ক্ষুদে গানরাজ কুষ্টিয়ার মুন্না by শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার ও মীর সামী,
তখনও ক্ষুদে গানরাজের নাম ঘোষণা করা হয়নি। স্টেডিয়ামের মঞ্চজুড়ে চলছে নাম ঘোষণার আয়োজন। স্টেডিয়ামে আসা দর্শনার্থীরা হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন। চারদিকে সুনসান নীরবতা নেমে এলো। ধুপ ধুপ শব্দে মনে হচ্ছিল যেন কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেছে স্টেডিয়ামভর্তি অর্ধলাখ দর্শকের প্রাণস্পন্দন। মঞ্চ ও টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা হাজারো দর্শকের চোখের পলক আটকে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মঞ্চের দিকে। অপেক্ষা চূড়ান্ত ফলের।
তাদের অপেক্ষার পালা যেন শেষই হচ্ছে না। কে হবেন ক্ষুদে গানরাজ? অবশেষে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অগনিত দর্শকের ঝলমলে উপস্থিতিতে 'ক্ষুদে গানরাজে'র নাম ঘোষণা করা হলো। তৃতীয় মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ হয়েছে কুষ্টিয়ার মুন্না। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নানা রঙের বাজির শব্দে আরেকবার কেঁপে উঠল এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। পুরস্কার হিসেবে মুন্না পেয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। প্রথম রানারআপ হয়েছে হবিগঞ্জের নীলা। পুরস্কার হিসেবে সে পেয়েছে ৩ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে খাগড়াছড়ির পায়েল। সে পেয়েছে ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ লক্ষ্মীসোনা পুরস্কার পেয়েছে রোদসী এবং শ্রেষ্ঠ মেধাবী পুরস্কার পেয়েছে রাফিন। তারা উভয়েই পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে। সেরা ষোলর জন্য রয়েছে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি পর্যন্ত বিনামূল্যে লেখাপড়া করার সুযোগ, জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের সৌজন্যে পাঁচ বছরের চিকিৎসাসেবা, এক বছরের জন্য ফয়'স লেক ও ঢাকার নন্দন পার্কে একজন
অভিভাবকসহ যত খুশি ঘোরার সুযোগ। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, মেরিডিয়ান গ্রুপের এমডি এসএম কামাল পাশা, চ্যানেল আইয়ের পরিচালনা পরিষদের আবদুল মুকিত মজুমদার বাবু, আবদুর রশিদ, এনায়েত হোসেন সিরাজ প্রমুখ।
আকাশে আতশবাজির ঝলকানি, দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি, আনন্দ-উল্লাস আর জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ তৃতীয় আসরের মহাউৎসব অনুষ্ঠিত হলো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সাগর-পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এ মহাউৎসবের পর্দা উঠে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। সাগরতনয়া চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ছিল হাজারো উৎসুক জনতার ভিড়। অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন আর বাণিজ্যের প্রাণ চট্টগ্রামকে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়। এতবড় আয়োজনে এ ধরনের অনুষ্ঠান চট্টগ্রামে এই প্রথম। আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি হাজারো দর্শক চ্যানেল আইয়ে সরাসরি সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। মানুষের প্রচণ্ড ভিড়, ঝলমলে আলোকসজ্জা, নিখুঁত আয়োজন সবকিছুকে যেন ম্লান করে দেয় ছয় ক্ষুদে শিল্পীর সুরের ইন্দ্রজাল। সরাসরি গান করে বিচারক এবং দর্শকের কাছে নিজেদের যোগ্যতার শেষবারের মতো পরিচয় দেয় তারা।