বিশেষ সাক্ষাৎকার-দুই নয়, এক মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকুক by সৈয়দ আমিরুল ইসলাম
বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলামের জন্ম ১৯৪০ সালের ১৩ জানুয়ারি, কুমিল্লায়। কুমিল্লা জিলা স্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উতরিয়ে ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬২-তে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৫-তে যোগ দেন ঢাকা বারে।
তবে তাঁর স্বনামধন্য আইনজীবী বাবা মরহুম সৈয়দ আবদুল ওয়াহেদ, যিনি একাদিক্রমে পাঁচ মেয়াদে কুমিল্লা বারের সভাপতি ছিলেন, তাঁর জুনিয়র হিসেবে ১৯৬৯ সালের মে পর্যন্ত কুমিল্লা বারে ওকালতি করেন সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালে তিনি ইংল্যান্ডের লিঙ্কনস ইন থেকে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। ১৯৯৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিযুক্ত হন এবং এক যুগেরও বেশি সময়ের জজিয়তি জীবনের ইতি টেনে ২০০৭ সালের ১৩ জানুয়ারি অবসর নেন। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইন পেশায় নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি বাতিল হয়ে গেছে? নাকি এটা বুঝতে পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম যে সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা পেয়েছি, তাতে দেখা যায় ত্রয়োদশ সংশোধনীকে আপিল বিভাগ বাতিল ও ক্ষমতাবহির্ভূত ঘোষণা করেছেন।
প্রথম আলো গত ১৭ জুন ডেইলি স্টার-এ কয়েকজন শীর্ষ আইনবিদ বলেই দিয়েছেন রায় ঘোষণার তারিখ থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো মত দেওয়া সমীচীন হবে না।
প্রথম আলো কিন্তু আদালতের আদেশটি শর্তসাপেক্ষ। বাতিল কথাটির সঙ্গে প্রসপেকটিভ বা ভবিষ্যৎসাপেক্ষ কথাটি জুড়ে দিয়েছেন।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ঠিকই বলেছেন। বাতিল করে দেওয়ার কথাটি শর্তমুক্ত নয়। কিন্তু তারপর তাঁরা লিগ্যাল মেক্সিমস (আইনগত প্রবচনমালা) দিয়ে বললেন, নবম ও দশম সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যাবে।
প্রথম আলো ওই প্রবচনগুলো দিয়ে কিন্তু আদালত সামরিক শাসনও জায়েজ করে থাকেন।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম হ্যাঁ, এবং এখন সেগুলোর ভিত্তিতেই তাঁরা বলে দিলেন, দুই মেয়াদে নির্বাচন করা যাবে এবং সেখানে আবার তাঁরা সংসদকে স্বাধীনতা দিলেন যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারবে। কিন্তু সেখানেও আবার বললেন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারকদের বাদ দিয়ে বিধান করতে হবে। এখানে আমি বলতে চাই, আপিল বিভাগ যদি মনেই করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অসাংবিধানিক, তাহলে তাঁরা যে আইনি প্রবচনমালা দিলেন, এগুলো কাদের, কোন আমলের? এগুলো কিন্তু কিংস কোর্ট আমলের। তখন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল না। আদালতগুলো রাজার ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হতো। সেই আইনি প্রবচন একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বাংলাদেশে খাটে না। দ্বিতীয়ত, আদালত যখন বললেনই এটা অসাংবিধানিক, তখন দুই মেয়াদে নির্বাচন দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর ছিল না। এটা হলো আইনগত ও সাংবিধানিক অবস্থা। কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কী দেখি?
