রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যাংক ডাকাত ও শেয়ার লুটেরাদের হাত কি বড়? by পীর হাবিবুর রহমান
ব্যাংকপাড়া ডাকাত, শেয়ার মার্কেট লুটেরাদের অভয়ারণ্য হতে পারে না। এই দুই জায়গা ডাকাত ও লুটেরাদের অভয়ারণ্য হলে দেশের অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে। বিনিয়োগকারীরা চড়া সুদের ঘানি টানলেও কমিশন দিয়ে ঋণ নিতে পারেন না। অন্যদিকে চেয়ারম্যান পরিচালক আর কর্মকর্তাদের মোটা কমিশন দিয়ে দুর্নীতির সিন্ডিকেট চক্র লুটে নিয়ে যায় ব্যাংকের টাকা। প্রয়োজনীয় গ্যারান্টি তাদের দিতে হয় না। দেশের তরুণ সমাজ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাংকিং সহায়তা পান না বলে অর্থনীতিতে যতটা ভূমিকা রাখার কথা ততটা পারেন না। চড়া সুদের পাশাপাশি কমিশন দিতে গিয়ে যা থাকে তা বিনিয়োগ করে খেলাপি হওয়া যায়; ব্যবসায় মুনাফা গোনা যায় না। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা রক্তশূন্য হচ্ছেন। অন্যদিকে লুটেরারা ফুলে ফেঁপে নাদুস-নুদুসই নয়; দেশের বাইরে টাকা পাচার করে দিচ্ছেন।
এদিকে ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির কারণে ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসলেও বাজার এখনো চাঙ্গা হয়নি। দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে চাকরিজীবীরা দু’টাকা মুনাফার আশায় শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু লুটেরা চক্র তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায় জুয়াড়ি চক্রের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের ৯৬ শাসনামলের পর ২০১০ সালে আরেক দফা শেয়ার কেলেঙ্কারি সরকারের ইমেজকে বড় ধরনের ঝাঁকুনিই দেয়নি; বিনিয়োগকারীদের রিক্ত-নিঃস্বই করেনি, এ খাতকে আতঙ্কের কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। এমনকি, দিনদুপুরে শেয়ারবাজার লুটে নিয়ে যাওয়া ডাকাতদের ব্যাপারে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নিতে না পারায় লুটেরাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। নবম সংসদে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দাঁড়িয়ে জাতিকে একটি মেসেজ দিয়েছিলেন- এদের হাত লম্বা, ধরা যাচ্ছে না। দশম সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই বললেন, ‘দেশে ফিরলেই পুঁজিবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তার এই বক্তব্য শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত ও বিনিয়োগকারীদের বুকে আশার আলো জ্বালিয়েছে। দেশের মানুষ যারা হতাশাক্ষুব্ধ ছিলেন যে, দুনিয়াতে বোধহয় শেয়ার কেলেঙ্কারির খলনায়কদের আর বিচার হচ্ছে না- তাদের মনেও আশা জেগেছে যে, শেয়ার মার্কেট লুটেরাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। দেশের বাইরে যারা পালিয়েছেন সরকার চাইলে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে। দেশের মধ্যে যারা বহাল তবিয়তে আছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারে।
মঙ্গলবার বাজেটের সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরেকটি বার্তা দিয়েছেন জাতিকে। যে বার্তা ভয়ঙ্কর। গা শিউরে ওঠার মতো খবর বটে। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের লোকদের সমর্থনের কারণে সোনালী ও বেসিক ব্যাংক অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, সোনালী ও বেসিক ব্যাংকে কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব ঘটনার বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। একজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে জেলে নেয়া হয়েছে। তিনি সেখানে মারা গেছেন। একজন জেলে আছেন। একজনকে আমি জেলে নিতে চেষ্টা করেও পারিনি। কারণ, তাদের প্রতি আমাদের লোকদের সমর্থন রয়েছে। এজন্য আমি ক্ষুব্ধ।’ অর্থমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘বেসিক ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। তারা কেলেঙ্কারির বিষয়গুলো অনুসন্ধান করছে। প্রতিবেদন পেলেই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জড়িতরা যেন দেশ ছাড়তে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