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও বিকেল ৩টা থেকেই নামে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামমুখী মানুষের ঢল। এর আগেই দর্শকদের সুবিধার্থে স্টেডিয়ামের তিন পাশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনটি ভিআইপি গেটসহ স্টেডিয়ামের সবক'টি গেট দিয়ে দর্শক প্রবেশ করতে থাকেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব গেট। ভেতরে যত না দর্শক তার বাইরেও ছিল অসংখ্য দর্শক। স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে স্থাপিত প্রজেক্টরে অনেকে উপভোগ করেন মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের এ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুটা ছিল অনেক আকর্ষণীয়। আকাশ আলোকোজ্জ্বল করে জ্বলে উঠল আতশবাজি। নানা রঙের আলোকচ্ছটায় একেকবার একেক রূপ নিচ্ছিল মঞ্চ। দর্শকের বাঁধভাঙা উল্লাস আর হর্ষধ্বনিতে পুরো স্টেডিয়াম চত্বর হয়ে ওঠে মুখরিত। দর্শক সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দারুণ হিমশিম খেতে হয়। গতকাল নানান বৈচিত্র্যে আয়োজনটি ছিল চমকপ্রদ ও আনন্দময়। মহাউৎসব অনুষ্ঠানটি ছিল সকল দর্শকের জন্য উন্মুক্ত । স্টেডিয়ামে বসে মহাউৎসব উপভোগ করেন প্রায় ৪০ হাজার দর্শক। চ্যানেল আইয়ের পর্দায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখেছেন বিশ্বের ৬টি মহাদেশের ৩ কোটিরও বেশি দর্শক।
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় চারটি গানের মেলোডি দিয়ে তৈরি একটি মিউজিকের সঙ্গে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনায় ছিল চমৎকার উদ্বোধনী পর্ব। এতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম শিশু একাডেমীর ১০০ শিশুশিল্পী। তাদের পরিবেশনার পরপরই মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ ২০১১-এর সেরা ১৬ জন সাম্পানযোগে মঞ্চে আসে। সে সময় এক অন্যরকম অনুভূতি দোলা দেয় উপস্থিত দর্শকদের । এরপর ৬ শিল্পী পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক গান 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি'। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেরিডিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম কামাল পাশা ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম. মনজুর আলম। মেয়র মনজুর আলম তার বক্তব্যে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষকে শিশুদের নিয়ে বৃহত্তম রিয়েলিটি শো চট্টগ্রামে করায় ধন্যবাদ জানান। ফরিদুর রেজা সাগর স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের স্বতঃস্টম্ফূর্ত উপস্থিতিতে মুগ্ধ হয়ে চট্টগ্রামবাসীকে জানান কৃতজ্ঞতা। মেরিডিয়ান গ্রুপের এমডি মোস্তফা কামাল পাশা আগামীতেও চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এর পরপরই গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমীন আর রুনা লায়লা দুটি করে গান গেয়ে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন। ক্ষুদে গানরাজের প্রধান বিচারক ফেরদৌস আরার দরদী ও এসআই টুটুল হাজার হাজার দর্শককে শোনান বেশ কয়েকটি গানের কলি। অঞ্জলী লহ মোর, আমার সোনার ময়না পাখি, পদ্মার ঢেউরে, আমার হাড় কালা করলারে ইত্যাদি। তারপরেই মঞ্চে এসে দর্শক মাতান ক্ষুদে গানরাজের অপর বিচারক এসআই টুটুল। তার কণ্ঠে বেজে ওঠে রাতেরও আকাশে নিশ্চুপ সাক্ষী দূরের ওই নীল ধ্রুব তারাসহ কয়েকটি গান।