প্রথম আলো আপিল বিভাগ কিন্তু ভবিষ্যৎসাপেক্ষ কথাটি বলে দিয়ে আমাদের ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ‘গোলকনাথ’ মামলায় অনুসৃত ডক্টরিন অব প্রসপেকটিভ ওভার রুলিং কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আদালতের এখতিয়ার ছিল। আচ্ছা, এই নীতিতে কোনো সংশোধনী বাতিলের রেওয়াজ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে কি এই প্রথম?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম হ্যাঁ।
প্রথম আলো এটাও কি সত্য নয় যে আমাদের বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিপূর্বে এই ডক্টরিন নিয়ে তেমন কোনো আলাপ-আলোচনার অবকাশ হয়নি? সুতরাং এটা পুরোপুরি একটি অচেনা আইনি ভাবনা?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম সে কথাও ঠিক।
প্রথম আলো ‘গোলকনাথে’ বলে দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী কীভাবে বৈধ বা বাতিল বলে গণ্য হবে। এখন আপিল বিভাগ তো তাঁদের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলেও দিতে পারেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের পর কার্যকর হবে। আদালতের এই ক্ষমতা আইনগতভাবে এখনো খোলা আছে কি না।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এই বিভ্রান্তি সৃষ্টির দরকার ছিল না। সংক্ষিপ্ত আদেশেই সুস্পষ্টভাবে বলতে পারতেন আমরা বাতিল করেছি, কিন্তু সেটা দুই মেয়াদের পর কার্যকর হবে।
প্রথম আলো এখন এই যে আপিল বিভাগ এটা করলেন না, এখন এ নিয়ে হানাহানির রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম রায়ের অস্পষ্টতাই সব ধরনের ঝামেলার সূচনা ঘটিয়েছে।
প্রথম আলো আমরা আপনার সুচিন্তিত মতামত জানতে চাই। যাতে এ ধরনের অবস্থার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম দেখুন, এ বিষয়ে কথা বলতে—।
প্রথম আলো চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে। এখন এর সমালোচনা করা বাকস্বাধীনতার অংশ।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম রায়ের আইনগত দিক নিয়ে আমরা সমালোচনা করতে পারি।
প্রথম আলো এখন যদি দুই মেয়াদের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে কি তাতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের লঙ্ঘন ঘটবে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম না। লঙ্ঘন বলার কোনো সুযোগ নেই।
প্রথম আলো প্রসপেকটিভ শব্দ ‘গোলকনাথে’ কেন এবং কী কারণে কীভাবে গ্রহণ করা হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। এখন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে যদি এর কোনো ব্যাখ্যাই না থাকে, তাহলে আমরা ভবিষ্যৎসাপেক্ষে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিষয়টিকে কীভাবে বুঝব?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম সে ক্ষেত্রে আমরা গোলকনাথের রায়ের আলোকেই বুঝব। যদিও সে রায় আমাদের ওপর বাধ্যতামূলক নয়, তবে তার পারজুয়েসিভ বা বোধযোগ্য মূল্য রয়েছে।
প্রথম আলো এখন প্রধানমন্ত্রী যে অবস্থান নিয়েছেন যে আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে, এখন আর এর অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই, এ কথার কি জোরালো আইনগত ভিত্তি থাকে? বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর এই অভিমতের সঙ্গে আমি একমত নই। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এটা বাতিল হয়ে গেছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম বাতিল হয়ে গেছে। তাহলেও বাস্তব অবস্থার নিরিখে বলব, এর থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও বিরোধী দলের সামনে সাংবিধানিক পথ খোলা আছে। কিন্তু সবকিছুর মূলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকট। সরকারি ও বিরোধী দল যত দিন পর্যন্ত তাদের দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে জনস্বার্থকে প্রাধান্য না দেবে, তত দিন পর্যন্ত এ সংস্কৃতির পরিবর্তন আসবে না।
প্রথম আলো সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থানগত দূরত্ব আগের চেয়ে একটু কমেছে বলে মনে হচ্ছে। সরকার বলেছে তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়েই নির্বাচনকালীন সরকার গড়তে চায়। আর বিএনপি বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাঠামো ঠিক রেখে তারা আলোচনায় বসতে রাজি।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এ ক্ষেত্রে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান সমর্থন করি। বিএনপি যে বলছে মূল কাঠামো ঠিক রাখতে হবে, এর মধ্যে তাদের একটি দুরভিসন্ধি রয়েছে। কারণ তারা বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান উপদেষ্টা মানবে না। এরপর আসেন বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম। তাঁকেও বিএনপি মানবে না।
