গাফফার চৌধুরী এবং লাত, উজ্জা আর মানাত দেবী by আরিফুর রহমান
বঙ্গবন্ধুকে
নিয়ে ছবি বানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন গাফফার চৌধুরী, অমিতাভ বচ্চনকে কাস্ট
করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজী হচ্ছিলেন না । নিউ ইয়র্কের শামীম—এন আর
বি সম্মেলনের উদ্যোক্তা, ঢাকাতে আমার সাথে গাফফার ভাইয়ের মিটিং করালো যাতে
আমার ভারতীয় ব্যবসায়ী বন্ধুদের দিয়ে অমিতাভকে রাজী করানো যায়। অমিতাভের
বিপদের দিনে যারা তার কাছে ছিলেন তার মধ্যে বিনয় মালো একজন। (Vinay Maloo,
chairman ENSO group, India) গুজরাটি বিনয়দা কোলকাতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেছেন, অনর্গল বাংলা বলেন।
শামীম আমার সাথে বিনয়দার ঘনিষ্ট সম্পর্কের কথা জানতো। তাকে ব্যাপারটি
জানালে উনি অমিতাভকে রাজী করিয়ে ফেললেন। কিনতু গাফফার ভাইয়ের তরফ থেকে আর
যোগাযোগ হলোনা, শামীমও কিছু জানেনা। বিনয়্দার সাথে কথা হলেই জোক করেন, কি
দাদা, আপনার বঙ্গবন্ধু ফিল্মের কি হলো, মুন্না ভাই (অমিতাভের ডাক নাম ) দো
দফা পুছাথা, আমি বলেছি, বাঙালিকা বাত সিরিয়াসলি নেহি লেনা। হা হা হা হা—
অট্টহাসি । আমি বোকার মতো চুপ করে থাকি।
কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে একমাত্র আলোচক আবদুল গাফফার চৌধুরী সাহেব যে কথাগুলি বলেছেন, তা সিরিয়াসলি নিয়েছেন সবাই। লতিফ সিদ্দিকী এই নিউইয়র্কেই ইসলাম সম্মন্ধে যে অজ্ঞতা প্রসূত সমালোচনা করেছিলেন তাতে শারিয়া মতে তিনি মুরতাদ, ইসলামী পণ্ডিতরা তাই মনে করেন। শাস্তিও পেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন। এখনো উনি তওবা করেননি, এবং উনি একবার বলেছেন, উনি দুঃখিত নন, যা বলেছেন তা নিয়ে। দুনিয়াতে ওনার কি হবে জানিনা, কিন্তু আখরাতে কঠিন বিচারের সম্মুখীন ওনাকে হতেই হবে।
এই আলোচনাগুলি নিশ্চয়ই গাফফার ভাইয়ের চোখে পড়েছে, তারপরও উদ্ভট সব মন্তব্য করার কি দরকার ছিল? আবার সেই একই জায়গায়,— নিউ ইয়র্কেই?
