দ্য নাইনথ বচ্চন by সৈয়দ মাহ্মুদ জামান

সোমবার রাত সাড়ে ৭টার কিছু পর একসঙ্গে আটটি গাড়ি এসে থামে মুম্বাইয়ের সেভেন হিলস হাসপাতালের সামনে। গাড়ি থেকে কেউ বের হওয়ার আগেই নিরাপত্তাকর্মীরা ঘিরে ফেলেন পুরো পার্কিং এরিয়াটি। একে একে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, জয়া ভাদুরী, শ্বেতা বচ্চন, বৃন্দ্রা রাই ও কৃষ্ণারাজ রাই এবং সব শেষে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন।


প্রথম অবস্থায় নিরাপত্তাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ দেখে হাসপাতালের লোকজন কিছুটা হকচকিয়ে উঠলেও পুরো বচ্চন পরিবারকে একসঙ্গে দেখার পর আর কারো মনে সন্দেহ ছিল না, যে দিনটির জন্য পুরো ভারত অপেক্ষা করছিল (শচীনের শততম শতকের চেয়েও বেশি), সেই দিনটি উপস্থিত। খবর ছড়াতে দেরি হয়নি। মূলত বচ্চনদের বাড়ি থেকে গাড়িবহর বের হতে দেখেই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে, মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। কিন্তু হাসপাতালের ভেতরে কী হচ্ছে, তা জানার বা বোঝার সুযোগ ছিল না কারোরই। পুরো হাসপাতালটি আক্ষরিক অর্থে পরিণত হয় একটি নিশ্ছিদ্র দুর্গে। ঐশ্বরিয়া ছিলেন হাতপাতালটির পঞ্চম তলায়। ওই তলার চারটি কক্ষই ভাড়া নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার দিন পার হলো, কিন্তু কোনো খবর এল না। এর মধ্যে দূর থেকে ক্যামেরার লেন্সে কেবল দেখা গেছে অমিতাভ, জয়া, অভিষেক, শ্বেতার আসা-যাওয়া। ভোর ৪টার দিকে ঐশ্বরিয়াকে নেওয়া হয় লেবার রুমে। কিন্তু তারপর আবার প্রতীক্ষার পালা। এক, দুই করে পার হতে থাকে ঘণ্টা। অবশেষে সকাল ১০টার কয়েক মিনিট আগে এল সুসংবাদ। ঠিক ১০টায় অমিতাভ বচ্চনের টুইটারে লেখা ফুটে উঠল। 'সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটির দাদা হয়েছি আমি। দাদাজি... কী দারুণ অনুভূতি।'
স্বাভাবিক জন্ম হলেও অধিক নিরাপত্তার খাতিরেই পুরো একটি দিন নজরে রাখা হয় মা ও মেয়েকে। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে সবার কোলে উঠে আসে নবজাতক। এবারও টুইটারে অমিতাভের উচ্ছ্বাস উঠে এল, 'সবার আগে আমার কোলে তুলে দেওয়া হলো তাকে। বড় বড় চোখ মেলে সে আমাকে দেখল, নবম বচ্চন, আমার কোলে। বলতেই হচ্ছে মায়ের মতোই রঙিন চোখ পেয়েছে সে। কবি হরিবংশ রাই বচ্চনের রক্ত। নবম বচ্চন। বাবা, আমি নবম বচ্চনকে কোলে নিয়েছি। যে বচ্চন খান্দান শুরু বাবা তোমার মাধ্যমে। আজ আমার কোলে তোমার পরিবারের সর্বশেষ সংযোজন, ছোট্ট এক পরি, নবম বচ্চন। এখন ও সব কিছু অবাক চোখে দেখছে। একটু পর পর চোখ মেলছে আবার বন্ধ করছে। এখনো জানে না কত বড় আনন্দের সূচনা সে করেছে। আমি জানি, তুমি ও মা আমাদের দেখছ, আশীর্বাদ করছ। তোমাদের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ নিয়ে যেন ও সারা জীবন চলতে পারে।'
বলিউডের ভালোবাসা
ঐশ্বরিয়ার মা হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বলিউড থেকে শুভেচ্ছা বার্তা আসা শুরু হয়। যাঁরা ফোনে যোগাযোগ করতে পেরেছেন, তাঁরা সরাসরি ফোনেই শুভেচ্ছা জানান, বাকিরা এসএমএস এবং ই-মেইলের সাহায্য নিয়েছেন। আর তাও যাঁরা করতে পারেননি, তাঁরা তাঁদের উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন টুইটার বা ফেসবুকের মাধ্যমে।
বলিউড সিনিয়রদের মধ্যে চোপড়া, সিপ্পি ও কাপুর পরিবার থেকে সরাসরি ফোন আসে বিগ বির কাছে। এবি বেবি অভিষেকও ফোন পেয়েছেন একাধিক। পরিচালক করন জোহর ফোন না করে টুইটারে লিখেছেন, 'অভিনন্দন! বেবি বি এখন কন্যাসন্তানের বাবা। পুরো বচ্চন পরিবারের জন্য রইল ভালোবাসা এবং আমি নিশ্চিত একদিন সে বিশ্বের অন্যতম সুন্দরী হিসেবে পরিচিত হবে।'
বিপাশা বসু লিখেছেন. 'ওহো, দারুণ খবর! ছোট এক পরির বাবা হয়েছে বেবি বি। ঐশ্বরিয়াকে অভিনন্দন। পুরো পরিবারকে অভিনন্দন। আর সেই ছোট পরিকে জানাই স্বাগত।'
জেনেলিয়া ডি সুজা শুভেচ্ছা জানান পুরো পরিবারকে। নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, 'সিনিয়র বচ্চন স্যার, আপনাকে অভিনন্দন। আমি নিশ্চিত, আপনি ও জয়াজি অনেক অনেক রোমাঞ্চিত। অভিনন্দন অভিষেক। আমার হয়ে অ্যাশকে ভালোবাসা জানিয়ে দিয়ো। ছোট পরিটাকে দেখার লোভ সংবরণ করতে পারছি না।'
শ্রেয়া ঘোষাল লিখেছেন, 'সত্যি, দারুণ এক সুসংবাদ! ঐশ্বরিয়া ও জুনিয়র বচ্চনকে অভিনন্দন। আমরা কবে তাকে দেখতে পাব? ওর একটা ছবি কি টুইটারে দেওয়া যায়?' রাভিনা ট্যান্ডন লেখেন, 'অভিনন্দন সিনিয়র বচ্চন, আমার প্রিয় অমিতজি। অ্যাশ ও অভিষেকের জন্য ভালোবাসা। ছোট পরিটার জন্য ভালোবাসা এবং অনেক আশীর্বাদ। গড ব্লেস।'

