দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরি ও লঞ্চ সঙ্কটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি by মীর হুমায়ূন কবীর,

বিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার ভোর থেকেই পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পারাপারের জন্য আসতে থাকে ঘরমুখো যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রো ও প্রাইভেট কার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাট এলাকায় বৃদ্ধি পেতে থাকে পারাপারের জন্য আগত যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু যানবাহন অনুপাতে ফেরি না থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক যানবাহন পারাপার। ফলে ওইদিন দুপুরের পর থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অতিরিক্ত যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ পাটুরিয়া ঘাট এলাকা ছাপিয়ে ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়।


পাটুরিয়া প্রান্তে আটকে থাকা যানবাহনগুলোকে পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। পাশাপাশি ঈদে ঘরমুখো অতিরিক্ত যাত্রী পারাপারে বাড়তি লঞ্চের ব্যবস্থা না করায় লঞ্চের যাত্রীদের পাটুরিয়া লঞ্চশূন্য পন্টুনে অপেক্ষার পর লঞ্চ এলে প্রতিযোগিতা করে লঞ্চে উঠে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নদী পার হতে হয়। লঞ্চ না পেয়ে অনেক যাত্রীকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পার হতে দেখা যায়। অপরদিকে এ রুটের এবং অন্য রুটের বাসে চেপে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত এসে লঞ্চ বা ফেরিযোগে দৌলতদিয়া প্রান্তে পৌঁছে যানবাহন সঙ্কটে পড়েন শত শত যাত্রী। এ সময় বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দুই শতাধিক দূরপাল্লার যাত্রীবাহী কোচ ও তিন শতাধিক মাইক্রো ও প্রাইভেট কার পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।
বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে শুক্রবার ভোর থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীবাহী অতিরিক্ত যানবাহন পারাপারের জন্য আসতে থাকে। কিন্তু যানবাহন অনুপাতে ফেরি না থাকায় ব্যাহত হয় স্বাভাবিক যানবাহন পারাপার। ঈদে অতিরিক্ত যানবাহন পারাপারে দুইটি রো রো ফেরি এ রুটে যুক্ত করার কথা বললেও দু’দিন আগে কেরামত আলী নামের একটি মাত্র ফেরি যুক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে মাত্র ৯টি রো রো ও ‘কুমারী’ নামের ছোট আকারের ১টি কে টাইপ ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারে রীতিমত হিমশিম দশায় পড়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এ রুটে চলাচলকারী দূরপাল্লার যাত্রীবাহী ফেরি ও লঞ্চ পারাপার পরিবহন, ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস এবং পাশের জেলার অন্যান্য রুটের বাস ও সিটি সার্ভিসের শত শত অতিরিক্ত বাস মিনিবাসে চেপে ঘরমুখো যাত্রী পাটুরিয়া ঘাট অভিমুখে আসতে থাকায় শুক্রবার দুপুরের পর থেকে পাটুরিয়া ঘাটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে মহাসড়কের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ঢাকা-পাটুরিয়া রুটের গাড়ি, অন্যান্য রুট থেকে আগত গাড়ি এবং লঞ্চ পারাপার পরিবহনগুলো পাটুরিয়া ঘাট থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ায় দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে যাত্রীদের লঞ্চ বা ফেরিতে নদী পার হতে হয়। কিন্তু নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে যাত্রী অনুপাতে যানবাহন না থাকায় এসব যাত্রীদের নতুন করে সমস্যায় পড়তে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর বাস বা মিনিবাস পেলেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। অনেক যাত্রীকে আবার উপযুক্ত যানবাহন না পেয়ে ঝুঁকি নিয়েই নসিমন বা হ্যালো বাইকে চেপে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
এদিকে গতকাল সকালে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তর দেন। অন্যদের মধ্যে এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য এবিএম আনোয়ারুল হক, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী মিয়া, শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহিম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান রোকেয়া সুলতানা (রুকু), শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কায়কোবাদ খন্দকারসহ বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র স্থানীয় এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.