যত্নে রাখুন যন্ত্রপাতি by নাঈমা আমিন

শুধু চুলা আর হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে তো এখন আর চলে না রান্নাঘর। ব্লেন্ডার, টোস্টার, ওভেন, রেফ্রিজারেটর—কত কী লাগে! কিন্তু এসব যন্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি তা পরিষ্কার রাখাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রান্নাবিদ রাহিমা সুলতানা।

যেভাবে পরিষ্কার করতে হবে—
মাইক্রোওয়েভ ওভেন
 অবশ্যই মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্লাগ খুলে নিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করতে হবে।
 সপ্তাহে অন্তত এক দিন সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন। এ জন্য একটি পাত্রে লিকুইড সাবান আর পানি নিয়ে তাতে স্পঞ্জ ভিজিয়ে ওভেন মুছে নিন। তারপর পরিষ্কার পানিতে স্পঞ্জ ভিজিয়ে মুছুন।
 ভেতরটা মোছার আগে কাচের টার্ন প্লেট বের করে নিতে হবে। সাবান দিয়ে ধুতে হবে প্লেট।
 সবশেষে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে ওভেন মুছে ফেলুন।
 ওভেনে যেন গন্ধ না হয় সে জন্য এক গ্লাস পানিতে এক টেবিলচামচ লেবুর রস বা ভিনেগার দিন। সেই পানি দিয়ে মাঝে মাঝে ওভেন মুছে নিন।

ব্লেন্ডার
 ব্লেন্ডার ব্যবহারের পর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।
 তেলাপোকা যেন ভেতরে ঢুকতে না পারে সে জন্য ঢাকনা দিয়ে সব সময় ঢেকে রাখতে হবে।

টোস্টার
 টোস্ট করার পর খাবারের টুকরো লেগে থাকলে টোস্টার উপুড় করে তা ফেলে দিন এবং শুকনো কাপড় দিয়ে টোস্টার মুছে নিন।
 ভেজা কাপড় দিয়ে টোস্টারের প্লেট মুছে নিতে হবে।

ইস্ত্রি
 ইস্ত্রি ব্যবহারের পরে তা পরিষ্কার করে মুছে নির্দিষ্ট স্থানে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, তা না হলে ধুলো জমে যেতে পারে।
পানির ফিল্টার
 সপ্তাহে এক দিন সব অংশ খুলে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
 ফিল্টারের ভেতরের জিনিসগুলো খুলে ধুয়ে নিতে হবে, তা না হলে আয়রন জমে যায়।

রেফ্রিজারেটর
 ১৫ দিন পর পর অন্তত একবার রেফ্রিজারেটর ভেতরের সব জিনিস বের করে আলাদাভাবে এর বাইরে ও ভেতরে সাবান পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।
 রান্না করা জিনিস আর কাঁচা খাবার আলাদা করে রেফ্রিজারেটরে রাখা ভালো।
 রেফ্রিজারেটরে যেকোনো খাবার ঢেকে রাখতে হবে।
 তিন দিনের বেশি কোনো খাবার ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
 একেবারে গরম গরম কোনো খাবার ফ্রিজে রাখা যাবে না।

ওয়াশিং মেশিন
 একই ধরনের কাপড় একসঙ্গে দিতে হবে। যেসব কাপড়ের রং ওঠে, সেগুলো আলাদা করে ধুতে হবে।
 ১৫ দিন পর পর ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কার করতে হবে।

অন্যান্য সামগ্রী
 ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করার পর ধুয়ে নিতে হবে।
 ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিলে স্টিলের চামচ ব্যবহার করা যাবে না।
 অনেকক্ষণ ধরে এসব হাঁড়ি-পাতিলে খাবার গরম করলে কোটিং নষ্ট হয়ে যায়।
 ইলেকট্রিক কেটলি, চুলা প্রতিদিন রান্নার কাজ শেষে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
 কিচেন হুড ১৫ দিন পর পর খুলে নেটটা কলের নিচে নিয়ে সাবানপানি আর ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। তারপর পানি শুকিয়ে আবার আটকে দিন।