এরপর এক ঝলকে দেখানো হয় মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ ২০১১-এর ফিরে দেখা। তারপর একে একে মঞ্চে আসে ৬ প্রতিযোগী। প্রথমেই খুরশীদ আলমের সঙ্গে রিকশায় চড়ে আসে মৌমিতা, পিকআপে চড়ে রিজিয়া পারভীনের সঙ্গে আসে রাহিন, মনির খানের সঙ্গে নীলা আসে ভ্যানগাড়িতে চড়ে, মুন্না আসে শাম্মী আখতারের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত খোলা অটোরিকশায় করে, সুবীর নন্দীর সঙ্গে পায়েল আসে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে। সর্বশেষ রাফি আসে ফাহমিদা নবীর সঙ্গে ঠেলাগাড়িতে চড়ে। মাঠের মাঝখান থেকে উত্তর পাশে স্থাপিত মঞ্চে নানা ধরনের বাহনে করে চড়ে আসার সময় দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি ও হর্ষধ্বনি স্টেডিয়ামজুড়ে সৃষ্টি করে এক অন্যরকম পরিবেশ। তাদের সঙ্গে দ্বৈত পরিবেশনার পর সেরা ৬ জন একটি করে একক পরিবেশনায় অংশ নেয়। এ পরিবেশনা থেকেই বিচারকদের রায়ে চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করা হয়। ফল ঘোষণার আগে মঞ্চে আসেন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ। তিনি একে একে গাইলেন তিনটি জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত। চূড়ান্তপর্বে প্রধান দুই বিচারকের সঙ্গে যুক্ত হন দেশের দুই কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীন। প্রতিযোগীদের পরিবেশনা ও দর্শকদের এসএমএস ভোট_ এই দুইয়ের সংমিশ্রণে ক্ষুদে গানরাজের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করা হয়। দুই উপস্থাপক তানিশা ও অপু মাহফুজ ঘোষণা করেন ক্ষুদে গানরাজ ২০১১-এর বিজয়ীদের নাম।
সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের প্রতিযোগিতা ক্ষুদে গানরাজ শুরু হয় গত বছরের শেষের দিকে। দেশের সাতটি অঞ্চল থেকে 'তৃতীয় মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের প্রাথমিক বাছাইপর্বে অংশ নিয়েছিল ১৮ হাজার প্রতিযোগী। যার মধ্য থেকে বাছাইকৃত ১২৫ জনকে নিয়ে চ্যানেল আইতে এ বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসর। বিভিন্ন পর্বে পারফরম্যান্স শেষে বিচারকদের বিচার ও দর্শকদের এসএমএস ভোটে চূড়ান্ত পর্বের জন্য টিকে ছিল সেরা ছয়। মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ তৃতীয় আসরের মহাউৎসব অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইজাজ খান স্বপন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, যেহেতু এবারের মহাউৎসব বন্দরনগরীর চট্টগ্রামে আয়োজন করা হয়েছে তাই চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষের চারটি জনপ্রিয় গান 'ওভাই আঁরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান দইজ্জারকুলত বসত গড়ি সিনাদি ঠেকাই ঝড় তুফান'/'ছোড ছোড ঢেউ তুলি ও ভাই ছোড ছোড ঢেউ তুলি লুসাই পাহাড়ত্তুন নামিয়েরে যারগই কর্ণফুলী' কিংবা 'বাঁশখালী আর মইশখালী তোরা হন হন যাবি আর সাম্পানে', 'মালকা বানুর দেশেরে বিয়ার বাদ্যবালা বাজেরে'। একইভাবে চট্টগ্রামের ১০০ শিশুশিল্পীর অংশগ্রহণ। ক্ষুদে শিল্পীদের সঙ্গে তারকা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের দারুণ আনন্দ দেয়। রাতের আকাশে আতশবাজির বর্ণিল আলোয় এমন একটি মহাউৎসবের কথা চট্টগ্রামবাসী দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
অভিভাবকসহ যত খুশি ঘোরার সুযোগ। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, মেরিডিয়ান গ্রুপের এমডি এসএম কামাল পাশা, চ্যানেল আইয়ের পরিচালনা পরিষদের আবদুল মুকিত মজুমদার বাবু, আবদুর রশিদ, এনায়েত হোসেন সিরাজ প্রমুখ।
