আরও একগুচ্ছ প্রণোদনা-রোববার চূড়ান্ত ঘোষণা
কালো টাকা বিনিয়োগ করলে কোনো সংস্থাই প্রশ্ন করবে না
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার হচ্ছে
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফ হতে পারে
ব্যাংক-বীমা বিনিয়োগ বাড়াবে
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার হচ্ছে
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফ হতে পারে
ব্যাংক-বীমা বিনিয়োগ বাড়াবে
শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে সরকার আরও একগুচ্ছ প্রণোদনা ঘোষণা করবে। বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষ থেকে ৬০ থেকে ৭০টি সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রস্তাব ভালোভাবে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করতে অর্থমন্ত্রী, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে গতকাল থেকেই সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছেন। সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, এসবের মধ্যে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করলে কোনো সংস্থার প্রশ্নের মুখোমুখি না হওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব সরকার বিবেচনা করতে পারে। জানা গেছে, সবকিছু চূড়ান্ত করে সরকারের প্রণোদনা রোববার ঘোষণা করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বুধবার রাতের বৈঠকে সবার প্রস্তাব মন দিয়ে শোনেন। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে যেসব প্রস্তাব প্রকৃত অর্থে কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করতে অর্থমন্ত্রী, এসইসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে অর্থমন্ত্রী সবার সঙ্গে বসে সরকারের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন। সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও একবার বৈঠক করবেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে এসইসির চেয়ারম্যান ও দুই সদস্য পটভূমি তুলে ধরেন। সম্প্রতি নেওয়া পদক্ষেপের বর্ণনা দেন তারা। বৈঠকে যারা মতামত দেন তাদের প্রায় সবার অভিন্ন বার্তা ছিল, বাজারে
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র আস্থার সংকট রয়েছে। তারা কোনো কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। প্রচণ্ড অস্থিরতা তাদের মধ্যে কাজ করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস আসতে হবে। বৈঠকে ব্যাংক ও বীমা খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব আসে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি বলে বৈঠকে মত প্রকাশ করা হয়।
কালো টাকা : শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের নীতি আরও শিথিল করা হচ্ছে। যে কোনো অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করলে সরকারের কোনো সংস্থাই প্রশ্ন করবে না। রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই আদেশ কার্যকর করবে। বর্তমানে এনবিআরের আইনে শুধু শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আছে; কিন্তু দুদক কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা চাইলে কালো টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে পারবে। বিদ্যমান আইনে পরস্পরবিরোধী বিধান থাকায় অনেকেই শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। শেয়ারবাজারে যাতে নির্বিঘ্নে বিনিয়োগ করতে পারেন সে জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, কালো টাকা বিনিয়োগের উৎস সম্পর্কে কোনো সংস্থাই প্রশ্ন করবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করেন। জানা গেছে, বাজার চাঙ্গা করতে গত মাসে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত, মিউচুয়াল ফান্ডে করমুক্ত সুবিধা, ব্রোকারেজ কমিশনের হার কমানোসহ বেশ কিছু কর প্রণোদনা দেওয়া হয়। ওই প্রণোদনার সঙ্গে নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ওপর করমুক্ত সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে ।
যেসব সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে : বৈঠকে এসইসির পক্ষ থেকে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে অন্য কোনো সংস্থা থেকে প্রশ্ন তোলা হবে না মর্মে স্পষ্ট ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-বিদেশি বাংলাদেশিদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভ আগের মতো করমুক্ত রাখতে হবে। বর্তমান অর্থবছরে তাদের লাভের ওপর ১০ শতাংশ কর রয়েছে; যেহেতু এ বছর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে অর্জিত লাভের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এতে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়েছেন। বর্তমানে বিশেষ বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ওপর থেকে এ কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। এ দুটি প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার উপায় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার মতামত চান। এ বিষয়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ করার প্রস্তাব দেন। কেউ কেউ তাদের জন্য নতুন আইপিওর ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। বৈঠকে উপস্থিত বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো নতুন বিনিয়োগ শুরু করেছে; কিন্তু কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগের পরিমাণ কম। তারা তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ (এসএলআর) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণের হার কমানোর প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। গত বছর শেয়ারবাজার থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছিল তা আবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারদরের ভিত্তিতে (মার্ক-টু-মার্কেট) হিসাব না করে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে (কস্ট প্রাইস বেসিস) বিনিয়োগ হিসাবের প্রস্তাব করা হয়। সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে মুনাফার ওপরও কর প্রত্যাহারের দাবি করা হয় ব্যাংকিং খাত থেকে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি সমকালকে জানান, বর্তমান অবস্থায় দরপতন ঠেকাতে ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগের বিকল্প নেই_ এ মর্মে সবাই একমত পোষণ করেন। ব্যাংকিং খাত থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আলোচনাসাপেক্ষে কিছু সুবিধা প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আইপিওতে বিশেষ কোটা সংরক্ষণের প্রস্তাবও এসেছে।
কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ : নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টাকা লুট করে সর্বস্বান্ত করেছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুঁজি হারিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী নিঃস হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষতি কীভাবে দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায় সে বিষয়ে সম্ভাব্য সব ধরনের উপায় খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেভাবেই হোক বাজার চাঙ্গা করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্দেশে তিনি বলেন, এসইসি আরও সতর্ক হলে এভাবে শেয়ারের দাম ওঠানামা করতে পারে না। আগেভাগে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তাদের বর্তমান সমস্যার কথা যেমন জানিয়েছেন, তেমনি কিছু সুবিধাও দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সব প্রস্তাব ও দাবির বিষয়ে বিস্তারিত শোনেন এবং পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরির নির্দেশনা দেন।
সিএসই সভাপতি ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ জানান, গণভবনের বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষ ৬০-৭০টি প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, বুধবারের দীর্ঘ আলোচনায় এ রকম একটি বার্তা আমরা পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারের সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়েছেন। তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই হোক এ সমস্যার সমাধানে পেঁৗছতে নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবারের বৈঠক থেকে কেন কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়নি_ সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ যেন কোনোভাবেই নিষ্ফল না হয়, তা নিশ্চিত করতেই কোনো পদক্ষেপ ঘোষণার আগে তা ভালোভাবে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিএসই সভাপতি বলেন, বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়_ এমন কোনো পদক্ষেপই সরকার নেবে না। এমন ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি।
এদিকে সরকার দরপতন ঠেকাতে কী ধরনের পদক্ষেপ ঘোষণা করে তা জানার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি সমকালকে বলেন, মানুষ সরকারের কাছে এ সমস্যা সমাধানে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে আছে। গত দু'দিনের বাজার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরাও সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বীমা খাত ১৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে : শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকের পাশাপাশি বীমা খাতও বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সূত্রে জানা গেছে, বীমা কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে। এ লক্ষ্যে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা জোগান দেওয়ার জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি_ উভয় বাজারে ওই টাকা খাটানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি শেয়ার লেনদেনে অংশগ্রহণের জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে আলাদার্ মােচন্ট ব্যাংক, একই সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলার অনমুতি চাওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাবনা পেশ করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিকরা এসইসির চেয়ারম্যানকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের সব শর্ত পালন করতে পারবে কেবল তাদের মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলার অনুমতি দিতে হবে। বিআইএ মনে করে, ব্যাংকের পাশাপাশি বীমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে সক্রিয় হলে দরপতন ঠেকানো যাবে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তিনি সম্মতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এসইসি চেয়ারম্যান তাদের প্রস্তাবনা সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক : শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করতে সরকারি ঘোষণা চূড়ান্ত করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক বসছে। সকাল ১১টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ সচিব ড. মুহাম্মদ তারেক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ছাড়াও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, এসইসির চার সদস্য এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে যেসব খসড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো চূড়ান্ত করা হবে। পরে প্রধানমন্ত্রীকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো অবহিত করে ঘোষণা করা হবে।