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘আজকের আরবি ভাষায় যেসব শব্দ এর সবই কাফেরদের ব্যবহৃত শব্দ। যেমন— আল্লাহর ৯৯ নাম, সবই কিন্তু কাফেরদের দেবতাদের নাম। তাদের ভাষা ছিল আর-রহমান, গাফফার, গফুর ইত্যাদি। সবই কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম এডাপ্ট করেছিল।’
আল্লাহ জাল্লাহ শানুহুর ৯৯ নামের কিছু নাম এসেছে আল্লাহর নিজের পছন্দে যা কোরআনুল করিমে আল্লাহ নিজেকে নিজে অভিহিত করেছেন, কিছু এসেছে জিব্রায়িল ফেরেশতার পরমর্শে। ৯৯ নামের হাদিসটি আবু হোরায়রা (রা) বর্ণিত, এর সনদ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কাবা শরীফে ৩০০ এর উপরে যে মূর্তিগুলি ছিলো তাদের নামের সাথে আল্লাহর ৯৯ নামের কোনো মিল নেই, লাত, উজ্জা, মানাত, অবগাল, দুল খালসা, হুবাল, মালাকবেল, এল্লাহ, নেব, নের্গাল, সিন সুয়া, নুহা, সুয়া, রুভা ইত্যাদি। শুধু এল্লাহ নামটি আল্লাহর নামের কাছাকাছি, কিন্তু এল্লাহ দেবতার নাম হলেও কাফেররা আল্লাহকে আল্লাহই ডাকতো। কিনতু আল্লাহর গুনবাচকতায় বিভিন্নতা ছিলো।
হজরত আলী (রা)র পিতা আবু তালেব নবী মোহাম্মদ (সা )কে এতিম অবস্থা থেকে পেলেপুষে বড় করেছেন, বিপদের সময় সহায়তা করেছেন। আবু তালেবের মৃত্যুর সময় নবী (সা ) বললেন,— চাচা, এই শেষ সময়ে আপনি বলেন আমি মোহাম্মদের আল্লাহর ওপর ইমান রেখে মরলাম। আবু জাহেল তার দলবল নিয়ে পাশে ছিলো। সে বললো,— ভ্রাত: মরার সময় যদি আপনি আমাদের বাপ দাদার আল্লাহকে অস্বীকার করেন, আরবের মেয়েলোকরা পর্যন্ত হাসবে এই বলে যে, আপনি মরার সময় আসল আল্লাহকে ছাড়লেন। নবী (সা ) বললেন, আপনি আমার কানে কানে ফিস ফিস করে একবার বলেন, আমি মোহাম্মদের আল্লাহর ওপর ইমান রেখে মরলাম, আমি বিচার দিনে আপনার তদ্বির করব জান্নাতের জন্যে। আবু তালেব মরার আগে ঘোষণা করলেন, আমি আমার বাপ দাদার আল্লাহর ওপরে ইমান রেখেই মরলাম। নবী (সা ) জানালেন, আমার চাচা তার বাপ দাদার আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের কারণে জাহান্নামে যাবেন, কিন্তু নবীকে সহায়তা করায় লঘু শাস্তি দেবেন আল্লাহ।
শাব্দিক উচ্চারণে একই আল্লাহ শব্দে আল্লাহকে ডাকতো কাফেররা এবং মুসলমানরা, কিন্তু ৯৯ বা ততোধিক নামের গুনবাচকতার অর্থে মুসলমানদের আল্লাহ আলাদা, দেবতাদের যে নামেই ডাকা হতনা কেন, সেগুলি আল্লাহর নাম ছিলনা। দেবতাদের নাম থেকে আল্লাহর নাম এডাপ্ট করা হয়নি। উনি কোথায় পেলেন এই তথ্য ?
নারীদের বোরকা ও হিজাব নিয়ে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে এটা হচ্ছে ওহাবিদের লাস্ট কালচারাল ইনভলব। আমি অবাক হচ্ছি। ক্লাস টুয়ের মেয়েরা হায়েজ-নেফাজ পড়বে ! এটা আমাদের ধর্ম শিক্ষা হতে পারে?’ তিনি বলেন, ‘মুসলমান মেয়েরা মনে করে হিজাব, বোরকা হচ্ছে ইসলামের আইডেন্টিটি। আসলে কী তাই? বোরকা পরে যাচ্ছে কিন্তু প্রেম করছে। আবার ইন্টারনেটেও প্রেম করছে। আচরণ ওয়েস্টার্ন কিন্তু বেশভূষা ইসলামিক করে আত্মপ্রতারণা করছে তারা।’
গাফফার ভাই পর্দা আর বোরখাকে গুলিয়ে ফেলেছেন। আল কোরানে আল্লাহ বলেন, ‘‘তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের ওপর টেনে দেয়। তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে। তারা যা সাধারনত প্রকাশ করে থাকে তা ছাড়া তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড়ে ঢাকা থাকে।( ৩৩:৫৯, ২৪:৩০-৩১)।’’