প্রথম আলো কিন্তু সেটা মানার হয়তো একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। কারণ বিএনপির সঙ্গে বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নৈকট্যের একটা অতীত আছে। তিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সফরসঙ্গী হয়ে নানা দেশ সফর করেছিলেন।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বিএনপির আমলেই তিনি বিচারক নিয়োগ পান। কিন্তু শামসুন্নাহার হলের ঘটনার তদন্তে তাঁর দেওয়া প্রতিবেদন বিএনপিকে নাখোশ করেছিল। এমনকি তাঁকে আপিল বিভাগে নিতে বিএনপি গোড়াতে অনিচ্ছুক ছিল। এরপর আপিল বিভাগের ক্ষেত্রে আসেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তাঁকে বিএনপি মানবে, আওয়ামী লীগ মানবে না। সুতরাং এভাবে কোনো সুষ্ঠু সমাধান আমরা আশা করতে পারি না। তাই আমি সব সময় বলে আসছি, নাগরিক সমাজকে আর বসে থাকলে চলবে না। প্রয়োজনে একটা নাগরিক ফোরাম হতে পারে। এর মাধ্যমে এই রাজনীতিবিদদের ওপরে একটা চাপ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে তাঁরা তাঁদের এই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। অন্যথায় তাঁরা এ খেলা খেলতেই থাকবেন।
প্রথম আলো নাগরিক সমাজ যদি রাজনীতিকদের আগে একটা প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে তার তাৎপর্য কী হতে পারে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এর অসামান্য তাৎপর্য থাকবে। এবং আমি মনে করি, আর বিলম্ব না করে এ বিষয়ে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকা নাগরিক সমাজকে সক্রিয় হতে হবে।
প্রথম আলো কিন্তু মূলমন্ত্র একটাই—কে হবেন প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন প্রধান উপদেষ্টা। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য হচ্ছে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন। এখন নাগরিক সমাজ কীভাবে এগোবে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়ই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। মতৈক্যের ভিত্তিতে যিনি আসবেন তিনিই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ভোগ করবেন। আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, আবার অন্যদের দিয়ে নির্বাচন করাবেন, সেটা তো হবে না। তবে আমি মনে করি, বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেই সমস্যার সুরাহা করতে হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বলব, আর একটি মেয়াদে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় হতে পারে। এই নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের যে পক্ষই জয়ী বা পরাজিত হোক না কেন, তারা জানবে যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে না। সুতরাং ভবিষ্যতে এ নিয়ে আর জটিলতার সুযোগ থাকবে বলে মনে হয় না।
প্রথম আলো এমনকি বাহাত্তরের সংবিধানের ৫৫(৪) অনুচ্ছেদ যদি ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে নির্বাচিত কিংবা অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়েও মন্ত্রিসভা গঠন করা যায়। তার মানে সমঝোতাই বড়। আইনগত বা সাংবিধানিক কোনো বাধাই বাধা নয়।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম একেবারেই ঠিক কথা। সমঝোতাই বড় কথা। আমি যা বলব আপনি তার বিরোধিতা করবেন। আপনি যা বলবেন আমি তার বিরোধিতা করব। এই চক্র থেকে বেরোতে হবে।
প্রথম আলো আবার আইনের প্রশ্নে আসি। রাজনীতিকেরা এমন একটা বিষয় নিয়ে হল্লা করছেন, আমরা নতুন ফর্মুলা উদ্ভাবন নিয়ে আলাপ করছি, যেটা কিনা এখনো সাবজুডিশ। পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য আপিল বিভাগ আমাদের অপেক্ষায় রেখেছেন। তাই এটাকে কি সাবজুডিশ বলা ভুল হবে? এটা কি এক মস্ত পরিহাস নয়?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম সাবজুডিশের গন্ধ ঠিকই মুছে যাচ্ছে না। কারণ, কী যুক্তিতে কী কারণ দেখিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, সেটা তো এখন অন্ধকারে।
প্রথম আলো এবং আরও বড় কথা, রায়টি কিন্তু সর্বসম্মত নয়। এটি একটি বিভক্ত রায়।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম আমরা অনেক সময় দেখি সংখ্যালঘুর মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠের চেয়ে উন্নততর। জনগণ যদি দেখে সংখ্যালঘুর মতটি শ্রেয়তর, তাহলে আইনের দিক থেকে হেরে গেলেও সংখ্যালঘুর মতটি তারা গ্রহণ করবে।
