শ্রদ্ধাঞ্জলি-ভূপেন হাজারিকা :এক কিংবদন্তির নাম by শেখ সাদী খান
'এই শিল্পীই তো মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মানুষ ও মানবতার কথা বলার জন্য জেল খেটেছেন। কিন্তু কখনও পিছপা হননি। 'মানুষ মানুষের জন্যে', 'গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা', 'নিঃশব্দ হাহাকার'_ এই জাগরণী গানগুলো আমাকে খুব নাড়া দিত। এ গানগুলো শুনলে অনুপ্রাণিত হতাম। তখন যৌবন ছিল বলেই কি-না কে জানে! গানগুলোর কথা সহজেই হৃদয় ছুঁয়ে যেত'
যে মানুষটি আরেকজন মানুষকে শিখিয়েছিলেন_ 'তুমি মানুষ'। মানবতার গড়নে গড়া অনন্য মনের এমনই এক মানুষ ছিলেন ভূপেন হাজারিকা। নিষ্ঠুরতা আর নির্দয়তার বর্ম ভেদ করে তিনি তুলে এনে দেখিয়েছিলেন মনুষ্যত্বের অপার ভূমি। আজ (গতকাল শনিবার) বিকেলে তার মৃত্যুর খবর শুনতেই মনের ভেতর শূন্যতা অনুভব করলাম।
ভূপেন হাজারিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় আলমগীর কবির পরিচালিত 'সীমানা পেরিয়ে' চলচ্চিত্রে কাজ করার সময়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকের কথা। তখন ছবিটির আবহসঙ্গীতের কাজ করছিলাম। এ ছবির সব গানের রেকর্ডিং হয়েছে কলকাতার একটি স্টুডিওতে। তবে আবহসঙ্গীতের কাজ হয়েছিল ঢাকায়। তখন আমি তরুণ। তখন তার মতো একজন গুণী আর বড়মাপের মানুষের সানি্নধ্য পাওয়া ছিল আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। যখন কাজ করছিলাম তখন কোন দৃশ্যে কোন সঙ্গীতটি ব্যবহার করলে ভালো হতে পারে সে বিষয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে তার কথাই বেশি শুনতাম। মনে মনে ভাবতাম, এই শিল্পীই তো মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মানুষ ও মানবতার কথা বলার জন্য জেল খেটেছেন। কিন্তু কখনও পিছপা হননি। 'মানুষ মানুষের জন্যে', 'গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা', 'নিঃশব্দ হাহাকার'_ এই জাগরণী গানগুলো আমাকে খুব নাড়া দিত। এ গানগুলো শুনলে অনুপ্রাণিত হতাম। তখন যৌবন ছিল বলেই কি-না কে জানে! গানগুলোর কথা সহজেই হৃদয় ছুঁয়ে যেত। তার লেখনীতে যেমন ধার ছিল, তেমনই ছিল কণ্ঠের মায়াটান। এর চেয়েও বড় বিষয় ছিল_ তার মানসিক স্থিতিশীলতা। কখনও তিনি হারতেন না।
ভূপেন হাজারিকার সঙ্গে আমার সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় কলকাতার লিটন হোটেলে। ১৯৮৫ অথবা ১৯৮৬ সালের কথা বলছি। ওই বছর দাদার (ভূপেন হাজারিকা) কাছে 'সুখের সন্ধানে' নামের নতুন একটি চলচ্চিত্রের গান গাওয়ানোর জন্য গিয়েছিলাম। সব শুনে নিজেই হোটেলে এসেছিলেন। কিন্তু তরুণ মনের এই মানুষটিকে ততদিনে নানা রোগব্যাধি জড়িয়ে ফেলেছিল। তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। এ কারণে গাইতে পারেননি। তবে গানের প্রতি তার আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল না।
মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় ভজন 'বৈষ্ণব জন' সুর করেছিলেন ভূপেন হাজারিকা। গান লেখা, সুর করা ও গাওয়ার পাশাপাশি কবি, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ৮৬ বছরের জীবনে ভক্তের অপরিসীম ভালোবাসার পাশাপাশি ভূপেন হাজারিকা পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ও ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণ। ১৯৭৬ সালে 'চামেলি মেমসাহেব' ছবির জন্য সেরা সঙ্গীত পরিচালক শাখায় ভারতের জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। তবে জীবনের শেষ দিনগুলো অসুস্থতার বেড়াজালেই বন্দি ছিলেন এই মানবতাবাদী শিল্পী।
ভূপেন হাজারিকার প্রস্থানে বিশ্বসঙ্গীতের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। নতুন একজন ভূপেন হাজারিকা আর কখনও তৈরি হবে বলে মনে হয় না। তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তি। তার চলে যাওয়ায় শুধু সঙ্গীত নয়; মানুষ, মনুষ্যত্ব ও মানবতার জয়গান গাওয়ার অন্যতম এক পথিকৃৎকে হারাল সারাবিশ্ব। এ ক্ষতি সত্যিই অপূরণীয়। আমাকে কিংবা আপনাকে আপন করে নিতে পারে এমন মানুষ আর কোথায় পাব?
