ঈদে কম দামে মিলবে পেঁয়াজ by রাজীব আহমেদ

পাইকারি বাজারে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এখন সর্বনিম্ন ১৬-১৭ টাকায় রাজধানীর শ্যামবাজারের আড়তে মিলছে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজের দামও কমেছে। কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬-২৭ টাকায়। তবে খুচরা বাজার থেকে এখনো ক্রেতাদের ৩৮-৪০ টাকা দরে দেশি পেঁয়াজ ও ৩২-৩৪ টাকা দরে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ঈদের আগে দাম আরো কমতে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বিক্রেতারা জানান, ঈদে পেঁয়াজের দাম কম থাকবে মূলত তিনটি কারণে।


প্রথমত, মৌসুম ঘনিয়ে আসায় ব্যবসায়ীরা মজুদ ছেড়ে দেবেন। দ্বিতীয়ত, উৎপাদন বেশি হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত। তৃতীয়ত, গত তিন মাসে ভারত থেকে আমদানি আগের বছরের এ সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। সার্বিকভাবে দেশে পেঁয়াজের দাম বছরজুড়েই আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পরও রান্নার অপরিহার্য এই উপকরণটির দাম লাগামহীনভাবে বাড়েনি। জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি এবং জনপ্রতি দৈনিক ২৫ গ্রাম চাহিদা ধরে দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ১৫ লাখ ছয় হাজার টন। কয়েক বছর আগেও চাহিদার ৪০ শতাংশেরও বেশি পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করতে হতো। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা নির্ভর করত ভারতের ওপর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এখন দেশে পেঁয়াজের বাৎসরিক উৎপাদন ও চাহিদার ঘাটতি ৬৬ হাজার টন। এর চেয়ে অনেক বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। জুলাই থেকে গত ৬ অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখ ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়। এর আগের বছর একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার টন পেঁয়াজ।
গত বছর ২০ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় দেশে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এ বছর ৮ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় ওঠে। কয়েক দিনের মধ্যেই ওই দাম কমে ৪০-৪২ টাকা হয়। এর কিছুদিন পরেই ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
শ্যামবাজারের ঢাকা বাণিজ্যালয় নামের একটি আড়তে ভারতের পাটনা থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৬-১৭ টাকা ও নাসিক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ২০-২১ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের ছোট আকারের পেঁয়াজ ২০-২১ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই আড়তে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৬-২৭ টাকা দরে।
ঢাকা বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন মৌসুম ঘনিয়ে আসার পাশাপাশি ভারতের পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কমে গেছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এর মধ্যেই পুরনো পেঁয়াজ শেষ করতে হবে। এ কারণেই সরবরাহ বেশি। ফলে দামও কমতির দিকে।
ডিসেম্বর মাসের শুরুতে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। প্রথম বাজারে আসে কুষ্টিয়ার গোটা থেকে চাষ করা পেঁয়াজ। বীজ থেকে চাষ করা পেঁয়াজ বাজারে আসতে জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ফরিদপুরে। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজের চাষ হয়।
পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি ভারতের ওপর নির্ভরশীল। চীন ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি লাভজনক নয়। চীনের পেঁয়াজ আকারে বড়। তা বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয় নয়। তুরস্কের পেঁয়াজ দেশি পেঁয়াজের চেয়ে সামান্য বড়। কিন্তু সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয় না পরিবহন খরচ ও দূরত্বের কারণে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে গত মৌসুমে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার টনে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল আট লাখ ৪৯ হাজার টন। পরের বছর তা বেড়ে ১৪ লাখ ২৩ হাজার টনে দাঁড়ায়। গত বছর আরো কিছুটা বেড়ে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টনে উন্নীত হয়। এ সময়ে পেঁয়াজ চাষের এলাকা বাড়ার পাশাপাশি হেক্টরপ্রতি উৎপাদনও বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল এক লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১০-১১ অর্থবছরে চাষ হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। দুই বছরে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে ৫০ কেজি।
ডাল, তেল ও পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২০০৭ সালে 'চাষী পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প' হাতে নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ৫৫টি জেলা ও ৪২০টি উপজেলায় বিস্তৃত এই প্রকল্প পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

No comments

Powered by Blogger.