বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও কমেছে লেনদেন
আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবারও দরপতন দিয়ে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত অবশ্য দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটু ইতিবাচক খবর ভীষণভাবে আস্থাহীন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি করলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তা আর সেভাবে কার্যকর হচ্ছে না। ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ ধারাবাহিকতাতেই প্রথমে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং পরে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছিল।
কিন্তু বাস্তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। বিএবি পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়ে পরে তা এক হাজার কোটি টাকা হবে বলেছে। ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এ ব্যাপারে এসইসির সাবেক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যদি বাজারে বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে এত আওয়াজ দেওয়ার তো কিছু নেই। এ ধরনের ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতি পুঁজিবাজারের সামগ্রিক ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ তাঁর মতে, ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে সক্রিয় রয়েছে কি না, তা লেনদেনের ধরন দেখেই বোঝা সম্ভব। অযথা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রত্যাশা সৃষ্টি করা ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) তদারকির মধ্যে থাকা উচিত।
বাজার-পরিস্থিতি: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে মূল্যসূচক ৩৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর সূচক সামান্য বাড়লেও আবার কমতে শুরু করে। অবশ্য দুপুর ১২টার পর বাজার ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হয়। শেষ পর্যন্ত ডিএসই সূচক ৮১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৫৫৫ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৯ কোটি টাকা কম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক গতকাল ৩২১ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৭৯৬ পয়েন্ট হয়েছে। এই স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল ৩৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে দুই কোটি টাকা বেশি।
বৈঠক: গতকাল বিকেলে এসইসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএবির নেতারা। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, আগামী মাসের মধ্যে ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল’ (এসএমএসএফ) থেকে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। এটি হবে একটি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, যার প্রাথমিক আয়তন হবে এক হাজার কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে তা পাঁচ হাজার কোটি টাকা করা হবে।
মজুমদার আরও জানান, শিগগির তাঁরা একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন ও এই ফান্ড অনুমোদনের জন্য এসইসিতে আবেদন করবেন। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনসহ প্রাথমিক কাজ শেষ করতে চার সপ্তাহের মতো লাগবে। তবে নভেম্বরের মধ্যে ওই তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করা যাবে।
ব্যাংকগুলো তাদের দায়ের ১০ শতাংশ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে বলেও দাবি করেন বিএবির চেয়ারম্যান। তিনি অবশ্য বলেন যে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রায় ২০টির মতো ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
পৃথক দুটি কমিটি: পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিনির্দেশিকা এবং ইনসাইডার লেনদেন বা সুবিধাভোগী ব্যবসাসংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এসইসির নিয়মিত এক সভায় গতকাল মঙ্গলবার এ ব্যাপারে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের এ কমিটি বিদ্যমান আইনের ত্রুটি-দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সংশোধন বা প্রয়োজনে নতুন ধারা সংযোজনের সুপারিশ করবে। এর ভিত্তিতেই আইন দুটির সংশোধন-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে এসইসি। এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিনির্দেশিকা সংশোধনসংক্রান্ত কমিটিতে থাকবেন এসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, এ টি এম তারিকুজ্জামান ও পরিচালক মাহমুদুল হক। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫ সংশোধন কমিটিতে ফরহাদ আহমেদ ও তারিকুজ্জামানের সঙ্গে থাকবেন আরেক নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম। উভয় কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন ফরহাদ আহমেদ।
আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুশাসন নীতিনির্দেশিকা এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সুবিধাভোগী ব্যবসাসংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ জমা দিতে হবে।
No comments