ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পথ by ইমতিয়াজ আহমদ
এটা হতে হবে এমন আদর্শ প্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হতে এবং শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে উদগ্রীব থাকবে অগণিতজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর ৯০ বছর পর আমরা কি এ প্রশ্ন করতে পারি না যে ইতিহাস নির্দিষ্ট এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে? এ প্রতিষ্ঠানটি কি নিজের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে পারছে, নাকি তা ম্লান হচ্ছে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটির যে চিত্র
মাঝেমধ্যেই ফুটিয়ে তোলা হয় তা আশাব্যঞ্জক নয়। বিশ্বের একশ' সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এমনকি পাঁচশ'র তালিকাতেও থাকে
না এর নাম
যে কোনো দেশেই এক বা দুটি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে, যাকে অনুসরণ করে অন্যরা। তাদের বলা যায় পথপ্রদর্শক কিংবা আলোকবর্তিকা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানের মুক্তচর্চা হয়, চিন্তা জগতের খোরাক জোগায়। তাদের কার্যক্রমের প্রতি নজর রাখলে সহজেই জানা যায় দেশ কোন পথে, আগামীতে কোন মহৎ লক্ষ্য অর্জনের পথে সম্মিলিত অভিযাত্রা। বিশ্বে যেসব দেশ এগিয়ে চলেছে, সর্বত্রই আমরা এমন প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি দেখি। যেমন মরক্কোর আল কোরাইন বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিও স্বদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। আরও পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এমআইটি এবং হাল আমলের টোকিও ও বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ও কাজ করছে সুনামের সঙ্গে। তাদের র্যাংকিং বড় কথা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে যে আদর্শ হয়ে উঠতে পেরেছে সেটাই বড় প্রাপ্তি। তাদের কার্যক্রম দেখেই বিশ্ব জেনে যায় যে দেশটি কোথায় চলেছে। দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে তোলায় এসব প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রেখে চলেছে। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষাঙ্গন_ সর্বত্রই তাদের উপস্থিতি দৃশ্যমান।
আমাদের সবার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও কিন্তু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথের প্রতিটি পর্যায়ে এ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সাহস ও গৌরবের। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের স্মরণে নির্মিত কেন্দ্রীয় মিনারের অবস্থান এ ক্যাম্পাসেই। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থেকে লাখ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু এমনকি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এ শহীদ মিনারে। এর আয়োজনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। বিশ্বে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এমন মর্যাদা বিরল, যেখানে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯৫২ সালের মাত্র ১৯ বছর পর ১৯৭১ সালের ২ মার্চ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক বটতলায় উত্তোলন করা হয় স্বাধীন দেশের প্রস্তাবিত জাতীয় পতাকা, মাসাধিককাল যেতে না যেতেই সার্বভৌম দেশের পতাকা হিসেবে যার স্বীকৃতি দেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার। এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, তারা শিক্ষার প্রসার ও মানের উন্নয়নে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে, শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নব নব সাফল্য অর্জনে একই ধরনের নেতৃত্ব প্রদান করবে, এটাই প্রত্যাশিত। তারাই বলে দেবে আগামী ১০০ বছর পর দেশ কোন অবস্থানে থাকবে এবং সেখানে পেঁৗছতে কীভাবে চলতে হবে। এটা হতে হবে এমন আদর্শ প্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হতে এবং শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে উদগ্রীব থাকবে অগণিতজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর ৯০ বছর পর আমরা কি এ প্রশ্ন করতে পারি না যে ইতিহাস নির্দিষ্ট এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে? এ প্রতিষ্ঠানটি কি নিজের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে পারছে, নাকি তা ম্লান হচ্ছে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটির যে চিত্র মাঝেমধ্যেই ফুটিয়ে তোলা হয় তা আশাব্যঞ্জক নয়। বিশ্বের একশ' সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এমনকি পাঁচশ'র তালিকাতেও থাকে না এর নাম। আমাদের অনেক পরে স্বাধীনতা অর্জনকারী স্বল্প আয়তনের দেশ সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যদি শীর্ষ কয়েকটি দেশের তালিকায় থাকতে পারে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন