আইসিসিকেই এখন দায়িত্ব নিতে হবে

বিখ্যাত ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার এবং সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার জেফ্রি বয়কট। ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয়ে যার কণ্ঠ থাকে সোচ্চার। স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনায় লন্ডনের রাজকীয় আদালতের রায়ে তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটার এখন কারাগারে। আদালতের এ রায়ের মাধ্যমেই যে ক্রিকেটে জুয়ার অবৈধ কারবার বন্ধ হয়ে যাবে, তা মনে করছেন না জেফ্রি বয়কট। সুযোগ পেলেই প্রতারকরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং ক্রিকেটারদের বিপথে পরিচালিত করবে। এখনও সময় আছে, ক্রিকেটে অবৈধ জুয়া বন্ধের জন্য আইসিসি যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব নেয়, তাহলে সফলতা আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করেন জেফ্রি বয়কট।


তবে, এ ক্ষেত্রে আইসিসির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করেন ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটির সাবেক প্রধান নির্বাহী ম্যালকম স্পিড। তিনি বলেন, 'জুয়ার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য আইসিসির তেমন কোনো ক্ষমতা নেই।' ম্যালকম স্পিড সুর মিলিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, ইমরান খান, কুমার সাঙ্গাকারা, টিম মে, মাইকেল ভন, সাইমন হিউজেস, রমিজ রাজা এবং শেন ওয়াটসনদের সঙ্গে। সাবেক এবং বর্তমান এসব ক্রিকেটারের মতে, আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট এসিএসইউ (অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট) হলো দন্তহীন বাঘ। জুয়ার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কোনো ক্ষমতাই তাদের নেই।
ধারাভাষ্যকার জেফ্রি বয়কট স্পট ফিক্সিং সম্পর্কে একটি দীর্ঘ মতামতধর্মী নিবন্ধ লেখেন লন্ডনের বিখ্যাত দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। সেখানেই তিনি লেখেন, আমরা যদি এখনই রুখে না দাঁড়াই তাহলে যখন-যেভাবেই স্পট ফিক্সিং কিংবা ম্যাচ ফিক্সিং হোক না কেন ক্রিকেটকে তা ধ্বংস করে ছাড়বে। ক্রিকেট শুধু খেলাই নয়, ভিন্ন আঙ্গিকেও এর যশ ও খ্যাতি কালোত্তীর্ণ। ক্রিকেটের একটা নীতি-নৈতিকতা আছে। এ কারণেই এটা ভদ্রলোকের খেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ফিক্সিংয়ের মূল ব্যক্তি মাজহার মাজিদের সঙ্গে মিশে সালমান বাট ক্রিকেটের সে সুনাম ভাঙার চেষ্টা করেছেন। মানুষ এখন সেটাই জানবে। আমি নিজেও তাদের কখনও ভালো দৃষ্টিতে দেখব না। কারণ, নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ছদ্মবেশী সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে মাজহার মাজিদ আমার নামেও অলীক গল্প বানিয়ে বলেছিল, সে নাকি আমাকে চিনত।
ক্রিকেটে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফিক্সিং একটা মারাত্মক সমস্যা; কিন্তু আমরা এখনও এর বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। আমি জানি, আরও বেশ কিছু ক্রিকেটার এ অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত, যা খুবই দুঃখজনক। ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে গেলে আরও বেশকিছু হতাশাজনক এবং ভয়ঙ্কর গল্প শুনতে হবে আপানাকে; কিন্তু সেটা আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না। সালমান বাট ও আসিফের প্রতি আমার কোনো সহানুভূতি নেই, শুধু আমেরের জন্য দুঃখ হয়। মাত্র ১৮ বছর বয়সে দলে এসে সবার মন জয় করেছিল সে। তবে পাকিস্তান ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এখনও দেশটিতে অনেক ভালো মানুষ আছে। এমনকি পাকিস্তান ক্রিকেট দলেও। যাদের ফিক্সিংয়ের মতো নোংরা জিনিস স্পর্শ করতে পারেনি। সাঈদ আজমলের উদাহরণ দিতে পারি আমি এ ক্ষেত্রে।
লন্ডনের আদালতে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে করা মামলার ঘটনা আইসিসির ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাদের ওপর এখন সবার দৃষ্টি, 'এরপর আইসিসি কী করবে!' সংস্থাটির একটি শক্তিশালী ইউনিট হলো এসিএসইউ। ক্রিকেট থেকে দুর্নীতি বন্ধে এখন থেকেই তাদের জোরেশোরে মাঠে নামতে হবে। নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের মতো তাদেরও ছদ্মবেশে মাঠে নামতে হবে। তাহলেই সঠিকভাবে তারা প্রতারকদের বিপক্ষে লড়তে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.