ঢাকা-চট্টগ্রামে যান চলাচল স্বাভাবিক-স্থবির ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক by রাশেদ মেহেদী ও তাওহীদ সৌরভ

শুক্রবার দিনভর তীব্র যানজটের পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গভীর রাতে যানজট সহনীয় হলেও শনিবার সকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে। দুপুর ১২টা নাগাদ যানজট গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় থেকে টাঙ্গাইল বাইপাস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। নিকট অতীতের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ এ যানজটে শত শত যানবাহন একেবারেই স্থির হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশকিছু বাস এবং প্রাইভেটকার রং সাইড দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে চলতে গিয়ে পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তোলে।


ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এ যানজটের প্রভাব পড়ে গাবতলী এবং মহাখালী বাস টার্মিনালে। মহাসড়কে যানজটের কারণে গতকালও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গগামী প্রতিটি পরিবহনের সার্ভিসের সিডিউলে চরম বিপর্যয় ঘটে। উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর রুটের বাস ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের সাত থেকে আট ঘণ্টা পর। মির্জাপুর প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েন। খাবার ও পানির সংকটে শিশু এবং বয়স্করা নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েন। মির্জাপুর হাইওয়ে থানার ওসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, চালকরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণেই যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। কল্যাণপুরে শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী রাফিউল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৯টার বাসের অগ্রিম টিকিট নিয়ে কাউন্টারে
এসে জানতে পারেন, বাস
এখনও আসেনি। ওই বাস দুপুর ১২টা পর্যন্ত আসেনি। কাউন্টারের কর্মচারীরা জানান, শুক্রবারও সারাদিন যানজটের পর বিকেল পাঁচটার গাড়ি এলে একসঙ্গে আট থেকে দশটি ট্রিপ ছেড়ে দিয়েছেন। তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, শুক্রবারের চেয়ে যানজট বেড়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজট কিছুটা কম থাকার কারণে গাবতলী টার্মিনাল থেকে পাটুরিয়া হয়ে যাশোর, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন বাস অবশ্য কিছুটা সময়মতো চলেছে। এসব বাসও নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর ছাড়ে। ঈগল পরিবহনের খুলনাগামী সকাল ১০টার বাস সকাল সোয়া ১১টায় ছাড়ে। শনিবার পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় ঘাটে যানবাহনের সারি ছিল না। মাঝারি ধরনের যানজট ছিল নবীনগর এবং মানিকগঞ্জে। মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শনিবার সকালে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি ঘোষণা দেন, ডিসেম্বরের মধ্যে পাটুরিয়া ঘাট চাঁদাবাজমুক্ত করা হবে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলতে দেওয়া হবে না এবং মহাসড়ক থেকে স্পিডব্রেকার অপসারণ করা হবে। প্রয়োজনে আধুনিক স্পিডব্রেকার দেওয়া হবে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট থাকার কারণে মহাখালী টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, গাইবন্ধা প্রভৃতি রুটে সময়মতো বাস ছাড়তে পারেনি। অন্যদিকে গাজীপুর চৌরাস্তার যানজটের কারণে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচলও ব্যাহত হয়। আগের দিনের মতো শত শত যাত্রী লাইন দিয়ে টিকিট কেটেও বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ টার্মিনালে যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ঈদ যত কাছে আসছে ভাড়া তত বাড়ছে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের নির্ধারিত ভাড়া ১৬০ টাকা হলেও শনিবার ২৫০ টাকার নিচে কোনো পরিবহনেই টিকিট পাওয়া যায়নি। হালুয়াঘাটগামী শ্যামলী-বাংলা পরিবহনে গাড়ির ভেতরের মোড়া দিয়ে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। মোড়ার ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। বগুড়ার যাত্রী হাসিবুল জানান, তিনি টিআর ট্রাভেলসের একটি বাসে ২৮০ টাকার টিকিট ৪০০ টাকা দিয়ে কেটেছেন। তারপরও তিন ঘণ্টা বসে আছেন, গাড়ি নেই। টিআর ট্রাভেলসের কাউন্টার থেকে জানানো হয়, যানজটের কারণে গাড়ির সময় ঠিক রাখা যাচ্ছে না। বাড়তি ভাড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে_ ঈদের আগে ১০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া খুব বেশি নয় বলেও মত দেন কাউন্টারের কর্মচারী রতন। তিনি আরও বলেন, রোববার ৫০০ টাকা দিয়েও টিকিট পাওয়া যাবে না।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর চৌরাস্তাতেও শত শত ঘরমুখো মানুষ সকাল থেকে ভিড় করে। মানুষের অস্বাভাবিক ভিড় দেখে বাসের পাশপাশি ট্রাক সার্ভিসও চালু হয়। এসব মূলত গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা রুটে যাচ্ছে। ট্রাকে বাসের চেয়ে ভাড়া অর্ধেক হওয়ার কারণে স্বল্প আয়ের শ্রমিকরাই বেছে নিচ্ছেন ট্রাক।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শুক্রবারের ভয়াবহ যানজট কিছুটা লাঘব হওয়ার কারণে যানবাহন চলাচলও আগের দিনের চেয়ে স্বাভাবিক ছিল। যানবাহন সংকটে শনিবারও সায়েদাবাদে নাকাল হয়েছে শত শত মানুষ। বিশেষ করে মাওয়া ঘাটে দীর্ঘ যানজট থাকার কারণে সায়েদাবাদ থেকে ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল করা গাড়ির সিডিউলে বিপর্যয় ঘটে। শিবপুর প্রতিনিধি জানান, কেওড়াকান্দি ঘাটে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নদীর নাব্য সংকটের কারণে ফেরিগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আধাঘণ্টা থেকে পঁয়তালি্লশ মিনিট বেশি সময় নিয়ে চলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের গাড়িগুলোও নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পর ছেড়েছে। শনিবারও কুমিল্লার চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম এলাকায় যানজট ছিল। সায়েদাবাদ থেকে অসংখ্যা লোকাল বাস এমনকি পিকআপে করে মাওয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ রুটে ঘরমুখো মানুষকে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়। বেকারি শ্রমিক মানিক জানান, সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরও বাস না পেয়ে পিকআপে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রওনা হয়েছেন।
দাউদকান্দি প্রতিনিধি জানান, দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল শনিবার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজায় যানবাহনের চাপ কিছুটা দেখা গেলেও মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড দাউদকান্দির গৌরীপুর, চান্দিনা, নিমসায় কোনো যানজট হয়নি। কাভার্ডভ্যান, লরি, যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস চলাচল ছিল তুলনামূলক কম। যাত্রীরা জানান, যানবাহন স্বল্পসংখ্যক হওয়ায় যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল তেমন না থাকলেও প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

No comments

Powered by Blogger.