মিরসরাই ট্র্যাজেডি : ঈদ ওদের কাছে কান্না আর আর্তনাদ

দ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কিন্তু কিছু মানুষের বুকে এই ঈদ এলেই বেড়ে যায় যন্ত্রণা, স্বজন হারানোর বেদনা। এবার ঈদে এমন হতভাগ্যরা হলেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আবুতোরাবে গত ১১ জুলাই ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে স্বজনহারা মানুষেরা।মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত হওয়া ৪৪ জনের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী ৩১ পরিবারে এবার ঈদুল আজহার আনন্দ ছুঁবে না। সন্তান আর স্বজন হারানোর কষ্ট তাদের পরিবারের সব আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। ঈদ যেন তাদের শোককে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।


তাদের শোকের সঙ্গে শামিল হচ্ছে দুর্ঘটনাকবলিত উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম। যে শিশুরা ঈদ আনন্দে পুরো গ্রামকে মাতিয়ে রাখত তারা এখন নেই। এ শূন্যতা নিহতদের পরিবার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্রামে। তাই মায়ানী, মঘাদিয়া আর খৈয়াছরা, সাহেরখালী ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে এখন ঈদের আনন্দের বিপরীতে শুধু শোক আর হাহাকার।
গতকাল মঘাদিয়া, মায়ানী, সৈদালি, সরকারটোলা, মাস্টারপাড়া ও আবুতোরাবে গিয়ে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। যেখানে ঈদ-পূর্ব আনন্দে মাতোয়ারা থাকার কথা সেখানে বিরাজ করছে প্রিয়জন হারানোর শূন্যতা। গ্রামগুলোতে ঈদের কোনো আমেজ লক্ষ্য করা যায়নি। অনেক পরিবার ঈদের কেনাকাটা পর্যন্ত করেনি।
আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের নিহত ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তোফাজ্জল হোসেনের বাবা জহির আহম্মদ বলেন, প্রতি বছর ঈদ এলে তোফাজ্জল নতুন পশু কেনার পর বাড়ি মাতিয়ে তুলতো। সে এখন নেই। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
প্রফেসর কামালউদ্দিন কলেজের নিহত একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদের মা রোকেয়া আক্তার বলেন, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ঈদ-আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। সন্তানকে ছাড়া কাকে নিয়ে ঈদ করব। আমার ঈদের প্রয়োজন নেই।
আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিহত পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন নয়নের মা নাজমা আক্তার বলেন, ঈদ কার জন্য করব। যার জন্য ঈদ করব সেতো নেই।
নিহত নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনের বাবা আবুল কাশেম বলেন, ঈদ এলে ইমরান নতুন জামা কাপড়ের জন্য বায়না ধরত। ঈদের এক সপ্তাহ আগে জামা কিনে লুকিয়ে রাখত। কাউকে দেখাতো না।
নিহত পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দিনের মা মর্জিনা পারভিন অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, ঈদের দিন খুব ভোরে উঠে নামাজ পড়ে বন্ধুদের বাড়িতে ঘুরতো রিয়াজ।

No comments

Powered by Blogger.