যে হুকুম আল্লাহ দিয়েছেন তা ওহাবিদের ঘাড়ে চাপালেন তিনি অজ্ঞানতা বশত।
শুধু মুসলমান মেয়ে নয়, আসল আহলে কিতাব ইহুদি রমনী, পেনসিলভানিয়ার আমিষ গোত্রের মেয়েরা, ক্রিস্টান নান এরা সবাই বোরখা পরে, এদের কেউ কেউ হয়ত প্রেম করে ইন্টারনেটে, এরা অধিকাংশই ওয়েস্টার্ন দেশে থাকে, শুধু দোষ হলো বাঙালী মুসলমানদের? যে মুসলমান মেয়েরা হেজাব পরে তার অধিকাংশই আল্লাহর হুকুম হিসাবে এটি পালন করে।
গাফফার ভাই কি জানেন আমেরিকান কারিকুলামে সেভেন্থ গ্রেডে সেক্স এডুকেশন দেয়া হয় বাধ্যতামূলক, এবং বিস্তারিত ভাবে। সেই ক্লাসে থাকলে আপনি শরম পাবেন। সেখানে বাংলাদেশে ছাত্রীদের হায়েজ নেফাস পড়ালে ইসলামের দোষ হয়ে গেলো ?
উনি প্রশ্ন করেছেন, ‘‘সৌদি আরবের নাম কেন সৌদি আরব হলো, এর নাম হবে মোহাম্মদিয়া।’’ এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারতো মরহুম বাদশাহ আবদুল আজীজ যিনি যুদ্ধ করে হেজাজ নাজদ দখলে নিয়ে তার দাদার নামে দেশের নাম রেখেছিলেন। তার দাদা এই এলাকার বিতারিত রাজা ছিলেন। সৌদি আরবে বর্তমান রাজারা নিজেদের রাজা বলেন না, তারা পরিচয় দেন দুই হারাম মসজিদের খাদেম বলে, মোহাম্মদ (স) এর বর্ণিত পথেই তারা দেশের শাসন চালায়, কোরানের আইনে। নামে নয় তারা কামে আছেন কোনো না কোনো ধরনে।
গাফফার সাহেব বলেছেন, কাবা শরীফের দরজার নাম বাদশাহের নাম আছে সাহাবাদের নামে নয়। এ পর্যন্ত নাম ওয়ালা আর নাম্বার ওয়ালা গেট আছে ৯৫ + টির। এর মধ্যে দুইজন রাজার নামে দুটি ছিল এখন বাদশাহ আব্দুল্লাহর নামে এর একটি হয়েছে। কাবার সম্প্রসারণ হলে কতশত দরজা হবে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা। পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল স্থাপনায় ৩জন রাজার নাম আছে মাত্র, যারা এটির ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ করেছেন। সাহাবীদের নাম কেন রাখা হয়নি জানিনা, কিন্তু করাচী গেট বলে একটি দরজা আছে। নবী (সা ) এর খালা উম্মে হানীর নাম একটি গেট আছে, উম্মে হানীর বাসা থেকে নবী (স) মেরাজে সফর করেছিলেন, পৃথিবীর সর্ব প্রথম এস্ট্রনট যিনি আলোর গতির চেয়ে বেশি বেগে অজানা ইউনিভার্স দেখে এসেছেন। আমরা অন্ধভাবে তা বিশ্বাস করি, তাই আমরা মুমিন।
গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘রসুল মানে দূত, অ্যাম্বাসেডর। রসুলে সালাম মানে শান্তির দূত। রসুল বললেই আপনারা মনে করেন হযরত মুহম্মদ (সা), তা কিন্তু নয়। যখন রসুলুল্লাহ বলবেন তখন মনে করবেন আল্লাহর প্রতিনিধি। এখন মোমেন ভাই আমেরিকায় থেকে যদি বলেন কিংবা আমি নিজেকে রসুল দাবি করলে কল্লা যাবে।’
উনি কি জানেন, রসুল তাকে বলা হয়, যার ওপরে রেসালত বা আসমানী বা এলিয়েন গ্রন্থ নাজেল হয় জিব্রাইলের মাধ্যমে। রসুল মাত্র চারজন, দাউদ,মুসা, ইসা (আ) এবং মুহাম্মদ (সা), আর যারা শুধু আল্লাহর তরফ থেকে তার দিকে মানুষদের ডাকেন কোনো বই নাজেল ছাড়া তারা নবী, সব নবী রসুল নন। যেমন নূহ নবী, সালেহ নবী। গাফফার ভাই, আমরা রসুল বললে তাই মুহাম্মদ (সা )কেই বুঝি। আপনি কি ইসলাম বুঝলেন ?
