দিনরাত জনজোয়ার, নতুন বই ২০৬ রেকর্ড বিক্রি- বইমেলা প্রতিদিন by সৈয়দ সোহরাব
ভাষার জন্য যেমন রক্ত দিতে হয়েছে, তেমনি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্যও রক্ত ঝরাতে হয়েছে বাঙালীকে। অধিকার আদায়ের ৰেত্রে বাঙালীর এই বোধটা বেশ টনটনে।
আর এই বোধের প্রকাশই দেখা গেল রবিবার বইমেলায়। এদিন ছিল বাঙালীর সেই অহঙ্কারের, অর্জনের ও বেদনার দিন অমর একুশে। তাই শহীদ মিনার ও বইমেলাসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল গণমানুষের জোয়ার। এদিন সকাল আটটা থেকেই খুলে যায় বইমেলা প্রাঙ্গণ। চলে রাত দশটা অবধি। যাঁরাই শহীদ মিনারে আসার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁরাই ঢুকেছেন মেলায়। আর যাঁরা বইমেলায় আসার জন্য শুধু বিকেলে বেরিয়েছেন সেই চাপও ছিল মেলার ওপর। ফলে সারা দিনই হোটেল শেরাটন, শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট ও দোয়েল চত্বরে ছিল দীর্ঘ জন ও যানজোট। যার ফলে শহীদ মিনার হোক আর বইমেলা হোক সেখানে যেতে হাঁটতে হয়েছে দীর্ঘপথ। অনেকে শিশু সনত্মানকে কোলে বা ঘাড়ে তুলে নিয়েছিলেন। তবে কারও মধ্যেই কানত্মির ছাপ লৰ্য করা যায়নি। এদিন মেলায় গুণীজনেরও কমতি ছিল না। এসেছিলেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, শিল্পী মুর্তজা বশীর, কবি আসাদ চৌধুরী, ইমদাদুল হক চৌধুরীসহ আরও অনেক কবি-সাহিত্যিক। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ২০৬টি। মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে প্রায় এক ডজন বইয়ের। বিক্রির দিক দিয়েও রেকর্ড ছাড়িয়েছে এদিন।কিশোর লেখক ॥ মেলায় এক কিশোর লেখকের বই এসেছে। তাঁর নাম ফাহিম আহসান চৌধুরী সৌভিক। শিশুতোষ এই বইটির নাম 'ভৌতিক ও রহস্য গল্প'। এনেছে শোভা প্রকাশ। বইটি বেশ চলছে বলেও জানালেন শোভার প্রকাশক মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, একজন কিশোরের বই এত ভাল চলবে তা আশা করিনি। সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রের হাত এতটা পরিপক্ক হতে পারে, বইটি না পড়লে কেউ বুঝতে পারবে না। বইটির মুখবন্ধ লিখতে গিয়ে কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন, ওর বইটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এখনও স্কুলের গ-ি পেরোয়নি, অথচ গোয়েন্দা ও রহস্য গল্প যেভাবে পরিপক্কতার সঙ্গে লিখে চলছে, তা আমাকে বিস্মিত করেছে। গল্প লিখতে জ্ঞান ও কা-জ্ঞান দু'য়েরই প্রয়োজন। আর এই বয়সে এই দুই গুণই রপ্ত করেছে সৌভিক। এটাও কম কথা নয়। তবে প্রকাশক জানালেন, সৌভিক এক গুণী পরিবারের সনত্মান। তাঁর বাবা অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী, আর দাদা ফজলুল বারী চৌধুরী। মনীষী কাজী মোতাহার হোসেন ও শিশুসাহিত্যিক আতোয়ার হোসেন এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
প্রকাশকের কথা ॥ এদিনের গণজোয়ারে বেশ ভাল বিক্রি হওয়ায় বেজায় খুশি প্রকাশকরা। এ প্রসঙ্গে পারিজাত প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শওকত হোসেন লিটু বলেন, এ মাসে তো ভালই বিক্রি হয়। কিন্তু বাকি ১১ মাস তো আমাদের অনেকটা বসেই থাকতে হয়। যদি বছরের অন্যান্য মাসে দেশের বড় শহরগুলোতে অনত্মত এক সপ্তাহ করেও মেলার আয়োজন থাকত, তাহলে আমাদের মতো সৃজনশীল প্রকাশকরা একটু ভাল থাকতে পারত। আমাদের সংগঠন রাজি থাকলেও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র রাজি হচ্ছে না। তবে গত '৮৬ থেকে '৯২ সাল পর্যনত্ম অন্যান্য শহরেও আমরা মেলা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। ঢাকা আনত্মর্জাতিক বইমেলা শুরম্ন হওয়ার পর থেকে সে আয়োজনটিও বাদ দিয়েছে গ্রন্থকেন্দ্র। এতে আমরা অনেক ৰতির সম্মুখীন হচ্ছি। একুশের এই মেলার এক মাস আগে ঢাকা বইমেলা হয়, তাই এ মেলাটি তেমন গুরম্নত্ব পায় না। তাই ঢাকা বইমেলাটি যদি জুনে নিয়ে আসত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, তাহলে দু'টি মেলাই বেশ ভাল গুরম্নত্ব পেত।
মোড়ক উন্মোচন ॥ এদিন মেলায় প্রায় এক ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন মোড়ক উন্মোচন করেন সৈয়দ টিপু সুলতানের মুভমেন্ট পারসুট অব রিজলভিং ওয়াটার প্রোবলেম ইন সাউথইস্ট এশিয়া বইটির। রাশেদ খান মেনন একই লেখকের দ্য ফার্স্ট বাংলাদেশী আমেরিকান আর্ট গ্যালারি ইন এ্যাবরোড বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। কবি আসাদ চৌধুরী মোড়ক উন্মোচন করেন একে ইকবালের মুক্তির পথে বইটির।
নতুন বই ॥ এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ২০৬টি। সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই ৫৩টি, উপন্যাস ২২টি, গল্প ১৮টি, প্রবন্ধ ১৭টি উলেস্নখযোগ্য। এদিনের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে করম্নণাময় গোস্বামীর কত অজানারে এনেছে চয়ন, মাহবুবুল হকের বাংলা ভাষার আধুনিক যুগ এনেছে মনন, বিপ্রদাস বড়ুয়ার দ্বৈত পাহাড়ের ৰুদে মানুষ এনেছে অ্যার্ডন, মোনায়েম সরকারের বাঙালীর ঐতিহ্য ও ভবিষ্যত এনেছে বিউটি, আসাদ চৌধুরীর বজ্রকণ্ঠ থেমে গেল এনেছে পাঞ্জেরী ও প্রিয় রঞ্জন দত্তর বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হসিনা এনেছে মিজান ।
No comments