বিভিন্ন স্থানে হামলা সংঘর্ষে আহত ৩৯

দেশের বিভিন্নস্থানে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৯ জন আহত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :
যশোরে আহত ১১ : যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন ড্রেনের ওপর থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে গতকাল দুপুরে কারারক্ষী ও পৌর কর্মচারীদের মধ্যে তুলকালামকাণ্ড ঘটেছে। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে উভয়পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলে পড়ে। কারাগারের অভ্যন্তরেও হুলস্থুল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক সংলগ্ন ড্রেনের ওপর থেকে একটি হোটেল উচ্ছেদ করতে যায় যশোর পৌরসভার কর্মচারীরা। এই হোটেলটি প্রতিবছর কারা কর্তৃপক্ষ লিজ দিয়ে থাকে। উচ্ছেদের সময় হোটেল মালিক ও কারারক্ষীদের সঙ্গে পৌর কর্মচারীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এরই একপর্যায়ে উভয়পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে পৌরসভার সার্ভেয়ার হাফিজুর রহমান ও কারারক্ষী বাশারের অবস্থা গুরুতর। তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
যশোর পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ড্রেনের স্লাবের ওপর হোটেল নির্মাণ করায় তা উচ্ছেদ করতে গিয়ে পৌর কর্মচারীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় সার্ভেয়ারসহ পৌরসভার পাঁচজন কর্মচারী আহত হন। হামলাকারীরা পৌরসভার একটি ট্রাকও ভাংচুর করা হয়। মেয়র বলেন, এসব ঘটনায় পৌরসভার পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ বলেন, কারা ফটকের সামনে একটি হোটেল ভাঙাকে কেন্দ্র করে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, পৌর কর্মচারীদের হামলায় ছয়জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন। তারা হলেন বাশার, তরিকুল, শিমুল, তারেক, রশিদ ও রাজ্জাক। আহতদের মধ্যে বাশারের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য জেলা প্রশাসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ নজরুল ইসলামের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরই ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম যশোর জেনারেল হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। তিনি বলেন, ‘বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য উভয়পক্ষকে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করছি।’
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় শহরে পৌর কর্মচারী ইউনিয়ন জেল সুপারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে।
দৌলতপুরে আহত ২০ : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নে জমিজমা ও বিদ্যুত্ সংযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়ছে। উপজেলার আলমাতলা গ্রামে শুক্রবার সন্ধ্যায় জমি সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও থানা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের আলমাতলা গ্রামের স্থানীয় আ’লীগ নেতা ডাক্তার শরীফ উদ্দিন ও মানিক মেম্বারের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সন্ধ্যায় উভয় গ্রুপের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে বেধে যায়। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্রের আঘাতে উভয় গ্রুপের ১২ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে একই ইউনিয়নের সংগ্রামপুর গ্রামে বিদ্যুত্ সংযোগ নেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা মাদার মণ্ডল ও শফিউলের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে বেধে যায়। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের ৮ জন আহত হয়। এ নিয়ে পৃথক সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়। আহতরা হলেন খাদিজা আক্তার বুড়ি, সবুজ, শরীফ ডাক্তার, সাহেদ, মানিক, মিলু, দিপু, তপন, মাদার, আরব, জালার, আলম, শফি, গাফফার। আহতদের দৌলতপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানায় পৃথক মামলা হয়েছে।
পটুয়াখালীতে আহত ৫ : পটুয়াখালীতে গতকাল ভোর ৪টার দিকে লঞ্চের স্টাফদের হামলায় ৫ জন যাত্রী আহত হয়েছে। তাদেরকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত যাত্রী জাহিদ জানান, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে স্পেশাল সার্ভিসের এমভি ওয়ালিদ লঞ্চটি ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে পটুয়াখালীর উদ্দেশে ঢাকার সদরঘাট ত্যাগ করে। পথে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু করলে সাধারণ যাত্রীদের মধে হৈচৈ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ভাড়া আদায় বন্ধ রাখা হয়। পরে বগা ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় আসার আগেই আবার ভাড়া আদায় শুরু হয়। এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডা হয়। লঞ্চটি পটুয়াখালী ঘাটে আসলে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি না হলে লঞ্চের স্টাফরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
মতলবে আহত ৩ : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সুগন্ধি গ্রামের আহসান উল্যা প্রধানের বসতঘরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গৃহকর্তাসহ ৩ জনকে গুরুতর আহত করে। আহতরা হলেন গৃহকর্তা আহসান উল্যা, তার স্ত্রী আসমা বেগম ও ছেলে আফছার উদ্দিন।
চৌদ্দগ্রামে আহত ১০ : চৌদ্দগ্রামের চিওড়া ইউনিয়ন পরিষদে গতকাল অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ভিজিএফ’র চাল বিতরণের সময় তালিকার বাইরে চেয়ারম্যানের পছন্দের লোকজনের মধ্যে চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার-সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে উপজেলার ১১নং চিওড়া ইউনিয়ন পরিষদের কান্দিরপাড়স্থ ইউপি ভবনে দুস্থ ও গরিবদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণকালে তালিকার বাইরে চেয়ারম্যান আবু তাহেরের পছন্দের লোকজনের মাঝে চাল বিতরণ করলে স্থানীয় সারপটি গ্রামের ও ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার আনোয়ার হোসেন বাধা দেয়। এতে চেয়ারম্যান আবু তাহের ও মেম্বার আনোয়ার হোসেনের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে বিজয় ও সজয়ের নেতৃত্বে একদল ক্যাডার বাহিনী এসে মেম্বার আনোয়ার হোসেনকে ব্যাপক মারধর করতে থাকলে উভয়ের সমর্থকদের মধ্যেও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন স্থানীয় আরেক ইউপি মেম্বার ফেয়ার আহামদের ঘরে ঢুকে পড়ে। এ সময় সেখানে তাকে আবারও মারধর করার চেষ্টা করলে খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার, এসআই মনির হোসেন, এসআই রুবেলের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মেম্বার আনোয়ার হোসেনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেম্বার আনোয়ার হোসেন আরেক মহিলা ইউপি মেম্বারের সঙ্গে বেয়াদবি করলে তাকে একটি কক্ষে নিয়ে আটক রাখা হয়। এর বাইরে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোতাহার হোসেন বলেন, তালিকায় জটিলতার কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.