তিনি বলেন, ‘পুরো দেশ এখন দাড়ি-টুপিতে ছেঁয়ে গেছে। সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টুপি আর দাড়ির সমাহার। অথচ তারা ঘুষ খাচ্ছেন। এত বড় দাড়ি, এত বড় টুপি, কিন্তু ঘুষ না পেলে ফাইলে হাত দেন না- এটা কী ইসলামের শিক্ষা?’
গাফফার ভাই, আমার আপনার প্রিয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে ইউনিফর্ম পরা কতিপয় সেনা সদস্য। এখন কি এই অন্যায়ের জন্যে সামরিক উর্দির দোষ হয়ে যাবে? টুপি দাড়িওয়ালারা ঘুষ খেলে ইসলামের দোষ বা শিক্ষা কেমন করে হয়? কোনো ইউনিফর্মের নাম অথবা যে কেউ দাড়ি লন্বা করার নাম ইসলাম নয়,— টুপি, ক্যাপ, পাগড়ি, হেলমেট দিয়ে মাথা ঢাকলেই মুসলমান হয়না। আল্লাহর ওপর অন্ধ বিশ্বাস, আর আমলের ওপর থাকার নাম ইসলাম।
আপনি বলেছেন, "ফেইথ পরিবর্তনশীল, কিন্তু বাঙালিত্ব চিরস্থায়ী। আমি আব্দুল গাফফার চৌধুরী ধর্ম পরিবর্তন করে হয়ে যেতে পারি গওহর রঞ্জন চক্রবর্তী, কিন্তু বাঙালিত্ব পরবর্তন হতে পারেনা।এটি আমাদের পরিচয়।"
দাদা, এখানেও ভুল করলেন।জন্মগত ভাবে হিন্দু না হলে আপনি এই ধর্মের হতে পারবেন না। হিন্দু বা সনাতন ধর্মের আচার পালন করতে পারবেন, অনেক হিপ্পী আমেরিকানদের মতো, আর চক্রবর্তী ব্রাম্মন হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। যাই হোক বাঙালিত্বকে মহিমা দিতে গিয়ে আপনার ধর্ম বদলানোর উদাহরণটি না দিলেও চলতো। বঙ্গবন্ধু তার পরিচয়ে কিন্তু বলতেন আমি বাঙালি, আমি একজন মুসলমান। তার চেয়ে বড় বাঙালি প্রেমিক আর কে হতে পারবে ?
