লুণ্ঠিত গহনা জিম্মায় পেলেন তাঁদের একজন-সাক্ষ্য দিলেন দুই নারী কর্মকর্তা
পিলখানা হত্যা মামলায় গতকাল সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের দুই নারী কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন চিকিৎসক মেজর ফারজানা কালাম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইয়াসমিন আক্তার। জবানবন্দিতে তাঁরা বিদ্রোহের সময় পিলখানায় সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতির বিবরণ দেন।
মেজর ফারজানা বিডিআরে বিদ্রোহের সময় তাঁর বাসা থেকে লুণ্ঠিত ৪৫ ভরি গয়না গতকাল আদালতের নির্দেশে নিজ জিম্মায় পান। এত দিন এসব স্বর্ণালংকার বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা ছিল।
এই হত্যা মামলার বিচারকাজ চলছে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতে। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। মাঝে দুই দফা বিরতি দিয়ে কার্যক্রম চলে বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত। নিয়মিত বিচারক জহুরুল হকের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ করেন দায়রা জজ আখতারুজ্জামান। পরে কাল বুধবার পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
গতকাল প্রথমে সুবেদার হাশিম উদ্দিনের অসমাপ্ত জেরা সম্পন্ন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর সাক্ষ্য দেন মামলার ৭১ নম্বর সাক্ষী ও তৎকালীন বিডিআর হাসপাতালের চিকিৎসক ফারজানা কালাম। বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কর্মরত এই কর্মকর্তা জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দরবারে হইচই শুরু হলে বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ বাড়তে থাকে। কর্নেল লুৎফর রহমান সবাইকে বের হতে বলেন। মঞ্চ থেকে নেমে দরবার হলের মাঝামাঝি এলে সৈনিকেরা তাঁদের ধরে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। তারা লে. কর্নেল কায়সারের মাথায় গুলি করে এবং লুৎফর রহমানকে মারধর করে। তারা সবাইকে গেটের বাইরে এনে গালিগালাজ করে, কেউ কেউ ফায়ারিং স্কোয়াডে নিতে বলে। এ সময় সিপাই সেলিম রেজা এসে বলেন, ‘এঁরা মহিলা ডাক্তার, এঁদের মারিয়েন না, আমাগো কাজে লাগব।’
ফারজানা আরও বলেন, সৈনিকেরা তাঁকে, লে. কর্নেল ইয়াসমিন ও মেজর রোখসানাকে একটি পিকআপে তুলে নিয়ে যান। চিকিৎসক কর্নেল রবি গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করলে সৈনিকেরা তাঁকে লাথি দিয়ে ফেলে দেন। হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা অস্ত্রোপচারকক্ষে ঢুকে পড়েন। সেখানে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে পান। বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসক আমজাদ হোসেনের স্ত্রী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখানে আসেন। কয়েকজন সৈনিক বারবার অস্ত্রোপচার কক্ষে আসেন। তাঁরা হুমকি দেন, ‘চালাকি করলে গুলি করে মেরে ফেলব।’
সাক্ষ্যে মেজর ফারজানা বলেন, সৈনিকদের পাহারায় তাঁরা সারা দিন ও রাত অস্ত্রোপচার কক্ষে কাটান। পরের দিন সৈনিকেরা সেখানকার দুটি কক্ষ দখল করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নায়েক সহকারী আতাউরের সহায়তায় তিনি বাইরে যান। তিনি বলেন, এর আগে তাঁর গাড়ি সৈনিকেরা জ্বালিয়ে দেন। তাঁর মা ও সন্তানদের কোয়ার্টার গার্ডে আটকে রাখে। তাঁর বাসার সব মালামাল লুট করে। পরে এসব মালামাল দুই সৈনিকের গ্রামের বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করে।