থাকবে না? শতবর্ষকে সামনে রেখে এ লক্ষ্য এখনই কি আমরা নির্ধারণ করতে পারি না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। হলকেন্দ্রিক এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর আবাসিক হলে থাকার নিশ্চয়তা ছিল। এখন অবস্থা বদলে গেছে। যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তাদের বেশিরভাগকে থাকতে হয় হলের বাইরে কিংবা ডাবলিং করে। নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে কেন অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হলো, সে প্রশ্ন তোলা যায়। কিংবা বলা যায়, ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন মেটাতে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্রাবাস গড়ে তোলা হয়নি। এখানে এমন একটি কাঠামো গড়ে উঠেছে যেখানে ছাত্রছাত্রী কমাতে চাওয়া হয় না এবং একই সঙ্গে নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণেরও উদ্যোগ নেই। কর্তৃপক্ষের জন্য এটাই হয়তো সুবিধাজনক। এ ধরনের পরিস্থিতি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করে। তারা জানে যে হলে থাকার ব্যবস্থা করতে হলে ছাত্র নামধারী নেতাদের দ্বারস্থ হতেই হবে। কোন হলের কোন আসনে কে থাকার সুযোগ পাবে, প্রধানত মাস্তানতন্ত্রই তার নির্ধারক। এর বিপরীতে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেই আবাসিক হলে থাকার নিশ্চয়তা মেলে তাহলে দলীয় রাজনীতির প্রাধান্য কমবেই। অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করলে কর্তৃপক্ষেরও সুবিধা। কারণ তারাও দলীয় রাজনীতির দ্বারা লাভবান হয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কাঠামোর ওপর ভরসা করে নয়, বরং ওপরে উঠতে তাদের সহায়ক হয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবেই তারা সক্রিয় থাকেন। এ কারণে হলের ডাইনিং হল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বা গবেষণা কাজের সমস্যা অথবা শিক্ষা জীবন শেষে কর্মসংস্থানের ইস্যু তাদের কাছে প্রাধান্য পায় না। দলীয়করণের মাধ্যমে নিজের অবস্থান ধরে রাখতেই তারা সচেষ্ট থাকেন। অথচ তারা এটা বুঝতে চান না যে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি, দেশেরও ক্ষতি। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা এখন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভরসা রাখতে চান না। তাদের পছন্দে থাকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দেশের ভেতরের কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।
এমন হতাশাব্যঞ্জক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী? এজন্য প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা বিবেচনায় রেখে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে হবে। যারা ভর্তি হবে তাদের সবাইকে আবাসিক সুবিধা দিতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য যেহেতু শিক্ষার্থীদের প্রবল চাপ, তাই নতুন পাবলিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তৎপর হতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রবেশ প্রসঙ্গ। এ ক্ষেত্রে মেধাই হওয়া উচিত একমাত্র বিবেচ্য। কিন্তু এখানেও দলীয় রাজনীতির অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ। যারা শিক্ষক হতে আগ্রহী তারা জানেন যে, কোনো না কোনো বলয়ভুক্ত না থাকলে যত ভালো ফলই থাকুক না কেন, শিক্ষক হওয়া কঠিন। তাই আগে থেকেই দল-উপদলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন তারা। শিক্ষকদের অনেক ধরনের ভোটের অধিকার রয়েছে। ১৯৭৩ সালে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের 'গণতন্ত্র চর্চা' কতটা অপরিহার্য সে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল উপাচার্যের মতো পদ পূরণে শিক্ষকদের ভোটাধিকারের বিষয়টি। প্রকৃতই তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনেতা। এ আইনের কারণে যেহেতু নানা পদের জন্য নির্বাচনে শিক্ষকদের ভোট মূল্যবান, তাই প্রতিটি নিয়োগেই ভোটটি কোন পক্ষে যাবে সেটা বিশেষ বিবেচনা পায়। এভাবেই দলীয় রাজনীতির স্বার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে পেছনের সারিতে ঠেলে দিচ্ছে। গবেষণা কাজে যত না ব্যস্ততা তার চেয়ে বরং 'উচ্চাভিলাষী' অনেক শিক্ষককে দেখা যায় মন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সমর্থন আদায়ে তৎপর থাকতে। এ কারণেই এখন সময় এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩-এর পুনর্বিবেচনার। এ পদটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা নেবে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি। শিক্ষক নিয়োগেও মেধাকে স্থান দিতে হবে সর্বাগ্রে। বিদেশিদেরও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিটি বিভাগে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শিক্ষক বিদেশি নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত থাকা চাই। অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। কেউ রয়েছেন স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে, কেউবা খণ্ডকালীন পদে। এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক বিদেশি শিক্ষক ছিলেন। এখন কাউকেই আর দেখা যায় না। বাংলাদেশিরা অন্য দেশে শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারলে, অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার দুয়ার খুলে দেবে না? বিদেশে যেসব বাংলাদেশি সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন তাদের জন্যও এ সুবিধা দিতে হবে।
এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীরা বাইরের জগৎকে চিনতে শিখবে, যা কাজে লাগবে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রবেশের পর এখন ক্যাম্পাসে প্রবেশের প্রসঙ্গ। অন্তত ৬-৭টি পথ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের। এর কোনোটিরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য নেই, যা সহজে নজর কাড়ে। বলা যায়, প্রতিটি গেট শ্রীহীন। প্রায় তিন বছর আগে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় এসব গেটকে আকর্ষণীয় করার প্রস্তাব রেখেছিলাম। আরেকটি দাবি ছিল একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেনোসাইডের এপিসেন্টার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড অধ্যয়ন চালুর। প্রথম কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বলা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটে এর অনুমোদন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত পরিচালক পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং এ বিষয়ে কোনো সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি।
যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ দেখেই ধারণা মেলে, ভেতরে কী হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ভেতরের কাঠামো বদলে ফেলায় সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কেবল গেট নির্মাণে মনোযোগী হোক, এটা কাম্য নয়। তবে প্রবেশ পথগুলো জরুরি মনোযোগও কিন্তু দাবি করে। শাহবাগ, কার্জন হল, নীলক্ষেত প্রভৃতি প্রবেশ পথে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেকেই রয়েছেন। তারা অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। আর ডিজাইনে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেন চারুকলার সাবেক ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন অবশ্যই চাই। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রবেশের পদ্ধতিতে পরিবর্তন চাই, ক্যাম্পাসে প্রবেশের পথেও চাই। এখন অপেক্ষা তা বাস্তবায়নের। এ অপেক্ষা দীর্ঘায়িত না হোক, সেটাই চাইব।
ইমতিয়াজ আহমদ : অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
না এর নাম
যে কোনো দেশেই এক বা দুটি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে, যাকে অনুসরণ করে অন্যরা। তাদের বলা যায় পথপ্রদর্শক কিংবা আলোকবর্তিকা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানের মুক্তচর্চা হয়, চিন্তা জগতের খোরাক জোগায়। তাদের কার্যক্রমের প্রতি নজর রাখলে সহজেই জানা যায় দেশ কোন পথে, আগামীতে কোন মহৎ লক্ষ্য অর্জনের পথে সম্মিলিত অভিযাত্রা। বিশ্বে যেসব দেশ এগিয়ে চলেছে, সর্বত্রই আমরা এমন প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি দেখি। যেমন মরক্কোর আল কোরাইন বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিও স্বদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। আরও পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এমআইটি এবং হাল আমলের টোকিও ও বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ও কাজ করছে সুনামের সঙ্গে। তাদের র্যাংকিং বড় কথা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে যে আদর্শ হয়ে উঠতে পেরেছে সেটাই বড় প্রাপ্তি। তাদের কার্যক্রম দেখেই বিশ্ব জেনে যায় যে দেশটি কোথায় চলেছে। দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে তোলায় এসব প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রেখে চলেছে। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষাঙ্গন_ সর্বত্রই তাদের উপস্থিতি দৃশ্যমান।
