সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র-একটি আনন্দের সংবাদ
গ্যাস-কয়লাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশের গর্বের অন্ত নেই। পরিমাণে কম হোক কি বেশি, মাটির গভীরে মূল্যবান খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব দেশের মানুষকে নতুন আশায় উজ্জীবিত করে। এমনকি যারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ তারাও আশার আলো দেখতে পান নতুন কোনো আবিষ্কারের সংবাদে।
নোয়াখালীর সুন্দলপুরে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের সংবাদ তেমনি এক আশার খবর। এ আবিষ্কারের জন্য পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সকে অভিনন্দন জানাতে হয়। অনেক বছরের শ্রমসাধ্য গবেষণা ও অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে প্রথম দুটি স্তরে গ্যাসের অস্তিত্ব না পেয়েও তারা হাল ধরে থেকেছেন। বরাদ্দের সীমাবদ্ধতা, যান্ত্রিক সমস্যা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় স্তরে গ্যাস মিলেছে। বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এদেশীয় বিশেষজ্ঞদের চেষ্টায় এ গ্যাসক্ষেত্রের উৎখনন সফল হয়েছে। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের উদ্যোগে এর আগেও গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেছে, কিন্তু সাধারণভাবে প্রচলিত মত হলো বাংলাদেশ গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথেষ্ট পারদর্শী নয় এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এখানে নেই। ধারণাটি বাস্তবতাপ্রসূত, কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে একেবারে পিছিয়েও নেই। অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক গ্যাস উত্তোলনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়া যেমন দরকার, তেমনি দেশীয় প্রয়াসকেও ক্রমশ সক্ষম ও মানসম্পন্ন করে তুলতে হবে। সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের আবিষ্কার এ যুক্তিকে আরও বেগবান করল। গ্যাস এবং অন্য প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সরকারি, বেসরকারি সব উদ্যোগই যুগপৎভাবে চলতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত তা হলো_ দেশের উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের কাজে যেন দেশে প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। আশার কথা, সুন্দলপুরে আবিষ্কৃত গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহার করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। প্রাপ্ত এ গ্যাসের পরিমাণ খুব বেশি না হলেও আমদানিকৃত গ্যাসের চেয়ে এর দাম অনেক কম হবে এবং কয়েক কিলোমিটার পাইপলাইনের সাহায্যে এ গ্যাস গ্রিডে পেঁৗছানো যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাস সংকট মেটানোর ক্ষেত্রে প্রাপ্ত গ্যাস বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল চাহিদা রয়েছে। গৃহস্থালি, যানবাহন ও শিল্পক্ষেত্রে প্রচুর গ্যাস দরকার হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের গ্যাসের সঞ্চয় অনেক কম। তাই বিশেষজ্ঞরা এখন থেকেই সাশ্রয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন। শুধু আমাদের দেশের ওয়াকিবহাল ব্যক্তিরাই নন, উন্নত দেশগুলোতেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করার নানামুখী তাগিদ আসছে। শুধু যে পৃথিবীর অভ্যন্তরের খনিজ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে তা নয়, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জলবায়ু রক্ষার স্বার্থেও জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প খুঁজছে সবাই। এমন বাস্তবতায় আমাদের খনিজ সম্পদের সর্বোচ্চ পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের সমতল ও সমুদ্রবক্ষের সঞ্চয় কতটা তা হিসাব করে আগামীর চাহিদা তা কতটুকু নিশ্চিত করতে পারবে সে ধারণা পাওয়াও জরুরি। এসব কাজে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স এগিয়ে আসতে পারে। সমতলের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোতে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দায়িত্ব বিশেষভাবে এ দেশীয় কোম্পানিগুলোকে দেওয়া যেতে পারে। আমরা আশা করি, নতুন আরও গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান দিয়ে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা আমাদের আশান্বিত করবে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ও শিল্পায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
No comments