স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড নভেম্বরে বিনিয়োগ শুরু করবে : শেয়ারবাজারে এখন মহাদুর্যোগ চলছে : বিএবি প্রেসিডেন্ট

বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ (এসএমএসএফ) আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করবে। গতকাল এসইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ফান্ডটি গঠনে আমরা এসইসির কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি। আমরাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফান্ডটি বাজারে নিয়ে আসতে চাই। তবে এর জন্য কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।


সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী নভেম্বরের মধ্যে ফান্ডটি লেনদেন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।বিএবি প্রেসিডেন্ট এ সময় বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে মহাদুর্যোগ চলছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছি। ৪ মাস ধরে শেয়ারবাজারে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলোও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে। কিছুটা ধীর গতিতে হলেও ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বেচাকেনা করছে বলে জানান তিনি।
ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলেও তার প্রভাব নেই কেন—জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ শুরু করেছে। তবে শুধু কিনলে তো হবে না, বিক্রিও করতে হবে। ব্যাংকগুলো যদি শুধু শেয়ার কেনে এতে বাজার আকাশে উঠে যাবে। কিন্তু আমরা এ ধরনের বাজার চাই না। আমরা একটি স্থিতিশীল মার্কেট চাই। ব্যাংকগুলো ৪৫ হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ‘স্লো অ্যান্ড স্টিডি’ নীতি গ্রহণ করেছে।
স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (এসএমএসএফ) বিষয়ে বিএবি প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি একটি নতুন সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। বর্তমানে যেসব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোর বড় ফান্ড পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সেজন্য নতুন একটি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করা হবে। আর এজন্য শিগগিরই এসইসিতে কোম্পানি অনুমোদনে আবেদন করা হবে। তিনি আরও বলেন, এসএমএসএফ একটি ক্লোজ এন্ড (মেয়াদি) মিউচুয়াল ফান্ড হিসেবে কাজ করবে। এটির মেয়াদ হবে কমপক্ষে ১০ বছর। প্রাথমিকভাবে এটি ক্লোজ এন্ড হলেও ভবিষ্যতে এসইসির সঙ্গে আলোচনা করে এটিকে ওপেন অ্যান্ড ফান্ডেও রূপান্তর করা হতে পারে। ফান্ডের অর্থের জোগানের বিষয়ে বলেন, আমরা এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি। ব্যাংকগুলোর কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এরই মধ্যে ১০টি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি করে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভায় টাকা দেয়ার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। তিনি বলেন, ফান্ডের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি অতিরিক্ত ফান্ড হিসেবে কাজ করবে। প্রাথমিকভাবে ফান্ডটি ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে কাজ শুরু করবে; পর্যায়ক্রমে তা ৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে।
বাজার পরিস্থিতি : এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় ডিএসই সাধারণ সূচক বেড়েছে ৮১ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৬টির দাম বেড়েছে, কমেছে ৫২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল চারটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
তবে সূচক বাড়লেও আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। আগের দিনের তুলনায় ৬৯ কোটি টাকা কমে দিনশেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সক্রিয় না থাকার কারণে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। অথচ চলতি সপ্তাহ থেকে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করার কথা ছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। পাঁচ মিনিটের মাথায় সূচক ৩৬ পয়েন্ট কমে যায়। তবে ১৫ মিনিটে সূচক বাড়ে ৪ পয়েন্ট। এরপর আবারও সূচকের তীর নিম্নমুখী হয়ে ২৫ মিনিটে ৩৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। আধাঘণ্টা পর সূচকের তীর ঊর্ধ্বমুখী হয়। দুপুর ১২টায় সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে। এভাবেই ওঠানামা করতে থাকে সূচক। দুপুর ১২টার পর থেকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়, যা সারাদিনই অব্যাহত থাকে।

No comments

Powered by Blogger.