আমার খারাপ লাগছে বড় ভাই ডক্টর মোমেনের জন্যে, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী দেওয়ান গাজী সাহেবের সঙ্গে যখন উনি চাকুরী করতেন তখন থেকে আমি আর বন্ধু ডাক্তার সাদেক ( প্রিন্সিপাল Drexel Medical School, USA) তার স্নেহ ধন্য। উনি নিশ্চয়ই বিব্রত বোধ করেছিলেন তার এই সভায়। আমি জানি উনি তার স্বভাব সুলভ অমায়িকতায় বলবেন, গাফফার ভাই যা বলতে চেয়েছেন তা হয়ত বোঝাতে পারেননি। কোনো ভুল হলে আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করবেন, আল্লাহ তো রহমানুর রাহীম।
লম্বা হয়ে যাচ্ছে, নাহয় আরো লিখতাম। আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো গান গাফফার চৌধুরীর কলম থেকে বেরিয়েছে। গনতন্ত্রের জন্যে, জাতির পিতার জন্যে আপনার ভালবাসার তুলনা হয়না। এক সময় মাদ্রাসায় পড়েছেন। বরিশালের উলানিয়ার জমিদার ছিলেন আপনার পূর্ব পুরুষ। আমার দাদার কাছে আপনাদের বাড়ির গয়না নৌকার গল্প শুনেছি। আল্লাহর নবীর সুন্নতের মতো আবু তালেবের মত আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি, আল্লাহর কাছে মাফ চান, ইসলামকে বুঝে এর সমালোচনা করুন। কারণ আপনাকে কাছ থেকে দেখেছি, আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কামনা করি আপনি তওবা করবেন, আপনার কলম থেকে আল্লাহর জন্যে এমন কথা বেরিয়ে আসুক যা পড়ে মানুষ ইসলামের দিকে চলে আসবে।
কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে একমাত্র আলোচক আবদুল গাফফার চৌধুরী সাহেব যে কথাগুলি বলেছেন, তা সিরিয়াসলি নিয়েছেন সবাই। লতিফ সিদ্দিকী এই নিউইয়র্কেই ইসলাম সম্মন্ধে যে অজ্ঞতা প্রসূত সমালোচনা করেছিলেন তাতে শারিয়া মতে তিনি মুরতাদ, ইসলামী পণ্ডিতরা তাই মনে করেন। শাস্তিও পেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন। এখনো উনি তওবা করেননি, এবং উনি একবার বলেছেন, উনি দুঃখিত নন, যা বলেছেন তা নিয়ে। দুনিয়াতে ওনার কি হবে জানিনা, কিন্তু আখরাতে কঠিন বিচারের সম্মুখীন ওনাকে হতেই হবে।
এই আলোচনাগুলি নিশ্চয়ই গাফফার ভাইয়ের চোখে পড়েছে, তারপরও উদ্ভট সব মন্তব্য করার কি দরকার ছিল? আবার সেই একই জায়গায়,— নিউ ইয়র্কেই?
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘আজকের আরবি ভাষায় যেসব শব্দ এর সবই কাফেরদের ব্যবহৃত শব্দ। যেমন— আল্লাহর ৯৯ নাম, সবই কিন্তু কাফেরদের দেবতাদের নাম। তাদের ভাষা ছিল আর-রহমান, গাফফার, গফুর ইত্যাদি। সবই কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম এডাপ্ট করেছিল।’
আল্লাহ জাল্লাহ শানুহুর ৯৯ নামের কিছু নাম এসেছে আল্লাহর নিজের পছন্দে যা কোরআনুল করিমে আল্লাহ নিজেকে নিজে অভিহিত করেছেন, কিছু এসেছে জিব্রায়িল ফেরেশতার পরমর্শে। ৯৯ নামের হাদিসটি আবু হোরায়রা (রা) বর্ণিত, এর সনদ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কাবা শরীফে ৩০০ এর উপরে যে মূর্তিগুলি ছিলো তাদের নামের সাথে আল্লাহর ৯৯ নামের কোনো মিল নেই, লাত, উজ্জা, মানাত, অবগাল, দুল খালসা, হুবাল, মালাকবেল, এল্লাহ, নেব, নের্গাল, সিন সুয়া, নুহা, সুয়া, রুভা ইত্যাদি। শুধু এল্লাহ নামটি আল্লাহর নামের কাছাকাছি, কিন্তু এল্লাহ দেবতার নাম হলেও কাফেররা আল্লাহকে আল্লাহই ডাকতো। কিনতু আল্লাহর গুনবাচকতায় বিভিন্নতা ছিলো।
