ঈদুল আজহার শিক্ষা আত্মত্যাগে উজ্জীবিত হওয়া by মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার
আমাদের ধর্মীয় জীবনে আত্মত্যাগের মহান উৎসব হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদের এই পবিত্র দিনে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের জন্য, সন্তুষ্টিপ্রাপ্তির নিমিত্তে স্বপ্রণোদিত হয়ে ঐকান্তিক তাকওয়া অর্জনে হজরত ইব্রাহীম (আ.) যে আত্মত্যাগ এবং মহান আদর্শ ও শিক্ষা দুনিয়ার বুকে স্থাপন করে গেছেন, তা অনুসরণের শপথ নিই। তাই পবিত্র ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রতিটি মুসলমানের কাছে অপরিসীম। আরবি
জিলহজ মাসের ১০ তারিখ বিশ্বের সামর্থ্যবান মুসলমান পশু জবাইয়ের মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালন করে থাকে। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন; আমার কাছে পশুর রক্ত, মাংস, হাড় ইত্যাদি কিছুই পেঁৗছায় না, পেঁৗছায় শুধু তোমাদের অন্তরের তাক্ওয়া।
মূলত আমরা কোরবানির মাধ্যমে কে কতটুকু আত্মত্যাগ এবং মহান আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠতার পরিচয় দিচ্ছি, আল্লাহপাক তা প্রত্যক্ষ করেন। সুদীর্ঘকাল আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহপাকের পরম সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে নিজ হাতে কোরবানি দিয়ে চরম আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, যা ঐতিহাসিক মহা সত্য_কী অবাক, বিস্ময়কর কাণ্ড, হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে কোরবানি হয়েছিল একটি পশু। আল্লাহপাকের কী লীলাখেলা। মুসলমানদের জন্য এক বিরাট, অবিস্মরণীয় নেয়ামত, মহান আল্লাহ রাহমানুর রাহিমের প্রতি পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস, প্রেমের পরাকাষ্ঠার নিদর্শনস্বরূপ আমরা প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করে থাকি। ঘটনা এমনই_ আল্লাহপাক হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর প্রিয়তম বস্তু কোরবানি দেওয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন, তাই হজরত ইবরাহিম (আ.) বহুসংখ্যক কোরবানি করেন। এতে আল্লাহর নির্দেশমতো কাজ হয়নি। আবারও হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্ন দেখলেন, আল্লাহ জানালেন, হে ইবরাহিম, তোমার প্রিয়তম বস্তু কোরবানি করো। এ স্বপ্ন দেখে ইবরাহিম (আ.) ক্রমাগত অসংখ্য দুম্বা, মেষ ও উট কোরবানি করলেন; কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না, আবারও আদেশ হলো, হে ইবরাহিম! আমার আদেশ তো পূর্ণ করতে পারলে না, এতে হজরত ইবরাহিম (আ.) খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং ভাবতে লাগলেন, আমি তো আমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এখনো কোরবানি করতে পারিনি, করিনি, তাহলে সেটা কী? এই প্রশ্ন মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু করে দিল, আমার অহংবোধ, স্বার্থপরতা আল্লাহপাকের জন্য কোরবানি (আত্মত্যাগ) করতে পারিনি। অবশেষে তিনি কূলকিনারা না পেয়ে স্থির করলেন, সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁর প্রাণাধিক পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করবেন। এ কথা পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে জানালেন। কী বিস্ময়কর আল্লাহপ্রেম, ভীতি! কিশোর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)ও কোনো দ্বিধা না করে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হলেন এবং বললেন, 'হে পিতা! আর দেরি নয়, আপনি যে বিষয়ে বারবার আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে আদিষ্ট হচ্ছেন, তা আপনি অকপটে পালন করুন। আমাকেই কোরবানি দিন, কী দৃশ্য! হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে বেঁধে কোরবানি দিতে উদ্যত হলেন, তখনই গায়েবি আওয়াজ এল_'থামো ইবরাহিম! আমি তোমার ঐকান্তিক ত্যাগে মুগ্ধ হয়েছি, তোমার তাকওয়ায় আমি সন্তুষ্ট। এটাই আমি তোমাকে পরীক্ষা