আমাদের সবার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও কিন্তু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথের প্রতিটি পর্যায়ে এ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সাহস ও গৌরবের। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের স্মরণে নির্মিত কেন্দ্রীয় মিনারের অবস্থান এ ক্যাম্পাসেই। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থেকে লাখ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু এমনকি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এ শহীদ মিনারে। এর আয়োজনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। বিশ্বে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এমন মর্যাদা বিরল, যেখানে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯৫২ সালের মাত্র ১৯ বছর পর ১৯৭১ সালের ২ মার্চ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক বটতলায় উত্তোলন করা হয় স্বাধীন দেশের প্রস্তাবিত জাতীয় পতাকা, মাসাধিককাল যেতে না যেতেই সার্বভৌম দেশের পতাকা হিসেবে যার স্বীকৃতি দেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার। এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, তারা শিক্ষার প্রসার ও মানের উন্নয়নে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে, শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নব নব সাফল্য অর্জনে একই ধরনের নেতৃত্ব প্রদান করবে, এটাই প্রত্যাশিত। তারাই বলে দেবে আগামী ১০০ বছর পর দেশ কোন অবস্থানে থাকবে এবং সেখানে পেঁৗছতে কীভাবে চলতে হবে। এটা হতে হবে এমন আদর্শ প্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হতে এবং শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে উদগ্রীব থাকবে অগণিতজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর ৯০ বছর পর আমরা কি এ প্রশ্ন করতে পারি না যে ইতিহাস নির্দিষ্ট এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে? এ প্রতিষ্ঠানটি কি নিজের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে পারছে, নাকি তা ম্লান হচ্ছে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটির যে চিত্র মাঝেমধ্যেই ফুটিয়ে তোলা হয় তা আশাব্যঞ্জক নয়। বিশ্বের একশ' সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এমনকি পাঁচশ'র তালিকাতেও থাকে না এর নাম। আমাদের অনেক পরে স্বাধীনতা অর্জনকারী স্বল্প আয়তনের দেশ সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যদি শীর্ষ কয়েকটি দেশের তালিকায় থাকতে পারে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন থাকবে না? শতবর্ষকে সামনে রেখে এ লক্ষ্য এখনই কি আমরা নির্ধারণ করতে পারি না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। হলকেন্দ্রিক এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর আবাসিক হলে থাকার নিশ্চয়তা ছিল। এখন অবস্থা বদলে গেছে। যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তাদের বেশিরভাগকে থাকতে হয় হলের বাইরে কিংবা ডাবলিং করে। নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে কেন অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হলো, সে প্রশ্ন তোলা যায়। কিংবা বলা যায়, ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন মেটাতে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্রাবাস গড়ে তোলা হয়নি। এখানে এমন একটি কাঠামো গড়ে উঠেছে যেখানে ছাত্রছাত্রী কমাতে চাওয়া হয় না এবং একই সঙ্গে নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণেরও উদ্যোগ নেই। কর্তৃপক্ষের জন্য এটাই হয়তো সুবিধাজনক। এ ধরনের পরিস্থিতি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করে। তারা জানে যে হলে থাকার ব্যবস্থা করতে হলে ছাত্র নামধারী নেতাদের দ্বারস্থ হতেই হবে। কোন হলের কোন আসনে কে থাকার সুযোগ পাবে, প্রধানত মাস্তানতন্ত্রই তার নির্ধারক। এর বিপরীতে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেই আবাসিক হলে থাকার নিশ্চয়তা মেলে তাহলে দলীয় রাজনীতির প্রাধান্য কমবেই। অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করলে কর্তৃপক্ষেরও সুবিধা। কারণ তারাও দলীয় রাজনীতির দ্বারা লাভবান হয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কাঠামোর ওপর ভরসা করে নয়, বরং ওপরে উঠতে তাদের সহায়ক হয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবেই তারা সক্রিয় থাকেন। এ কারণে হলের ডাইনিং হল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বা গবেষণা কাজের সমস্যা অথবা শিক্ষা জীবন শেষে কর্মসংস্থানের ইস্যু তাদের কাছে প্রাধান্য পায় না। দলীয়করণের মাধ্যমে নিজের অবস্থান ধরে রাখতেই তারা সচেষ্ট থাকেন। অথচ তারা এটা বুঝতে চান না যে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি, দেশেরও ক্ষতি। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা এখন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভরসা রাখতে চান না। তাদের পছন্দে থাকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দেশের ভেতরের কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।
