ঈদের সুযোগে সমুদ্রপথে 'আদম' পাচারের শঙ্কা by রফিকুল ইসলাম
ট্রলারে করে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় গত সপ্তাহে টেকনাফ উপকূলে ২৫ জনকে আটক করে পুলিশ। সাগর থেকে উদ্ধার করা হয় একজনের লাশ। এর কয়েক দিন আগে উপকূলীয় এলাকা থেকে ট্রলারে করে আরো লোকজনকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। ঈদের ছুটির সুযোগে আরো লোকজনকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় জড়ো করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি চক্র মাথাপিছু ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে লোকজনকে মালয়েশিয়ায় পাঠায়।
নিরীহ গরিব মানুষকে ফাঁদে ফেলে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে তারা। এ ছাড়া অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা এভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডি, নাজিরার টেক, কস্তুরা ঘাট, উখিয়ার মনখালী, সোনারপাড়া, টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালী, জাহাজপুরা, টেকনাফ সদর, শাহপুরীর দ্বীপ, ঘোলাপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, জেটিঘাট, কাটাবনিয়া, মিটা পানির ছড়া, রাজার ছড়াসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা দিয়ে এভাবে লোকজনকে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
উখিয়া-রামু-টেকনাফ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ছত্রধর ত্রিপুরা কালের কণ্ঠকে বলেন, সমুদ্রপথে চরম ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আদম পাচার প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর। পাচারকারী বা পাচারের জন্য লোকজন জড়ো করার কোনো খবর পেলেই পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান।
জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর রাতে কঙ্বাজারের চৌফলদণ্ডি উপকূল থেকে প্রায় ৫০ জনের একটি দল রাতের অন্ধকারে মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। পরদিন ৩১ অক্টোবর রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে গেছে বলে পাচারকারী চক্র তাদের টেকনাফের শামলাপুর উপকূলে নামিয়ে দিয়ে ট্রলার নিয়ে চলে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ২৫ জনকে জীবিত আটক করে এবং একজনের লাশ উদ্ধার করে। আটককৃতদের মধ্যে ১১ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। বাকিরা টেকনাফ, কক্সবাজারের বাসিন্দা বলে দাবি করলেও এদের অনেকেই রোহিঙ্গা।
একইভাবে গত ২৫ অক্টোবর রাতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে প্রায় দেড় শতাধিক লোককে দুটি ট্রলারে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হয়। কাছাকাছি সময়ে টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালী, জাহাজপুরা উপকূল দিয়ে দুই শতাধিক লোককে সমুদ্রপথে পাঠানো হয় বিদেশে। এদের সিংহভাগই মিয়ানমারের নাগরিক বলে জানা গেছে।
গত ১৩ অক্টোবর শাহপরীর দ্বীপ থেকে দুটি ট্রলারে করে ১৩৫ জন সমুদ্রপথে রওনা দিলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ২০ অক্টোবর উপকূলে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ওই সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে স্থানীয় তিনজন। আটক করা ব্যক্তিরা জানায়, শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার নুরুল আলম, ফয়েজ উল্লাহ ও নবী হোসেন মাঝির নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি চক্র তাদের পাচার করছিল। একই চক্রের তত্ত্বাবধানে গত ১০ অক্টোবর শাহপরীর দ্বীপ থেকে ১৫০ জনের একটি দলকে সমুদ্রপথে পাচার করা হয়। ওই সময় এলাকাবাসী ও বিজিবির হাতে ধরা পড়ে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামের নিয়ামত উল্লাহ, আজম উল্লাহ ও লেদা রোহিঙ্গা বস্তির নুরুল কবির।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার কিছু রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় কয়েকটি চক্র এ অপকর্ম চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী এই প্রতিবেদককে জানায়, এভাবে অবৈধ উপায়ে অনেকে মালয়েশিয়া পৌঁছায়। আবার অনেকে থাইল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। পরে তাদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ইঞ্জিনবিহীন নৌকায় তুলে দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ভারত মহাসাগরে এভাবে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া ৩৫ জনকে উদ্ধার করে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। এর আগে উদ্ধার করা হয় ১২ জনকে। ওই দলে থাকা বাকি ৫৭ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে উদ্ধার করা লোকজন বলতে পারেনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী গভীর সমুদ্র থেকে ৯১ জনকে উদ্ধার করে। ২ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়েছিল বলে উদ্ধারকৃতরা জানায়। এসব ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, প্রতারক চক্র সমুদ্রপথে কম খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে গরিব নিরীহ মানুষকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
টেকনাফের ৪২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ হাসান বলেন, এ ধরনের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রা থেকে লোকজনকে রক্ষা করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, রাজনৈতিক নেতাসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডি, নাজিরার টেক, কস্তুরা ঘাট, উখিয়ার মনখালী, সোনারপাড়া, টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালী, জাহাজপুরা, টেকনাফ সদর, শাহপুরীর দ্বীপ, ঘোলাপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, জেটিঘাট, কাটাবনিয়া, মিটা পানির ছড়া, রাজার ছড়াসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা দিয়ে এভাবে লোকজনকে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
উখিয়া-রামু-টেকনাফ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ছত্রধর ত্রিপুরা কালের কণ্ঠকে বলেন, সমুদ্রপথে চরম ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আদম পাচার প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর। পাচারকারী বা পাচারের জন্য লোকজন জড়ো করার কোনো খবর পেলেই পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান।
জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর রাতে কঙ্বাজারের চৌফলদণ্ডি উপকূল থেকে প্রায় ৫০ জনের একটি দল রাতের অন্ধকারে মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। পরদিন ৩১ অক্টোবর রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে গেছে বলে পাচারকারী চক্র তাদের টেকনাফের শামলাপুর উপকূলে নামিয়ে দিয়ে ট্রলার নিয়ে চলে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ২৫ জনকে জীবিত আটক করে এবং একজনের লাশ উদ্ধার করে। আটককৃতদের মধ্যে ১১ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। বাকিরা টেকনাফ, কক্সবাজারের বাসিন্দা বলে দাবি করলেও এদের অনেকেই রোহিঙ্গা।
একইভাবে গত ২৫ অক্টোবর রাতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে প্রায় দেড় শতাধিক লোককে দুটি ট্রলারে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হয়। কাছাকাছি সময়ে টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালী, জাহাজপুরা উপকূল দিয়ে দুই শতাধিক লোককে সমুদ্রপথে পাঠানো হয় বিদেশে। এদের সিংহভাগই মিয়ানমারের নাগরিক বলে জানা গেছে।
গত ১৩ অক্টোবর শাহপরীর দ্বীপ থেকে দুটি ট্রলারে করে ১৩৫ জন সমুদ্রপথে রওনা দিলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ২০ অক্টোবর উপকূলে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ওই সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে স্থানীয় তিনজন। আটক করা ব্যক্তিরা জানায়, শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার নুরুল আলম, ফয়েজ উল্লাহ ও নবী হোসেন মাঝির নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি চক্র তাদের পাচার করছিল। একই চক্রের তত্ত্বাবধানে গত ১০ অক্টোবর শাহপরীর দ্বীপ থেকে ১৫০ জনের একটি দলকে সমুদ্রপথে পাচার করা হয়। ওই সময় এলাকাবাসী ও বিজিবির হাতে ধরা পড়ে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামের নিয়ামত উল্লাহ, আজম উল্লাহ ও লেদা রোহিঙ্গা বস্তির নুরুল কবির।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার কিছু রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় কয়েকটি চক্র এ অপকর্ম চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী এই প্রতিবেদককে জানায়, এভাবে অবৈধ উপায়ে অনেকে মালয়েশিয়া পৌঁছায়। আবার অনেকে থাইল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। পরে তাদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ইঞ্জিনবিহীন নৌকায় তুলে দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ভারত মহাসাগরে এভাবে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া ৩৫ জনকে উদ্ধার করে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। এর আগে উদ্ধার করা হয় ১২ জনকে। ওই দলে থাকা বাকি ৫৭ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে উদ্ধার করা লোকজন বলতে পারেনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী গভীর সমুদ্র থেকে ৯১ জনকে উদ্ধার করে। ২ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়েছিল বলে উদ্ধারকৃতরা জানায়। এসব ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, প্রতারক চক্র সমুদ্রপথে কম খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে গরিব নিরীহ মানুষকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
টেকনাফের ৪২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ হাসান বলেন, এ ধরনের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রা থেকে লোকজনকে রক্ষা করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, রাজনৈতিক নেতাসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
No comments