করেছিলাম। তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা-ভয়ের দৃঢ়তাই পরীক্ষা করেছিলাম, আজ তুমি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো_পাস করেছ।' হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহপাকের নামে উৎসর্গিত হয়ে প্রাণাধিক পুত্রকে ছুরি হাতে নিজ চোখের মণিকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এতটুকু অন্তর কাঁপেনি_আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আত্মত্যাগের যে আদর্শ স্থাপন করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন, হতচকিত করেছিলেন; তাই আমাদেরও উচিত ঐকান্তিক ও বিনীতভাবে আল্লাহপাকের প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবতার কল্যাণে আত্মত্যাগের শিক্ষায় জীবনকে বিলিয়ে দেওয়া।
অতএব, আজ আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ বারবার আমাদের আনন্দ নিয়ে আসছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে ধনী-গরিব ও ছোট-বড় এক কাতারে শামিল হয়ে যে উৎসবমুখর আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং যা পরিলক্ষিত হয়, তা অন্য কোনো ধর্মীয় পর্বে বা অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। আর এর মাধ্যমেই আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হয়।
পবিত্র ঈদুল আজহার শিক্ষাই হচ্ছে আত্মত্যাগে উজ্জীবিত হওয়া, মানবিক কল্যাণ সাধন করা, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সৌভ্রাতৃত্বের বাঁধনকে আরো সুদৃঢ় করা, পবিত্র ঈদুল আজহা প্রতিবছর আমাদের জন্য বয়ে আনে আত্মত্যাগের মহান বার্তা। এই পবিত্র দিনে আমরা আত্মত্যাগ ও আ@ে@@@াৎসর্গের মাধ্যমে মানবিক মূল্যেবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে_আমরা যেন নিছক লৌকিকতা, আত্মত্যাগ ও আ@ে@@@াৎসর্গের মাধ্যমে মানবিক মূল্যেবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তবে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে_আমরা যেন নিছক লৌকিকতা, আত্মম্ভরিতা, বাহাদুরি ও প্রতিযোগিতামূলক রক্তক্ষরণ ও গোশত ভক্ষণ করে মহান ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও শিক্ষাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার-আপনার কোরবানি কবুল করুন_আমরা যেন সত্যিকারভাবে 'তাক্ওয়া' অর্জনে কামিয়াব হই এবং আল্লাহরপাকের সন্তুষ্টি, নৈকট্য অর্জনে সমর্থ হই।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ সীরাত মিশন, ঢাকা।
মূলত আমরা কোরবানির মাধ্যমে কে কতটুকু আত্মত্যাগ এবং মহান আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠতার পরিচয় দিচ্ছি, আল্লাহপাক তা প্রত্যক্ষ করেন। সুদীর্ঘকাল আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহপাকের পরম সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে নিজ হাতে কোরবানি দিয়ে চরম আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, যা ঐতিহাসিক মহা সত্য_কী অবাক, বিস্ময়কর কাণ্ড, হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে কোরবানি হয়েছিল একটি পশু। আল্লাহপাকের কী লীলাখেলা। মুসলমানদের জন্য এক বিরাট, অবিস্মরণীয় নেয়ামত, মহান আল্লাহ রাহমানুর রাহিমের প্রতি পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস, প্রেমের পরাকাষ্ঠার নিদর্শনস্বরূপ আমরা প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করে থাকি। ঘটনা এমনই_ আল্লাহপাক হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর প্রিয়তম বস্তু কোরবানি দেওয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন, তাই হজরত ইবরাহিম (আ.) বহুসংখ্যক কোরবানি করেন। এতে আল্লাহর নির্দেশমতো কাজ হয়নি। আবারও হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্ন দেখলেন, আল্লাহ জানালেন, হে ইবরাহিম, তোমার প্রিয়তম বস্তু কোরবানি করো। এ স্বপ্ন দেখে ইবরাহিম (আ.) ক্রমাগত অসংখ্য দুম্বা, মেষ ও উট কোরবানি করলেন; কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না, আবারও