ফারজানা আদালতে বলেন, তিনি বিয়ের সময় কানের দুল, সিথাহার, কণ্ঠমালা, ঝুমকা, আংটিসহ ৪০ ভরি গয়না উপহার পেয়েছিলেন। পরে কিছু গয়না নিজে কেনেন। বিদ্রোহের প্রথম দিন রাত ১১টার দিকে সাত-আটজন সৈনিক তাঁর বাসায় ঢুকে বৃদ্ধা মা ও শিশুসন্তানদের ভয়ভীতি দেখান। পরে বাচ্চাদের একটি ঘরে আটকে রেখে সব মালামাল লুট করে। মালামাল উদ্ধারের পর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে টিআই প্যারেডের মাধ্যমে তিনি আসামিদের শনাক্ত করেন।
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ওই স্বর্ণালংকার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সেগুলো আদালতে আনেন। পরে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অলংকার ফারজানার জিম্মায় দেওয়া হয়। অলংকারগুলো পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জবানবন্দির পর তাঁকে জেরা করেন আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী।
এরপর সাক্ষ্যে মামলার ৭২ নম্বর সাক্ষী লে. কর্নেল ইয়াসমিন আক্তার বলেন, দরবারে ডাক্তার পরিচয় পেয়ে একজন সিপাই বলে, ‘একজনকেও ছারব না, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলব।’ ওই সিপাই কর্নেল লুৎফর, মেজর জায়েদী ও মেজর রোকসানাকে বুট দিয়ে লাথি মারে।
ইয়াসমিন বলেন, চিকিৎসক লে. কর্নেল ছদরুল গভীর রাতে তাঁকে জানান, নায়েব সুবেদার তোরাব আলী ও মনোরঞ্জনের নেতৃত্বে সেনা কর্মকর্তাদের লাশ মরচুয়ারির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন পর ‘সাগরিকা’য় নিজের বাসায় গিয়ে দেখেন ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, আলমারি সব ভাঙচুর অবস্থায় আছে। বাসা থেকে ৫০ হাজার টাকা, ডায়মন্ডের নেকলেস, ডিজিটাল ক্যামেরসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট হয়েছে।
সাক্ষ্যের পর আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী ইয়াসমিনকে জেরা করেন। তাঁর জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালতের কার্যক্রম মুলতবি হয়।
হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা এ মামলার আসামি ৮৫০ জন। আসামিদের মধ্যে ২১ জন পলাতক ও দুজন মারা গেছেন। বিডিআর সদস্যদের বাইরে এ মামলার আসামি হলেন বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (সাবেক বিডিআর সদস্য) তোরাব আলী। গতকাল আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
এই হত্যা মামলার বিচারকাজ চলছে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতে। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। মাঝে দুই দফা বিরতি দিয়ে কার্যক্রম চলে বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত। নিয়মিত বিচারক জহুরুল হকের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ করেন দায়রা জজ আখতারুজ্জামান। পরে কাল বুধবার পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
গতকাল প্রথমে সুবেদার হাশিম উদ্দিনের অসমাপ্ত জেরা সম্পন্ন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর সাক্ষ্য দেন মামলার ৭১ নম্বর সাক্ষী ও তৎকালীন বিডিআর হাসপাতালের চিকিৎসক ফারজানা কালাম। বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কর্মরত এই কর্মকর্তা জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দরবারে হইচই শুরু হলে বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ বাড়তে থাকে। কর্নেল লুৎফর রহমান সবাইকে বের হতে বলেন। মঞ্চ থেকে নেমে দরবার হলের মাঝামাঝি এলে সৈনিকেরা তাঁদের ধরে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। তারা লে. কর্নেল কায়সারের মাথায় গুলি করে এবং লুৎফর রহমানকে মারধর করে। তারা সবাইকে গেটের বাইরে এনে গালিগালাজ করে, কেউ কেউ ফায়ারিং স্কোয়াডে নিতে বলে। এ সময় সিপাই সেলিম রেজা এসে বলেন, ‘এঁরা মহিলা ডাক্তার, এঁদের মারিয়েন না, আমাগো কাজে লাগব।’
