কাটাখালী খাল-পানিপ্রবাহে জীবন হয় ছন্দময়
টাঙ্গাইলে করটিয়ার ওপর দিয়ে একসময় কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে যাওয়া শত ফুট চওড়া কাটাখালী খালটির এখন শীর্ণ কায়া দেখে কবিমনের দীর্ঘশ্বাস হয়তো সবার অলক্ষ্যেই বাতাসে মিলায়। যারা খালটির দুই পারের বংশপরম্পরায় বাসিন্দা তারা এবং ব্যবসায়িক ও নানা কাজে যে হাজার হাজার পরিবার এই খাল ব্যবহার করে জীবন-জীবিকা সচল রেখেছিল এক
সময়, তাদেরও এই খাল নালায় পরিণত হওয়া দেখে যাওয়া ছাড়া যেন কিছুই করার নেই। স্থানীয় ভূমিদস্যুরা ইতিমধ্যেই খালের দুই পাড় ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান এমনকি বাড়িঘর পর্যন্ত তুলে নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত রিপোর্টে দেখা যায়, কাটাখালী খালখেকো এসব ভূমিদস্যুর দাপট এত বেশি যে, স্থানীয় প্রশাসন খালের জায়গা দখলের জন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, ঘাঁটাতে পর্যন্ত সাহস করে না। রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাবের কারণে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে নেওয়া এদের পক্ষে সহজ। তবে এখনও সমাজ থেকে সুস্থ চিন্তা করার মতো মানুষ একেবারে হারিয়ে যায়নি। যারা সুস্থধারার চিন্তা করেন এবং যারা প্রকৃতিকে তার নিজস্ব ছন্দে চলতে দেওয়ার সঙ্গে মানুষের স্বাভাবিক ছন্দবদ্ধ জীবন সম্পর্কিত মনে করেন, তারা নদী, খালসহ পানির আধারগুলো রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন। কিন্তু যারা শুধু নিজের লাভের লোভে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জীবন পর্যন্ত হুমকিগ্রস্ত করতে দ্বিধা করে না, তারা প্রকৃতির আর্তনাদ শুনতে পায় না। এসব স্বার্থান্ধ মানুষকে লোভ সংবরণে বাধ্য করতে তাই প্রয়োজন পড়ে রাষ্ট্রের প্রতিরোধী ও আইনি দমনমূলক ক্ষমতা প্রয়োগের। কাটাখালী খালটি মুক্ত করার চেষ্টা হলেও এতদিন স্বার্থান্বেষী মহলের চাপ ও নানা কারসাজির কারণে তা সফল হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ক্ষমতার বিষদাঁত ভোঁতা করে দিতে তাই প্রয়োজন উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের। আর শুধু কাটাখালী খালই নয়, সরকারের উচিত দেশের সব নদী, খাল, নালা অবৈধ দখলদারমুক্ত করে সেগুলোর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা গ্রহণ। কাটাখালী খাল দখলমুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র বেদখলকৃত জলাশয় মুক্তির অগ্রযাত্রা বেগবান হোক। এতে পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভবিষ্যৎও বাঁচবে।
No comments