বিজয় সরণির পাশ দিয়ে মেট্রোরেল হলে বিমান অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে : সংসদে পরিকল্পনামন্ত্রী

সংসদ কাজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বলেছেন, প্রস্তাবিত মেট্রোরেল বিজয় সরণির পাশ দিয়ে স্থাপন করলে তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য আশঙ্কাজনক কমে যাবে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য কমে গেলে বিমানবন্দরের বিভিন্ন বিমানের অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। জাতীয় পার্টির মো. মুজিবুল হকের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।মুজিবুল হক মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, প্রস্তাবিত মেট্রোরেল বিজয় সরণির পাশ দিয়ে স্থাপন করলে কী কী সমস্যা হবে? জবাবে এ কে খন্দকার বলেন, ১৯৯৮ সালে তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকার তেজগাঁও বিমানবন্দরকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে বিমানবাহিনীকে হস্তান্তর করে।


এই বিমানবন্দর থেকে বিমানবাহিনী এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে সব ধরনের হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, জেটবিমান এবং বড় পরিবহন বিমান (৪ ইঞ্জিনবিশিষ্ট সি-১৩০) পরিচালনা করে থাকে। মেট্রোরেল বিজয় সরণির পাশ দিয়ে স্থাপন করা হলে বিমানের ‘অ্যাপ্রচ পাথে’ আড়াআড়িভাবে একটি ‘ওয়াল অবস্ট্রাকশন’ হবে। মেট্রোরেলের উচ্চতার কারণে বিমান অবতরণকালে ল্যান্ডিং অ্যাপ্রচের উচ্চতা বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রানওয়ের প্রথম ভাগের বড় অংশ বাদ দিয়ে অবতরণ করতে হবে—যা বিমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মন্ত্রী আরও জানান, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের কাছ দিয়ে মেট্রোরেলের রুট গেলে শব্দদূষণ বাড়বে। এর ফলে যে কম্পনের সৃষ্টি হবে তাতে নভোথিয়েটার ভবনে প্রভাব ফেলবে। বিজয় সরণির মধ্যবর্তী আইল্যান্ড দিয়ে মেট্রোরেলের রুট গেলে ফার্মগেট মোড় নেয়ার সময় দুটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ছয়তলা ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। বিজয় সরণির পূর্বপ্রান্ত ভিআইপি রোডসহ ৪টি রাস্তার সংযোগস্থল হওয়ায় এখানে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এ রোডের আইল্যান্ডের ওপর দিয়ে রেলের রুট গেলে ব্যবহারযোগ্য রাস্তা কমে যাবে, ফলে যানজট আরও বেড়ে যাবে।
যুগোপযোগী প্রতিরক্ষা নীতির পদক্ষেপ : নুরুল ইসলাম সুজনের (পঞ্চগড়-২) এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ কাজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বলেন, বর্তমান সরকার একটি যুগোপযোগী প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি কর্তৃক জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির খসড়া চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, যা শিগগিরই সম্পন্ন হবে।
ডিসেম্বরে ৪০ বিদেশিকে সম্মাননা : বজলুল হক হারুণের (ঝালকাঠি-১) এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবিএম তাজুল ইসলাম জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবদান রাখার জন্য আগামী ১০ ডিসেম্বর ৪০ ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটি প্রথম পর্যায়ে ১২১ ব্যক্তি ও ৫টি সংগঠনকে সম্মাননা দেয়ার জন্য সুপারিশ করে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, দার্শনিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন তাদের সম্মাননা দেয়ার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা বৈঠকে গঠিত কমিটি প্রথম পর্যায়ে যে সুপারিশ করে তার খসড়া তালিকাটি শিগগিরই মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। গত ১৯ জুলাই সভায় মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি নাগরিকের অবদান ও গুরুত্বের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমিকভাবে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ শিরোনামে সম্মাননা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্প্রতি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ (মরণোত্তর) দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ১০ ডিসেম্বর ৪০ ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা দেয়ার বিষয়ে সরকারে পরিকল্পনা রয়েছে।
জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের হালনাগাদ তথ্য নেই : মো. শাহরিয়ার আলমের (রাজশাহী-৬) এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জানান, মুক্তিবার্তা তালিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার জন। আর গেজেটে এ যাবত্ প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ১৩৪ জন। বর্তমানে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষিত নেই। তবে বর্তমানে সব মুক্তিযোদ্ধার ডেটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। ডেটাবেজ তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
ট্রাভেল এজেন্টের কাছে বিমানের পাওনা ১৯৯ কোটি টাকা : জয়নাল আবদিনের এক প্রশ্নের জবাবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টের কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৯৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ।
নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের জানান, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ৩০টি উড়োজাহাজ চলাচল করে। বেসরকারি বিমান সংস্থার মধ্যে জিএমজি এয়ারলাইন্সের নয়টি, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাতটি ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি উড়োজাহাজ চলাচল করে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে সরকারে শতভাগ মালিকানায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১২টি উড়োজাহাজ চলাচল করে। এর মধ্যে বিমানের নিজস্ব আটটি এবং লিজ নেয়া চারটি। মন্ত্রী জানান, চলতি বছরে দুটিসহ ২০২০ সালের মধ্যে বিমানের বহরে দশটি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ যুক্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.