প্রথম আলো বর্তমান অবস্থাকে আমরা কী বলব। সাবজুডিশ কেন বলব কিংবা কেন বলব না।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এটা সেই অর্থে সাবজুডিশ—তাঁরা রায় ঘোষণা করেছেন, কিন্তু এখনো প্রকাশ করেননি। সুতরাং সংবিধানে বা সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে তার প্রভাবটা নির্দিষ্টভাবে কতটা কী হবে তা তো আমরা বুঝতে পারছি না। আপনি বললেন অবৈধ, কিন্তু কেন বললেন? তারপর আবার বললেন, আমরা সাময়িকভাবে এটা কার্যকর করছি না। দুটো নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে করা যাবে। এমনকি আমি যে দুই মেয়াদের নির্বাচনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলাম সে অবস্থান থেকে হয়তো আমি সরে আসতে পারি। কারণ, হয়তো আমি দেখব, তাঁরা যে যুক্তি দেখিয়েছেন সেটা আরও গ্রহণযোগ্য।
প্রথম আলো তাহলে কি আপনি বলবেন যে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ রায় আসা উচিত, যাতে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ইতিমধ্যে সরকারের আড়াই বছর চলে গেছে। বাকি আড়াই বছর পর নির্বাচন হবে। যাঁরা শাসনতন্ত্র বোঝেন না, যাঁরা আইনের মারপ্যাঁচ বোঝেন না, তাঁরাও যাতে রায় পড়ে বুঝতে পারেন আদালত কী বলেছেন—এটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি বাতিল হয়ে গেছে? নাকি এটা বুঝতে পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম যে সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা পেয়েছি, তাতে দেখা যায় ত্রয়োদশ সংশোধনীকে আপিল বিভাগ বাতিল ও ক্ষমতাবহির্ভূত ঘোষণা করেছেন।
প্রথম আলো গত ১৭ জুন ডেইলি স্টার-এ কয়েকজন শীর্ষ আইনবিদ বলেই দিয়েছেন রায় ঘোষণার তারিখ থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো মত দেওয়া সমীচীন হবে না।
প্রথম আলো কিন্তু আদালতের আদেশটি শর্তসাপেক্ষ। বাতিল কথাটির সঙ্গে প্রসপেকটিভ বা ভবিষ্যৎসাপেক্ষ কথাটি জুড়ে দিয়েছেন।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ঠিকই বলেছেন। বাতিল করে দেওয়ার কথাটি শর্তমুক্ত নয়। কিন্তু তারপর তাঁরা লিগ্যাল মেক্সিমস (আইনগত প্রবচনমালা) দিয়ে বললেন, নবম ও দশম সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যাবে।
প্রথম আলো ওই প্রবচনগুলো দিয়ে কিন্তু আদালত সামরিক শাসনও জায়েজ করে থাকেন।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম হ্যাঁ, এবং এখন সেগুলোর ভিত্তিতেই তাঁরা বলে দিলেন, দুই মেয়াদে নির্বাচন করা যাবে এবং সেখানে আবার তাঁরা সংসদকে স্বাধীনতা দিলেন যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারবে। কিন্তু সেখানেও আবার বললেন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারকদের বাদ দিয়ে বিধান করতে হবে। এখানে আমি বলতে চাই, আপিল বিভাগ যদি মনেই করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অসাংবিধানিক, তাহলে তাঁরা যে আইনি প্রবচনমালা দিলেন, এগুলো কাদের, কোন আমলের? এগুলো কিন্তু কিংস কোর্ট আমলের। তখন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল না। আদালতগুলো রাজার ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হতো। সেই আইনি প্রবচন একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বাংলাদেশে খাটে না। দ্বিতীয়ত, আদালত যখন বললেনই এটা অসাংবিধানিক, তখন দুই মেয়াদে নির্বাচন দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর ছিল না। এটা হলো আইনগত ও সাংবিধানিক অবস্থা। কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কী দেখি?
প্রথম আলো আপিল বিভাগ কিন্তু ভবিষ্যৎসাপেক্ষ কথাটি বলে দিয়ে আমাদের ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ‘গোলকনাথ’ মামলায় অনুসৃত ডক্টরিন অব প্রসপেকটিভ ওভার রুলিং কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আদালতের এখতিয়ার ছিল। আচ্ছা, এই নীতিতে কোনো সংশোধনী বাতিলের রেওয়াজ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে কি এই প্রথম?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম হ্যাঁ।
প্রথম আলো এটাও কি সত্য নয় যে আমাদের বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিপূর্বে এই ডক্টরিন নিয়ে তেমন কোনো আলাপ-আলোচনার অবকাশ হয়নি? সুতরাং এটা পুরোপুরি একটি অচেনা আইনি ভাবনা?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম সে কথাও ঠিক।
প্রথম আলো ‘গোলকনাথে’ বলে দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী কীভাবে বৈধ বা বাতিল বলে গণ্য হবে। এখন আপিল বিভাগ তো তাঁদের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলেও দিতে পারেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের পর কার্যকর হবে। আদালতের এই ক্ষমতা আইনগতভাবে এখনো খোলা আছে কি না।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এই বিভ্রান্তি সৃষ্টির দরকার ছিল না। সংক্ষিপ্ত আদেশেই সুস্পষ্টভাবে বলতে পারতেন আমরা বাতিল করেছি, কিন্তু সেটা দুই মেয়াদের পর কার্যকর হবে।