জেনে নিন
বাসাবাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব সামগ্রী ব্যবহারের আগে এর যত্ন নেওয়ার বিষয়ে বলছিলেন এপিক হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (কমিউনিকেশন) নাঈম হাসান খান।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন
 মাইক্রোওয়েভ ওভেনে মাইক্রোওয়েভ প্রুফ সামগ্রী দুই-তিন মিনিটের জন্য ব্যবহার করা ভালো।
 অনেক দিন পরিষ্কার না করলে এর ভেতরে তেলাপোকা ঢুকে সার্কিট নষ্ট করে ফেলতে পারে।
 দোকানে অনেক দিন থাকলে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের খাবার গরম করার জায়গাটাতে মাঝে মাঝে ভাপসা ভাব চলে আসে। সে জায়গাটা ব্যবহারের আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
 প্রতিদিন একবার লেবুর রস বা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
 মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ডিম সেদ্ধ করার আগে ডিমের খোসার কুসুমের দিকে একটু ফুটো করে নিতে হবে।

ব্লেন্ডার
 অধিকাংশ ব্লেন্ডারে সেফটি লক থাকে, কিছু ইন্ডিকেটর থাকে। অনেকে সেগুলো না বুঝে ব্যবহার করার কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
 ব্লেন্ডারে শক্ত কোনো কিছু দেওয়া যাবে না।
 বরফ গুঁড়া করতে দিলে ব্লেন্ডার অনেক সময় ফেটে যেতে পারে। খেয়াল রাখুন, এর ব্যবস্থা আছে কি না ব্লেন্ডারে। এ ছাড়া শুকনো হলুদ দেওয়া যাবে না। অনেক চাল একসঙ্গে গুঁড়া করা যাবে না।

স্টিম আয়রন
 আয়রন (ইস্ত্রি) অন্তত তিন মিনিট গরম হওয়ার পর ওয়াটার চেম্বারে পানি দিতে হবে।
 ননস্টিক ও ন্যানো সিরামিক বা সোল প্লেটের ইস্ত্রি দিয়ে শক্ত কোনো কিছুর ওপর ঘষা দেওয়া যাবে না।
 স্টেইনলেস স্টিলে অনেক সময় সিল্ক কাপড় লেগে যায়। তাই একটু সতর্ক থেকে ব্যবহার করতে হবে।

পানির ফিল্টার
 বাজারে যে পানির ফিল্টার পাওয়া যায় সেগুলোর অনেক সময় ওপরের দিকে সিরামিক ফিল্টার থাকে। সেখানে কখনোই গরম পানি দিয়ে ধোয়া উচিত নয়।
 তবে গরম কোনো কিছু বা শক্ত কোনো কিছু দিয়ে ঘষামাজা করে পরিষ্কার করা যাবে না।

রিচার্জেবল লাইট ও ফ্যান
 যতক্ষণ রিচার্জেবল লাইট ও ফ্যান ব্যবহার করবেন, তার চার গুণ পরিমাণ সময় চার্জ দিতে হবে। প্রথম দিনে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা চার্জ দিতে হবে।

ননস্টিক কুকার
 বেশি গরম হয়ে গেলে ননস্টিক কুকার নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
 কখনো কোনো জিনিস গরম অবস্থায় পানির নিচে রাখা যাবে না। তাতে অনেক সময় ননস্টিক প্রলেপ উঠে যেতে পারে। ঠান্ডা হওয়ার পর নরম কোনো ফোম দিয়ে ধোয়ামোছা করতে হবে।

জুস এক্সট্রাক্টর
 এর ভেতরে যেসব ফল দেওয়া হবে তার আটি বা বিচি বাদ দিয়ে দিতে হবে। যেমন, আম কেটে দিলে আমের আটি ফেলে দিতে হবে, আপেলের বিচিটা ফেলে তারপর দিতে হবে। নয়তো এ যন্ত্রের ব্লেডটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

চপার বা চপার ব্লেন্ডার
 চপিংয়ের জন্য চর্বি, হাড় বাদ দিয়ে শুধু মাংস দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে।
 চর্বি ফেলে দিয়ে ব্লেন্ড করলে মোটর ঠিকভাবে ঘুরতে পারে। তা না হলে ব্লেডটা ভেঙে যেতে পারে।

রাইসকুকার
 যতটা চাল দেওয়া হবে তার দ্বিগুণ পরিমাণে পানি দিতে হবে রাইসকুকারে।
 বোলটা ওঠানোর পর বেজটা শুকনো কোনো কিছু দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। পানি দিয়ে মুছলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.