গৃহকর্মী নির্যাতন ভয়াবহ পাপের কারণ by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কাজের লোককে কতবার ক্ষমা করব? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপ থাকলেন। প্রশ্নকারী আবার জিজ্ঞেস করলেন, এবারও আল্লাহর রাসূল (সা.) চুপ থাকলেন; তৃতীয়বার প্রশ্নের উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার ক্ষমা করবে
সম্প্রতি গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর প্রকাশের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো অবস্থাতেই এই জঘন্য নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। গৃহকর্মীদের এভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন শুধু উদ্বেগজনকই নয়, রীতিমতো আতঙ্কের। অনেকেই বলছেন, গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর পত্রিকায় কমই প্রকাশিত হয়, এর বাইরে নির্যাতন হয় অনেক বেশি। নানা সীমাবদ্ধতায় এসব খবর পত্রিকায় আসে না। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে খবরগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। এতসব আইন, নির্দেশনা ও প্রতিবাদের পরও নির্যাতন কমছে না, বরং বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনরা বলছেন, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই এ ধরনের নির্যাতন বাড়ছে। কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমেই এ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। ইসলাম ধর্মে গৃহকর্মীদের প্রতি সদয় আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) খাদেম হজরত আনাসের (রা.) বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, 'আমি দীর্ঘ দশ বছর প্রিয়নবীর (সা.) খেদমত করেছি। তিনি আমার সম্পর্কে কখনও 'উহ্' শব্দটি বলেননি এবং কোনোদিন বলেননি এটা করোনি কেন? ওটা করোনি কেন? আমার অনেক কাজ তিনি নিজে করে দিতেন।'-মিশকাত
যে বয়সে একটি শিশুর বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সমবয়সী সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে খেলার কথা, সে সময় তারা দু'মুঠো খাবার, এক ফালি কাপড় আর সামান্য মাথা গোঁজার স্থানের বিনিময়ে অন্যের বাসায় কাজ করে। ক্ষেত্রবিশেষ তাদের কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক প্রদান করা হয় না। এদের কোনো কর্মঘণ্টা নির্ধারিত নেই। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি তারা কাজ করে। কাজের ক্ষেত্রে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেই শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালি ও শারীরিক নির্যাতন। মালিক অথবা গৃহকর্ত্রীর কোনো নির্দেশ লঙ্ঘিত হলে তো কোনো কথাই নেই। পাশবিক নির্যাতন চলতে থাকে তাদের ওপর। শিশু গৃহকর্মীকে গরম চামচ বা খুন্তি দিয়ে সেঁকা দেওয়া, বেলনা দিয়ে পেটানো, গরম পানি ঢেলে দেওয়া, বাথরুমে আটকে রাখার খবর প্রায়ই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এমনকি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। কখনও তারা বাড়ি ফিরে লাশ হয়ে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সচিব, এমপি, পুলিশ, সামরিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং চিত্রনায়িকার বাড়িতেও ঘটছে গৃহকর্মী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অনেকেই গৃহকর্মীদের দাস-দাসী মনে করে। মনে রাখতে হবে, গৃহকর্মীরা দাস-দাসী নয়। ইসলাম চিরতরে দাসপ্রথার বিলুপ্ত সাধন করেছে। গৃহকর্মীরা আমাদের মতোই স্বাধীন মানুষ, সব মানবিক অধিকারে সমান অংশীদার। ইসলাম বলেছে, 'তোমরা নিজেরা যা খাবে-পরবে, কাজের লোকদেরও তাই খেতে-পরতে দেবে। তাদের হক ও প্রাপ্যের ব্যাপারে অবহেলাকে জুলুম বলা হয়েছে।'
