নতুন এক প্রবন্ধ লিখতে পারেন, ‘কেন তারা আমাদের বিশ্বাস করে না?’
তিনি এখনো তা লেখেননি। কিন্তু আগাম একটা কৌতুক তাঁর উদ্দেশে আমরা নিবেদন করতে পারি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন ইউরোপীয় শক্তিগুলো তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, গল্পটা তখনকার। এক ইহুদি যুবকের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ডাক পড়েছে। সে যুদ্ধে যাচ্ছে, তার মা তাকে শেষবারের মতো আদর করে বিদায় দিতে গিয়ে বলছে, ‘বাবা, একটা করে তুর্কি মারবি আর জিরিয়ে নিবি, বেশি পরিশ্রম করবি না।’ ছেলেটা তখন বলছে, ‘কিন্তু মা, তুর্কিরা যদি আমাকে মারে?’ মা তো অবাক, ‘ওমা! ওরা তোকে মারবে কেন, তুই ওদের কী ক্ষতি করেছিস?’
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com
No comments