দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেকারত্বের বোঝা-তীব্র বেকারত্বের সমাধান কল সেন্টার

কদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে বেকারত্বের বোঝা। কলম্বিয়ার কফি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ম্যানিজেলস শহরটি যখন এমন অনিশ্চয়তায় তখনই ধরা দিল সম্ভাবনা। তীব্র বেকারত্বের অভূতপূর্ব সমাধান নিয়ে এল কল সেন্টার। কফির শহরে নতুন এ স্বপ্ন নিয়ে এলেন মেয়র জোয়ান লিয়ানো। তিন লাখ ৮০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত কলম্বিয়ার কালদাস জেলার ম্যানিজেলস শহরটি রাজধানী বোগোতা থেকে ১৭৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। অনেক বহুজাতিক কম্পানির উপস্থিতিতে কফির শহরটি এখন কল সেন্টারের শহরে পরিণত হয়েছে।


এতে বেকার তরুণ-তরুণীরাও পাচ্ছে চাকরি। এ অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য কফির বাজারকে চাঙ্গা রাখতে ম্যানিজেলস কর্তৃপক্ষ অনেক কিছুই করেছে; কিন্তু কাজ হয়নি। শহরের মেয়র জোয়ান লিয়ানো বলেন, 'আমরা কফির উৎপাদন বাড়াতে বহু চেষ্টা করেছি। কফির মান বাড়ানোর চেষ্টারও কমতি রাখিনি; কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসেনি। ইতিমধ্যে ব্রাজিল বিশ্বের শীর্ষ কফি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান আরো সুদৃঢ় করে নিয়েছে।'
২০০৫ সালে ম্যানিজেলসে বেকারত্ব ২০ শতাংশে পেঁৗছে। এতে বেকারত্ব বৃদ্ধির দিক থেকে কলম্বিয়ার তিনটি জেলার অন্যতম হিসেবে পরিচিতি পায় ম্যানিজেলস। এ অবস্থায় লিয়ানো শহরের জন্য একেবারে নতুন একটি বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করলেন। তিনি ভারতের মডেলে আউটসোর্সিং ব্যবসার চিন্তা করলেন। যে বাণিজ্যে ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী পিপল কন্টাক্ট নামে একটি অবকাঠামো তৈরি করলেন, যা সংযুক্ত করে দেওয়া হলো সিটি হলের সঙ্গে। এবার বিভিন্ন কম্পানিকে কল সেন্টার সেবা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলো। এতে সাড়া পাওয়া গেল। স্পেনিশ ভাষায় কল সেন্টার সেবা দিতে কিছু বহুজাতিক কম্পানি এগিয়ে এল।
'আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া কম্পানিগুলোকে আমরা কর রেয়াত সুবিধা দিলাম, কল সেন্টারের অফিস স্থাপনের জন্য পুরোপুরি সজ্জিত অফিস দেওয়া হলো। এর পাশাপাশি আমরা তাদের দক্ষ কর্মীও সরবরাহ করি। যাদের অনেকে স্পেনিশ ও ইংরেজি_দুই ভাষায়ই দক্ষ ছিল।' বললেন পিপল কন্টাক্টের পরিচালক জোয়ান কারডোনা। যারা প্রায় এক ডজন কল সেন্টার পরিচালনার জন্য ৩০ জন লোক নিয়োগ করে। এর পর সরকারের তরফ থেকে ম্যানিজেলসের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় টেলিমার্কেটিং বাণিজ্যের ওপর। এভাবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোয় দক্ষ কর্মী সরবরাহ করা হয়। তারাও সুযোগটি লুফে নেয়। স্পেনিশ প্রতিষ্ঠান ডিজিট্যাক্সএবং এমার্জিয়া যথাক্রমে চার হাজার এবং দুই হাজার ১০০ কর্মী নিয়োগ দেয়। শহর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মাত্র চার বছরে এ খাতে সৃষ্টি হয় ৯ হাজার ৮০০ চাকরি। শুধু তা-ই নয়, এতে শহরের বেকারত্ব ২০ শতাংশ থেকে কমে এখন ১২ শতাংশে নেমেছে। কল সেন্টারে চাকরিপ্রাপ্তদের ৭০ শতাংশ নারী। যাদের অনেকের স্বামী আছে এবং তারা কফি চাষ থেকে চাকরিচ্যুত হয়। স্থানীয় আইন অনুযায়ী ম্যানিজেলস শহরে ৩০০ ডলার মাসিক বেতনে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করা যায়। 'এখানকার মানুষ কাজ করতে চায়। এ জন্য সত্যিই তারা চেষ্টা করেছে এবং আমাদের সাফল্য দারুণ।' বললেন, এমার্জিয়ার পরিচালক বেনজামিন ক্যাস্ট্রো।
লিয়ানো এখন তাঁর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাবছেন। নতুন বাণিজ্য আকর্ষণের জন্য তিনি দুই ভাষায় দক্ষ একদল জনশক্তি তৈরি করতে চান। তিনি বলেন, সেলস সার্ভিসের বাজারে মাত্র ৪ শতাংশ স্পেনিশ ভাষার। বাকি পুরোটাই দখল করে আছে ইংরেজি। স্থানীয় সরকার এখন স্কুলগুলোয় ইংরেজি ভাষা শেখানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলতে বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ম্যানিজেলসের কল সেন্টার এখন শুধু ওই শহরে সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়ছে অন্য শহরগুলোয়ও। এতে যোগ দিচ্ছে আরো নতুন নতুন কম্পানি। ফলে পুরো কলম্বিয়ায়ই নতুন খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২০১০ সালে এ খাতে বিক্রি হয়েছে ৬৮০ মিলিয়ন ডলার। ২০০১ সালে যা ছিল মাত্র ৫৪ মিলিয়ন ডলার। কল সেন্টার প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট হিসাব অনুযায়ী এক দশকে এ শিল্পে সৃষ্টি হবে ৭৩ হাজার ৪০০ নতুন কর্মসংস্থান। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.