ড. ফরাসউদ্দিন উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক : এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ এসইসির সাবেক চেয়ারমান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টর সিনিয়র অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম সচিব (প্রবিধি, নীতি ও মূলধন মার্কেট)। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
উপদেষ্টা পরিষদ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট আইনকানুন, বিধিবিধানসহ প্রাসঙ্গিক সব বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে উপদেশ দেবে। এর আগে ১৬ অক্টোবর অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর একদিন পরই অর্থমন্ত্রী কমিটিতে না থাকার ঘোষণা দেন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বুধবার রাতের বৈঠকে সবার প্রস্তাব মন দিয়ে শোনেন। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে যেসব প্রস্তাব প্রকৃত অর্থে কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করতে অর্থমন্ত্রী, এসইসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে অর্থমন্ত্রী সবার সঙ্গে বসে সরকারের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন। সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও একবার বৈঠক করবেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে এসইসির চেয়ারম্যান ও দুই সদস্য পটভূমি তুলে ধরেন। সম্প্রতি নেওয়া পদক্ষেপের বর্ণনা দেন তারা। বৈঠকে যারা মতামত দেন তাদের প্রায় সবার অভিন্ন বার্তা ছিল, বাজারে
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র আস্থার সংকট রয়েছে। তারা কোনো কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। প্রচণ্ড অস্থিরতা তাদের মধ্যে কাজ করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস আসতে হবে। বৈঠকে ব্যাংক ও বীমা খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব আসে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি বলে বৈঠকে মত প্রকাশ করা হয়।
কালো টাকা : শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের নীতি আরও শিথিল করা হচ্ছে। যে কোনো অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করলে সরকারের কোনো সংস্থাই প্রশ্ন করবে না। রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই আদেশ কার্যকর করবে। বর্তমানে এনবিআরের আইনে শুধু শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আছে; কিন্তু দুদক কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা চাইলে কালো টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে পারবে। বিদ্যমান আইনে পরস্পরবিরোধী বিধান থাকায় অনেকেই শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। শেয়ারবাজারে যাতে নির্বিঘ্নে বিনিয়োগ করতে পারেন সে জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, কালো টাকা বিনিয়োগের উৎস সম্পর্কে কোনো সংস্থাই প্রশ্ন করবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করেন। জানা গেছে, বাজার চাঙ্গা করতে গত মাসে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত, মিউচুয়াল ফান্ডে করমুক্ত সুবিধা, ব্রোকারেজ কমিশনের হার কমানোসহ বেশ কিছু কর প্রণোদনা দেওয়া হয়। ওই প্রণোদনার সঙ্গে নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ওপর করমুক্ত সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে ।
যেসব সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে : বৈঠকে এসইসির পক্ষ থেকে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে অন্য কোনো সংস্থা থেকে প্রশ্ন তোলা হবে না মর্মে স্পষ্ট ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-বিদেশি বাংলাদেশিদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভ আগের মতো করমুক্ত রাখতে হবে। বর্তমান অর্থবছরে তাদের লাভের ওপর ১০ শতাংশ কর রয়েছে; যেহেতু এ বছর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে অর্জিত লাভের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এতে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়েছেন। বর্তমানে বিশেষ বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ওপর থেকে এ কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। এ দুটি প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার উপায় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার মতামত চান। এ বিষয়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ করার প্রস্তাব দেন। কেউ কেউ তাদের জন্য নতুন আইপিওর ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। বৈঠকে উপস্থিত বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো নতুন বিনিয়োগ শুরু করেছে; কিন্তু কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগের পরিমাণ কম। তারা তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ (এসএলআর) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণের হার কমানোর প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। গত বছর শেয়ারবাজার থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছিল তা আবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারদরের ভিত্তিতে (মার্ক-টু-মার্কেট) হিসাব না করে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে (কস্ট প্রাইস বেসিস) বিনিয়োগ হিসাবের প্রস্তাব করা হয়। সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে মুনাফার ওপরও কর প্রত্যাহারের দাবি করা হয় ব্যাংকিং খাত থেকে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি সমকালকে জানান, বর্তমান অবস্থায় দরপতন ঠেকাতে ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগের বিকল্প নেই_ এ মর্মে সবাই একমত পোষণ করেন। ব্যাংকিং খাত থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আলোচনাসাপেক্ষে কিছু সুবিধা প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আইপিওতে বিশেষ কোটা সংরক্ষণের প্রস্তাবও এসেছে।
কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ : নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টাকা লুট করে সর্বস্বান্ত করেছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুঁজি হারিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী নিঃস হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষতি কীভাবে দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায় সে বিষয়ে সম্ভাব্য সব ধরনের উপায় খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেভাবেই হোক বাজার চাঙ্গা করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্দেশে তিনি বলেন, এসইসি আরও সতর্ক হলে এভাবে শেয়ারের দাম ওঠানামা করতে পারে না। আগেভাগে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তাদের বর্তমান সমস্যার কথা যেমন জানিয়েছেন, তেমনি কিছু সুবিধাও দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সব প্রস্তাব ও দাবির বিষয়ে বিস্তারিত শোনেন এবং পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরির নির্দেশনা দেন।
সিএসই সভাপতি ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ জানান, গণভবনের বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষ ৬০-৭০টি প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, বুধবারের দীর্ঘ আলোচনায় এ রকম একটি বার্তা আমরা পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারের সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়েছেন। তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই হোক এ সমস্যার সমাধানে পেঁৗছতে নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবারের বৈঠক থেকে কেন কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়নি_ সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ যেন কোনোভাবেই নিষ্ফল না হয়, তা নিশ্চিত করতেই কোনো পদক্ষেপ ঘোষণার আগে তা ভালোভাবে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিএসই সভাপতি বলেন, বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়_ এমন কোনো পদক্ষেপই সরকার নেবে না। এমন ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি।
এদিকে সরকার দরপতন ঠেকাতে কী ধরনের পদক্ষেপ ঘোষণা করে তা জানার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি সমকালকে বলেন, মানুষ সরকারের কাছে এ সমস্যা সমাধানে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে আছে। গত দু'দিনের বাজার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরাও সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বীমা খাত ১৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে : শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকের পাশাপাশি বীমা খাতও বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সূত্রে জানা গেছে, বীমা কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে। এ লক্ষ্যে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা জোগান দেওয়ার জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি_ উভয় বাজারে ওই টাকা খাটানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি শেয়ার লেনদেনে অংশগ্রহণের জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে আলাদার্ মােচন্ট ব্যাংক, একই সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলার অনমুতি চাওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাবনা পেশ করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিকরা এসইসির চেয়ারম্যানকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের সব শর্ত পালন করতে পারবে কেবল তাদের মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলার অনুমতি দিতে হবে। বিআইএ মনে করে, ব্যাংকের পাশাপাশি বীমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে সক্রিয় হলে দরপতন ঠেকানো যাবে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তিনি সম্মতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এসইসি চেয়ারম্যান তাদের প্রস্তাবনা সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক : শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করতে সরকারি ঘোষণা চূড়ান্ত করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক বসছে। সকাল ১১টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ সচিব ড. মুহাম্মদ তারেক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ছাড়াও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, এসইসির চার সদস্য এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে যেসব খসড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো চূড়ান্ত করা হবে। পরে প্রধানমন্ত্রীকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো অবহিত করে ঘোষণা করা হবে।
ড. ফরাসউদ্দিন উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক : এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ এসইসির সাবেক চেয়ারমান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টর সিনিয়র অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম সচিব (প্রবিধি, নীতি ও মূলধন মার্কেট)। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
উপদেষ্টা পরিষদ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট আইনকানুন, বিধিবিধানসহ প্রাসঙ্গিক সব বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে উপদেশ দেবে। এর আগে ১৬ অক্টোবর অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর একদিন পরই অর্থমন্ত্রী কমিটিতে না থাকার ঘোষণা দেন।
No comments