অসম প্রতিযোগিতায় দেশি ফ্যাশন by আসাদ জোবায়ের
শাড়ি ব্যবসায়ী ওয়াসিম ফারুক হেভেন। পাঁচ বছর আগেও তিনি মিরপুরের ৩০টি এবং টাঙ্গাইলের ২০টি তাঁতের মালিক ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে ৪০টি তাঁতের শাড়ি এবং ২০টি বেনারসি শাড়ি তৈরি করতেন। বিক্রি করতেন ধানমণ্ডি হকার্সে। বিক্রির দোকান আছে আগের জায়গাতেই। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে সব তাঁত। এখন তিনি ভারতীয় শাড়ি আমদানি করে ব্যবসাটা ভালোভাবেই চালাচ্ছেন। মাঝখানে বেকার হয়েছেন শুধু ১০০ তাঁতি। যাদের অধিকাংশই এখন রিকশা চালাচ্ছেন। এ চিত্র একটি উদাহরণ হলেও রাজধানীর নামিদামি সব মার্কেটে ঢুকলেই বিদেশি পোশাকের রমরমা বাণিজ্যই বলে দেয় দেশি পোশাক কতটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধ পথে পোশাক আমদানি, বৈধ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক কমানো, কাপড়সহ পোশাক তৈরির উন্নত উপকরণের অভাব ও মূল্যবৃদ্ধি, ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রভাব, শিল্প মর্যাদা না পাওয়ায় বড় বিনিয়োগ করতে না পারাসহ বেশ কিছু কারণে বিদেশি পোশাকের তুলনায় দেশি পোশাক নিজেদের বাজারেও সুবিধা করতে পারছে না। ফলে ঈদ এলেই পোশাকের দোকানগুলো ঢেকে যায় বিদেশি পোশাক, বিশেষ করে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকে। উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রথমত অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশি ফ্যাশনকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে শিল্প ঘোষণা করতে হবে। এতে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে দেশি ফ্যাশন উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবেন।
বিশ্ববাজারে উন্নতমানের পোশাক বলতেই মানুষ বাংলাদেশে তৈরি পোশাককেই বোঝায়। অথচ ঈদের সময় দেশের বাজারে বিদেশি পোশাকের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। এর কারণ কী? প্রশ্ন করা হয়েছিল ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ফ্যাশন উদ্যোগ) সভাপতি ও দেশীয় ব্র্যান্ড সাদাকালোর কর্ণধার আজহারুল হক আজাদকে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো বাংলাদেশের ঈদকে টার্গেট করে বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রমজানের শুরু থেকেই তারা বৈধ ও অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে পোশাক রফতানি করে। বৈধ উপায়ে তারা যে পোশাক বাংলাদেশে আনে তাতে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। তিনি বলেন, ভারতীয় ফ্যাশন শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় দামের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাই।
কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক কেন মানুষ গ্রহণ না করে ভারতীয়টা গ্রহণ করছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের পোশাকের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঈদে মানুষ প্রচুর ভারতীয় জর্জেট ও শিফন জর্জেট কিনে থাকে। যা আমাদের দেশে তৈরি হয় না। এ ছাড়া আমাদের দেশে যেসব টেক্সটাইল মিল আছে সেখানে যে উন্নতমানের কাপড় তৈরি হয় তা শতভাগ রফতানিমুখী। আমরা সেখান থেকে কাপড় কিনতে পারি না। একটু ভালো মানের পোশাক বানাতে গেলে আমাদের বিদেশি কাপড় কিনতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। পক্ষান্তরে ভারতে তুলা পোশাক পর্যন্ত সব নিজেদের। এজন্য মূল্য অনেক কম হয়।