এমন হতাশাব্যঞ্জক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী? এজন্য প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা বিবেচনায় রেখে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে হবে। যারা ভর্তি হবে তাদের সবাইকে আবাসিক সুবিধা দিতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য যেহেতু শিক্ষার্থীদের প্রবল চাপ, তাই নতুন পাবলিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তৎপর হতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রবেশ প্রসঙ্গ। এ ক্ষেত্রে মেধাই হওয়া উচিত একমাত্র বিবেচ্য। কিন্তু এখানেও দলীয় রাজনীতির অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ। যারা শিক্ষক হতে আগ্রহী তারা জানেন যে, কোনো না কোনো বলয়ভুক্ত না থাকলে যত ভালো ফলই থাকুক না কেন, শিক্ষক হওয়া কঠিন। তাই আগে থেকেই দল-উপদলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন তারা। শিক্ষকদের অনেক ধরনের ভোটের অধিকার রয়েছে। ১৯৭৩ সালে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের 'গণতন্ত্র চর্চা' কতটা অপরিহার্য সে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল উপাচার্যের মতো পদ পূরণে শিক্ষকদের ভোটাধিকারের বিষয়টি। প্রকৃতই তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনেতা। এ আইনের কারণে যেহেতু নানা পদের জন্য নির্বাচনে শিক্ষকদের ভোট মূল্যবান, তাই প্রতিটি নিয়োগেই ভোটটি কোন পক্ষে যাবে সেটা বিশেষ বিবেচনা পায়। এভাবেই দলীয় রাজনীতির স্বার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে পেছনের সারিতে ঠেলে দিচ্ছে। গবেষণা কাজে যত না ব্যস্ততা তার চেয়ে বরং 'উচ্চাভিলাষী' অনেক শিক্ষককে দেখা যায় মন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সমর্থন আদায়ে তৎপর থাকতে। এ কারণেই এখন সময় এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩-এর পুনর্বিবেচনার। এ পদটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা নেবে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি। শিক্ষক নিয়োগেও মেধাকে স্থান দিতে হবে সর্বাগ্রে। বিদেশিদেরও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিটি বিভাগে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শিক্ষক বিদেশি নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত থাকা চাই। অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। কেউ রয়েছেন স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে, কেউবা খণ্ডকালীন পদে। এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক বিদেশি শিক্ষক ছিলেন। এখন কাউকেই আর দেখা যায় না। বাংলাদেশিরা অন্য দেশে শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারলে, অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার দুয়ার খুলে দেবে না? বিদেশে যেসব বাংলাদেশি সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন তাদের জন্যও এ সুবিধা দিতে হবে।
এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীরা বাইরের জগৎকে চিনতে শিখবে, যা কাজে লাগবে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রবেশের পর এখন ক্যাম্পাসে প্রবেশের প্রসঙ্গ। অন্তত ৬-৭টি পথ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের। এর কোনোটিরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য নেই, যা সহজে নজর কাড়ে। বলা যায়, প্রতিটি গেট শ্রীহীন। প্রায় তিন বছর আগে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় এসব গেটকে আকর্ষণীয় করার প্রস্তাব রেখেছিলাম। আরেকটি দাবি ছিল একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেনোসাইডের এপিসেন্টার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড অধ্যয়ন চালুর। প্রথম কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বলা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটে এর অনুমোদন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত পরিচালক পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং এ বিষয়ে কোনো সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি।
যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ দেখেই ধারণা মেলে, ভেতরে কী হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ভেতরের কাঠামো বদলে ফেলায় সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কেবল গেট নির্মাণে মনোযোগী হোক, এটা কাম্য নয়। তবে প্রবেশ পথগুলো জরুরি মনোযোগও কিন্তু দাবি করে। শাহবাগ, কার্জন হল, নীলক্ষেত প্রভৃতি প্রবেশ পথে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেকেই রয়েছেন। তারা অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। আর ডিজাইনে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেন চারুকলার সাবেক ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন অবশ্যই চাই। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রবেশের পদ্ধতিতে পরিবর্তন চাই, ক্যাম্পাসে প্রবেশের পথেও চাই। এখন অপেক্ষা তা বাস্তবায়নের। এ অপেক্ষা দীর্ঘায়িত না হোক, সেটাই চাইব।
ইমতিয়াজ আহমদ : অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments