এবার মাছ-মাংস যত খুশি
সারাদিন
যত খুশি মাংস খান, মাছ খান কেউ কিচ্ছুটি বলবে না৷ কারণ আপনি তো ডায়েটই
করছেন৷ হ্যাঁ, এমন ডায়েটও রয়েছে৷ নাম, পালেও ডায়েট৷ সুস্থ থাকবেন, ওজন
নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ ধরুন ঘড়ি দেখে ডায়েট কন্ট্রোল করা আপনার ধাতে নেই৷ আবার
চিকেন, মাটন, ল্যাম্ব, মাছ ছাড়া চলে না৷ তাহলে এরকম কি কোনো উপায় আছে যাতে
আপনি ইচ্ছে মতো খাবার খেতে পারেন? আবার আপনার ওজন চড়চড় করে সীমারেখা পেরোবে
না৷ আপনি সুস্থও থাকবেন৷ নিশ্চয় আছে৷ এই ডায়েটের নাম পালেও ডায়েট বা
পালেওলিথিক ডায়েট৷ বেশ কিছুদিন ধরে এই ডায়েট ট্রেন্ড মানুষ পছন্দ করছেন৷
এমন কি সেলেব্রিটিরাও৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন জেনিথ প্যাল্ট্রো, জেসিকা বেল,
মাইলি সাইরাস, মেগান ফক্স৷ এখন প্রশ্ন হলো কী এই পালেও ডায়েট? আর কেনই বা
মানুষের কাছে এই ডায়েট রেজিম এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে? প্রথম প্রশ্নের
উত্তরটা এর নামেই লুকিয়ে রয়েছে৷ পালেও বা পালেওলিথিক ডায়েটের মূল ধারণাটাই
উঠে এসেছে সভ্যতার একদম প্রথম যুগ অর্থাত্ পালেওলিথিক আজ-এর যুগের মানুষের
খাদ্যাভ্যাস থেকে৷ তখন সবে মানুষ আগুনে ঝলসানো মাংস বা মাছ খেতে শিখছে৷
সব্জি বা ফলও ছিল সেই সময়ের মানুষের খাবারের তালিকায়৷ তবে কোনো মশলা বা
হার্বসের ব্যবহার তখনও মানুষ শেখেনি৷ তেল, নুন বা চিনির ব্যবহারও না৷ তাই
পালেও ডায়েটে আপনি যথেচ্ছ মাছ মাংস খাওয়ার ছাড় থাকলেও তেল, নুন, চিনি বা
কোনও মশলা ব্যবহার করতে পারবেন না৷ তার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি ও ফলও
খেতে হবে৷ জল মাস্ট৷ ওয়ালনাট, হেজেল নাট, ইত্যাদি রান্নায় ব্যবহার করা যেতে
পারে৷ আর বাদাম তো আমরা এমনিই খাই৷ আর এই ডায়েট মেনে চলার সময় কী খাবেন না
সেটাও কিন্তু জেনে রাখুন, কোনো চাষ করা শস্য কিন্ত্ত খাওয়া যাবে না৷
অর্থাৎ আপনার মেনু থেকে চাল, ডাল, গম, ইত্যাদি বাদ৷ ওয়াইল্ড রাইস চলবে৷
ডেয়ারি প্রোডাক্ট মানে দুধ জাতীয় কোনও প্রোডাক্ট চলবে না৷ আর কোনো ধরনের
প্রসেসড ফুড তো একেবারেই নয়৷ বুঝতেই পারছেন খুব সিম্পল ডায়েট প্ল্যান৷
অন্যান্য ডায়েট প্ল্যানের মতো ঘড়ি ধরে খাওয়া দাওয়া করার কোনো নিয়ম নেই এই
ডায়েট রেজিমে৷ খিদে পেলেই খেতে পারেন৷ আর পরিমাণের উপরও নজরদারি নেই৷ যতটা
ইচ্ছে হবে ততটাই খাবেন৷ এই জন্যই মানুষ এই ডায়েট প্ল্যানটিকে এতটা পছন্দ
করছেন৷ বিশেষ করে যারা কাজের সময়ের হিসেব নিকেশ নেই৷ তবে নিয়ম একেবারেই নেই
তা নয়৷ যেদিন খাওয়া দাওয়া করবেন, তার পরদিন কিন্তু পেটকে বিশ্রাম দিতে
হবে৷ একদিন অন্তর একদিন এই নিয়মটা চলবে৷ যেদিন উপোস চলবে সেদিন প্রচুর জল
খেতে হবে৷ একেবারে সন্ধ্যের দিকে মাংস বা ফল খাওয়া যেতে পারে৷ এখন প্রশ্ন
হচ্ছে নুন, তেল, চিনি ছাড়া কী ধরনের রান্না খেতে পারবেন? গ্রিলড ফিশ বা মিট
খাওয়া যেতে পারে৷ স্যালাড, ফ্রুট স্যালাড খেতে পারেন৷ এখন তো বিনা তেলে
রান্না নিয়ে প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট চলছে৷ সিদ্ধ বা ভাপা সব্জি খেতে পারেন৷
ভেবে দেখুন সরস্বতী পূজার পরদিন যে গোটা সিদ্ধ খাওয়ার চল আছে তাতেও নুন
দেওয়া হয় না৷ আসলে প্রায় সব সব্জির মধ্যেই নুন আছে৷ তাই আলাদা করে নুনের
দরকার পড়ে না৷ এবার আসা যাক এই ডায়েটের উপকারিতার প্রসঙ্গে৷ যেহেতু এই
ডায়েটে কোনও প্রসেসড ফুড, কন্ডিমেন্ট, স্পাইস, ইত্যাদি নেই তাই এই খাবার
গুলি আমাদের মেটাবলিক সিস্টেমকে আরও ভালো ভাবে কাজ করতে সহায়তা করে৷ আসলে
তেল নুন মশলার মতো জিনিষ আমাদের শরীরের জরুরি এনজাইম গুলিকে কাজ করতে বাধা
দেয়৷ পালেও ডায়েটে কিন্তু এটা হয়না৷ আর মেটাবলিক রেট বাড়লে আপনার খুব
তাড়াতাড়ি ক্যালোরি ক্ষয় হবে৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উপকারও এই ডায়েটে পাওয়া
যাবে৷ কারণ শরীরে টক্সিন জাতীয় জিনিষ ঢোকার তেমন সুযোগ নেই৷ তবে এই ডায়েট
শুরু করার আগে একবার বিশেষজ্ঞ-এর পরামর্শ নিন৷ আপনার শরীর গতিক বুঝে ডায়েট
মডিফাই করে দেবেন৷ ডায়াবেটিক, সন্তান সম্ভবা, বা সদ্য যারা মা হয়েছেন তাদের
জন্য এই ডায়েট একেবারেই নয়৷- ওয়েবসাইট
No comments