দেশের ব্যবসা ও ব্যাংকিং জগত ছাড়িয়ে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাগেরহাটের আবদুল হাই বাচ্চুর নামটি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনায় উঠে এসেছে। অভিযোগ আর সমালোচনার তীরে ক্ষতবিক্ষত এই ব্যক্তিটি বেসিক ব্যাংকে শাখা বৃদ্ধির মাধ্যমে কীভাবে তছনছ করে গেছেন তা সাধারণের মুখে মুখে আলোচনায় আসছে। এই ব্যাংকটি তিনি দাপটের সঙ্গে এমনভাবে চালিয়েছেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকও সেভাবে চলে না। অথচ আইন বা সরকারের হাত থেকে তিনি নিরাপদ দূরত্বেই বাস করছেন। অনেকেই মনে করেন, বেসিক ব্যাংক নিয়ে তদন্ত কমিটি করে গণসাক্ষ্য গ্রহণ করলে জাতি জানতে পারবে কী ধরনের ভয়াবহ স্ক্যান্ডাল ঘটেছে এই ব্যাংকের ঋণদান প্রক্রিয়ায়। কারা কীভাবে ডানহাত বামহাত করে ঋণ নিয়েছেন, কারাই বা কারসাজি করে লুট করেছেন।
আপাদমস্তক সৎ নির্লোভ নিরহঙ্কারী অর্থমন্ত্রীর বিগত সংসদে শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়কদের নিয়ে এবার সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের লুটপাটের ব্যাপারে দেয়া বক্তব্য তার জীবনের পড়ন্ত বেলার অসহায়ত্বই তুলে ধরেছে। ব্যাংকিং খাতকে এসব অনিয়ম থেকে রক্ষা করতে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন সংসদে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী মহান সংসদে বলার পরও যদি ব্যাংকপাড়ার ডাকাত ও শেয়ারবাজারের লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হয়; দেশের অর্থনীতিতে যেমন শৃঙ্খলা আসবে না, তেমনি অর্থনীতির গতি-প্রবাহ তীব্র হয়ে উঠবে না। বাজেটকে যতই বিনিয়োগবান্ধব বলা হোক না কেন, তা মুখ থুবড়ে পড়বে। আর বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়লে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশে তো যাবেই না, সেই ৬ শতাংশেই ঘুরপাক খাবে। অন্যদিকে দেশের মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট এতটাই বাড়বে যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় গণজাগরণ ঘটা দূরে থাক, হতাশার কালো চাদরে সব ঢাকা পড়বে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি শুধু ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রীই নন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংক ডাকাতদের রক্ষায় ‘আমাদের লোকদের সমর্থন রয়েছে’ বলেছেন। এই ‘আমাদের লোক’ হয় সরকারের ভেতরে না হয় সরকারের ছায়ায় বাস করে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশে জনগণের শাসন বহাল থাকলে সরকারের মনোভাব দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্তরিক থাকলে রাষ্ট্রের চেয়ে মুষ্টিমেয় ব্যাংক ডাকাত ও শেয়ারবাজার লুটেরাদের হাত বড় হতে পারে না। দুর্নীতির বরপুত্ররা যুগে যুগে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। পৃথিবীর যেখানে যে সরকার জনগণের সম্পদ লুটেরাদের প্রটেকশন দেয়ার চেষ্টা করেছে তারাও ইতিহাসের বিচারে কলঙ্কিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। শেয়ারবাজার পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজার এখন প্রতিদিন চাঙ্গা হবে অর্থাৎ শেয়ার মূল্য ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। কিন্তু সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা ও নজরদারি জোরদার রাখা জরুরি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বসানো হয়েছে শেয়ারবাজার তদারকি করার জন্য। জুয়াড়ি বা লুটেরা চক্রকে ধরার জন্য। এই কমিশনের চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খাইরুল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। গুঞ্জন উঠেছে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে খারাপ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরো দেয়া হচ্ছে। এরা বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। অন্যদিকে যেসব ভালো কোম্পানি বিএসইসির সঙ্গে ‘পরকীয়া’ সম্পর্কে জড়াচ্ছেন না তাদেরকে হয়রানি ও শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এখনই লোভ ও লালসার মোহ যাকে যেখানে বসানো হচ্ছে তাকেই টানছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন, ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেই সময়ের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে অধ্যাপক খাইরুলকে বসানো হয়। কিন্তু তাকেও লোভের বাজারে বসিয়ে সাধু ভাববার কোনো কারণ নেই বলে বিনিয়োগকারীরা মনে করেন। রাষ্ট্রের হাতের চেয়ে ব্যাংক ডাকাত ও শেয়ারবাজার লুটেরাদের হাত কি বড়? কখনই বড় হতে পারে না। ওই লুটেরাদের কালো হাত জনগণের সরকার চাইলে ভেঙে দিতে সময় লাগে না। মানুষ চায় সরকার সেই ডাকাতির কালো হাত ভেঙে দিয়ে নজির স্থাপন করুক, আস্থা অর্জন করুক।
