দর্শকদের না সামলালে দিতে হবে চড়া মূল্য by নোমান মোহাম্মদ,
ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। আর এ তো রীতিমতো ঘন কালো মেঘদলে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস! বাউন্ডারি লাইন থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডার যখন ছুটে আসছিলেন আম্পায়ারের দিকে, শঙ্কায় বুকটা তাই ধক করে ওঠে গাজী আশরাফ হোসেনের, 'তখনই বুঝেছি, ঘটনা কিছু একটা ঘটেছে। নিশ্চয়ই ঢিল-টিল ছুড়ে মেরেছে কোনো দর্শক।' আশঙ্কা অমূলক নয়। অসভ্য দর্শকের ওই অভব্য আচরণে কাল খেলা বন্ধ থাকে মিনিট পাঁচেক। সমান্তরালে স্মৃতিতে ঝলসে ওঠে বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন।
বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলাটি বাংলাদেশের জাতীয় লজ্জার সমার্থক। স্বপ্নযাত্রার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হওয়া ম্যাচ শেষ হয় শ্মশানের নিস্তব্ধতায়। ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার ওই আশাভঙ্গের তীব্র বেদনা মানতে পারেনি দর্শকরা। উন্মত্ত সমর্থকদের ক্ষোভানলে তাই পুড়তে হয় বাংলাদেশ দলকে। মাঠে গালিগালাজে শেষ না, টিম বাসে ঢিল ছুড়েও ক্রোধ প্রশমনের চেষ্টা। দুর্ভাগ্য যে সেটি গিয়ে পড়ে ক্যারিবীয়দের বাসে। ক্রিস গেইলের টুইটারবার্তায় সেই খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট-বিশ্বে।
সেবার না হয় হতাশা থেকে অমনটা করেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু কাল? পরিস্থিতিটা যে তেমন ছিলই না। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রানে অল আউট করে ১০৬ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে এগুচ্ছিল ভালোই। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারের সময়ই ঘটে যায় ঘটনাটি। রবি রামপলের বল কাভারে ঠেলে ১ রান নেন তামিম ইকবাল। বাউন্ডারি লাইন থেকে ফিল্ডার লেন্ডল সিমন্স বল ছুড়ে ফেরত দেওয়ার পর অনুভব করেন, তাঁর পিঠে দর্শকদের ছোড়া ঢিল। ছুটে আম্পায়ারদের কাছে চলে আসেন তিনি। দুই আম্পয়ারকে ছাতার মতো ঘিরে ধরেন ক্যারিবীয় খেলোয়াড়রা। যোগাযোগ করা হয় ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের সঙ্গে। ওই পূর্ব গ্যালারির নিচের ধাপের পুরোটাই খালি করে দেওয়া হয়। খাঁ খাঁ শূন্যতা হয়ে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক লজ্জার প্রতীক।
ভাগ্যিস, এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ড হলে হয়তো নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে আর খেলাই চালিয়ে যেত না তারা। ক্যারিবীয়রা ম্যাচে ফিরেছেন মিনিট পাঁচেক পরই। নাজুক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নটা উবে যাচ্ছে না তবুও। এমন ঘটনা বারবার ঘটলে যে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তি।
সিরিজের সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদক গাজী আশরাফ ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করছেন পুরোপুরি। যদিও এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে চাইছেন তিনি, 'কেউ ক্ষোভ থেকে ঢিল ছুড়েছেন বলে মনে হয় না। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রাও বুঝতে পেরেছে, এটি কেউ রাগ থেকে ইচ্ছেকৃতভাবে মারেনি। তবে ভবিষ্যতে যেন এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য আমরা সতর্ক থাকব।' বিসিবির পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস অবশ্য বিশ্বকাপের পরও দেওয়া হয়েছিল। কাজের কাজ হয়নি কিছু। নিরাপত্তা কমিটির সদস্য হিসেবে ওয়াকিটকি হাতে নানা জনকেই তো স্টেডিয়ামের ভেতর-বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। কিন্তু অহেতুক ঝামেলা পাকানো ছাড়া তাদের কাজটি যে কী, সেটি বোঝা দায়। নিজের কাঁধে দায় নিয়ে এই নিরাপত্তা কমিটির কার্যকারিতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ গাজী আশরাফের, 'এই সিরিজে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে দায়ভার আমার ওপরেই প্রথম আসে। একই সঙ্গে বলছি, মাঠের পারফরম্যান্সের মতো মাঠের বাইরে আমাদের পারফরম্যান্সেও প্রতিনিয়ত উন্নতির সুযোগ আছে। নিরাপত্তা কমিটির কাজের আরো অনেক উন্নতি তো করাই যায়।'
