পারলেন না মেসি : চিলি চ্যাম্পিয়ন
আর্জেন্টিনার আশার বাতিটা তখনও টিমটিম করে জ্বলছে। টাইব্রেকারে চিলির পক্ষে চতুর্থ শটটি নিতে এগিয়ে এলেন অ্যালেক্সিস সানচেজ। স্তব্ধ গোটা স্টেডিয়াম। সার্গিও রোমেরোকে স্রেফ বোকা বানিয়ে আলতো শটে বল জালে জড়িয়ে দিলেন সানচেজ। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল সান্তিয়াগোর গ্যালারি। স্তাদিও ন্যাসিওনাল থেকে মুহূর্তেই উৎসবের ঢেউ আছড়ে পড়ল চিলির প্রতিটি প্রান্তে। আর মেসি? সেই একই ছবি। আকাশি-সাদা জার্সিতে আবারও হতাশার পোস্টার আর্জেন্টিনার দুঃখী রাজপুত্র। দেশের জার্সি গায়ে একটি ট্রফি উঁচিয়ে ধরার আজন্ম সাধ অপূর্ণই রয়ে গেল। শাপমোচনের বদলে আর্জেন্টিনার আরেকটি দুঃখগাথার অংশ হলেন মেসি। অপেক্ষার প্রহর বড্ড দীর্ঘ। একটি শিরোপার জন্য ২২ বছরের সেই দীর্ঘ দগ্ধ প্রহরের ইতি টানতে ব্যর্থ আর্জেন্টিনা। এক বছর আগে মারাকানায় বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের ক্ষত এখনও শুকায়নি। শনিবার রাতে মেসিদের সেই যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিলেন সানচেজরা। ৯৯ বছরের অপেক্ষা ঘুচল তাদের। কোপা আমেরিকা পেল এক নতুন চ্যাম্পিয়ন। গোলশূন্য ফাইনালে আর্জেন্টনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতল চিলি। শুধু কোপা নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলেই এটি তাদের প্রথম শিরোপা। আর্জেন্টিনার সোনালি প্রজন্ম ব্যর্থতার ঘানি টেনে চললেও নিজেদের আঙিনায় চিলির সোনালি প্রজন্ম ঠিকই পেল তাদের সাধনার পুরস্কার। প্রায় ১০০ বছরের খরা ঘুচিয়ে দেশবাসীকে তারা উপহার দিলেন বহু আরাধ্যের এক ট্রফি। চিলির একাদশে ছিলেন- ভিদাল, সানচেজ ও ভার্গাসের মতো সব তারকা। আর আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ তো বিশ্বসেরা। মেসি, আগুয়েরো, হিগুয়াইন, তেভেজ ও ডি মারিয়ার মতো নক্ষত্রের ছড়াছড়ি। অথচ নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও হল না একটি গোল! দু’দলই রক্ষণ সামলে আক্রমণে যাওয়ার নিরাপদ পথে হাঁটায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। স্নায়ুচাপের সেই ভাগ্য পরীক্ষায় ডাহা ফেল আর্জেন্টিনা! গত আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে টাইব্রেকারেই কপাল পুড়েছিল মেসিদের। এবারও পুড়ল।
পেনাল্টি শুট আউটে নিজেদের চারটি শটেই লক্ষ্যভেদ করেন চিলির খেলোয়াড়রা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার পক্ষে গোল করতে ব্যর্থ হল গনজালো হিগুয়াইন ও এভার বানেগা। প্রথম শটে ঠিকই গোল করেছিলেন মেসি। কিন্তু হিগুয়াইনের দ্বিতীয় শট বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। আর বানেগার শট ফিরিয়ে দেন চিলির গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভো। টাইব্রেকার-ট্রাজেডির আগে নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেয়ার সহজতম সুযোগটাও নষ্ট করেন হিগুয়াইন। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ একটি ক্রস বাড়িয়েছিলেন লাভেজ্জি। হিগুয়াইন তাতে পা ছোঁয়াতে পারলেই ঘুচে যেত আর্জেন্টিনার ২২ বছরের শিরোপাখরা। প্রথমার্ধেই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া ডি মারিয়ার অভাব বেশ ভালোভাবেই অনুভব করেছে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে চিলির দাপটে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন মেসিরা। প্রথমার্ধে অবশ্য ভালো দুটি সুযোগ এসেছিল তাদের সামনে। ২০ মিনিটে মেসির ফ্রিকিক থেকে আগুয়েরোর হেড অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দেন ব্রাভো। পরে লাভেজ্জিকেও গোলবঞ্চিত করেন চিলির শেষপ্রহরী। সুযোগ পেয়েছিল চিলিও। ১১ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত স্বাগতিকরা। কিন্তু ভিদালের শট দারুণভাবে রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার রোমেরো। ২৮ মিনিটে আরেকটি সুযোগ নষ্ট করেন ভার্গাস। ৮২ মিনিটে সানচেজের ভলি পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়েও গোল মিসের মহড়া দিয়েছেন সানচেজ। কিন্তু টাইব্রকারে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে শেষ হাসি হাসেন সানচেজই। সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থের পাগুলে উদযাপন দেখে বুকটা হয়তো ভেঙে গেছে মেসির। বার্সেলোনার হয়ে ২৪টি শিরোপা জিতলেও দেশের হয়ে এখনও কিছুই জেতা হয়নি তার। টুর্নামেন্টের শতবছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী বছর কোপা আমেরিকার বিশেষ আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্রে। কে জানে, কাল থেকেই হয়তো তার কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছেন মেসি!
No comments