এদিকে ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির কারণে ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসলেও বাজার এখনো চাঙ্গা হয়নি। দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে চাকরিজীবীরা দু’টাকা মুনাফার আশায় শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু লুটেরা চক্র তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায় জুয়াড়ি চক্রের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের ৯৬ শাসনামলের পর ২০১০ সালে আরেক দফা শেয়ার কেলেঙ্কারি সরকারের ইমেজকে বড় ধরনের ঝাঁকুনিই দেয়নি; বিনিয়োগকারীদের রিক্ত-নিঃস্বই করেনি, এ খাতকে আতঙ্কের কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। এমনকি, দিনদুপুরে শেয়ারবাজার লুটে নিয়ে যাওয়া ডাকাতদের ব্যাপারে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নিতে না পারায় লুটেরাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। নবম সংসদে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দাঁড়িয়ে জাতিকে একটি মেসেজ দিয়েছিলেন- এদের হাত লম্বা, ধরা যাচ্ছে না। দশম সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই বললেন, ‘দেশে ফিরলেই পুঁজিবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তার এই বক্তব্য শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত ও বিনিয়োগকারীদের বুকে আশার আলো জ্বালিয়েছে। দেশের মানুষ যারা হতাশাক্ষুব্ধ ছিলেন যে, দুনিয়াতে বোধহয় শেয়ার কেলেঙ্কারির খলনায়কদের আর বিচার হচ্ছে না- তাদের মনেও আশা জেগেছে যে, শেয়ার মার্কেট লুটেরাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। দেশের বাইরে যারা পালিয়েছেন সরকার চাইলে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে। দেশের মধ্যে যারা বহাল তবিয়তে আছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারে।
মঙ্গলবার বাজেটের সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরেকটি বার্তা দিয়েছেন জাতিকে। যে বার্তা ভয়ঙ্কর। গা শিউরে ওঠার মতো খবর বটে। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের লোকদের সমর্থনের কারণে সোনালী ও বেসিক ব্যাংক অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, সোনালী ও বেসিক ব্যাংকে কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব ঘটনার বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। একজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে জেলে নেয়া হয়েছে। তিনি সেখানে মারা গেছেন। একজন জেলে আছেন। একজনকে আমি জেলে নিতে চেষ্টা করেও পারিনি। কারণ, তাদের প্রতি আমাদের লোকদের সমর্থন রয়েছে। এজন্য আমি ক্ষুব্ধ।’ অর্থমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘বেসিক ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। তারা কেলেঙ্কারির বিষয়গুলো অনুসন্ধান করছে। প্রতিবেদন পেলেই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জড়িতরা যেন দেশ ছাড়তে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
দেশের ব্যবসা ও ব্যাংকিং জগত ছাড়িয়ে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাগেরহাটের আবদুল হাই বাচ্চুর নামটি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনায় উঠে এসেছে। অভিযোগ আর সমালোচনার তীরে ক্ষতবিক্ষত এই ব্যক্তিটি বেসিক ব্যাংকে শাখা বৃদ্ধির মাধ্যমে কীভাবে তছনছ করে গেছেন তা সাধারণের মুখে মুখে আলোচনায় আসছে। এই ব্যাংকটি তিনি দাপটের সঙ্গে এমনভাবে চালিয়েছেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকও সেভাবে চলে না। অথচ আইন বা সরকারের হাত থেকে তিনি নিরাপদ দূরত্বেই বাস করছেন। অনেকেই মনে করেন, বেসিক ব্যাংক নিয়ে তদন্ত কমিটি করে গণসাক্ষ্য গ্রহণ করলে জাতি জানতে পারবে কী ধরনের ভয়াবহ স্ক্যান্ডাল ঘটেছে এই ব্যাংকের ঋণদান প্রক্রিয়ায়। কারা কীভাবে ডানহাত বামহাত করে ঋণ নিয়েছেন, কারাই বা কারসাজি করে লুট করেছেন।
