সিএনজির দাম বাড়ছে না, বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ by অরুণ কর্মকার
যানবাহনের পরিবেশবান্ধব ও মূল্যসাশ্রয়ী জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম আপাতত বাড়ছে না। সরকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর যে উদ্যোগ ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে সারা দেশের সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতাধীন বিতরণ এলাকার সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্রগুলো জানায়, ১১ নভেম্বর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বিভিন্ন মহল থেকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন সিএনজির দাম বাড়ালে সিএনজিচালিত বেবিট্যাক্সিসহ গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ না করে সরকারের কোনো উপায় থাকবে না। তা ছাড়া সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও রূপান্তর কারখানার মালিক সমিতি এবং ব্যবহারকারীরা এর দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার। দাম বাড়ালে মালিক সমিতি ধর্মঘটে যেতে পারে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, জ্বালানি তেলে যেমন সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, সিএনজি তো তেমন নয়। দেশে বর্তমানে মোট ব্যবহূত গ্যাসের ৫ শতাংশ সিএনজি খাতে ব্যবহূত হচ্ছে। এর বর্তমান দামও হ্রাসকৃত নয়। কাজেই এর দাম এখন না বাড়ালেও সরকারের কোনো সমস্যা নেই।
তবে তেল, সিএনজিসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণ নিয়ে সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৯ নভেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সিএনজির দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, জ্বালানি তেলের দাম আপাতত বাড়ানো হবে না। কিন্তু এর পরদিনই, ১০ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। আবার অর্থমন্ত্রী সিএনজির দাম বাড়িয়ে ডিজেলের পর্যায়ে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলেও সরকার সিএনজির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ স্থগিত করেছে।
সিএনজি ব্যবহারের শুরুতে এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি ঘনমিটার সাড়ে আট টাকা। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবার বাড়িয়ে তা ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়। এই সরকারের সময় গত ১২ মে দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত ১৯ অক্টোবর আরও একবার দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার করা হয় ৩০ টাকা।
এর পরও দেশে সিএনজির দাম প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে কম। দামের বিবেচনায় বাংলাদেশে যেখানে অকটেনের তুলনায় সিএনজি প্রায় ৭০ শতাংশ এবং ডিজেলের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ সাশ্রয়ী, সেখানে ভারতে এই সাশ্রয়ের হার যথাক্রমে ৫৮ ও ২৮ শতাংশ।
সিএনজির দাম বাড়ানো হবে কি না—জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির শুনানি: সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির পিডিবির প্রস্তাবে গ্রাহক পর্যায়ে দুই দফায় দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। প্রথম দফায় ৯ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুনানিতে প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য শুনেছে বিইআরসি।
দেশের সবগুলো বিতরণ কোম্পানির (পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি, ওজোপাডিকো) সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গতকালের ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ডেসকো, আরইবি ও ওজোপাডিকোর গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কে শুনানি হয়েছে। ২৪ নভেম্বর ডিপিডিসির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
বিইআরসি সূত্র জানায়, সবগুলো বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর শুনানি শেষে সারা দেশের সাধারণ গ্রাহকের জন্য একযোগে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হবে। ডিসেম্বর মাস থেকে ওই বর্ধিত দাম কার্যকর হতে পারে।
No comments