হাজার কোটি ডলার
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গঠন করতে যাচ্ছে হাজার কোটি ডলারের 'গ্রীন ফান্ড'। পৃথিবীর চিরচেনা সবুজ রূপকে ফিরিয়ে আনতেই আইএমএফ-এর এই উদ্যোগ।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সভায় আইএমএফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডমিনিক স্ট্রস কাহ্ন প্পস্তাব দিয়েছেন। এই ফান্ড থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা হবে। ফান্ডের অর্থায়নের জন্য আইএমএফ প্রধান বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যত নিয়ে প্যানেল আলোচনায় স্ট্রস কাহন চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় গ্রীন ফান্ডের জন্য কিভাবে অর্থায়ন করা যায় সে বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তাঁর অভিমত, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সঙ্কুলান করা অসম্ভব। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি না থাকার কারণে এসব দেশ কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করত পারবে না। আবার উন্নত দেশগুলো চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে ফান্ডের জন্য অর্থায়নে অসমর্থ। সম্প্রতি কোপেনরহগেনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ৰেত্রে রাষ্ট্রগুলো একটি লৰ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্যর্থ হওয়ার পর আইএমএফ এই উদ্যোগ গ্রহণের চিনত্মাভাবনা শুরম্ন করে। কোপেনহেগেনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ অন্যান্য বৃহৎ রাষ্ট্রসমূহকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কট মোকাবেলায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। আএমএফ প্রধান জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি মহাসমস্যা উলেস্নখ করে ঘোষণা দিয়েছেন, আমি বিশ্বাস করি না এই সমস্যার কোন সমাধান নেই। আইএমএফ এ বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে দেখে বিস্ময়ের কিছু নেই, কারণ এটি আমাদের সকলের সমস্যা এবং একে মোকাবেলা করার জন্য সবার আগে প্রয়োজনীয় অর্থ দরকার।
'গ্রীন ফান্ড' কার্যকরের জন্য বছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। ফোরামে ফান্ডের প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহ্বান এবং রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। আইএমএফ 'গ্রীন ফান্ডের' অর্থায়নের জন্য বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবে। অর্থায়নের জন্য সম্ভাব্য সকল উপায় খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া ১৯৬৯ সালে আইএমএফ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সম্পূরক অর্থায়নের জন্য গঠিত রিজার্ভ ফান্ড স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস থেকে গ্রীন ফান্ডের জন্য আংশিক অর্থায়নের প্রসত্মাব দেয়া হবে। বর্তমানে এই ফান্ডের সম্পদ বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩২৪ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ।
অর্থনৈতিক ফোরামের সভায় জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবজাতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি যেখানে আমাদের সনত্মানরা নিরাপদ নয়। বাসের অযোগ্য এক পৃথিবী আমরা তাদের দিয়ে যাচ্ছি। আর একে মোকাবেলায় প্রথাগত অর্থায়ন সঙ্কট কাটিয়ে উঠতেই হবে।
জাপানের জাতীয় নীতিমন্ত্রী এবং অর্থনৈতিক ফোরামের প্যানেল সদস্য ইয়োশিতো সেনগোকু মত প্রকাশ করেন অর্থায়নের ৰেত্রে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উদ্ভাবনের ওপর। ফান্ড সংগ্রহের জন্য তিনি আনত্মর্জাতিক সংহতির মাধ্যমে রাজস্ব আদায় এবং এর ফলে গৃহীত অর্থ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাহায্য হিসেবে প্রদানের প্রসত্মাব করেন। এৰেত্রে তিনি সরকার প্রধানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
বর্তমানে জাপান তাদের উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব করছে, যাকে 'গ্রীন-ইকোলজিক্যাল' প্রযুক্তি বলা হচ্ছে, তার উদাহরণ দিয়ে সেনগুকো বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা জানান।
অর্থনৈতিক ফোরামে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যেন দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বহুপাৰিক বাণিজ্যিক সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলতে পারে। সেৰেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৃহৎ সমস্যাও সমাধান করা সম্ভব হবে।
১৮৬টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত আইএমএফ বিশ্বে আনত্মর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আনত্মর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য নিরসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় আইএমএফের এই উদ্যোগ কি আসলেই সফল হবে নাকি কোপেনহেগেন সম্মেলনের মতো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, তা সময়ই বল দেবে।
য়কুনত্মল রায়
No comments