হজরত আলী (রা)র পিতা আবু তালেব নবী মোহাম্মদ (সা )কে এতিম অবস্থা থেকে পেলেপুষে বড় করেছেন, বিপদের সময় সহায়তা করেছেন। আবু তালেবের মৃত্যুর সময় নবী (সা ) বললেন,— চাচা, এই শেষ সময়ে আপনি বলেন আমি মোহাম্মদের আল্লাহর ওপর ইমান রেখে মরলাম। আবু জাহেল তার দলবল নিয়ে পাশে ছিলো। সে বললো,— ভ্রাত: মরার সময় যদি আপনি আমাদের বাপ দাদার আল্লাহকে অস্বীকার করেন, আরবের মেয়েলোকরা পর্যন্ত হাসবে এই বলে যে, আপনি মরার সময় আসল আল্লাহকে ছাড়লেন। নবী (সা ) বললেন, আপনি আমার কানে কানে ফিস ফিস করে একবার বলেন, আমি মোহাম্মদের আল্লাহর ওপর ইমান রেখে মরলাম, আমি বিচার দিনে আপনার তদ্বির করব জান্নাতের জন্যে। আবু তালেব মরার আগে ঘোষণা করলেন, আমি আমার বাপ দাদার আল্লাহর ওপরে ইমান রেখেই মরলাম। নবী (সা ) জানালেন, আমার চাচা তার বাপ দাদার আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের কারণে জাহান্নামে যাবেন, কিন্তু নবীকে সহায়তা করায় লঘু শাস্তি দেবেন আল্লাহ।
শাব্দিক উচ্চারণে একই আল্লাহ শব্দে আল্লাহকে ডাকতো কাফেররা এবং মুসলমানরা, কিন্তু ৯৯ বা ততোধিক নামের গুনবাচকতার অর্থে মুসলমানদের আল্লাহ আলাদা, দেবতাদের যে নামেই ডাকা হতনা কেন, সেগুলি আল্লাহর নাম ছিলনা। দেবতাদের নাম থেকে আল্লাহর নাম এডাপ্ট করা হয়নি। উনি কোথায় পেলেন এই তথ্য ?
নারীদের বোরকা ও হিজাব নিয়ে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে এটা হচ্ছে ওহাবিদের লাস্ট কালচারাল ইনভলব। আমি অবাক হচ্ছি। ক্লাস টুয়ের মেয়েরা হায়েজ-নেফাজ পড়বে ! এটা আমাদের ধর্ম শিক্ষা হতে পারে?’ তিনি বলেন, ‘মুসলমান মেয়েরা মনে করে হিজাব, বোরকা হচ্ছে ইসলামের আইডেন্টিটি। আসলে কী তাই? বোরকা পরে যাচ্ছে কিন্তু প্রেম করছে। আবার ইন্টারনেটেও প্রেম করছে। আচরণ ওয়েস্টার্ন কিন্তু বেশভূষা ইসলামিক করে আত্মপ্রতারণা করছে তারা।’
গাফফার ভাই পর্দা আর বোরখাকে গুলিয়ে ফেলেছেন। আল কোরানে আল্লাহ বলেন, ‘‘তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের ওপর টেনে দেয়। তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে। তারা যা সাধারনত প্রকাশ করে থাকে তা ছাড়া তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড়ে ঢাকা থাকে।( ৩৩:৫৯, ২৪:৩০-৩১)।’’
যে হুকুম আল্লাহ দিয়েছেন তা ওহাবিদের ঘাড়ে চাপালেন তিনি অজ্ঞানতা বশত।
শুধু মুসলমান মেয়ে নয়, আসল আহলে কিতাব ইহুদি রমনী, পেনসিলভানিয়ার আমিষ গোত্রের মেয়েরা, ক্রিস্টান নান এরা সবাই বোরখা পরে, এদের কেউ কেউ হয়ত প্রেম করে ইন্টারনেটে, এরা অধিকাংশই ওয়েস্টার্ন দেশে থাকে, শুধু দোষ হলো বাঙালী মুসলমানদের? যে মুসলমান মেয়েরা হেজাব পরে তার অধিকাংশই আল্লাহর হুকুম হিসাবে এটি পালন করে।
গাফফার ভাই কি জানেন আমেরিকান কারিকুলামে সেভেন্থ গ্রেডে সেক্স এডুকেশন দেয়া হয় বাধ্যতামূলক, এবং বিস্তারিত ভাবে। সেই ক্লাসে থাকলে আপনি শরম পাবেন। সেখানে বাংলাদেশে ছাত্রীদের হায়েজ নেফাস পড়ালে ইসলামের দোষ হয়ে গেলো ?
