মার্জিন ঋণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন by আনোয়ার ইব্রাহীম
শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার স্বার্থে এখন থেকেই মার্জিন ঋণ (শেয়ার কেনায় প্রদত্ত ঋণ) নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান এবং পতনের নেপথ্যে মার্জিন ঋণের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। মার্জিন ঋণ নিয়ে যারা বিনিয়োগ করেছেন তারাই দরপতনে নিঃস্ব বা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে মার্জিন ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ভবিষ্যতে একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্জিন ঋণ প্রদানকারী মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন, শেয়ারবাজারের উত্থান ও পতনে মার্জিন ঋণের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনবেন, নাকি নিজের টাকাতেই শেয়ার কিনবেন, তা তাদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এসইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো থেকে শেয়ার কেনার জন্য প্রদানকৃত মার্জিন ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। একই সময় পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউসগুলো থেকে মোট ৪ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার মার্জিন ঋণ সরবরাহ করা হয়েছিল। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের ৮৫ শতাংশই এসেছিল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। বাকি অংশ আসে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি বা ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব মূলধন থেকে।
গত তিন বছরে ডিএসইর সাধারণ সূচকের অবস্থান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে সূচকটির বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। পরের বছর ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১০-এর ৫ ডিসেম্বর সূচকটি বাড়ে ৪৩৮৩ পয়েন্ট বা ৯৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বাজার সূচকের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ নিয়ম বহির্ভূত বিনিয়োগের ভূমিকার পাশাপাশি তাদের দেওয়া ঋণও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের উত্থানে মার্জিন ঋণের ভূমিকা প্রসঙ্গে পিএফআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদ সমকালকে জানান, প্রতি মাসের লেনদেনের এক-তৃতীয়াংশই সম্পন্ন হতো মার্জিন ঋণের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এটাই স্বাভাবিক যে, অর্থের জোগান বেড়ে গেলে শেয়ারমূল্য বাড়বে। গত বছর শেয়ারদর উত্থানে মার্জিন ঋণের প্রভাব ছিল, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরের শেষে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত মার্জিন ঋণ নেমে আসে ১ হাজার ২১১ কোটি টাকায়। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ঋণ নেমে আসে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ১ঃ১ ঋণ অনুপাতে ঋণ প্রদান করা হলে গত ১০ মাসে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো বাজার থেকে তাদের ঋণ তুলে নিয়ে অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছে। অব্যাহত দরপতনেও মার্জিন ঋণের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলের অভিযোগ নিয়ে আসছেন। বিষয়টি শাঁখের করাতের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা মার্জিন ঋণ দিয়েছেন, তারা অন্য কারও কাছ থেকে ঋণ এনেছিলেন। ফলে তাদেরও সুদসহ ঋণ ফেরত দেওয়ার চাপ আছে। সে চাপ যারা সহ্য করতে না পারছেন না, তারা ফোর্স সেল করতে পারেন। আবার ফোর্স সেল বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। স্বভাবতই এ বিক্রি পতনকে ত্বরান্বিত করছে। মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিনই। নিজের ৪৩ লাখ টাকাসহ ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্রোকারেজ হাউস থেকে মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনা এক বিনিয়োগকারীর অভিযোগ, বর্তমানে ব্যাংকটির কাছে তিনি ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঋণী। জিএমএফ সিকিউরিটিজ হাউসে রোকসানা পারভিন নামে অন্য এক বিনিয়োগকারীর অভিযোগ, নিজের ৪৫ লাখ ছাড়াও ৪২ লাখ টাকা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন তিনি। দরপতনের কারণে ব্রোকারেজ হাউসটি নিজের ঋণ বাঁচাতে সব শেয়ার ফোর্স সেল করেছে। এখন রোকসানার কাছে উল্টো ৩৮ হাজার টাকা পাবে ব্রোকারেজ হাউসটি। এদিকে মার্জিন ঋণ নিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোও সংকটে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাংক বা বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে মার্জিন ঋণ প্রদান করেছিল। এখন ওই ঋণ ফেরত দিতে পারছে না তারা। ঋণ ফেরত না দেওয়ায় সুদও বাড়ছে। আবার যেসব বিনিয়োগকারীকে ১ঃ১-এর বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তাদের শেয়ার পুরোটা বিক্রি করলেও ব্যাংক দেওয়া ঋণের পুরোটা ফেরত পাচ্ছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসকেই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক সিইও সালাউদ্দিন আহমেদ খান সমকালকে বলেন, অস্বাভাবিক ঋণনির্ভর বিনিয়োগ শেয়ারবাজারের আজকের পরিণতির অন্যতম প্রধান কারণ। গত বছর এসইসি মার্জিন ঋণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করলে আমাদের হয়তো আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হতো। কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউস যেন যথেচ্ছ মার্জিন ঋণ দিতে না পারে, সে জন্য আইন করার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মূলধনের সর্বোচ্চ ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন ঋণ প্রদানের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ১৫ পিই অনুপাতের কোম্পানির শেয়ারে এবং দীর্ঘমেয়াদে মার্জিন ঋণ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পক্ষে মত দেন তিনি।