পুঁজিবাজারে আস্থা পুনরুদ্ধার-শুভ উদ্যোগ, সতর্কতাও কাম্য
পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরুরি বৈঠক করবেন মঙ্গলবার_ এ খবর প্রচারের পরদিনই ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে এসইসি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে বিধিবদ্ধ নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমা হার কমানো, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের আইনি বিনিয়োগ সীমা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা, ব্যাংকের বিনিয়োগের বিপরীতে প্রভিশনিং ধাপে ধাপে
করা এবং শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকের গত দুই বছরের মুনাফার অংশ আবার বিনিয়োগ করার সুপারিশ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয় নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক ফের আলোচনায় বসবে এবং দুয়েকদিনের মধ্যেই সরকারের তরফে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। অপ্রদর্শিত অর্থ শর্ত ছাড়াই বিনিয়োগের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের দিনেই ব্যাংকারদের সংগঠন এবিবির নেতারাও অর্থমন্ত্রী এবং এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সবার কাছেই একটি ইতিবাচক বার্তা গেছে_ বাজার ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে। তবে বিনিয়োগকারীরা সম্ভবত সবচেয়ে বড় বার্তা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তরফে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যা যা করা দরকার সবকিছু করা হবে। প্রকৃতপক্ষে গত কয়েক মাস ধরেই পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। এ প্রত্যাশা যে যথার্থ_ সেটা পরপর দু'দিনে বাজারের প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট। ঐকমত্যের পদক্ষেপগুলো যথাযথ সূত্রবদ্ধ হলে বাজারে তার ইতিবাচক ও স্থায়ী প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তই কেবল পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে না। অর্থনীতির হাল যেমন তেজি থাকতে হবে, তেমনি শেয়ারবাজারে সম্ভাবনাময় ও ভালো ব্যবসা করা অনেক কোম্পানি থাকতে হবে। আবার সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও নিশ্চিত করতে হবে। এ বাজারে ঝুঁকি আছে এবং যাদের হাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করার মতো মূলধন থাকে তারাই কেবল এ বাজারের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে স্বল্প পুঁজির মালিক এমনকি বাজারের নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞরাও বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসে এবং চতুর লোকদের কারসাজির শিকার হয়। অনেক সময় সরকারের তরফেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাজারে আসতে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কারণেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত সদাসতর্ক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বারবার ব্যত্যয় ঘটেছে। এমনকি বাজারে বিপর্যয়ের পর তদন্ত কমিটি গঠন এবং কমিটির প্রতিবেদনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও ভুলভ্রান্তি তুলে ধরা হলেও তা কার্যকর করায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন না। বাজারে আসা হাজার হাজার নতুন বিনিয়োগকারী অজ্ঞতা কিংবা রাতারাতি ধনী হওয়ার আশায় হয়তো ভুল করেছেন। কিন্তু তাদের প্রটেকশনের দায়িত্ব ছিল সরকার এবং বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর, যা করায় অবশ্যই ব্যর্থতা ছিল প্রকট। ফের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক_ সেটা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত হবে না। বাজার স্বাভাবিক করায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে ফের অরাজকতা রোধে সংশ্লিষ্টরা সদাসতর্ক থাকবে_ এটাও কাম্য।
No comments