ফারজানা আরও বলেন, সৈনিকেরা তাঁকে, লে. কর্নেল ইয়াসমিন ও মেজর রোখসানাকে একটি পিকআপে তুলে নিয়ে যান। চিকিৎসক কর্নেল রবি গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করলে সৈনিকেরা তাঁকে লাথি দিয়ে ফেলে দেন। হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা অস্ত্রোপচারকক্ষে ঢুকে পড়েন। সেখানে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে পান। বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসক আমজাদ হোসেনের স্ত্রী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখানে আসেন। কয়েকজন সৈনিক বারবার অস্ত্রোপচার কক্ষে আসেন। তাঁরা হুমকি দেন, ‘চালাকি করলে গুলি করে মেরে ফেলব।’
সাক্ষ্যে মেজর ফারজানা বলেন, সৈনিকদের পাহারায় তাঁরা সারা দিন ও রাত অস্ত্রোপচার কক্ষে কাটান। পরের দিন সৈনিকেরা সেখানকার দুটি কক্ষ দখল করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নায়েক সহকারী আতাউরের সহায়তায় তিনি বাইরে যান। তিনি বলেন, এর আগে তাঁর গাড়ি সৈনিকেরা জ্বালিয়ে দেন। তাঁর মা ও সন্তানদের কোয়ার্টার গার্ডে আটকে রাখে। তাঁর বাসার সব মালামাল লুট করে। পরে এসব মালামাল দুই সৈনিকের গ্রামের বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করে।
ফারজানা আদালতে বলেন, তিনি বিয়ের সময় কানের দুল, সিথাহার, কণ্ঠমালা, ঝুমকা, আংটিসহ ৪০ ভরি গয়না উপহার পেয়েছিলেন। পরে কিছু গয়না নিজে কেনেন। বিদ্রোহের প্রথম দিন রাত ১১টার দিকে সাত-আটজন সৈনিক তাঁর বাসায় ঢুকে বৃদ্ধা মা ও শিশুসন্তানদের ভয়ভীতি দেখান। পরে বাচ্চাদের একটি ঘরে আটকে রেখে সব মালামাল লুট করে। মালামাল উদ্ধারের পর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে টিআই প্যারেডের মাধ্যমে তিনি আসামিদের শনাক্ত করেন।
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ওই স্বর্ণালংকার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সেগুলো আদালতে আনেন। পরে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অলংকার ফারজানার জিম্মায় দেওয়া হয়। অলংকারগুলো পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জবানবন্দির পর তাঁকে জেরা করেন আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী।
এরপর সাক্ষ্যে মামলার ৭২ নম্বর সাক্ষী লে. কর্নেল ইয়াসমিন আক্তার বলেন, দরবারে ডাক্তার পরিচয় পেয়ে একজন সিপাই বলে, ‘একজনকেও ছারব না, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলব।’ ওই সিপাই কর্নেল লুৎফর, মেজর জায়েদী ও মেজর রোকসানাকে বুট দিয়ে লাথি মারে।
ইয়াসমিন বলেন, চিকিৎসক লে. কর্নেল ছদরুল গভীর রাতে তাঁকে জানান, নায়েব সুবেদার তোরাব আলী ও মনোরঞ্জনের নেতৃত্বে সেনা কর্মকর্তাদের লাশ মরচুয়ারির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন পর ‘সাগরিকা’য় নিজের বাসায় গিয়ে দেখেন ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, আলমারি সব ভাঙচুর অবস্থায় আছে। বাসা থেকে ৫০ হাজার টাকা, ডায়মন্ডের নেকলেস, ডিজিটাল ক্যামেরসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট হয়েছে।
সাক্ষ্যের পর আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী ইয়াসমিনকে জেরা করেন। তাঁর জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালতের কার্যক্রম মুলতবি হয়।
হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা এ মামলার আসামি ৮৫০ জন। আসামিদের মধ্যে ২১ জন পলাতক ও দুজন মারা গেছেন। বিডিআর সদস্যদের বাইরে এ মামলার আসামি হলেন বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (সাবেক বিডিআর সদস্য) তোরাব আলী। গতকাল আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
No comments