সন্দেহ নেই, গৃহকর্মীদের নির্যাতন ও অন্যায়-আচরণ জঘন্য অপরাধ। জুলুম ও জুলুমকারীর পরিণতি সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের বহু আয়াতে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হাদিসেও এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। গৃহকর্মী বা অধীন লোকদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে বান্দার হক বিনষ্টকরণ, ইজ্জত ও সম্মানহানির অভিযোগ সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত। দুনিয়ার জগতে জবাবদিহিতা, বিচারিক কার্যক্রম ও শাস্তি হতে 'ক্ষমতা' বলে রেহাই পেলেও পরকালে এসব নির্যাতনের বিচার অবশ্যই হবে এবং পরিপূর্ণ প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। কিয়ামতের মাঠের প্রতিশোধ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'অবশ্যই কিয়ামতের দিন হকদারকে তার প্রাপ্য হক পরিশোধ করা হবে। এমনকি শিংবিশিষ্ট বকরি থেকে শিংবিহীন বকরির প্রতিশোধ নেওয়া হবে।' -মুসলিম
নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালার যে কোনো শাস্তিই অনেক কঠিন ও খুবই ভয়াবহ। তাই এর থেকে বাঁচার জন্য করণীয় হলো, অধীন লোকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন পরিত্যাগ করা। ইসলাম গৃহকর্মীদের সঙ্গে কঠোরতার পরিবর্তে স্নেহ, অনুগ্রহ, সহমর্মিতা ও উত্তম ব্যবহারের শিক্ষা দিয়েছে। হাদিস শরিফে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'দয়াবান ব্যক্তিদের প্রতি আল্লাহতায়ালা দয়া করেন। অতএব তোমরা জমিনবাসীর প্রতি দয়া কর, আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।' -তিরমিজি ও আবু দাউদ
ইসলাম কঠোরতাকে মারাত্মকভাবে নিন্দা করেছে এবং অকল্যাণের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, 'আল্লাহ কোমল। তিনি কোমলতাকে ভালোবাসেন।' আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে না।' -আবু দাউদ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন : 'যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে স্বীয় চাকর-চাকরানীকে প্রহার করবে, কিয়ামতের দিন তাকে তার পরিণাম দেওয়া হবে' [বায়হাকি]। হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন : 'তোমাদের থালা-বাটি তোমাদের চাকর-চাকরানীর হাতে ভেঙে গেলে তাদের মারধর করবে না। কেননা তোমাদের আয়ুষ্কাল যেমন অনির্ধারিত, থালা-বাটিরও তদ্রূপ।'-দায়লামি
গৃহপরিচারিকা নির্যাতন এড়াতে কাজের লোকদের ত্রুটি-বিচ্যুতির ব্যাপারে শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমার দিককে প্রাধান্য দেওয়া। ক্ষমাশীলদের জীবনকল্যাণ, বরকত ও পুণ্যতায় ভরে ওঠে। ক্ষমা করা মুত্তাকির পরিচয়। ক্ষমা দুনিয়া-আখিরাতে মুক্তির চাবিকাঠি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কাজের লোককে কতবার ক্ষমা করব? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপ থাকলেন। প্রশ্নকারী আবার জিজ্ঞেস করলেন, এবারও আল্লাহর রাসূল (সা.) চুপ থাকলেন; তৃতীয়বার প্রশ্নের উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার ক্ষমা করবে।' -তিরমিজি ও আবু দাউদ
muftianaet@gmail.com
যে বয়সে একটি শিশুর বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সমবয়সী সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে খেলার কথা, সে সময় তারা দু'মুঠো খাবার, এক ফালি কাপড় আর সামান্য মাথা গোঁজার স্থানের বিনিময়ে অন্যের বাসায় কাজ করে। ক্ষেত্রবিশেষ তাদের কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক প্রদান করা হয় না। এদের কোনো কর্মঘণ্টা নির্ধারিত নেই। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি তারা কাজ করে। কাজের ক্ষেত্রে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেই শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালি ও শারীরিক নির্যাতন। মালিক অথবা গৃহকর্ত্রীর কোনো নির্দেশ লঙ্ঘিত হলে তো কোনো কথাই নেই। পাশবিক নির্যাতন চলতে থাকে তাদের ওপর। শিশু গৃহকর্মীকে গরম চামচ বা খুন্তি দিয়ে সেঁকা দেওয়া, বেলনা দিয়ে পেটানো, গরম পানি ঢেলে দেওয়া, বাথরুমে আটকে রাখার খবর প্রায়ই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এমনকি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। কখনও তারা বাড়ি ফিরে লাশ হয়ে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সচিব, এমপি, পুলিশ, সামরিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং চিত্রনায়িকার বাড়িতেও ঘটছে গৃহকর্মী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অনেকেই গৃহকর্মীদের দাস-দাসী মনে করে। মনে রাখতে হবে, গৃহকর্মীরা দাস-দাসী নয়। ইসলাম চিরতরে দাসপ্রথার বিলুপ্ত সাধন করেছে। গৃহকর্মীরা আমাদের মতোই স্বাধীন মানুষ, সব মানবিক অধিকারে সমান অংশীদার। ইসলাম বলেছে, 'তোমরা নিজেরা যা খাবে-পরবে, কাজের লোকদেরও তাই খেতে-পরতে দেবে। তাদের হক ও প্রাপ্যের ব্যাপারে অবহেলাকে জুলুম বলা হয়েছে।'
সন্দেহ নেই, গৃহকর্মীদের নির্যাতন ও অন্যায়-আচরণ জঘন্য অপরাধ। জুলুম ও জুলুমকারীর পরিণতি সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের বহু আয়াতে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হাদিসেও এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। গৃহকর্মী বা অধীন লোকদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে বান্দার হক বিনষ্টকরণ, ইজ্জত ও সম্মানহানির অভিযোগ সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত। দুনিয়ার জগতে জবাবদিহিতা, বিচারিক কার্যক্রম ও শাস্তি হতে 'ক্ষমতা' বলে রেহাই পেলেও পরকালে এসব নির্যাতনের বিচার অবশ্যই হবে এবং পরিপূর্ণ প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। কিয়ামতের মাঠের প্রতিশোধ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'অবশ্যই কিয়ামতের দিন হকদারকে তার প্রাপ্য হক পরিশোধ করা হবে। এমনকি শিংবিশিষ্ট বকরি থেকে শিংবিহীন বকরির প্রতিশোধ নেওয়া হবে।' -মুসলিম
নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালার যে কোনো শাস্তিই অনেক কঠিন ও খুবই ভয়াবহ। তাই এর থেকে বাঁচার জন্য করণীয় হলো, অধীন লোকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন পরিত্যাগ করা। ইসলাম গৃহকর্মীদের সঙ্গে কঠোরতার পরিবর্তে স্নেহ, অনুগ্রহ, সহমর্মিতা ও উত্তম ব্যবহারের শিক্ষা দিয়েছে। হাদিস শরিফে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'দয়াবান ব্যক্তিদের প্রতি আল্লাহতায়ালা দয়া করেন। অতএব তোমরা জমিনবাসীর প্রতি দয়া কর, আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।' -তিরমিজি ও আবু দাউদ
ইসলাম কঠোরতাকে মারাত্মকভাবে নিন্দা করেছে এবং অকল্যাণের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, 'আল্লাহ কোমল। তিনি কোমলতাকে ভালোবাসেন।' আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে না।' -আবু দাউদ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন : 'যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে স্বীয় চাকর-চাকরানীকে প্রহার করবে, কিয়ামতের দিন তাকে তার পরিণাম দেওয়া হবে' [বায়হাকি]। হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন : 'তোমাদের থালা-বাটি তোমাদের চাকর-চাকরানীর হাতে ভেঙে গেলে তাদের মারধর করবে না। কেননা তোমাদের আয়ুষ্কাল যেমন অনির্ধারিত, থালা-বাটিরও তদ্রূপ।'-দায়লামি
গৃহপরিচারিকা নির্যাতন এড়াতে কাজের লোকদের ত্রুটি-বিচ্যুতির ব্যাপারে শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমার দিককে প্রাধান্য দেওয়া। ক্ষমাশীলদের জীবনকল্যাণ, বরকত ও পুণ্যতায় ভরে ওঠে। ক্ষমা করা মুত্তাকির পরিচয়। ক্ষমা দুনিয়া-আখিরাতে মুক্তির চাবিকাঠি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কাজের লোককে কতবার ক্ষমা করব? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপ থাকলেন। প্রশ্নকারী আবার জিজ্ঞেস করলেন, এবারও আল্লাহর রাসূল (সা.) চুপ থাকলেন; তৃতীয়বার প্রশ্নের উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার ক্ষমা করবে।' -তিরমিজি ও আবু দাউদ
muftianaet@gmail.com
No comments