গাদ্দাফির ‘অষ্টম আশ্চর্য’ by পার্থ প্রতীম দাস
দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসনামলে অনেক নিন্দা-সমালোচনা কুড়িয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি। আরব বসন্তের নবজাগরণে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর লিবিয়ায় পতন হয়েছে গাদ্দাফি সরকারের। কয়েক দিন আগে বিদ্রোহীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার পর গতকাল মরুভূমির কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন এই স্বৈরশাসক। তবে বরাবরই কঠোর শাসনের জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বদনাম কুড়ালেও লিবিয়ার এই মরু প্রান্তরেই অনন্য এক কীর্তি গড়ে গেছেন লৌহমানব গাদ্দাফি।
দেশবাসীর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমগ্র লিবিয়াজুড়ে তিনি যে ভূ-গর্ভস্থ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ করেছিলেন—তা পরিচিতি পেয়েছে ‘বিশাল মনুষ্যনির্মিত নদী’ নামে। বিশ্বের বৃহত্তম এই প্রকল্পটিকে খোদ গাদ্দাফি গর্ব করে বলতেন, ‘পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।’ সির্ত, ত্রিপোলি, বেনগাজিসহ লিবিয়ার অন্যান্য মরু অঞ্চলে খাবার পানি সরবরাহ ও সেচকাজের জন্য লিবিয়াজুড়ে দুই হাজার ৮৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ পাইপ নেটওয়ার্ক নির্মিত হয়েছে এ প্রকল্পটিতে। ইতিহাসে এযাবত্কালের সবচেয়ে বড় এই পাইপলাইন নেটওয়ার্কটিতে আছে এক হাজার ৩০০-রও বেশি কুয়ো। যেগুলোর বেশির ভাগই ৫০০ মিটারেরও বেশি গভীর। এখনো লিবিয়াতে প্রতিদিন ৬৫ হাজার ঘন লিটার বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিচ্ছে গাদ্দাফির এ অষ্টম আশ্চর্য।
১৯৫৩ সালে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে তেল অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিশালায়তনের এক ভূগর্ভস্থ জলাধারের খোঁজ পাওয়া যায়। ১৯৬০ সালের শেষে ৪০ হাজার বছর পুরোনো এই জলাধার থেকে ‘বিশাল মনুষ্যনির্মিত নদী প্রকল্প’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। তবে বাস্তবে কাজ শুরু হতে হতে অতিক্রান্ত হয় আরও ২৪ বছর। ১৯৮৩ সালে লিবিয়ার কংগ্রেসে এ প্রকল্প প্রস্তাবটি পাস হয়। এক বছর পরে সারির এলাকায় নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গাদ্দাফি। কোনো প্রকার বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান ছাড়াই, পুরোপুরি নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল এই কর্মযজ্ঞের নকশা প্রণয়ন করেন মার্কিন প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান ব্রাউন অ্যান্ড রুট ও প্রাইস ব্রাদার্স। বিশালাকৃতির কংক্রিট পাইপগুলো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করা হয় ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে। পুরো প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ করার জন্য খরচ হয়েছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ। ১৯৯০ সাল থেকে এ প্রকল্পে নিযুক্ত প্রকৌশলীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইউনেসকো।
এ বছর গাদ্দাফি সরকারের পতনকামী বিদ্রোহী জনতার সমর্থনে এগিয়ে আসা ন্যাটোর বোমা হামলায় এই প্রকল্পের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে অনেক লিবীয়। উইকিপিডিয়া অবলম্বনে।
No comments