আকাশে আতশবাজির ঝলকানি, দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি, আনন্দ-উল্লাস আর জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ তৃতীয় আসরের মহাউৎসব অনুষ্ঠিত হলো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সাগর-পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এ মহাউৎসবের পর্দা উঠে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। সাগরতনয়া চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ছিল হাজারো উৎসুক জনতার ভিড়। অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন আর বাণিজ্যের প্রাণ চট্টগ্রামকে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়। এতবড় আয়োজনে এ ধরনের অনুষ্ঠান চট্টগ্রামে এই প্রথম। আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি হাজারো দর্শক চ্যানেল আইয়ে সরাসরি সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। মানুষের প্রচণ্ড ভিড়, ঝলমলে আলোকসজ্জা, নিখুঁত আয়োজন সবকিছুকে যেন ম্লান করে দেয় ছয় ক্ষুদে শিল্পীর সুরের ইন্দ্রজাল। সরাসরি গান করে বিচারক এবং দর্শকের কাছে নিজেদের যোগ্যতার শেষবারের মতো পরিচয় দেয় তারা।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও বিকেল ৩টা থেকেই নামে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামমুখী মানুষের ঢল। এর আগেই দর্শকদের সুবিধার্থে স্টেডিয়ামের তিন পাশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনটি ভিআইপি গেটসহ স্টেডিয়ামের সবক'টি গেট দিয়ে দর্শক প্রবেশ করতে থাকেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব গেট। ভেতরে যত না দর্শক তার বাইরেও ছিল অসংখ্য দর্শক। স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে স্থাপিত প্রজেক্টরে অনেকে উপভোগ করেন মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের এ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুটা ছিল অনেক আকর্ষণীয়। আকাশ আলোকোজ্জ্বল করে জ্বলে উঠল আতশবাজি। নানা রঙের আলোকচ্ছটায় একেকবার একেক রূপ নিচ্ছিল মঞ্চ। দর্শকের বাঁধভাঙা উল্লাস আর হর্ষধ্বনিতে পুরো স্টেডিয়াম চত্বর হয়ে ওঠে মুখরিত। দর্শক সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দারুণ হিমশিম খেতে হয়। গতকাল নানান বৈচিত্র্যে আয়োজনটি ছিল চমকপ্রদ ও আনন্দময়। মহাউৎসব অনুষ্ঠানটি ছিল সকল দর্শকের জন্য উন্মুক্ত । স্টেডিয়ামে বসে মহাউৎসব উপভোগ করেন প্রায় ৪০ হাজার দর্শক। চ্যানেল আইয়ের পর্দায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখেছেন বিশ্বের ৬টি মহাদেশের ৩ কোটিরও বেশি দর্শক।
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় চারটি গানের মেলোডি দিয়ে তৈরি একটি মিউজিকের সঙ্গে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনায় ছিল চমৎকার উদ্বোধনী পর্ব। এতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম শিশু একাডেমীর ১০০ শিশুশিল্পী। তাদের পরিবেশনার পরপরই মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ ২০১১-এর সেরা ১৬ জন সাম্পানযোগে মঞ্চে আসে। সে সময় এক অন্যরকম অনুভূতি দোলা দেয় উপস্থিত দর্শকদের । এরপর ৬ শিল্পী পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক গান 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি'। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেরিডিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম কামাল পাশা ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম. মনজুর আলম। মেয়র মনজুর আলম তার বক্তব্যে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষকে শিশুদের নিয়ে বৃহত্তম রিয়েলিটি শো চট্টগ্রামে করায় ধন্যবাদ জানান। ফরিদুর রেজা সাগর স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের স্বতঃস্টম্ফূর্ত উপস্থিতিতে মুগ্ধ হয়ে চট্টগ্রামবাসীকে জানান কৃতজ্ঞতা। মেরিডিয়ান গ্রুপের এমডি মোস্তফা কামাল পাশা আগামীতেও চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এর পরপরই গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমীন আর রুনা লায়লা দুটি করে গান গেয়ে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন। ক্ষুদে গানরাজের প্রধান বিচারক ফেরদৌস আরার দরদী ও এসআই টুটুল হাজার হাজার দর্শককে শোনান বেশ কয়েকটি গানের কলি। অঞ্জলী লহ মোর, আমার সোনার ময়না পাখি, পদ্মার ঢেউরে, আমার হাড় কালা করলারে ইত্যাদি। তারপরেই মঞ্চে এসে দর্শক মাতান ক্ষুদে গানরাজের অপর বিচারক এসআই টুটুল। তার কণ্ঠে বেজে ওঠে রাতেরও আকাশে নিশ্চুপ সাক্ষী দূরের ওই নীল ধ্রুব তারাসহ কয়েকটি গান।