আপাদমস্তক সৎ নির্লোভ নিরহঙ্কারী অর্থমন্ত্রীর বিগত সংসদে শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়কদের নিয়ে এবার সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের লুটপাটের ব্যাপারে দেয়া বক্তব্য তার জীবনের পড়ন্ত বেলার অসহায়ত্বই তুলে ধরেছে। ব্যাংকিং খাতকে এসব অনিয়ম থেকে রক্ষা করতে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন সংসদে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী মহান সংসদে বলার পরও যদি ব্যাংকপাড়ার ডাকাত ও শেয়ারবাজারের লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হয়; দেশের অর্থনীতিতে যেমন শৃঙ্খলা আসবে না, তেমনি অর্থনীতির গতি-প্রবাহ তীব্র হয়ে উঠবে না। বাজেটকে যতই বিনিয়োগবান্ধব বলা হোক না কেন, তা মুখ থুবড়ে পড়বে। আর বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়লে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশে তো যাবেই না, সেই ৬ শতাংশেই ঘুরপাক খাবে। অন্যদিকে দেশের মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট এতটাই বাড়বে যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় গণজাগরণ ঘটা দূরে থাক, হতাশার কালো চাদরে সব ঢাকা পড়বে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি শুধু ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রীই নন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংক ডাকাতদের রক্ষায় ‘আমাদের লোকদের সমর্থন রয়েছে’ বলেছেন। এই ‘আমাদের লোক’ হয় সরকারের ভেতরে না হয় সরকারের ছায়ায় বাস করে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশে জনগণের শাসন বহাল থাকলে সরকারের মনোভাব দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্তরিক থাকলে রাষ্ট্রের চেয়ে মুষ্টিমেয় ব্যাংক ডাকাত ও শেয়ারবাজার লুটেরাদের হাত বড় হতে পারে না। দুর্নীতির বরপুত্ররা যুগে যুগে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। পৃথিবীর যেখানে যে সরকার জনগণের সম্পদ লুটেরাদের প্রটেকশন দেয়ার চেষ্টা করেছে তারাও ইতিহাসের বিচারে কলঙ্কিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। শেয়ারবাজার পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজার এখন প্রতিদিন চাঙ্গা হবে অর্থাৎ শেয়ার মূল্য ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। কিন্তু সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা ও নজরদারি জোরদার রাখা জরুরি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বসানো হয়েছে শেয়ারবাজার তদারকি করার জন্য। জুয়াড়ি বা লুটেরা চক্রকে ধরার জন্য। এই কমিশনের চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খাইরুল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। গুঞ্জন উঠেছে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে খারাপ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরো দেয়া হচ্ছে। এরা বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। অন্যদিকে যেসব ভালো কোম্পানি বিএসইসির সঙ্গে ‘পরকীয়া’ সম্পর্কে জড়াচ্ছেন না তাদেরকে হয়রানি ও শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এখনই লোভ ও লালসার মোহ যাকে যেখানে বসানো হচ্ছে তাকেই টানছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন, ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেই সময়ের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে অধ্যাপক খাইরুলকে বসানো হয়। কিন্তু তাকেও লোভের বাজারে বসিয়ে সাধু ভাববার কোনো কারণ নেই বলে বিনিয়োগকারীরা মনে করেন। রাষ্ট্রের হাতের চেয়ে ব্যাংক ডাকাত ও শেয়ারবাজার লুটেরাদের হাত কি বড়? কখনই বড় হতে পারে না। ওই লুটেরাদের কালো হাত জনগণের সরকার চাইলে ভেঙে দিতে সময় লাগে না। মানুষ চায় সরকার সেই ডাকাতির কালো হাত ভেঙে দিয়ে নজির স্থাপন করুক, আস্থা অর্জন করুক।
No comments