উনি প্রশ্ন করেছেন, ‘‘সৌদি আরবের নাম কেন সৌদি আরব হলো, এর নাম হবে মোহাম্মদিয়া।’’ এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারতো মরহুম বাদশাহ আবদুল আজীজ যিনি যুদ্ধ করে হেজাজ নাজদ দখলে নিয়ে তার দাদার নামে দেশের নাম রেখেছিলেন। তার দাদা এই এলাকার বিতারিত রাজা ছিলেন। সৌদি আরবে বর্তমান রাজারা নিজেদের রাজা বলেন না, তারা পরিচয় দেন দুই হারাম মসজিদের খাদেম বলে, মোহাম্মদ (স) এর বর্ণিত পথেই তারা দেশের শাসন চালায়, কোরানের আইনে। নামে নয় তারা কামে আছেন কোনো না কোনো ধরনে।
গাফফার সাহেব বলেছেন, কাবা শরীফের দরজার নাম বাদশাহের নাম আছে সাহাবাদের নামে নয়। এ পর্যন্ত নাম ওয়ালা আর নাম্বার ওয়ালা গেট আছে ৯৫ + টির। এর মধ্যে দুইজন রাজার নামে দুটি ছিল এখন বাদশাহ আব্দুল্লাহর নামে এর একটি হয়েছে। কাবার সম্প্রসারণ হলে কতশত দরজা হবে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা। পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল স্থাপনায় ৩জন রাজার নাম আছে মাত্র, যারা এটির ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ করেছেন। সাহাবীদের নাম কেন রাখা হয়নি জানিনা, কিন্তু করাচী গেট বলে একটি দরজা আছে। নবী (সা ) এর খালা উম্মে হানীর নাম একটি গেট আছে, উম্মে হানীর বাসা থেকে নবী (স) মেরাজে সফর করেছিলেন, পৃথিবীর সর্ব প্রথম এস্ট্রনট যিনি আলোর গতির চেয়ে বেশি বেগে অজানা ইউনিভার্স দেখে এসেছেন। আমরা অন্ধভাবে তা বিশ্বাস করি, তাই আমরা মুমিন।
গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘রসুল মানে দূত, অ্যাম্বাসেডর। রসুলে সালাম মানে শান্তির দূত। রসুল বললেই আপনারা মনে করেন হযরত মুহম্মদ (সা), তা কিন্তু নয়। যখন রসুলুল্লাহ বলবেন তখন মনে করবেন আল্লাহর প্রতিনিধি। এখন মোমেন ভাই আমেরিকায় থেকে যদি বলেন কিংবা আমি নিজেকে রসুল দাবি করলে কল্লা যাবে।’
উনি কি জানেন, রসুল তাকে বলা হয়, যার ওপরে রেসালত বা আসমানী বা এলিয়েন গ্রন্থ নাজেল হয় জিব্রাইলের মাধ্যমে। রসুল মাত্র চারজন, দাউদ,মুসা, ইসা (আ) এবং মুহাম্মদ (সা), আর যারা শুধু আল্লাহর তরফ থেকে তার দিকে মানুষদের ডাকেন কোনো বই নাজেল ছাড়া তারা নবী, সব নবী রসুল নন। যেমন নূহ নবী, সালেহ নবী। গাফফার ভাই, আমরা রসুল বললে তাই মুহাম্মদ (সা )কেই বুঝি। আপনি কি ইসলাম বুঝলেন ?
তিনি বলেন, ‘পুরো দেশ এখন দাড়ি-টুপিতে ছেঁয়ে গেছে। সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টুপি আর দাড়ির সমাহার। অথচ তারা ঘুষ খাচ্ছেন। এত বড় দাড়ি, এত বড় টুপি, কিন্তু ঘুষ না পেলে ফাইলে হাত দেন না- এটা কী ইসলামের শিক্ষা?’