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এসইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো থেকে শেয়ার কেনার জন্য প্রদানকৃত মার্জিন ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। একই সময় পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউসগুলো থেকে মোট ৪ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার মার্জিন ঋণ সরবরাহ করা হয়েছিল। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের ৮৫ শতাংশই এসেছিল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। বাকি অংশ আসে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি বা ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব মূলধন থেকে।
গত তিন বছরে ডিএসইর সাধারণ সূচকের অবস্থান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে সূচকটির বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। পরের বছর ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১০-এর ৫ ডিসেম্বর সূচকটি বাড়ে ৪৩৮৩ পয়েন্ট বা ৯৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বাজার সূচকের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ নিয়ম বহির্ভূত বিনিয়োগের ভূমিকার পাশাপাশি তাদের দেওয়া ঋণও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের উত্থানে মার্জিন ঋণের ভূমিকা প্রসঙ্গে পিএফআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদ সমকালকে জানান, প্রতি মাসের লেনদেনের এক-তৃতীয়াংশই সম্পন্ন হতো মার্জিন ঋণের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এটাই স্বাভাবিক যে, অর্থের জোগান বেড়ে গেলে শেয়ারমূল্য বাড়বে। গত বছর শেয়ারদর উত্থানে মার্জিন ঋণের প্রভাব ছিল, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরের শেষে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত মার্জিন ঋণ নেমে আসে ১ হাজার ২১১ কোটি টাকায়। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ঋণ নেমে আসে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ১ঃ১ ঋণ অনুপাতে ঋণ প্রদান করা হলে গত ১০ মাসে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো বাজার থেকে তাদের ঋণ তুলে নিয়ে অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছে। অব্যাহত দরপতনেও মার্জিন ঋণের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলের অভিযোগ নিয়ে আসছেন। বিষয়টি শাঁখের করাতের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা মার্জিন ঋণ দিয়েছেন, তারা অন্য কারও কাছ থেকে ঋণ এনেছিলেন। ফলে তাদেরও সুদসহ ঋণ ফেরত দেওয়ার চাপ আছে। সে চাপ যারা সহ্য করতে না পারছেন না, তারা ফোর্স সেল করতে পারেন। আবার ফোর্স সেল বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। স্বভাবতই এ বিক্রি পতনকে ত্বরান্বিত করছে। মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিনই। নিজের ৪৩ লাখ টাকাসহ ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্রোকারেজ হাউস থেকে মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনা এক বিনিয়োগকারীর অভিযোগ, বর্তমানে ব্যাংকটির কাছে তিনি ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঋণী। জিএমএফ সিকিউরিটিজ হাউসে রোকসানা পারভিন নামে অন্য এক বিনিয়োগকারীর অভিযোগ, নিজের ৪৫ লাখ ছাড়াও ৪২ লাখ টাকা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন তিনি। দরপতনের কারণে ব্রোকারেজ হাউসটি নিজের ঋণ বাঁচাতে সব শেয়ার ফোর্স সেল করেছে। এখন রোকসানার কাছে উল্টো ৩৮ হাজার টাকা পাবে ব্রোকারেজ হাউসটি। এদিকে মার্জিন ঋণ নিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোও সংকটে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাংক বা বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে মার্জিন ঋণ প্রদান করেছিল। এখন ওই ঋণ ফেরত দিতে পারছে না তারা। ঋণ ফেরত না দেওয়ায় সুদও বাড়ছে। আবার যেসব বিনিয়োগকারীকে ১ঃ১-এর বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তাদের শেয়ার পুরোটা বিক্রি করলেও ব্যাংক দেওয়া ঋণের পুরোটা ফেরত পাচ্ছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসকেই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক সিইও সালাউদ্দিন আহমেদ খান সমকালকে বলেন, অস্বাভাবিক ঋণনির্ভর বিনিয়োগ শেয়ারবাজারের আজকের পরিণতির অন্যতম প্রধান কারণ। গত বছর এসইসি মার্জিন ঋণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করলে আমাদের হয়তো আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হতো। কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউস যেন যথেচ্ছ মার্জিন ঋণ দিতে না পারে, সে জন্য আইন করার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মূলধনের সর্বোচ্চ ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন ঋণ প্রদানের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ১৫ পিই অনুপাতের কোম্পানির শেয়ারে এবং দীর্ঘমেয়াদে মার্জিন ঋণ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পক্ষে মত দেন তিনি।
No comments