শেখ সাদী খান :সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব
ভূপেন হাজারিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় আলমগীর কবির পরিচালিত 'সীমানা পেরিয়ে' চলচ্চিত্রে কাজ করার সময়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকের কথা। তখন ছবিটির আবহসঙ্গীতের কাজ করছিলাম। এ ছবির সব গানের রেকর্ডিং হয়েছে কলকাতার একটি স্টুডিওতে। তবে আবহসঙ্গীতের কাজ হয়েছিল ঢাকায়। তখন আমি তরুণ। তখন তার মতো একজন গুণী আর বড়মাপের মানুষের সানি্নধ্য পাওয়া ছিল আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। যখন কাজ করছিলাম তখন কোন দৃশ্যে কোন সঙ্গীতটি ব্যবহার করলে ভালো হতে পারে সে বিষয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে তার কথাই বেশি শুনতাম। মনে মনে ভাবতাম, এই শিল্পীই তো মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মানুষ ও মানবতার কথা বলার জন্য জেল খেটেছেন। কিন্তু কখনও পিছপা হননি। 'মানুষ মানুষের জন্যে', 'গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা', 'নিঃশব্দ হাহাকার'_ এই জাগরণী গানগুলো আমাকে খুব নাড়া দিত। এ গানগুলো শুনলে অনুপ্রাণিত হতাম। তখন যৌবন ছিল বলেই কি-না কে জানে! গানগুলোর কথা সহজেই হৃদয় ছুঁয়ে যেত। তার লেখনীতে যেমন ধার ছিল, তেমনই ছিল কণ্ঠের মায়াটান। এর চেয়েও বড় বিষয় ছিল_ তার মানসিক স্থিতিশীলতা। কখনও তিনি হারতেন না।
ভূপেন হাজারিকার সঙ্গে আমার সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় কলকাতার লিটন হোটেলে। ১৯৮৫ অথবা ১৯৮৬ সালের কথা বলছি। ওই বছর দাদার (ভূপেন হাজারিকা) কাছে 'সুখের সন্ধানে' নামের নতুন একটি চলচ্চিত্রের গান গাওয়ানোর জন্য গিয়েছিলাম। সব শুনে নিজেই হোটেলে এসেছিলেন। কিন্তু তরুণ মনের এই মানুষটিকে ততদিনে নানা রোগব্যাধি জড়িয়ে ফেলেছিল। তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। এ কারণে গাইতে পারেননি। তবে গানের প্রতি তার আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল না।
মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় ভজন 'বৈষ্ণব জন' সুর করেছিলেন ভূপেন হাজারিকা। গান লেখা, সুর করা ও গাওয়ার পাশাপাশি কবি, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ৮৬ বছরের জীবনে ভক্তের অপরিসীম ভালোবাসার পাশাপাশি ভূপেন হাজারিকা পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ও ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণ। ১৯৭৬ সালে 'চামেলি মেমসাহেব' ছবির জন্য সেরা সঙ্গীত পরিচালক শাখায় ভারতের জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। তবে জীবনের শেষ দিনগুলো অসুস্থতার বেড়াজালেই বন্দি ছিলেন এই মানবতাবাদী শিল্পী।
ভূপেন হাজারিকার প্রস্থানে বিশ্বসঙ্গীতের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। নতুন একজন ভূপেন হাজারিকা আর কখনও তৈরি হবে বলে মনে হয় না। তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তি। তার চলে যাওয়ায় শুধু সঙ্গীত নয়; মানুষ, মনুষ্যত্ব ও মানবতার জয়গান গাওয়ার অন্যতম এক পথিকৃৎকে হারাল সারাবিশ্ব। এ ক্ষতি সত্যিই অপূরণীয়। আমাকে কিংবা আপনাকে আপন করে নিতে পারে এমন মানুষ আর কোথায় পাব?
শেখ সাদী খান :সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব
No comments