স্বল্পোন্নত দেশের ঝুঁকি মোকাবিলায় সার্বভৌম তহবিল গঠনের তাগিদ-অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা ভালো

স্বল্পোন্নত ৪৮টি দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা আরো বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা 'ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (আংকটাড)।গতকাল বৃহস্পতিবার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিবেদন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একযোগে প্রকাশ করা হয়।


'অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়নে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা' শীর্ষক প্রতিবেদনটি আংকটাডের পক্ষে বাংলাদেশে প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ উপলক্ষে সংস্থাটির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির প্রধান গবেষক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বল্পোন্নত ৪৮টি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের চেয়ে ২০১১ সালে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর রপ্তানি, বিদেশে বিনিয়োগ, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানিসহ অন্য পণ্যের উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সূচক নিম্নমুখী। ২০০৯ সালে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোয় বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ বাস করে। তবে বিশ্ব জিডিপির মাত্র ০.৯ শতাংশ আসে এ দেশগুলো থেকে। বিশ্বের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের মাত্র আড়াই শতাংশ এ দেশগুলোয় আসে। আর স্বল্পোন্নত দেশগুলো বিশ্ব রপ্তানির মাত্র ১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৯০ সালে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোয় চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১৮ শতাংশ থাকলেও ২০০০ সালে এ সংখ্যা ২৭ শতাংশ হয়। ২০০৭ সালে এ হার ৩৬ শতাংশে উন্নীত হয়। ২০০৯ এলডিসিভুক্ত দেশগুলো ৬৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির বিপরীতে ১৪৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৯ সালের তথ্যানুযায়ী মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের মান হলো ৫৩ পয়েন্ট। তিন বছরের গড় মাথাপিছু আয় ৬৪০ মার্কিন ডলার। আর অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বাংলাদেশের মান ২৩.২। এসব সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলক ভালো।
প্রতিবেদন প্রকাশ করে ড. ফাহমিদা বলেন, বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি মোকাবিলায় ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল রয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়নশীল ও সল্পোন্নত দেশগুলোর অংশিদারত্ব প্রায় সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলার। এ তহবিলের মাত্র ১ শতাংশও যদি দক্ষিণ অঞ্চলের দেশগুলোর ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়, তাহলে তারা প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণদানে সক্ষম হবে, যা দেশগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে যেহেতু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ঋণের মতো কঠিন কোনো শর্ত থাকে না, তাই তা দেশের উন্নয়নে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানান ড. ফাহমিদা খাতুন।
প্রতিবেদন সম্পর্কে সিডিপির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকলেও ২০১১ সালে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে আনা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.