ধানমণ্ডি হকার্সের সেই শাড়ি বিক্রেতা বললেন একই কথা। ভারতীয় ও বাংলাদেশি বেনারসি শাড়ি বের করে তুলনা করে তিনি দেখালেন, বাংলাদেশি একটি বেনারসি শাড়ির মূল্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। অথচ এর চেয়ে ভালো মানের একটি ভারতীয় শাড়ির দাম পড়ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ভারতীয় এ রকম শাড়ি তৈরি করতে অন্তত দুই কোটি টাকার মেশিন বসাতে হবে। কিন্তু এ দেশের বেনারসি এখনো কুটির শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে এত বেশি ঋণ কোনো ব্যাংক দেবে না। তিনি জানান, ধানমণ্ডি হকার্স, গাউসিয়া মার্কেটসহ আশপাশের সব মার্কেটে দেশি পোশাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
সাদাকালোর আজাদ এ সম্পর্কে বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় দেশি ফ্যাশনের কদর দিন দিন বাড়ছে। বেশ কয়েকটি ফ্যাশন হাউস দেশে-বিদেশে সফলতার মুখ দেখছে। কিন্তু দ্রুত তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছে না। কারণ, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এটি এখনো শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি। এক সময় ধনী ব্যক্তিদের বেকার স্ত্রীরা ড্রইংরুমে যে বুটিক ব্যবসা শুরু করেছিলেন এখনো আমাদের এ শিল্পকে ‘বুটিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে বড় অঙ্কের ঋণ আমরা পাচ্ছি না। বিভিন্ন খাতে সরকার প্রণোদনা দিলেও আমরা তা পাচ্ছি না। অথচ এটি একটি শ্রমঘন শিল্প। বিভিন্ন পর্যায়ে কারিগরদের হাতেই এর মূল্য সংযোজন হয়। এতে সরাসরি ৫০ লাখের মতো মানুষ জড়িয়ে আছে, যারা নিজের ঘর-সংসারের কাজ করেও আমাদের সঙ্গে যুক্ত থেকে উপার্জন করতে পারছেন।
আরেক দেশীয় ব্র্যান্ড অঞ্জন’সের কর্ণধার শাহীন আহমেদ বলেন, বিদেশি পোশাকের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করতে চাই। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ দিতে হবে। ঈদে অবৈধভাবে যে পোশাক আসছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, অবৈধ আমদানি বন্ধ করার পাশাপাশি বৈধ আমদানিকেও নিরুৎসাহিত করা উচিত। কিন্তু তা না করে সরকার আরো পোশাক আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করেছে। এ ছাড়া বিদেশি পোশাকের চেয়ে আমাদের ভ্যাটও বেশি দিতে হচ্ছে। এ বৈষম্য নিয়ে কিভাবে প্রতিযোগিতা সম্ভব?
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধ পথে পোশাক আমদানি, বৈধ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক কমানো, কাপড়সহ পোশাক তৈরির উন্নত উপকরণের অভাব ও মূল্যবৃদ্ধি, ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রভাব, শিল্প মর্যাদা না পাওয়ায় বড় বিনিয়োগ করতে না পারাসহ বেশ কিছু কারণে বিদেশি পোশাকের তুলনায় দেশি পোশাক নিজেদের বাজারেও সুবিধা করতে পারছে না। ফলে ঈদ এলেই পোশাকের দোকানগুলো ঢেকে যায় বিদেশি পোশাক, বিশেষ করে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকে। উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রথমত অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশি ফ্যাশনকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে শিল্প ঘোষণা করতে হবে। এতে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে দেশি ফ্যাশন উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবেন।