আদেশ হলো, হে ইবরাহিম! আমার আদেশ তো পূর্ণ করতে পারলে না, এতে হজরত ইবরাহিম (আ.) খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং ভাবতে লাগলেন, আমি তো আমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এখনো কোরবানি করতে পারিনি, করিনি, তাহলে সেটা কী? এই প্রশ্ন মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু করে দিল, আমার অহংবোধ, স্বার্থপরতা আল্লাহপাকের জন্য কোরবানি (আত্মত্যাগ) করতে পারিনি। অবশেষে তিনি কূলকিনারা না পেয়ে স্থির করলেন, সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁর প্রাণাধিক পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করবেন। এ কথা পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে জানালেন। কী বিস্ময়কর আল্লাহপ্রেম, ভীতি! কিশোর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)ও কোনো দ্বিধা না করে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হলেন এবং বললেন, 'হে পিতা! আর দেরি নয়, আপনি যে বিষয়ে বারবার আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে আদিষ্ট হচ্ছেন, তা আপনি অকপটে পালন করুন। আমাকেই কোরবানি দিন, কী দৃশ্য! হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে বেঁধে কোরবানি দিতে উদ্যত হলেন, তখনই গায়েবি আওয়াজ এল_'থামো ইবরাহিম! আমি তোমার ঐকান্তিক ত্যাগে মুগ্ধ হয়েছি, তোমার তাকওয়ায় আমি সন্তুষ্ট। এটাই আমি তোমাকে পরীক্ষা করেছিলাম। তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা-ভয়ের দৃঢ়তাই পরীক্ষা করেছিলাম, আজ তুমি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো_পাস করেছ।' হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহপাকের নামে উৎসর্গিত হয়ে প্রাণাধিক পুত্রকে ছুরি হাতে নিজ চোখের মণিকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এতটুকু অন্তর কাঁপেনি_আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আত্মত্যাগের যে আদর্শ স্থাপন করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন, হতচকিত করেছিলেন; তাই আমাদেরও উচিত ঐকান্তিক ও বিনীতভাবে আল্লাহপাকের প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবতার কল্যাণে আত্মত্যাগের শিক্ষায় জীবনকে বিলিয়ে দেওয়া।
অতএব, আজ আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ বারবার আমাদের আনন্দ নিয়ে আসছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে ধনী-গরিব ও ছোট-বড় এক কাতারে শামিল হয়ে যে উৎসবমুখর আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং যা পরিলক্ষিত হয়, তা অন্য কোনো ধর্মীয় পর্বে বা অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। আর এর মাধ্যমেই আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হয়।
পবিত্র ঈদুল আজহার শিক্ষাই হচ্ছে আত্মত্যাগে উজ্জীবিত হওয়া, মানবিক কল্যাণ সাধন করা, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সৌভ্রাতৃত্বের বাঁধনকে আরো সুদৃঢ় করা, পবিত্র ঈদুল আজহা প্রতিবছর আমাদের জন্য বয়ে আনে আত্মত্যাগের মহান বার্তা। এই পবিত্র দিনে আমরা আত্মত্যাগ ও আ@ে@@@াৎসর্গের মাধ্যমে মানবিক মূল্যেবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে_আমরা যেন নিছক লৌকিকতা, আত্মত্যাগ ও আ@ে@@@াৎসর্গের মাধ্যমে মানবিক মূল্যেবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তবে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে_আমরা যেন নিছক লৌকিকতা, আত্মম্ভরিতা, বাহাদুরি ও প্রতিযোগিতামূলক রক্তক্ষরণ ও গোশত ভক্ষণ করে মহান ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও শিক্ষাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার-আপনার কোরবানি কবুল করুন_আমরা যেন সত্যিকারভাবে 'তাক্ওয়া' অর্জনে কামিয়াব হই এবং আল্লাহরপাকের সন্তুষ্টি, নৈকট্য অর্জনে সমর্থ হই।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ সীরাত মিশন, ঢাকা।
No comments