নবজাতকের উপহার
কথায় বলে 'সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম'; কিন্তু অমিতাভ বচ্চনের নাতনি, তার জন্ম তো তাহলে হয়েছে হীরার চামচ মুখে নিয়ে। এরই মধ্যে সেভেন হিলস হাসপাতাল ভরে উঠেছে ফুল ও মিষ্টিতে। কিন্তু আর এক দিন পরেই বাড়ি যাবে ছোট বচ্চন। তার জন্য উপহার নিয়েও তৈরি অনেকে। কিন্তু কী হতে পারে সেই উপহার?
দাদাজির ছবির ডিভিডি সেট : নবজাতককে কোলে নিয়েই নিজের আনন্দের কথা জানান দিয়েছেন অমিতাভ। কিন্তু ছোট্ট শিশুটি কিসে আনন্দ পাবে? অবশ্যই দাদাজির সেই অ্যাংরি ইয়ংম্যান ইমেজ তার কাছে একেবারেই অপরিচিত, যে ইমেজের বলেই আজ দাদাজি বলিউডের শাহেনশাহ। নাতনির কাছে দাদাজিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কীই-বা হতে পারে?
হীরার ঘড়ি : ছোট্ট সেই কবজিতে হীরাখচিত একটি ঘড়ি থাকবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। যেনতেন জিনিস তো আর দেওয়া যায় না নবম বচ্চনের হাতে। তা ছাড়া সবাই জানেন, ঘড়ির প্রতি অ্যাশের একটি দুর্বলতাও রয়েছে। বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডের ঘড়ির একটি ছোট সংগ্রহশালা আছে অ্যাশের দখলে। মায়ের মতো মেয়েও যে ঘড়ির প্রতি দুর্বলতা থাকবে না, সে কি বলা যায়!
চেলসি ক্লাবের জার্সি : বাবা অভিষেক ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ দল চেলসির ডাই হার্ড ফ্যান। প্রায়ই প্রিয় দলটির খেলা দেখার জন্য উইরোপে উড়ে যান তিনি। তা না হলে ঘরেই বেশ আয়েশ করে চেলসির খেলা দেখেন অভিষেক। লন্ডনের দলটির বেশ কয়েকটি জার্সি রয়েছে তাঁর। মেয়ের জন্য বাবার তরফ থেকে তাই উপহার হতে পারে চেলসির একটি খুদে জার্সি।
পোষা প্রাণী : অভিষেক কুকুর খুব পছন্দ করেন। তাঁর পোষা কুকুর রয়েছে। অ্যাশও অনেকটাই পশুপ্রেমী। বাবার যখন এতটাই পছন্দ, তখন ছোট বচ্চনের জন্য একটি পোষা প্রাণীও হতে পারে আদর্শ উপহার। তবে এ ক্ষেত্রে বলে নেওয়া ভালো, জয়া কিন্তু এ ব্যাপারে একটু কড়া।
বই : বচ্চন পরিবারে জন্ম। দাদাজি তো বই লিখেছেন, পড়ার অভ্যাসটাও রয়েছে। বাড়িতে রয়েছে বিরাট এক লাইব্রেরি।
আর বাবার দাদাজি তো রীতিমতো বিখ্যাত কবি। পড়ার অভ্যাসটা তো তাঁর রক্তে। ফলে ছোটবেলাতেই অনেকটা সময় যে দাদাজির লাইব্রেরিতে কাটবে, এটা বুঝতে দেরি হওয়ার কথা নয়। আর অল্প বয়সেই যদি লেখা শুরু হয়ে যায়, অবাক হওয়ারও কিছু নেই।

No comments

Powered by Blogger.