সেই উন্নতি না করলে পরিণতি খুব সুবিধার হয়তো হবে না। ১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে দর্শকরা বোতল ছুড়ে মেরেছিলেন মাঠে। এর জের ধরে ইডেন গার্ডেনের শূন্য গ্যালারিতে হয়েছে বাকি ম্যাচ। ইতালিয়ান ফুটবল লিগে ২০০৯ সালের এপ্রিলে ইন্টার মিলানের মারিও বালোতেলি্লকে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন জুভেন্টাসের দর্শকরা। শাস্তি হিসেবে একটি ম্যাচ খালি গ্যালারির সামনে খেলতে হয় তুরিনের ক্লাবটিকে। ঘটনার বারংবার পুনরাবৃত্তিতে বাংলাদেশও কি শূন্য গ্যালারিতে খেলার মতো পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে? 'আমার তা মনে হয় না। একটা ব্যাপার তো ঠিক, আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসে। এমন ঘটনা বারবার ঘটলে যে সেটি কারো জন্য ভালো না, সেটি তাদের বুঝতে হবে। বিচ্ছিন্ন এক-দুজন যারা ঘটনা ঘটায়, তাদের নিবৃত্ত করতে কিংবা তাদের ধরিয়ে দিতে অন্যদের সচেতন হতে হবে। নইলে ছোট্ট একটি ঘটনা ভেন্যুকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে'_গাজী আশরাফের উপলব্ধি। ভবিষ্যতে অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য নানা পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন তিনি, 'আর আমরা চেষ্টা করব, ভবিষ্যতে পুরো গ্যালারিকে কিভাবে সিসিটিভির অধীনে আনা যায়। ইংল্যান্ডে আমি দেখেছি, প্রতিটি দর্শকেরই জোন অনুযায়ী ভাগ করে ছবি তুলে রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতিতে অপরাধীকে শনাক্ত করা সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে মিডউইকেট এবং কাভার অঞ্চল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুটো অঞ্চল গ্যালারি থেকে সবচেয়ে কাছে। নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা তাই নেওয়াটা খুব জরুরি।' অভিন্ন সুর বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের কণ্ঠেও, 'আজকের ঘটনাটি হয়তো খুব বড় কিছু না। কিন্তু বড় কিছু হওয়ার আগে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।'
নিতেই হবে। নইলে যে কলঙ্কিত হবে এ দেশের ক্রিকেট। এই সতর্কসংকেতে কাজ না হলে পাগলাঘণ্টি বেড়ে যাবে যখন-তখন। তখন হয়তো শূন্য গ্যালারিতে আয়োজিত হবে ম্যাচ কিংবা বাতিলই হয়ে যাবে ভেন্যু!
সেবার না হয় হতাশা থেকে অমনটা করেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু কাল? পরিস্থিতিটা যে তেমন ছিলই না। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রানে অল আউট করে ১০৬ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে এগুচ্ছিল ভালোই। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারের সময়ই ঘটে যায় ঘটনাটি। রবি রামপলের বল কাভারে ঠেলে ১ রান নেন তামিম ইকবাল। বাউন্ডারি লাইন থেকে ফিল্ডার লেন্ডল সিমন্স বল ছুড়ে ফেরত দেওয়ার পর অনুভব করেন, তাঁর পিঠে দর্শকদের ছোড়া ঢিল। ছুটে আম্পায়ারদের কাছে চলে আসেন তিনি। দুই আম্পয়ারকে ছাতার মতো ঘিরে ধরেন ক্যারিবীয় খেলোয়াড়রা। যোগাযোগ করা হয় ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের সঙ্গে। ওই পূর্ব গ্যালারির নিচের ধাপের পুরোটাই খালি করে দেওয়া হয়। খাঁ খাঁ শূন্যতা হয়ে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক লজ্জার প্রতীক।
ভাগ্যিস, এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ড হলে হয়তো নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে আর খেলাই চালিয়ে যেত না তারা। ক্যারিবীয়রা ম্যাচে ফিরেছেন মিনিট পাঁচেক পরই। নাজুক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নটা উবে যাচ্ছে না তবুও। এমন ঘটনা বারবার ঘটলে যে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তি।