এরপর এক ঝলকে দেখানো হয় মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ ২০১১-এর ফিরে দেখা। তারপর একে একে মঞ্চে আসে ৬ প্রতিযোগী। প্রথমেই খুরশীদ আলমের সঙ্গে রিকশায় চড়ে আসে মৌমিতা, পিকআপে চড়ে রিজিয়া পারভীনের সঙ্গে আসে রাহিন, মনির খানের সঙ্গে নীলা আসে ভ্যানগাড়িতে চড়ে, মুন্না আসে শাম্মী আখতারের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত খোলা অটোরিকশায় করে, সুবীর নন্দীর সঙ্গে পায়েল আসে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে। সর্বশেষ রাফি আসে ফাহমিদা নবীর সঙ্গে ঠেলাগাড়িতে চড়ে। মাঠের মাঝখান থেকে উত্তর পাশে স্থাপিত মঞ্চে নানা ধরনের বাহনে করে চড়ে আসার সময় দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি ও হর্ষধ্বনি স্টেডিয়ামজুড়ে সৃষ্টি করে এক অন্যরকম পরিবেশ। তাদের সঙ্গে দ্বৈত পরিবেশনার পর সেরা ৬ জন একটি করে একক পরিবেশনায় অংশ নেয়। এ পরিবেশনা থেকেই বিচারকদের রায়ে চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করা হয়। ফল ঘোষণার আগে মঞ্চে আসেন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ। তিনি একে একে গাইলেন তিনটি জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত। চূড়ান্তপর্বে প্রধান দুই বিচারকের সঙ্গে যুক্ত হন দেশের দুই কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীন। প্রতিযোগীদের পরিবেশনা ও দর্শকদের এসএমএস ভোট_ এই দুইয়ের সংমিশ্রণে ক্ষুদে গানরাজের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করা হয়। দুই উপস্থাপক তানিশা ও অপু মাহফুজ ঘোষণা করেন ক্ষুদে গানরাজ ২০১১-এর বিজয়ীদের নাম।
সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের প্রতিযোগিতা ক্ষুদে গানরাজ শুরু হয় গত বছরের শেষের দিকে। দেশের সাতটি অঞ্চল থেকে 'তৃতীয় মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের প্রাথমিক বাছাইপর্বে অংশ নিয়েছিল ১৮ হাজার প্রতিযোগী। যার মধ্য থেকে বাছাইকৃত ১২৫ জনকে নিয়ে চ্যানেল আইতে এ বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসর। বিভিন্ন পর্বে পারফরম্যান্স শেষে বিচারকদের বিচার ও দর্শকদের এসএমএস ভোটে চূড়ান্ত পর্বের জন্য টিকে ছিল সেরা ছয়। মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ তৃতীয় আসরের মহাউৎসব অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইজাজ খান স্বপন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, যেহেতু এবারের মহাউৎসব বন্দরনগরীর চট্টগ্রামে আয়োজন করা হয়েছে তাই চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষের চারটি জনপ্রিয় গান 'ওভাই আঁরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান দইজ্জারকুলত বসত গড়ি সিনাদি ঠেকাই ঝড় তুফান'/'ছোড ছোড ঢেউ তুলি ও ভাই ছোড ছোড ঢেউ তুলি লুসাই পাহাড়ত্তুন নামিয়েরে যারগই কর্ণফুলী' কিংবা 'বাঁশখালী আর মইশখালী তোরা হন হন যাবি আর সাম্পানে', 'মালকা বানুর দেশেরে বিয়ার বাদ্যবালা বাজেরে'। একইভাবে চট্টগ্রামের ১০০ শিশুশিল্পীর অংশগ্রহণ। ক্ষুদে শিল্পীদের সঙ্গে তারকা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের দারুণ আনন্দ দেয়। রাতের আকাশে আতশবাজির বর্ণিল আলোয় এমন একটি মহাউৎসবের কথা চট্টগ্রামবাসী দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
No comments