বিশ্ববাজারে উন্নতমানের পোশাক বলতেই মানুষ বাংলাদেশে তৈরি পোশাককেই বোঝায়। অথচ ঈদের সময় দেশের বাজারে বিদেশি পোশাকের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। এর কারণ কী? প্রশ্ন করা হয়েছিল ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ফ্যাশন উদ্যোগ) সভাপতি ও দেশীয় ব্র্যান্ড সাদাকালোর কর্ণধার আজহারুল হক আজাদকে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো বাংলাদেশের ঈদকে টার্গেট করে বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রমজানের শুরু থেকেই তারা বৈধ ও অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে পোশাক রফতানি করে। বৈধ উপায়ে তারা যে পোশাক বাংলাদেশে আনে তাতে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। তিনি বলেন, ভারতীয় ফ্যাশন শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় দামের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাই।
কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক কেন মানুষ গ্রহণ না করে ভারতীয়টা গ্রহণ করছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের পোশাকের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঈদে মানুষ প্রচুর ভারতীয় জর্জেট ও শিফন জর্জেট কিনে থাকে। যা আমাদের দেশে তৈরি হয় না। এ ছাড়া আমাদের দেশে যেসব টেক্সটাইল মিল আছে সেখানে যে উন্নতমানের কাপড় তৈরি হয় তা শতভাগ রফতানিমুখী। আমরা সেখান থেকে কাপড় কিনতে পারি না। একটু ভালো মানের পোশাক বানাতে গেলে আমাদের বিদেশি কাপড় কিনতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। পক্ষান্তরে ভারতে তুলা পোশাক পর্যন্ত সব নিজেদের। এজন্য মূল্য অনেক কম হয়।
ধানমণ্ডি হকার্সের সেই শাড়ি বিক্রেতা বললেন একই কথা। ভারতীয় ও বাংলাদেশি বেনারসি শাড়ি বের করে তুলনা করে তিনি দেখালেন, বাংলাদেশি একটি বেনারসি শাড়ির মূল্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। অথচ এর চেয়ে ভালো মানের একটি ভারতীয় শাড়ির দাম পড়ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ভারতীয় এ রকম শাড়ি তৈরি করতে অন্তত দুই কোটি টাকার মেশিন বসাতে হবে। কিন্তু এ দেশের বেনারসি এখনো কুটির শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে এত বেশি ঋণ কোনো ব্যাংক দেবে না। তিনি জানান, ধানমণ্ডি হকার্স, গাউসিয়া মার্কেটসহ আশপাশের সব মার্কেটে দেশি পোশাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
সাদাকালোর আজাদ এ সম্পর্কে বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় দেশি ফ্যাশনের কদর দিন দিন বাড়ছে। বেশ কয়েকটি ফ্যাশন হাউস দেশে-বিদেশে সফলতার মুখ দেখছে। কিন্তু দ্রুত তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছে না। কারণ, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এটি এখনো শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি। এক সময় ধনী ব্যক্তিদের বেকার স্ত্রীরা ড্রইংরুমে যে বুটিক ব্যবসা শুরু করেছিলেন এখনো আমাদের এ শিল্পকে ‘বুটিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে বড় অঙ্কের ঋণ আমরা পাচ্ছি না। বিভিন্ন খাতে সরকার প্রণোদনা দিলেও আমরা তা পাচ্ছি না। অথচ এটি একটি শ্রমঘন শিল্প। বিভিন্ন পর্যায়ে কারিগরদের হাতেই এর মূল্য সংযোজন হয়। এতে সরাসরি ৫০ লাখের মতো মানুষ জড়িয়ে আছে, যারা নিজের ঘর-সংসারের কাজ করেও আমাদের সঙ্গে যুক্ত থেকে উপার্জন করতে পারছেন।
আরেক দেশীয় ব্র্যান্ড অঞ্জন’সের কর্ণধার শাহীন আহমেদ বলেন, বিদেশি পোশাকের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করতে চাই। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ দিতে হবে। ঈদে অবৈধভাবে যে পোশাক আসছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, অবৈধ আমদানি বন্ধ করার পাশাপাশি বৈধ আমদানিকেও নিরুৎসাহিত করা উচিত। কিন্তু তা না করে সরকার আরো পোশাক আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করেছে। এ ছাড়া বিদেশি পোশাকের চেয়ে আমাদের ভ্যাটও বেশি দিতে হচ্ছে। এ বৈষম্য নিয়ে কিভাবে প্রতিযোগিতা সম্ভব?
No comments