সিরিজের সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদক গাজী আশরাফ ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করছেন পুরোপুরি। যদিও এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে চাইছেন তিনি, 'কেউ ক্ষোভ থেকে ঢিল ছুড়েছেন বলে মনে হয় না। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রাও বুঝতে পেরেছে, এটি কেউ রাগ থেকে ইচ্ছেকৃতভাবে মারেনি। তবে ভবিষ্যতে যেন এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য আমরা সতর্ক থাকব।' বিসিবির পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস অবশ্য বিশ্বকাপের পরও দেওয়া হয়েছিল। কাজের কাজ হয়নি কিছু। নিরাপত্তা কমিটির সদস্য হিসেবে ওয়াকিটকি হাতে নানা জনকেই তো স্টেডিয়ামের ভেতর-বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। কিন্তু অহেতুক ঝামেলা পাকানো ছাড়া তাদের কাজটি যে কী, সেটি বোঝা দায়। নিজের কাঁধে দায় নিয়ে এই নিরাপত্তা কমিটির কার্যকারিতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ গাজী আশরাফের, 'এই সিরিজে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে দায়ভার আমার ওপরেই প্রথম আসে। একই সঙ্গে বলছি, মাঠের পারফরম্যান্সের মতো মাঠের বাইরে আমাদের পারফরম্যান্সেও প্রতিনিয়ত উন্নতির সুযোগ আছে। নিরাপত্তা কমিটির কাজের আরো অনেক উন্নতি তো করাই যায়।'
সেই উন্নতি না করলে পরিণতি খুব সুবিধার হয়তো হবে না। ১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে দর্শকরা বোতল ছুড়ে মেরেছিলেন মাঠে। এর জের ধরে ইডেন গার্ডেনের শূন্য গ্যালারিতে হয়েছে বাকি ম্যাচ। ইতালিয়ান ফুটবল লিগে ২০০৯ সালের এপ্রিলে ইন্টার মিলানের মারিও বালোতেলি্লকে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন জুভেন্টাসের দর্শকরা। শাস্তি হিসেবে একটি ম্যাচ খালি গ্যালারির সামনে খেলতে হয় তুরিনের ক্লাবটিকে। ঘটনার বারংবার পুনরাবৃত্তিতে বাংলাদেশও কি শূন্য গ্যালারিতে খেলার মতো পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে? 'আমার তা মনে হয় না। একটা ব্যাপার তো ঠিক, আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসে। এমন ঘটনা বারবার ঘটলে যে সেটি কারো জন্য ভালো না, সেটি তাদের বুঝতে হবে। বিচ্ছিন্ন এক-দুজন যারা ঘটনা ঘটায়, তাদের নিবৃত্ত করতে কিংবা তাদের ধরিয়ে দিতে অন্যদের সচেতন হতে হবে। নইলে ছোট্ট একটি ঘটনা ভেন্যুকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে'_গাজী আশরাফের উপলব্ধি। ভবিষ্যতে অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য নানা পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন তিনি, 'আর আমরা চেষ্টা করব, ভবিষ্যতে পুরো গ্যালারিকে কিভাবে সিসিটিভির অধীনে আনা যায়। ইংল্যান্ডে আমি দেখেছি, প্রতিটি দর্শকেরই জোন অনুযায়ী ভাগ করে ছবি তুলে রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতিতে অপরাধীকে শনাক্ত করা সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে মিডউইকেট এবং কাভার অঞ্চল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুটো অঞ্চল গ্যালারি থেকে সবচেয়ে কাছে। নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা তাই নেওয়াটা খুব জরুরি।' অভিন্ন সুর বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের কণ্ঠেও, 'আজকের ঘটনাটি হয়তো খুব বড় কিছু না। কিন্তু বড় কিছু হওয়ার আগে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।'
নিতেই হবে। নইলে যে কলঙ্কিত হবে এ দেশের ক্রিকেট। এই সতর্কসংকেতে কাজ না হলে পাগলাঘণ্টি বেড়ে যাবে যখন-তখন। তখন হয়তো শূন্য গ্যালারিতে আয়োজিত হবে ম্যাচ কিংবা বাতিলই হয়ে যাবে ভেন্যু!
No comments