প্রথম আলো এখন এই যে আপিল বিভাগ এটা করলেন না, এখন এ নিয়ে হানাহানির রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম রায়ের অস্পষ্টতাই সব ধরনের ঝামেলার সূচনা ঘটিয়েছে।
প্রথম আলো আমরা আপনার সুচিন্তিত মতামত জানতে চাই। যাতে এ ধরনের অবস্থার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম দেখুন, এ বিষয়ে কথা বলতে—।
প্রথম আলো চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে। এখন এর সমালোচনা করা বাকস্বাধীনতার অংশ।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম রায়ের আইনগত দিক নিয়ে আমরা সমালোচনা করতে পারি।
প্রথম আলো এখন যদি দুই মেয়াদের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে কি তাতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের লঙ্ঘন ঘটবে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম না। লঙ্ঘন বলার কোনো সুযোগ নেই।
প্রথম আলো প্রসপেকটিভ শব্দ ‘গোলকনাথে’ কেন এবং কী কারণে কীভাবে গ্রহণ করা হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। এখন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে যদি এর কোনো ব্যাখ্যাই না থাকে, তাহলে আমরা ভবিষ্যৎসাপেক্ষে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিষয়টিকে কীভাবে বুঝব?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম সে ক্ষেত্রে আমরা গোলকনাথের রায়ের আলোকেই বুঝব। যদিও সে রায় আমাদের ওপর বাধ্যতামূলক নয়, তবে তার পারজুয়েসিভ বা বোধযোগ্য মূল্য রয়েছে।
প্রথম আলো এখন প্রধানমন্ত্রী যে অবস্থান নিয়েছেন যে আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে, এখন আর এর অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই, এ কথার কি জোরালো আইনগত ভিত্তি থাকে? বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর এই অভিমতের সঙ্গে আমি একমত নই। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এটা বাতিল হয়ে গেছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম বাতিল হয়ে গেছে। তাহলেও বাস্তব অবস্থার নিরিখে বলব, এর থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও বিরোধী দলের সামনে সাংবিধানিক পথ খোলা আছে। কিন্তু সবকিছুর মূলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকট। সরকারি ও বিরোধী দল যত দিন পর্যন্ত তাদের দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে জনস্বার্থকে প্রাধান্য না দেবে, তত দিন পর্যন্ত এ সংস্কৃতির পরিবর্তন আসবে না।
প্রথম আলো সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থানগত দূরত্ব আগের চেয়ে একটু কমেছে বলে মনে হচ্ছে। সরকার বলেছে তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়েই নির্বাচনকালীন সরকার গড়তে চায়। আর বিএনপি বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাঠামো ঠিক রেখে তারা আলোচনায় বসতে রাজি।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এ ক্ষেত্রে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান সমর্থন করি। বিএনপি যে বলছে মূল কাঠামো ঠিক রাখতে হবে, এর মধ্যে তাদের একটি দুরভিসন্ধি রয়েছে। কারণ তারা বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান উপদেষ্টা মানবে না। এরপর আসেন বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম। তাঁকেও বিএনপি মানবে না।
প্রথম আলো কিন্তু সেটা মানার হয়তো একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। কারণ বিএনপির সঙ্গে বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নৈকট্যের একটা অতীত আছে। তিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সফরসঙ্গী হয়ে নানা দেশ সফর করেছিলেন।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বিএনপির আমলেই তিনি বিচারক নিয়োগ পান। কিন্তু শামসুন্নাহার হলের ঘটনার তদন্তে তাঁর দেওয়া প্রতিবেদন বিএনপিকে নাখোশ করেছিল। এমনকি তাঁকে আপিল বিভাগে নিতে বিএনপি গোড়াতে অনিচ্ছুক ছিল। এরপর আপিল বিভাগের ক্ষেত্রে আসেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তাঁকে বিএনপি মানবে, আওয়ামী লীগ মানবে না। সুতরাং এভাবে কোনো সুষ্ঠু সমাধান আমরা আশা করতে পারি না। তাই আমি সব সময় বলে আসছি, নাগরিক সমাজকে আর বসে থাকলে চলবে না। প্রয়োজনে একটা নাগরিক ফোরাম হতে পারে। এর মাধ্যমে এই রাজনীতিবিদদের ওপরে একটা চাপ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে তাঁরা তাঁদের এই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। অন্যথায় তাঁরা এ খেলা খেলতেই থাকবেন।