গাফফার ভাই, আমার আপনার প্রিয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে ইউনিফর্ম পরা কতিপয় সেনা সদস্য। এখন কি এই অন্যায়ের জন্যে সামরিক উর্দির দোষ হয়ে যাবে? টুপি দাড়িওয়ালারা ঘুষ খেলে ইসলামের দোষ বা শিক্ষা কেমন করে হয়? কোনো ইউনিফর্মের নাম অথবা যে কেউ দাড়ি লন্বা করার নাম ইসলাম নয়,— টুপি, ক্যাপ, পাগড়ি, হেলমেট দিয়ে মাথা ঢাকলেই মুসলমান হয়না। আল্লাহর ওপর অন্ধ বিশ্বাস, আর আমলের ওপর থাকার নাম ইসলাম।
আপনি বলেছেন, "ফেইথ পরিবর্তনশীল, কিন্তু বাঙালিত্ব চিরস্থায়ী। আমি আব্দুল গাফফার চৌধুরী ধর্ম পরিবর্তন করে হয়ে যেতে পারি গওহর রঞ্জন চক্রবর্তী, কিন্তু বাঙালিত্ব পরবর্তন হতে পারেনা।এটি আমাদের পরিচয়।"
দাদা, এখানেও ভুল করলেন।জন্মগত ভাবে হিন্দু না হলে আপনি এই ধর্মের হতে পারবেন না। হিন্দু বা সনাতন ধর্মের আচার পালন করতে পারবেন, অনেক হিপ্পী আমেরিকানদের মতো, আর চক্রবর্তী ব্রাম্মন হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। যাই হোক বাঙালিত্বকে মহিমা দিতে গিয়ে আপনার ধর্ম বদলানোর উদাহরণটি না দিলেও চলতো। বঙ্গবন্ধু তার পরিচয়ে কিন্তু বলতেন আমি বাঙালি, আমি একজন মুসলমান। তার চেয়ে বড় বাঙালি প্রেমিক আর কে হতে পারবে ?
আমার খারাপ লাগছে বড় ভাই ডক্টর মোমেনের জন্যে, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী দেওয়ান গাজী সাহেবের সঙ্গে যখন উনি চাকুরী করতেন তখন থেকে আমি আর বন্ধু ডাক্তার সাদেক ( প্রিন্সিপাল Drexel Medical School, USA) তার স্নেহ ধন্য। উনি নিশ্চয়ই বিব্রত বোধ করেছিলেন তার এই সভায়। আমি জানি উনি তার স্বভাব সুলভ অমায়িকতায় বলবেন, গাফফার ভাই যা বলতে চেয়েছেন তা হয়ত বোঝাতে পারেননি। কোনো ভুল হলে আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করবেন, আল্লাহ তো রহমানুর রাহীম।
লম্বা হয়ে যাচ্ছে, নাহয় আরো লিখতাম। আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো গান গাফফার চৌধুরীর কলম থেকে বেরিয়েছে। গনতন্ত্রের জন্যে, জাতির পিতার জন্যে আপনার ভালবাসার তুলনা হয়না। এক সময় মাদ্রাসায় পড়েছেন। বরিশালের উলানিয়ার জমিদার ছিলেন আপনার পূর্ব পুরুষ। আমার দাদার কাছে আপনাদের বাড়ির গয়না নৌকার গল্প শুনেছি। আল্লাহর নবীর সুন্নতের মতো আবু তালেবের মত আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি, আল্লাহর কাছে মাফ চান, ইসলামকে বুঝে এর সমালোচনা করুন। কারণ আপনাকে কাছ থেকে দেখেছি, আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কামনা করি আপনি তওবা করবেন, আপনার কলম থেকে আল্লাহর জন্যে এমন কথা বেরিয়ে আসুক যা পড়ে মানুষ ইসলামের দিকে চলে আসবে।
No comments