প্রথম আলো নাগরিক সমাজ যদি রাজনীতিকদের আগে একটা প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে তার তাৎপর্য কী হতে পারে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এর অসামান্য তাৎপর্য থাকবে। এবং আমি মনে করি, আর বিলম্ব না করে এ বিষয়ে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকা নাগরিক সমাজকে সক্রিয় হতে হবে।
প্রথম আলো কিন্তু মূলমন্ত্র একটাই—কে হবেন প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন প্রধান উপদেষ্টা। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য হচ্ছে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন। এখন নাগরিক সমাজ কীভাবে এগোবে?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়ই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। মতৈক্যের ভিত্তিতে যিনি আসবেন তিনিই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ভোগ করবেন। আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, আবার অন্যদের দিয়ে নির্বাচন করাবেন, সেটা তো হবে না। তবে আমি মনে করি, বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেই সমস্যার সুরাহা করতে হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বলব, আর একটি মেয়াদে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় হতে পারে। এই নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের যে পক্ষই জয়ী বা পরাজিত হোক না কেন, তারা জানবে যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে না। সুতরাং ভবিষ্যতে এ নিয়ে আর জটিলতার সুযোগ থাকবে বলে মনে হয় না।
প্রথম আলো এমনকি বাহাত্তরের সংবিধানের ৫৫(৪) অনুচ্ছেদ যদি ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে নির্বাচিত কিংবা অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়েও মন্ত্রিসভা গঠন করা যায়। তার মানে সমঝোতাই বড়। আইনগত বা সাংবিধানিক কোনো বাধাই বাধা নয়।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম একেবারেই ঠিক কথা। সমঝোতাই বড় কথা। আমি যা বলব আপনি তার বিরোধিতা করবেন। আপনি যা বলবেন আমি তার বিরোধিতা করব। এই চক্র থেকে বেরোতে হবে।
প্রথম আলো আবার আইনের প্রশ্নে আসি। রাজনীতিকেরা এমন একটা বিষয় নিয়ে হল্লা করছেন, আমরা নতুন ফর্মুলা উদ্ভাবন নিয়ে আলাপ করছি, যেটা কিনা এখনো সাবজুডিশ। পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য আপিল বিভাগ আমাদের অপেক্ষায় রেখেছেন। তাই এটাকে কি সাবজুডিশ বলা ভুল হবে? এটা কি এক মস্ত পরিহাস নয়?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম সাবজুডিশের গন্ধ ঠিকই মুছে যাচ্ছে না। কারণ, কী যুক্তিতে কী কারণ দেখিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, সেটা তো এখন অন্ধকারে।
প্রথম আলো এবং আরও বড় কথা, রায়টি কিন্তু সর্বসম্মত নয়। এটি একটি বিভক্ত রায়।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম আমরা অনেক সময় দেখি সংখ্যালঘুর মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠের চেয়ে উন্নততর। জনগণ যদি দেখে সংখ্যালঘুর মতটি শ্রেয়তর, তাহলে আইনের দিক থেকে হেরে গেলেও সংখ্যালঘুর মতটি তারা গ্রহণ করবে।
প্রথম আলো বর্তমান অবস্থাকে আমরা কী বলব। সাবজুডিশ কেন বলব কিংবা কেন বলব না।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এটা সেই অর্থে সাবজুডিশ—তাঁরা রায় ঘোষণা করেছেন, কিন্তু এখনো প্রকাশ করেননি। সুতরাং সংবিধানে বা সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে তার প্রভাবটা নির্দিষ্টভাবে কতটা কী হবে তা তো আমরা বুঝতে পারছি না। আপনি বললেন অবৈধ, কিন্তু কেন বললেন? তারপর আবার বললেন, আমরা সাময়িকভাবে এটা কার্যকর করছি না। দুটো নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে করা যাবে। এমনকি আমি যে দুই মেয়াদের নির্বাচনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলাম সে অবস্থান থেকে হয়তো আমি সরে আসতে পারি। কারণ, হয়তো আমি দেখব, তাঁরা যে যুক্তি দেখিয়েছেন সেটা আরও গ্রহণযোগ্য।
প্রথম আলো তাহলে কি আপনি বলবেন যে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ রায় আসা উচিত, যাতে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না?
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ইতিমধ্যে সরকারের আড়াই বছর চলে গেছে। বাকি আড়াই বছর পর নির্বাচন হবে। যাঁরা শাসনতন্ত্র বোঝেন না, যাঁরা আইনের মারপ্যাঁচ বোঝেন না, তাঁরাও যাতে রায় পড়ে বুঝতে পারেন আদালত কী বলেছেন—এটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ধন্যবাদ।
No comments